যেভাবে হয়ে উঠবেন একজন ইউটিউব সমালোচক

photo: youtube

ইতিপূর্বে একাধিক নিবন্ধে বলেছি, ইউটিউবে লক্ষ লক্ষ কনটেন্ট আইডিয়া আছে। লক্ষ্য আইডিয়া থেকে আপনি যে কোনোটি বেছে নিয়ে ইউটিউবিং শুরু করতে পারেন। অথবা নিজেই কোনো অভিনব আইডিয়া উদ্ভাবন করতে পারেন। ইউটিউব একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম। এখানে কপিরাইট আইন এবং কমিউনিটি গাইডলাইন মান্য করে যেকোনো ধরনের ভিডিও আপনি আপলোড করতে পারেন এবং তা মনিটাইজ করে রোজগার করতে পারেন।

photo: youtube

ইউটিউবের সবচেয়ে জনপ্রিয় কনটেন্ট আইডিয়া গুলোর একটি হলো রিভিউ এবং সমালোচনা। এই রিভিউ আইডিয়ার মধ্যে অনেকগুলো ভাগ আছে। আজকের নিবন্ধে আমি শুধুমাত্র ইউটিউব রিভিউ এবং সমালোচনা নিয়ে আলোচনা করবো। আমার বিশ্বাস এই নিবন্ধটি পড়ার পর ইউটিউবে রিভিউ করার জন্য আপনি অনেকগুলো চমৎকার আইডিয়া পেয়ে যাবেন।

১. চলচ্চিত্র সমালোচনা

আমাদের চারপাশে অসংখ্য চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষ আছে। তাছাড়া পুরোপুরি চলচ্চিত্র দেখেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। স্বভাবতই নতুন চলচ্চিত্রের ব্যাপারে সব চলচ্চিত্রপ্রেমীর বাড়তি আগ্রহ থাকে। এই আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে আপনি ইউটিউবে চলচ্চিত্রসমালোচনা শুরু করতে পারেন।

আগের দিনে সিনেমা হলে চলচ্চিত্র মুক্তি পাওয়ার পর পত্রপত্রিকায় তা নিয়ে লেখালেখি হতো। পত্রিকা থেকে সেই রিভিউ পড়ে মানুষ চলচ্চিত্রটি দেখার ব্যাপারে আগ্রহী হত। এই প্রক্রিয়াটি অনেক ধীর। এখন প্রযুক্তির কল্যাণে চলচ্চিত্র সমালোচনা অনেক সহজ হয়ে গেছে।

photo: youtube

সুতরাং আপনি এই সহজ সুযোগটি নিয়ে চলচ্চিত্র সমালোচনা নেমে পড়ুন। প্রতিটি নতুন চলচ্চিত্র মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম শো দেখার চেষ্টা করুন, এবং তারপর সেই চলচ্চিত্রের ভালো-মন্দ দিক, সমাজে তার প্রভাব, অভিনয় শিল্পীদের দক্ষতা, চলচ্চিত্রে গল্পের মান, প্রযুক্তির ব্যবহার, পরিচালকের দক্ষতা, বাজেট, বাজার সম্ভাব্যতা, ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরে ইউটিউবে আলোচনা করুন।

আপনার চলচ্চিত্র সমালোচনাটি এমন ভাবে সাজান যেন, অন্যরা আপনার রিভিউ দেখে চলচ্চিত্রটি দেখার ব্যাপারে আগ্রহী হয়। কখনোই সম্পূর্ণ চলচ্চিত্রের গল্প আপনার সমালোচনার মধ্যে বলে দিবেন না। কেননা তাতে চলচ্চিত্রটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনকি পরিচালক চাইলে আপনার বিরুদ্ধে একটি মামলাও ঠুকে দিতে পারেন।

এছাড়া সব চলচ্চিত্র মুক্তি পাওয়ার প্রায় এক মাস আগে চলচ্চিত্রটির চুম্বক অংশ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইউটিউবে প্রচার করে থাকে। আপনি চাইলে এই চুম্বক অংশের রিভিউ করতে পারেন। সাথে পরিচালক-প্রযোজক বা সংশ্লিষ্ট কারো মতামত জুড়ে দিতে পারেন। নিঃসন্দেহে আপনার এই রিভিউ অল্পদিনেই তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠবে, এবং আপনি একজন চলচ্চিত্র সমালোচোকে পরিণত হবেন। আর রোজগার? সে তো হবেই!

২. বুক রিভিউ

চলচ্চিত্র সমালোচনার আদলে আপনি ইউটিউবে বুক রিভিউ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে সব সময় নতুন বই নিয়ে আলোচনা করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তবে চেষ্টা করবেন সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত বই নিয়ে বেশি কথা বলতে।

photo: pinterest

মানুষ এখন অনেক বেশি ব্যস্ত। সুতরাং বাজারে অসংখ্য বইয়ের থেকে ভালো বই গুলো খুঁজে বের করা সাধারণ মানুষের পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য। তাছাড়া বাকস্বাধীনতার এই যুগে অসংখ্য নিম্নমানের বই প্রকাশিত হচ্ছে। সুতরাং বই প্রেমীদের জন্য আপনি ইউটিউবে মানসম্পন্ন বইয়ের রিভিউ তৈরি করতে পারেন।

সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত বই ছাড়াও বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ সব বই নিয়ে আপনি আলোচনা করতে পারেন। তবে এই আলোচনার পূর্বে অবশ্যই সম্পূর্ণ বইটি আপনাকে পড়ে নিতে হবে, এবং বই নিয়ে আলোচনার মৌলিক কিছু বিষয় আপনাকে জানতে হবে। এককথায় দৈনিক এবং সাহিত্য পত্রিকার বই সমালোচকদের মত বই সম্পর্কিত সকল দক্ষতা আপনার মধ্যে থাকতে হবে।

৩. প্রযুক্তি পণ্য রিভিউ

ইউটিউবে প্রযুক্তিপণ্য রিভিউ সবচেয়ে লাভজনক আইডিয়া গুলোর একটি। কেননা প্রযুক্তি খুবই দ্রুত পরিবর্তিত হয়। এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি আমাদের সামনে তার সুফল মেলে ধরে।

আপনাকে নতুন নতুন প্রযুক্তি পণ্য নিয়ে আলোচনা করতে হবে। যেমন সাম্প্রতিককালে বাজারে আসা মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ সহ এজাতীয় ছোট-বড় নানান প্রযুক্তিপণ্যের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে আপনাকে ভিডিও তৈরি করতে হবে। পণ্যটি বাজারে আসার তারিখ, নতুন নতুন ফিচার, ব্যবহারবিধি, উপকারিতা, সতর্কতা, দাম, সম্ভাব্য প্রাপ্তিস্থান, ইত্যাদি সকল তথ্য আপনার ভিডিওর মধ্যে থাকতে হবে।

photo: digitaltrends

ক্রমাগত বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যের রিভিউ করলে একসময় আপনি এই চ্যানেলটি ব্যবহার করে প্রযুক্তি পণ্য বিক্রয়কারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্পন্সরশীপও পেয়ে যাবেন। তখন আপনার এই চ্যানেল থেকে দুই ধরনের রোজগার হবে। প্রথমত রিভিউ করা ভিডিও মনিটাইজ হবে। দ্বিতীয়ত প্রত্যেকটি ভিডিওর জন্য আলাদাভাবে স্পন্সর কোম্পানির কাছ থেকে বাড়তি অর্থ পাওয়া যাবে।

৪. গেম রিভিউ

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন বিশ্বব্যাপী ভিডিও গেমের একটা বিশাল বাজার আছে। অসংখ্য প্রফেশনাল গেমাররা গেম খেলে প্রচুর টাকা আয় করে। সাধারণ ব্যবহারকারীরাও গেমের প্রতি খুবই আগ্রহী। আপনি চাইলে ইউটিউবে গেম রিভিউয়ের একটি চ্যানেল করতে পারেন। বিভিন্ন ভিডিও গেম তৈরি করা প্রতিষ্ঠানের নতুন নতুন ভিডিও গেম রিভিউ করে আপনি খুব দ্রুত একজন ইউটিউব স্টার হয়ে উঠতে পারেন।

photo: daily motion

অবশ্য এক্ষেত্রে আপনাকে প্রাথমিকভাবে কিছুটা বিনিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ বাজারে আসা বিভিন্ন গেম সবার আগে ক্রয় করে তা খেলে দেখতে হবে, এবং এই গেমের ভালো-মন্দ দিক, গেম খেলার সময় আপনার অনুভূতি, ইত্যাদি বিষয় বর্ণনা করে ভিডিও তৈরি করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই জাতীয় ভিডিওগুলো ইউটিউবে সব সময় ভালো ভিউ হয়। সুতরাং গেমের ব্যাপারে আগ্রহ থাকলে আপনি আজই একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলুন এবং নতুন নতুন গেম রিভিউ শুরু করুন।

৫. কার রিভিউ

ইউটিউবে সবচেয়ে অভিজাত কনটেন্ট আইডিয়া গুলোর একটি হলো কার রিভিউ। আপনি চাইলে লেটেস্ট মডেলের বিভিন্ন কার রিভিউ করে রাতারাতি বিশ্ব বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারেন। অবশ্য এক্ষেত্রে আপনাকে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করতে হবে, এবং বিভিন্ন কার মেলা ও উৎসবে প্রদর্শিত লেটেস্ট মডেলের কার নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করে ভিডিও তৈরি করতে হবে। কার প্রস্তুতকারী কোম্পানির লোকের সাথে কথা বলতে হবে, সাধারণ ব্যবহারকারীদের অনুভূতি জানতে হবে এবং অবশ্যই আপনাকে কার সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞ হতে হবে। নতুন কারের সকল ফিচার আপনার ভিডিওতে বর্ণনা করতে হবে।

photo: youtube

তবে এজাতীয় ভিডিওর ভাষা ইংরেজি হওয়া ভালো। কেননা কার প্রস্তুতকারী কোম্পানি গুলো সুনির্দিষ্ট একটি দেশের বাজার বিবেচনা করে কার প্রস্তুত করে না। সুতরাং আপনাকেও এই ধ্যান-ধারণা পোষণ করতে হবে। বিশ্বব্যাপী কার প্রেমীদের জন্য রিভিউ ভিডিও তৈরি করতে হবে।

আপনি যদি কার রিভিউয়ের মত এমন অভিজাত ইউটিউব কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন তবে রাতারাতি আপনি আন্তর্জাতিক মানের কার বিশেষজ্ঞে পরিণত হবেন। এমনকি বড় বড় কোম্পানির কাছ থেকে আপনি মোটা অঙ্কের স্পন্সরশীপও পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *