ক্রেতা দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হলে আপনার প্রতিষ্ঠানকে একটি সফল ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সফল ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে যেমন অধিক ক্রেতা দর্শক আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবেন তেমনি আপনার মুনাফাও বাড়বে চক্রবৃদ্ধি হারে। সকল পণ্য এবং পরিষেবার মাধ্যমে ক্রেতা সন্তুষ্ট করা ও তাদের কাছে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে আপনার ওয়েবসাইটটি সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে।

Source: Flo Web Design

তার জন্য প্রথমেই নির্ধারণ করতে হবে আপনার ব্র্যান্ডের মৌলিক বিষয় কী কী। সেগুলোকে ব্র্যান্ড পেজের মধ্যে দৃশ্যমান করে তুলতে হবে। তার জন্য যথাযথভাবে ওয়েব ডিজাইন করার বিকল্প নেই। কেননা আপনার ওয়েবসাইটের চেহারা, লোগো, কনটেন্টসহ সকল তথ্য মিলে ব্র্যান্ডটি সাধারণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে। এই নিবন্ধে ওয়েব ডিজাইনের মাধ্যমে কিভাবে প্রতিষ্ঠানকে ভালো ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলা যায় তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

সঠিক রং নির্বাচন করুন

ব্র্যান্ডের জন্য উপযুক্ত রং নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা রং মানুষের আবেগ অনুভূতিকে অবচেতনভাবে বিক্রি করতে পারে। যেমন যখন আপনি সবুজ রং দেখেন তখন আপনার মনের মধ্যে কী অনুভূতি কাজ করে? সবুজ রঙ নিশ্চয়ই প্রকৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়, যা আপনাকে মানসিকভাবে শান্ত করে তোলে। এমনকি আপনি প্রকৃতি, নীরবতা এবং মানসিক শান্তির ব্যাপারে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। এই কারণে ইদানিংকালে হাসপাতালগুলোর দেওয়াল হালকা ফ্যাকাশে সবুজ রঙে রাঙানো হয়।

Source: Igniting Business

আবার কালো একটি গুরুত্বপূর্ণ রং। এটি বিলাসিতার প্রতীক। তাই বিভিন্ন বিলাসী পণ্যের রং কালো হয়ে থাকে। যেমন খুব দামি কোন গাড়ি বা রোলেক্স ঘড়ির কথা চিন্তা করুন। আবার যদি কমলা রঙের কথা বলি তাহলে নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্রান্ডের সাথে এই রংটি মানানসই বলে মনে হবে না। যদিও এই রং মানুষের আবেগ এবং যৌনতাকে উস্কে দেয়।

সুতরাং আপনার পণ্যের ধরন বুঝে ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য উপযুক্ত রং নির্বাচন করুন। যেন ক্রেতা দর্শক আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তবে একই রং ভিন্ন ভিন্ন দেশ এবং সংস্কৃতিতে ভিন্ন ভিন্ন আবেগ-অনুভূতিকে উপস্থাপন করে। এ ব্যাপারেও সচেতন থাকুন। আপনি যদি আন্তর্জাতিকভাবে ব্র্যান্ডিং করতে চান তবে সার্বজনীন বিবেচনায় যেসব রং মানুষকে আকর্ষণ করে সেখান থেকে উপযুক্ত রং নির্বাচন করুন। আবার যদি স্থানীয়ভাবে ব্র্যান্ডিং করতে চান তবে নিজের সংস্কৃতি বিচার করে ব্র্যান্ডের রং নির্ধারণ করুন।

ব্যক্তিত্বপূর্ণ করে তুলুন

আপনার ব্র্যান্ডটি যথেষ্ট মানবিক এবং ব্যক্তিত্বপূর্ণ করে গড়ে তুলুন, যেন সাধারণ মানুষ এর সাথে নিজেকে সংযুক্ত করতে পারে। তাদের অনুভূতির সাথে আপনার ব্র্যান্ড মিলে যায়। মনোবিজ্ঞানীরা এটাকে বলে এনথ্রোপোমরফিজম (anthropomorphism).

Source: Lavish katechnologies

এ জাতীয় সবচেয়ে চমৎকার উদাহরণ হতে পারে টুইটার। টুইটারের লোগো একটি ছোট্ট ও নীল পাখি। আবার টুইটারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বার্তা লেখা যায়। লোগো এবং কাজের কী চমৎকার সমন্বয়। আপনার ব্র্যান্ড তৈরি করার সময় এভাবে মানুষকে ব্রান্ডের সাথে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করুন।

ব্র্যান্ডের মেজাজ দৃশ্যমান করে তুলুন

আপনার ব্র্যান্ড দেখামাত্র মানুষের মনে কোন অনুভূতি কাজ করবে, তা আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে। মানুষের মনে যে অনুভূতি ফুটিয়ে তুলতে চান আপনার ব্র্যান্ডটি ঠিক সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে। যেন মানুষ দেখামাত্রই আপনার ব্র্যান্ডের কার্যক্রম এবং মেজাজ অনুভব করতে পারে।

Source: Bizztor

ওয়েব ডিজাইনিংয়ের মাধ্যমে সাইটের জন্য উপযুক্ত রং নির্বাচন করার সাথে সাথে প্রয়োজনে ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করতে পারেন। যেন আপনার ব্র্যান্ড সহজেই সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ব্র্যান্ড ওয়েবসাইটের নকশা

ওয়েবসাইটের নকশা ব্র্যান্ডের রঙের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত হোমপেজের নকশার সাথে সাদৃশ্য রেখে অন্যান্য পেজের নকশা করা হয়। আপনার ব্র্যান্ডের রং এবং লোগোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে নকশা করুন। প্রতিটি পৃষ্ঠায় একই রং, বিন্যাস, গ্রাফিক্স এবং মেজাজ ব্যবহার করুন। কেননা দর্শক সব সময় একটি স্মার্ট সাইট দেখতে চায়, যেখানে পুরো সাইট জুড়ে একই মেজাজ ফুটে ওঠে।

সঠিক জায়গায় লোগো প্রদর্শন করুন

যথাযথ ওয়েব ডিজাইনিংয়ের মাধ্যমে সঠিক জায়গায় ব্রান্ডের লোগো প্রদর্শন করুন। সাধারণত ওয়েবসাইটের উপরে বামপাশে লোগো প্রদর্শন করাই উত্তম। কেননা বেশিরভাগ ওয়েবসাইটে মানুষ এভাবেই লোগো দেখে অভ্যস্ত। লোগোটি অন্যান্য পেজের সাথে যুক্ত করুন। হোমপেজ আইকন হিসেবে লোগো সিলেক্ট করে দিন। সাথে সাথে লোগোর আকারও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই হোম পেজে লোগোর আকার কেমন হবে, আবার অন্যান্য পেজে লোগোর আকার কেমন হবে সে ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।

ওয়েবসাইটের বিন্যাস

সাধারণ দর্শক আপনার ব্র্যান্ড ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে প্রথমেই কী দেখতে চাই তা মাথায় রাখুন। আপনি যে পণ্য বিক্রি করতে বা সমস্যা সমাধানের জন্য ব্র্যান্ডটি দাঁড় করিয়েছেন আপনার সাইটে কেউ প্রবেশ করলে তার সেই চাহিদা কি পূরণ হয়? বিষয়টি মাথায় রেখে লোগো এবং মেনুর ঠিক পরেই ওয়েবসাইটের মূল বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তুলুন, যেন দর্শক প্রথম দর্শনেই আপনার ব্র্যান্ডের উদ্দেশ্য বুঝতে পারে।

উপযুক্ত ভাষা ব্যবহার করুন

ব্র্যান্ডের রঙের মতো ভাষাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যেসব শব্দ ব্যবহার করে সাইটের কনটেন্ট সাজাবেন তার উপর ভিত্তি করে ওয়েবসাইটের মেজাজ তৈরি হবে। ব্র্যান্ডটি কাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে তা বিবেচনা করে উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করুন।

Source: PC World

যেমন আপনি যদি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা পেশাদার বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকেন, তবে পেশাদারদের ব্যবহার করা শব্দ অনায়াসে ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু একই ওয়েবসাইট যদি সর্বসাধারণের জন্য তৈরি করে থাকেন তবে আপনাকে ভাষার ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে। কেননা সর্বসাধারণ স্টক মার্কেটের সব শব্দ জানে না।

আপনার ব্র্যান্ডটি অনন্য করে তুলুন

আপনার প্রতিষ্ঠান স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড হয়ে উঠবে তখনই যখন আপনি তাকে নিজস্বতা দান করতে পারবেন। সমসাময়িক সময়ে একই ধরনের সেবা নিয়ে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেখান থেকে আপনার ব্রান্ডটি সবার কাছে অনন্য হয়ে উঠবে আপনার দক্ষতার গুণে। ব্র্যান্ড সাইটের সাজসজ্জা, রং এবং গ্রাফিক্সের কাজ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সেবার ব্যাপারেও আপনাকে অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হবে। তবেই আপনার ব্র্যান্ডটি অনন্য হয়ে উঠবে।

Feature Image: Bizztor