জীবনে বড় ধরনের যে কোনো পরিবর্তন সত্যিই খুব কঠিন, সেটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে হোক বা চাকরির ক্ষেত্রে। দীর্ঘদিনের আপনজন দূরে সরে গেলে মানুষের জীবন যেমন আমূল পাল্টে যায়, তেমনি দীর্ঘদিনের কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনও জীবনের স্বাভাবিক গতি ওলট পালট করে দেয়।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/carrera-laboral.jpg)
কিন্তু পরিস্থিতি যদি এমন অবস্থায় পৌঁছে যে চাকরি না ছেড়ে উপায় নেই সেক্ষেত্রে কিছুই করার থাকে না। বিশেষ করে দীর্ঘদিনের কর্মস্থল এবং বহুদিনের পরিচিত সহকর্মীদের ছেড়ে আসা সত্যিই খুব কঠিন। কিন্তু চাকরি যখন ছাড়তেই হবে তখন চাকরি ছাড়ার সবচেয়ে সম্মানজনক উপায়টি খুঁজে বের করতে হবে। চলুন জেনে নিই কিভাবে এই কঠিন কাজটি সহজে করা যায়।
নিজেকে প্রস্তুত করা
জীবনের যে কোনো পরিস্থিতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার বিকল্প নেই। সবসময় আত্মবিশ্বাসী এবং ইতিবাচক থাকার প্রধান চাবিকাঠি হলো প্রস্তুতি। আপনি নিজেকে যত বেশি প্রস্তুত করবেন নিজের মানসিক অবস্থা তত বেশি ভালো হবে। যারা সব সময় নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে সমৃদ্ধ করে চলে তারা কখনোই চাকরি পরিবর্তনের মতো এমন পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়ে না, অথবা হতাশ হয় না। তারা জানেন কিভাবে সব সময় জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে হয়। তারা মানসিকভাবে সব সময় বিজয়ী বেশে থাকে, যা তাদের আত্মবিশ্বাসকে প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে চলে।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/shutterstock_107877737.jpg)
আপনি যদি সত্যিই চাকরি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এবং নতুন চাকরি খুঁজে পেতে মন স্থির করে থাকেন তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এক মুহূর্তও বিলম্ব করবেন না। নতুন চাকরির সন্ধানে নেমে পড়ুন। ক্রমাগত চেষ্টা করে যান। চাকরি খুঁজে পেতে নিজেকে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিবেন না। এতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাঙ্ক্ষিত চাকরি না পেলে আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন। তাই নতুন চাকরি খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে প্রতিটি মুহূর্ত ব্যবহার করুন।
মনে মনে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিন। পূর্বের চাকরি ছেড়ে যে মুহূর্ত থেকে আপনি নতুন চাকরির সন্ধানে নামবেন মনে রাখবেন, তখন থেকেই আপনাকে নানান অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। প্রত্যেকটি নতুন চাকরির সাক্ষাৎকার বিচক্ষণতার সাথে মোকাবেলা করুন। নিজেকে যুদ্ধক্ষেত্রের মাঝখানে জ্ঞান করুন। মনে রাখবেন, যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক থেকে শত্রুর তরবারির মতো নানান পরিস্থিতি এবং প্রশ্ন আপনাকে বিদ্ধ করতে চাইবে। এই সবকিছুর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/prepare-professional-personal-self-help-future-growth-reflection-graphcom-blog-1080x675.jpg)
ইতিপূর্বে আপনি চাকরিতে বর্তমান ছিলেন বলে ভাববেন না আপনার জন্য সবকিছু সহজ হবে। যতটা সম্ভব নতুন চাকরির ব্যাপারে পড়াশোনা করুন। নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করুন। এমনকি নতুন দক্ষতা অর্জন করার জন্য স্বল্পমেয়াদি কোর্স বা কোনো স্বেচ্ছাসেবী কাজে অংশ নিন। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সেমিনারে অংশগ্রহণ করুন। পূর্বের পেশায় থাকা অবস্থায়ই অন্যান্য কোম্পানির পেশাদারদের সাথে যোগাযোগ করুন এবং সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করুন।
আপোষ-মিমাংসার চেষ্টা করবেন না
আপনার বর্তমান চাকরির ম্যানেজার বা ঊর্ধ্বতনরা যখনই আপনার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত পাবেন তখনই আপনার সাথে দরকষাকষি বা আপোষ-মীমাংসার চেষ্টা শুরু করবে। তারা আপনার সমস্যা চিহ্নিত করবে এবং দ্রুত তার সমাধানের চেষ্টা করবে। কেননা আপনার বস হঠাৎ করেই কোম্পানিতে আপনার গুরুত্ব বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে শুরু করবে। তিনি হিসাব মিলিয়ে দেখবেন তার টিমে আপনার প্রয়োজনীয়তা কতখানি।
যেহেতু তিনি আপনাকে তাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি বরং চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপনি নিজেই। সুতরাং তিনি তার এবং প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার চেষ্টা করবেন। আপনার কাজ কমিয়ে দেওয়া হবে, এমনকি সম্মানী বাড়ানো হবে, অথবা পদোন্নতি দেওয়া হবে। নানানভাবে আপনাকে চাকরিতে বহাল রাখার চেষ্টা করা হবে।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/Negotiation-1.jpeg)
কিন্তু আপনি যদি সত্যিই বর্তমান চাকরিতে সবরকম উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন, এমন কি আপনার মাসিক সম্মানী বৃদ্ধিও এই কাজে আপনার উদ্যম ফিরিয়ে আনতে না পারে, তবে কোনোক্রমেই দরকষাকষি বা আপস-মীমাংসার আলোচনায় যাবেন না। কেননা এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো প্রকার আলোচনা আপনাকে কথার ফাঁদে আটকে দিতে পারে। তার কারণ দৃশ্যত এই চাকরিতে আপনার কোনো সমস্যা নেই, আপনার সম্মানীও পর্যাপ্ত, সুতরাং স্বভাবতই চাকরি ছাড়ার সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকর কারণ দর্শানো কঠিন।
তাই আপনাকে কৌশলী হয়ে সবরকম দরকষাকষি বা আপস-মীমাংসার পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন, সবার আগে নিজের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হয়। সুতরাং বস বা কর্মক্ষেত্রের কল্যাণ চিন্তা করার আগে নিজের কল্যাণ চিন্তা করতে হবে এবং কৌশলে আপনার বসকে বোঝাতে হবে আপনি সত্যিই এই চাকরিতে আর থাকতে চান না।
অতিক্রম করে যাবেন কিন্তু সেতু ভাঙবেন না
দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর যখন আপনি সত্যিই নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য মনোনীত হবেন তখন নিশ্চয়ই আপনার খুশির সীমা থাকবে না। এসময় কিছুটা বিরতি দিন এবং এ দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সাফল্যের জন্য নিজেকে বাহবা দিন। কেননা এই মুহুর্তের জন্য আপনি দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছেন।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/levels-of-communication-in-business.jpg)
নতুন চাকরির ব্যবস্থা তো হলো, এবার পূর্বের চাকরি ছেড়ে আসার পালা, পূর্বের চাকরিতে আপনার সহকর্মী, বস, অফিসের নানান পর্যায়ের কলিগের কাছ থেকে হাসিমুখে বিদায় নেওয়ার পালা। মনে রাখবেন সেতু অতিক্রম করে যাবেন কিন্তু কখনোই সেতু ভাঙবেন না। পুরনো সহকর্মীদের ছেড়ে যাবেন সত্য কিন্তু কখনোই তাদের সাথে সম্পর্কের অবনতি করবেন না।
কেননা এই পৃথিবীটা খুবই ছোট এবং আপনি জানেন না ভবিষ্যতে আপনার সাথে কী ঘটবে। সুতরাং ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পূর্বের সব কলিগ এবং বসদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন। হতে পারে সামনের দিনে কোনো এক সময় পূর্বের এই সহকর্মীরাই আপনার ত্রাণকর্তা হয়ে উঠবেন।