ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি: নেশা নাকি পেশা?

; Image Source: sofy.tv

আপনি আপনার পেশা হিসেবে কী বেছে নিবেন তা সম্পূর্ণ আপনার উপর। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা চিন্তা করলে দেখা যায় বেশীরভাগ মানুষ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবার পথ বেছে নেয়। অনেক সময় বাবা মায়ের ইচ্ছা, আবার অনেক সময় নিজের ইচ্ছায় এই পেশা বেছে নিতে হয়। তবে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এখনও মিডিয়াকে নিজের পেশা হিসেবে গ্রহণ করাকে ভালো চোখে দেখা হয় না। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার ইচ্ছা থাকে অনেকেরই। তবে বেশীরভাগ সময়েই ছোটবেলায় সেই স্বপ্নকে গলা টিপে মেরে ফেলতে হয় কেননা চারপাশ থেকে বুঝানো হয় এই পেশা খারাপ। কিন্তু তাও অনেকে নিজের ইচ্ছা ধরে রাখতে সফল হয়।

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করতে গেলে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড় একটি জায়গা। এখানে নিজের জায়গা করে নেওয়ার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়। সাথে থাকতে হয় অভিজ্ঞতা। অনেক সময় অভিজ্ঞতা ছাড়াও আপনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করতে পারবেন, তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছু ব্যাপার জানতে হবে। নিজের ক্যারিয়ার কিভাবে গড়তে চান সেই সম্পর্কে জ্ঞান নিয়ে এগোতে হবে তা না হলে মাঝপথেই হেরে যাবেন।

চলুন জেনে নেওয়া যাক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার জন্য আপনাকে কী কী ব্যাপার  সম্পর্কে জানতে হবে।

১. ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কোন শাখায় কাজ করতে চান তা ঠিক করুন

আপনাকে সবার প্রথমেই জানতে হবে, আপনি কোন শাখায় কাজ করতে চান। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড়, এর রয়েছে অনেক শাখা। কেউ ভালো স্ক্রিপ্ট লিখে আবার কেউ ভালো পরিচালনা করতে পারেন। এখন যিনি ভালো পরিচালনা করেন তিনি যদি স্ক্রিপ্ট লেখা শুরু করেন তবে কেমন হবে? অবশ্যই স্ক্রিপ্ট ভালো হবে না আর অপরদিকে স্ক্রিপ্ট রাইটার যদি পরিচালনা করতে যান তবে পরিচালনাও ভালো হবে না। তাই নিজের পেশা আর নেশা কী তা জেনে নিতে  হবে সবার প্রথমে। এখানে একটি তালিকা দেয়া হলো যেখান থেকে আপনি আপনার মনমতো শাখা খুঁজে নিতে পারেন।

  • স্ক্রিপ্ট রাইটার
  • পরিচালক
  • কাস্টিং ডিরেক্টর
  • মেকাপ আর্টিস্ট
  • টিভি হোস্ট
  • সিনেমাটগ্রাফার
  • স্টোরি রাইটার
  • সহকারি পরিচালক
  • সহকারি অভিনেতা প্রভৃতি

২. নিজের দক্ষতার মূল্যায়ন

আপনি কোন শাখায় কাজ করতে চান তা ঠিক করে ফেলার পর আপনাকে নিজের দক্ষতার মূল্যায়ন করতে হবে। দক্ষতা ছাড়া আপনি কোথাও টিকতে পারবেন না। হোক সেটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আবার হোক সেটা ডাক্তারি পেশা কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং। হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, আদৌ কি আপনার দক্ষতার মূল্যায়ন দরকার?

অবশ্যই দরকার। আপনি যদি নিজের পছন্দের শাখায় দক্ষ না হন কিন্তু অন্য আরেকজন ঠিকই দক্ষ তবে আপনাকে বাদ দিয়ে অবশ্যই আরেকজনকে চাকরি দেয়া হবে। তবে আপনার জন্য সুখবর হচ্ছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি পাওয়ার জন্য আপনাকে খুব বেশী গুণের অধিকারী হতে হবে না। বেশীরভাগ সময় আপনাকে কোর্স বা ট্রেনিং করানো হবে এবং সেখানেই আপনি সব কিছু শিখতে পারবেন।

নিজের দক্ষতার মূল্যায়ন করতে গেলে আপনি বুঝবেন যে আপনি আসলেও এই কাজের জন্য উপযোগী কিনা। ধরুন, আপনি অভিনেতা হতে চান। তখন বিভিন্ন ছোট ছোট অনুষ্ঠানে অভিনয় করার চেষ্টা করুন। যদি দেখেন আপনি ভালো সাড়া পাচ্ছেন তবে বুঝবেন যে আসলেই আপনি অভিনয় করতে পারবেন। আবার আপনি যদি কমেডিয়ান হতে চান তবে সবসময় মানূষকে নিজের কৌতুক বা হাস্যরস কাহিনী বলে হাসানোর চেষ্টা করুন। আপনি কি হাসাতে পারছেন? যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তবে আপনি খুব সহজেই ইন্ডাস্ট্রিতে এসে কাজ করতে পারবেন।

তবে আপনাকে আপনার পছন্দের শাখার ব্যাপারে অনেক জ্ঞান রাখতে হবে।। আমরা যেমন স্কুল কলেজে পড়াশোনা করে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করি ঠিক একই ভাবে আপনাকে নিজের পছন্দের শাখার ব্যাপারে জ্ঞান রাখতে হবে। এজন্য বিভিন্ন কোর্স করতে পারেন, আবার নেট থেকে দেখে নিজে শিখতে পারেন। আবার কারো আন্ডারে ইন্টার্নশিপ করেও শিখতে পারেন।

৩. নিজের মাঝে সব সময় পজিটিভিটি বজায় রাখুন

 Image Source: netdna-ssl.com

আপনি যদি সবসময় পজিটিভ থাকেন তবে দেখবেন কোন বাধাকেই বাধা মনে হবে না। নিজ্জের মাঝে যেকোনো কাজ করার মানসিকতা রাখতে হবে। কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই, কিন্তু তা ভেবে থেমে গেলে হবে না। সেই বাধা কিভাবে পার করবেন তা ভেবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সবসময় নতুন জিনিস শিখার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখুন। নিজের নেশার পিছনে দৌড়াতে গিয়ে অনেক নতুন জিনিস শিখতে হবে। সেগুলোকে সুন্দরভাবে বরণ করে নিতে হবে।

৪. সফল হওয়ার জন্য পরিকল্পনা করুন

 Image Source:

আপনি যদি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সফল হতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে সফলতার জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। আপনি কোনো পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজেই সফল হবেন না। পরিকল্পনা ছাড়া আপনার পথচলা হবে অগোছালো এবং অগোছালো পথে আপনি কখনও সফল  হবেন না।

আপনার নিজের মনকে স্থির করতে হবে, নিজেকে সবসময় যেকোনো বাধার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। আপনি কবে কার সাথে দেখা করবেন, কোথায় অডিশন দিবেন, কোথায় আপনি অনুশীলন করবেন, কার সাথে আপনি অনুশীলন করলে আপনি শিখতে পারবেন তা ঠিক করতে হবে আপনাকেই।

৫. শর্ট ফিল্ম তৈরি করুন

Image Source: sofy.tv

নিজে নিজে শর্ট ফিল্ম তৈরি করার চেষ্টা করুন। এর জন্য সবার প্রথমে নিজের টিম গঠন করুন। টিমে যাতে সব কাজের জন্য লোক থাকে। যেমন একজন পরিচালক, স্ক্রিপ্ট রাইটার, চরিত্রানুযায়ী অভিনেতা এবং অভিনেত্রী থাকবে। নিজেদের টিমকে সাথে নিয়ে শর্ট ফিল্ম তৈরী করে দেখুন, যদি খুব ভালো সাড়া পেয়ে থাকেন তবে বুঝবেন আপনারা সফল। আপনারা আপনাদের নিজ নিজ দায়িত্ব সুন্দরভাবে করতে পেরেছেন।

এখানে আপনি যদি নিজের লেখার জাদুতে পুরো পৃথিবীর মন ভোলাতে চান তবে হয়ে যেতে পারেন স্ক্রিপ্ট রাইটার, আবার যদি আপনি আপনার পরিচালনার গুণ সবাইকে দেখাতে চান তবে নিজের টিমকে নিয়ে শর্ট ফিল্ম বানিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিন। ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা আপনাকে তখনই মূল্য দিবে যখন তারা দেখবে যে আপনি আপনার স্বপ্ন নিয়ে অনেক বেশি প্যাশনেট। তারা যদি দেখে আপনি আপনার স্বপ্ন পূরণের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন তখন আপনাকে তারাও কাজে নিয়ে নিবে।

৬. নিজের প্রোফাইল গড়ে তুলুন

ক্লায়েন্ট পাওয়ার জন্য আপনাকে অনেক সুন্দর একটি প্রোফাইল তৈরী করতে হবে। প্রথমে নিজেকে অনলাইন মাধ্যমে জনপ্রিয় করে তুলুন। নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করুন। আপনি যদি অনলাইনে নিজের লেখা স্ক্রিপ্ট প্রকাশ করে সাড়া পান তবে দেখা যাবে অনেক প্রফেশনাল পরিচালক আপনাকে তার নাটক বা মুভির স্ক্রিপ্ট লেখার জন্য। আবার আপনি ভালো  অভিনয় করলে আপনাকে ছবি বা নাটক করার জন্যও বলতে পারে।

৭. সিভি তৈরি করুন

কথায় আছে, প্রথম ইম্প্রেশনই শেষ ইম্প্রেশন এবং অনেক ক্ষেত্রে তা একটি কাগজের উপর নির্ভর করে। আর এই কাগজ হচ্ছে আপনার সিভি। আপনি যে ক্ষেত্রেই কাজ করুন না কেন, আপনাকে সবার প্রথমে আপনার সিভি দেখে বিচার করা হবে। তাই নিজের একটি সুন্দর সিভি তৈরি করুন।

৮. সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার

সোশ্যাল মিডিয়া; Image Source: adlibbing.org

বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। প্রায় সব শ্রেণীর লোকই সোশ্যাল মিডিয়াতে এক্টিভ। তাই আপনি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজের পরিচিতি আরো বাড়াতে পারেন। নিজের গুণ, ভিডিও এসবের মাধ্যমে সবার মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেন।

৯. নেটওয়ার্কিং

নেটওয়ার্কিং; Image Source: morganconsulting.com

নিজের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন। পরিচালক হতে চাইলে এমন সব মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখুন যারা আপনাকে সাহায্য করবে পরিচালনা করা শিখতে। তবে ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট মানুষদের সাথে যোগাযোগ রাখুন, তারা আপনার ক্যারিয়ার গড়তে অনেক সাহায্য করবে।

১০. ফ্রি ইভেন্ট এবং সেমিনারে অংশ নিন

ফ্রি সেমিনার এবং মুভির প্রিমিয়ার শো; Image Source: pinkbike.org

বর্তমান সময়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কোম্পানি ফ্রি ইভেন্টের আয়োজন করে। সেখানে আপনি গেলে অনেক ব্যক্তিত্বের সাথে পরিচিত হতে পারবেন। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে নিজের পথচলার গাইড পাবেন। আবার অনেক সময় মুভি প্রকাশের ইভেন্টও ফ্রি হয়। সেসব ইভেন্টে গেলে আপনি অন্যান্য বড় ব্যক্তিত্বের দেখা পাবেন। তাদের সাথে পরিচত হন এবং পরবর্তীতে আরো কয়েকবার দেখা করুন যাতে তারা আপনাকে ঠিক মতো মনে রাখতে পারেন।

এসব টিপস এবং নিয়ম আপনাকে আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে কিন্তু আপনার নিজের প্যাশন, ইচ্ছা আপনাকে আপনার লক্ষ্যে নিয়ে যাবে। আপনি নিজেকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলে আপনি সফল হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *