কর্মক্ষেত্র এবং পাশাপাশি সন্তানের দেখভাল করার বিষয়টি সবসময়ই বাবার কাছে অভিভাবকের কাছে চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। কেননা গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অভিভাবকই নিজের সন্তানের পাশে সব সময় না থাকতে পারার কারণে তাদের মাঝে অপরাধবোধ কাজ করে। যদিও কর্মক্ষেত্র এবং সন্তানের দেখভাল করা অভিভাবককে সংখ্যা অনেক তবুও তাদের মতে, বেশিরভাগ সময় কর্মক্ষেত্রকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে সন্তানের প্রতি সন্তানের প্রতি দেখভালের বিষয়টি অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রায় ৫০০ কর্মরত অভিভাবকদের মধ্যে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে কর্মক্ষেত্র কে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য তাদের অধিকাংশের মাঝে অপরাধবোধ অনেক বেশি কাজ করে। যদিও তারা বিশ্বাস করেন যে কর্মক্ষেত্র এবং সন্তানের দেখভাল দুটোকে তারা বেশ ভালোভাবে সামনে নিচ্ছেন তবুও তাদের সন্তানদের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পাশে না থাকার বিষয়টি তাদের মাঝে অপরাধ বোধের সৃষ্টি করছে।
এছাড়াও এক-তৃতীয়াংশ অভিভাবককের মতামত জানা গিয়েছে গবেষণার মাধ্যমে যে তারা তাদের কাজের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নয় কেননা প্রায় প্রতিটি কর্মক্ষেত্রেই কর্মঘণ্টা বেশি হওয়ার সুবাদে সন্তানদেরকে তারা কম সময় দিতে পারছে আর যা কিনা তাদের মাঝে এক প্রকার হীনমন্যতায় সৃষ্টি করছে।
এছাড়াও নানান গবেষণায় জানা গিয়েছে, কর্মরত অভিভাবকরা সাধারণত আর্থিক সমস্যা এবং নিজের নিজের স্বাধীনভাবে চলার জন্য সন্তানকে কম সময় দিয়ে হলেও নিজের কর্মক্ষেত্রকে তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। যদিও এই বিষয়টি তাদের মাঝে অপরাধ বোধের সৃষ্টি করছে তবুও আর্থিক দিক এবং নিজের অবস্থান তৈরি বিষয়টি তাদেরকে কর্মক্ষেত্রের দিকে আরো বেশি ঝুকে দিচ্ছে।
পরিবারের যখন বাবা-মা দুজনেই চাকরীজীবী সেখানে বাবা-মা দু’জনই অপরাধের কিছু জায়গার সৃষ্টি হবে তবুও দু’জনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সন্তানকে একটি স্বচ্ছ ভবিষ্যৎ দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা। জেনে নিতে পারেন কর্মজীবী অভিভাবক হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে সন্তানদেরকে সময় দিতে পারবেন।
১. অফিসের কাজ অফিসেই শেষ করে আসুন
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/working-mothers-vogue.jpg)
যদিও অফিসে বেশিরভাগ সময় ব্যয় করা হয়ে থাকে তবুও যদি বাবা-মা দুজনই অফিসের কাজ অফিসেই শেষ করে আসেন তবে বাড়িতে আসার পর যে সময়টুকু থাকে সে সময়টুকু নিশ্চিন্তে সন্তানকে দেওয়া সম্ভব। কর্মজীবী অভিভাবক হলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন আপনার অফিসের কাজ অফিসেই শেষ করে আসেন। বাড়িতে কোনো অতিরিক্ত কাজ না নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন।
২. অবসর সময়ে সন্তানকে সময় দিন
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/FamilySpendingTimeTogether-1.jpg)
একজন কর্মজীবী অভিভাবক হিসেবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে আপনি যদি আপনার সন্তানকে বোঝাতে সক্ষম হন যে তার বাবা-মা দুজনেই বাইরে কাজ করছে আর সেজন্য তাকে একটু বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে এবং নিজের খেয়াল নিজের শিখতে হবে এই বিষয়টি আপনাকে কিছু অপরাধবোধ থেকে মুক্ত দিবে। আর তা হল আপনি সন্তানের ঠিকমতো খেয়াল রাখতে পারছেন না,বা খুব বেশি সময় দিতে পারছেন না।
আপনি অফিস থেকে আসার পর যখনই অবসর সময় পাবেন তখনই সন্তানকে বুঝবেন সে যেন নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারে, তাকে অবশ্যই বুঝাতে হবে তার বাবা মা যেরকম স্বাধীনভাবে বাইরে কাজ করছে ঠিক তেমনি তাকেও স্বাধীনভাবে বড় হওয়া শিখতে হবে। এছাড়াও বাইরের বাজে সঙ্গ থেকে তাকে দূরে থাকতে হবে এবং ভাল এবং মন্দ বিবেচনা করা শিখতে হবে।
৩. বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক গড়ে তুলুন
আপনার সন্তানের সাথে আপনার সুসম্পর্কই হতে পারে অনেক সমস্যার সমাধান। মনে রাখবেন আপনি যখন একজন কর্মজীবী অভিভাবক তখন যেন আপনার সন্তানেরা ছোটবেলা থেকেই বুঝতে পারে যে তাদের বাবা-মা তাদের মঙ্গলের জন্যই কাজ করছে আর তাই তাদেরকেও বাবা মায়ের সম্মানের জন্য ভালোভাবে চলতে হবে। এরকম একটি সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই আপনার সন্তানের সাথে আপনার একটি বন্ধুত্ব সুন্দর সম্পর্কের প্রয়োজন। যেখানে থাকবে আপনার সন্তানের কথা বলার অবাধ স্বাধীনতা, একই সাথে আপনিও আপনার সন্তানের সাথে মন খুলে যেকোনো ধরনের কথা বলতে পারবেন।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/millers.jpg)
কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় ব্যয় করার পরেও আপনি যদি বাকি সময়টুকুতে সন্তানের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন তাহলে তাদের সাথে খুব মুক্তভাবে অনেক নেতিবাচক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারবেন যে, তাদের মাঝে ইতিবাচক চেতনার সৃষ্টি করবে। আর তাই সন্তানের সাথে গড়ে তুলুন বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক।
৪. সন্তানের মতামতের গুরুত্ব দিন
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/media_2118851488.jpg)
যে কোন ধরনের সম্পর্ক সুন্দর করার পিছনে উভয়পক্ষের মতামতের গুরুত্ব দেওয়ার ভূমিকা অপরিসীম। কর্মজীবি অভিভাবক হিসেবে যখন অনেক সময় আপনারা দুজনেই বাইরে কাটাচ্ছেন তখন সন্তানকে বিভিন্ন সময় ভুল বুঝার প্রবণতাটা বেড়ে যেতে পারে। সন্তানদেরকে আপনি বিশ্বাস করেন এ বিশ্বাসটি তাদের মাঝে গড়ে তুলতে হবে। আর এই জন্যই আপনার সন্তানের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু তাই নয় অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের উপস্থিতিতেই তাদের মতামত জানার চেষ্টা করবেন। এতে করে তারা নিজেদেরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে।
মনে রাখতে সন্তানকেও পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে গড়ে তগড়ে তুলতে হবে এতে করে। এভাবে তাদের মাঝে দায়িত্ববোধের সৃষ্টি হবে একই সাথে যেকোনো ধরনের নেতিবাচক অভ্যাস এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি গড়ে উঠবে। আর তাই সন্তানের মতামতকে গুরুত্ব দিন এবং তাদেরকে বিশ্বাস করিয়ে তুলুন যে তারাও পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
৫. নিয়মিত খোঁজখবর রাখুন
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/1482532383733.jpg)
কর্মজীবী অভিভাবক হিসেবে সকল ধরনের দায়িত্ব সন্তানকে বুঝিয়ে দিলে হবেনা বরং দুজনকে সমঝোতার মাধ্যমে দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিতে হবে। সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আসা থেকে শুরু করে স্কুল থেকে নিয়ে আসা একই সাথে পড়াশোনার খোঁজ-খবর রাখা এবং তারা যাদের সাথে মেলামেশা করছে তাদের পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। কেননা আপনি যখন আপনার সন্তানের নিয়মিত খোঁজখবর রাখবে একই সাথে সে যাদের সাথে ওঠাবসা করছে সেই পরিবারগুলোর সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলবেন তখন আপনি অনেকটা নিশ্চিত ভাবে আপনার সন্তানের পড়াশোনা এবং বাহিরে বন্ধুদের সাথে মেলামেশার বিষয়ে কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারবেন।
আর তাই নিয়মিত সন্তানের খোঁজ খবর রাখুন তাদের পড়াশোনার খেয়াল রাখুন খেয়াল রাখুন এছাড়াও বন্ধু এবং বন্ধুর পরিবারের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলে তুলুন।