ইন্টারভিউ দেয়ার পর কিভাবে বুঝবেন চাকরিটা আপনি পাচ্ছেন না? মিলিয়ে নিন এই ৭ টি লক্ষণের সাথে

নিজেকে তৈরি করুন পরবর্তী সাক্ষাৎকার এর জন্য

ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছেন? জানেন তো, ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন অংশ হচ্ছে চাকরি খোঁজা। অনেকের কাছে মূলত চাকরির ইন্টারভিউ একটা ত্রাসের নামে, একে বলা হয় ইন্টারভিউ ফোবিয়া। চাকরি পেতে হলে সাধারণত বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম  করতে হয়। যেমন- প্রথম ইন্টারভিউ ট্রেনিং রেফারেন্স পরীক্ষণ এবং সব শেষ যাচাইকরণ। এর সব ক’টি ধাপে পৌছাতে পারবেন না, যদি না আপনি প্রাথমিক ইন্টারভিউ উৎরাতে না পারেন। একটি কোম্পানি অজস্র সিভি থেকে বাছাই করে প্রাথমিক ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকে, ইন্টারভিউ এর পর থাকে শুধু অপেক্ষার পালা, আর সব মিলিয়ে চাকরিটা আপনি পাচ্ছেন তো এই ভাবনা কাজ করে, যা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে এই সম্পূর্ণ সময় নির্ভর ব্যাপার থেকে ঠিকই বেরিয়ে আসতে পারেন যদি একটু সতর্ক থাকেন।

আত্মবিশ্বাসী হোন, চাকরি মানেই জীবনের পরীক্ষা নয়; Image Source: best-job-interview.com

নিচের ৭ টি বিষয় ভেবে দেখবেন, তাহলে ইন্টারভিউ শেষে নিজেই ধারণা করতে পারবেন যে চাকরী টা আপনি পাচ্ছেন কিনা

১. সীমিত সময়ের ইন্টারভিউ

সাধারণত ইন্টারভিউ শুরুতে প্রশ্নকর্তা আপনাকে ইন্টারভিউ সম্পর্কে একটা ব্রিফিং করবেন, যেখানে ইন্টারভিউের সময় সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হবে । যদি সাক্ষাৎকার ধারণাকৃত সময়ের থেকে দ্রুত শেষ হয় ধরে নেবেন আপনি শেষ তালিকায় নেই। সাক্ষাৎকার যদি বেশি সময় ধরে চলে ধরে নেবেন ইন্টারভিউয়ার আপনার সম্পর্কে আগ্রহী। প্রশ্নকর্তা যদি আপনার সম্পর্কে আগ্রহী হয় তবে তারা আপনাকে বিভিন্ন ভাবে যাচাইয়ের চেষ্টা করবে,আপনার  বক্তব্যের প্রতি আগ্রহী হবে। আর এই আগ্রহ হয়তো দিতে পারে আপনার পরবর্তী চাকরির নিশ্চয়তা। কিন্তু প্রশ্নকর্তা আগ্রহী না হলে দ্রুত শেষ হবে আপনার ইন্টারভিউ ।

২. অমনোযোগী ইন্টারভিউয়ার

বাজে ইন্টারভিউয়ের আরেকটি মূল লক্ষণ হচ্ছে সাক্ষাতকর্তার অমনোযোগীতা। ইন্টারভিউ এর শুরুতেই যদি প্রশ্নকর্তার সাথে আপনার কথোপকথন ভালোভাবে শুরু না হয় তবে ধরে নিতে পারেন চাকরিটা আপনি পাচ্ছেন না। এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে,হতে পারে প্রশ্নকর্তার সাথে আপনার প্রথম সাক্ষাৎ ঠিক ভাবে হয়নি অথবা কোম্পানি ইতিমধ্যে তাদের সেরা প্রার্থী পেয়ে গেছে। আপনার ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে শুধু নিয়ম বলে। তাই এক কথায় সাক্ষাতকর্তা যদি আপনার কথায় অমনোযোগী হয় বুঝে নেবেন আপনার উচিত পরবর্তী ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়া। তবে এসব ক্ষেত্রে আপনার বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর -আচরণ আপনাকে দিতে পারে সাক্ষাতকর্তার মনোযোগ। তাই ইন্টারভিউতে অবশ্যই ভেবে চিন্তে আপনার পরবর্তী কথাটি বলবেন।

সাক্ষাৎকারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন; Image Source: talentrover.com

৩. সহজ প্রশ্ন এবং  ইন্টারভিউ

চাকরিদাতা যদি আপনাকে সাধারণ প্রশ্ন যেমন- আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বা আপনার নিজের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে ইন্টারভিউ শেষ করে ভেবে নেবেন না চাকরিটা আপনার। ইন্টারভিউর মূল উদ্দেশ্য হাইপোথিসিস কিংবা ব্রেইন স্টরমিং এর মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বের করা কিংবা সীমিত সময়ে সাক্ষাতকারীর যোগ্যতা ঠিকভাবে যাচাই করা। ইন্টারভিউয়ার যদি শুধুমাত্র আপনার সিভি ভিত্তিক আলোচনায় আটকে থাকে বুঝতে পারবেন আপনার ফাস্ট ইম্প্রেশন ঠিক ছিল না বা অন্য কারণ আছে ।

৪. চাকরিদাতা কি আপনার কাছে তার কোম্পানি বা জব বিক্রি করছেন?

অবাক হতে পারেন, চাকরিদাতা কেন বিক্রি করতে যাবে তার কোম্পানি? আসলে এর মানে হচ্ছে কোম্পানি কি আপনাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করছে কিনা। চাকরিদাতা সব সময় নতুন লোক নিয়োগ করবেন। তাই  তারা যদি মনে করে আপনি কোম্পানির পরবর্তী যোগ্য কর্মী তারা চাইবে আপনাকেও কোম্পানির বিষয়ে আগ্রহী করতে। আর কোম্পানি যদি আপনার যোগ্যতা সম্পর্কে সচেতন হয় তবে নিজে থেকেই তারা আপনাকে মূল্যায়ন করবে বা যথাযথ দাম দেবে। একেই বলে চাকরিদাতার কোম্পানি বিক্রি বা জব বিক্রি ।

চাকরিটা যেমন আপনার দরকার ঠিক তেমনি চাকরিদাতার দরকার যোগ্য ব্যক্তি। তারা যদি আপনাকে যোগ্য মনে করে তবে ইন্টারভিউতেই তারা আপনাকে কোম্পানির বর্তমান -ভবিষ্যৎ, কি রকম সুযোগ সুবিধা তারা দেবে তার সম্যক ধারণা দিয়ে দেবে। আর যদি এসব সম্পর্কে আলোচনা না হয় বুঝতে হবে আপনি তাদের পছন্দের তালিকায় নেই।   

সাক্ষাৎকারে ভেবে চিন্তে বুদ্ধি খাটিয়ে কথা বলুন; Image Source: forbes.com

৫. কবে থেকে যোগদান করতে পারবেন ?

যারা দক্ষ এবং যোগ্য ব্যক্তি এবং যারা নিয়মিত চাকরি বদল করেন তারা সব সময় এই প্রশ্ন শুনে থাকেন। কোম্পানি নতুন লোক নিয়োগ দেয় তখনি যখন তাদের পদ খালি হয় কিংবা অতিরিক্ত কর্মী দরকার পড়ে। কোম্পানি যদি আপনাকে সত্যি নিয়োগ পত্র দেয় তবে অবশ্যই এই প্রশ্ন করবে। কেননা নতুন একজনকে নিয়োগ দেয়া মানে নতুন পেপারওয়ার্ক, ট্রেনিং সহ অনেক কাজ যা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই এই আলোচনা টেবিলে না এলে পরবর্তী ইন্টারভিউ এর প্রস্তুতি নিন।  

৬. বেতনের ব্যাপারে কথা না হওয়া

ইন্টারভিউ যদি ভালো হয় তবে ইন্টারভিউ এর মাঝে কিংবা শেষ অংশে বেতন নিয়ে কথা হবেই। কেননা  ইন্টারভিউয়ার যদি মনে করে আপনি তাদের কোম্পানি বা টিমের জন্য যোগ্য তবে তারা আপনার সাথে বেতন বিষয়ে সমঝোতায় আসতে চাইবে। যোগ্য লোক পেলেই হয় না তাকে রাখার যোগ্যতা ও দরকার। তাই যখন আপনার যোগ্যতা এবং চাহিদার সাথে চাকরীদাতার ইচ্ছা মিলে যাবে, তখন বুঝতে পারবেন চাকরিটা আপনি পেয়ে গেছেন সত্যি।

চাকরিটা আপনি পেয়ে যাবেন সত্যি; Image Source:businessinsider.com

৭. অমীমাংসিতভাবে ইন্টারভিউ শেষ হওয়া

যেকোনো কোম্পানি নতুন সদস্য নেওয়ার ব্যাপারে যাচাই বাছাই করে সতর্কতার সাথে। তাই যেকোনো চাকরি প্রক্রিয়া কয়েক ধাপে চলে যেমন- প্রথম ধাপে ইন্টারভিউ, ট্রেনিং, যাচাইকরণ। প্রাথমিক ইন্টারভিউ যদি ঠিক মতো হয় তবে চাকরীদাতা নিজেই আপনাকে পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে জানাবেন। আপনি যদি পছন্দের তালিকার প্রথম ব্যক্তিটি হন তবে আপনাকে হয়তো পরবর্তী ধাপ যেমন ট্রেনিং, যাচাইকরণ পরীক্ষার সময় জানানো হবে। কিন্তু সাক্ষাতকার শেষে যদি আপনাকে এই সব পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে ব্যাখ্যা না করা হয় তবে ধরে নিতেই পারেন আপনার ডাক পড়বে না ।

তাই চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে আসার পর যদি উপরের সাইনগুলো মিলিয়ে দেখেন আপনার ডাক পড়ার সম্ভাবনা নেই ,তবে মন খারাপ না করে, সময় অপচয় না করে লেগে পড়ুন নতুন উদ্যমে।   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *