প্রথম দর্শনেই কারো উপর প্রভাব বিস্তার করার কৌশল

photo: hip new jersey

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের গবেষক অ্যামি কোডি প্রায় এক দশক ধরে ফার্স্ট ইমপ্রেশন বা প্রথম দর্শন নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি এবং তার সহকর্মীরা মিলে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, কোনো মানুষকে প্রথম দর্শনে আমাদের অবচেতন মন দুটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজে।

১. আমি কি এই ব্যক্তিকে বিশ্বাস করতে পারি?

২. আমি কি তার দক্ষতা কে সম্মান করতে পারি?

photo: fortunebuilders

কোডির গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ প্রথম দর্শনে অবচেতনভাবে পরস্পরকে নিয়ে এই প্রশ্ন দুটি উত্তর খোঁজে: “এই ব্যক্তির কী আমার নিকট সৎ উদ্দেশ্য আছে, যে আমি তাকে বিশ্বাস করতে পারি?” অথবা “এই ব্যক্তি কি সবকিছুতে সক্ষম?”

আমরা সাধারণত মনে করি, যোগ্যতা বা দক্ষতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আর তাই নতুন কারো সাথে পরিচয় হলে আমরা নিজেদের দক্ষতা ও যোগ্যতার ছাপ রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু কোডির গবেষণা বলছে, বিশ্বাস হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার দক্ষতা এবং যোগ্যতার বিচার করার আগে মানুষ সিদ্ধান্ত নেন তিনি আপনাকে বিশ্বাস করবেন কিনা। যদি তিনি আপনাকে বিশ্বাস না করেন, তবে আপনার দক্ষতা তার কাছে নেতিবাচক হয়ে যায়, আর আপনার যোগ্যতা তার কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়ে। কোডি আরও বলেন, একজন চমৎকার ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ আপনার কাছ থেকে সকল প্রকার প্রশংসা ও সম্মান পাবেন যখন আপনি তাকে বিশ্বাস করবে।

কিভাবে প্রথম দর্শনেই কারো বিশ্বাসী হবেন

তার সাথে সাক্ষাৎ করা মানুষটি নির্ভরযোগ্য এবং সক্ষম কিনা তা বিচার করতে যেহেতু মানুষ কয়েক মুহূর্ত সময় নেই, তাই গবেষণা বলছে প্রথম দর্শনের প্রভাব পরিবর্তন করা সত্যিই খুব কঠিন। কেননা এই মূল্যায়ন মানুষের অবচেতন মন করে থাকে।

photo: bestlifeonline

আপনি যদি নতুন কারো মনে আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার আগে আপনার প্রতি আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন, তবে আপনার প্রচেষ্টা ব্যর্থও হতে পারে। কোডি এক্ষেত্রে যেমনটা বলেন, আপনি যদি কাউকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন আর সে যদি আপনাকে বিশ্বাস না করে, তাহলে আপনি বেশিদূর এগোতে পারবেন না; এমনকি আপনি তার চোখে একজন সন্দেহভাজন মানুষে পরিণত হবে। কেননা আপনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন।

আপনি যদি যোগ্যতার চেয়ে নির্ভরতার গুরুত্ব বেশি উপলব্ধি করে থাকেন, তবে আপনি প্রথম দর্শনে অন্য কারো মনে আপনাকে নিয়ে সৃষ্টি হওয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এখানে এমন কিছু কৌশল আলোচনা করা হলো যা রপ্ত এবং চর্চা করলে আপনি প্রথম দর্শনেই কারো কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারবেন।

১. সামনের মানুষটিকে আগে কথা বলার সুযোগ দিন

আপনার সামনের মানুষটিকে আগে কথা বলার সুযোগ দিন, এমনকি কথোপকথনের নেতৃত্ব তার উপর তুলে দিন। আপনি শুধু প্রয়োজনীয় সম্পূরক প্রশ্ন করে কথা এগিয়ে নিন। মানুষ তাকেই বিশ্বাস করে যে তাকে গুরুত্ব দেয়। সুতরাং তার কথায় সম্পূর্ণ গুরুত্ব দিন এবং খুশি মনে তার সাথে কথা চালিয়ে যায়।

২. ইতিবাচক শারীরিক ভাষা ব্যবহার করুন

কারো সাথে প্রথম সাক্ষাতে আপনার শারীরিক ভাষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার অঙ্গভঙ্গি, অভিব্যক্তি, গলার স্বর এতটা মোলায়েম ও নান্দনিকভাবে তুলে ধরুন যেন বিশাল আকার মানুষও আপনার সামনে নত হয়ে যায়। উৎসাহব্যঞ্জক স্বরে সামনের মানুষটির দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে হাসি মুখে কথা বলুন।

photo: fashionbeans

তার দিকে কিছুটা ঝুঁকে আপনি সম্পূর্ণভাবে তার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এটা প্রমান করুন, যা আপনার প্রতি তার বিশ্বাসকে আরও মজবুত করবে।

৩. ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন

নতুন কারো সাথে প্রথমবার সাক্ষাতে আপনার ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। যদিও আপনার কাছে আসা প্রত্যেকটি ফোন করই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রথমবার কারো সাথে সাক্ষাতে মোবাইল ফোনে মেসেজ চেক করা বা কারো সাথে কথা বলা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন। আপনি সবকিছু ছেড়ে সম্পূর্ণভাবে সামনের মানুষটির দিকে মনোযোগী হোন।

ভেবে দেখুন, আপনি কারো সাথে কথা বললে কথার মাঝে সে যদি আপনাকে থামিয়ে দিয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আপনার কাছে নিশ্চয়ই সেটা বিব্রতকর হবে। একই রকম প্রতিক্রিয়া আপনার সামনে থাকা মানুষটির মধ্যেও হয়ে থাকে।

৪. আলাপ সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করুন

এই বিষয়টি আপনার কাছে তুচ্ছ মনে হতে পারে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, সর্বোচ্চ ৫ মিনিট সময়ের মধ্যে যদি আপনার বক্তব্য শেষ করতে পারেন তবে তা অধিক ফলদায়ক হয়। আপনার সামনে থাকা মানুষটি বুঝতে পারে আপনি তার সময়ের গুরুত্ব বোঝেন আর তাই যথাসম্ভব দ্রুত এবং সংক্ষিপ্ত আকারে আপনার বক্তব্য আপনি উপস্থাপন করেছেন।

photo: disciples workshop

আপনি যেহেতু তার সময়ের প্রতি যত্নশীল, তাই তিনি খুব সহজেই আপনাকে বিশ্বাস করবেন।

৫. মনোযোগী শ্রোতা হন

মনোযোগী শ্রোতা হওয়ার অর্থ হলো তার কথার পর আপনি কী বলবেন তা প্রস্তুত করার বদলে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তার কথা শোনা। আপনি নিজে কী বলবেন তা নিয়ে যদি ব্যস্ত থাকেন, তাহলে সামনে থাকা মানুষটির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন না। আর যে কারণে তার কথার বিপরীতে সম্পূরক প্রশ্নও আপনি করতে পারবেন না।

আপনি যদি তার কথা মনোযোগ দিয়ে নাই শুনেন, তার কথা নাই বোঝেন, তাহলে সেই কথপোকথনের প্রয়োজন কী? নিজে কী বলবেন তা ভাবার চেয়ে সামনে থাকা মানুষটির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলে বরং কথপোকথনটি আরো বেশি প্রাঞ্জল হবে, যা ওই মানুষটির মনে আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে সহায়ক হবে।

৬. পূর্ব প্রস্তুতি

কারো সাথে ঘটা করে সাক্ষাৎ করলে নিশ্চয়ই তাকে আপনি আগে থেকে চেনেন বা তার সম্বন্ধে আগে থেকে জানেন। সুতরাং তাকে নিয়ে আরও একটি গবেষণা করুন, তার সম্বন্ধে আরও একটু জানার চেষ্টা করুন। তার কিছু ভালো লাগা-মন্দ লাগা বিষয় এবং পছন্দের কথা জানার চেষ্টা করুন। এতে তার সাথে কথা বলতে এবং তার কথা বুঝতে আপনার সহজ হবে।

photo: hip new jersey

একই সাথে কথা প্রসঙ্গে যদি তার ভালোলাগা কোনো বিষয়ে আপনি বলতে পারেন, তাহলে খুব সহজেই তিনি আপনাকে তার সমকক্ষ মনে করবেন অথবা আপনি তার ভালো লাগা-মন্দ লাগার প্রতি মনোযোগী এটা জেনেই তিনি খুশি হবেন। আর এই খুশি খুব সহজেই তার মনে আপনার প্রতি বিশ্বাস সৃষ্টি করে দিবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *