যেভাবে চলমান ব্যবসায়িক পরিকল্পনা লিখবেন

ব্যবসায়ের পেছনে অনেক অর্থ ব্যয় করে, ব্যবসার জন্য ইন্সুরেন্স করে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন না ব্যবসা সফলভাবে চলবে কি না। ব্যবসা দ্রুতগতিতে চলার জন্য প্রয়োজন সঠিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনা। একটি ব্যবসাকে সফল করার পেছনে ব্যবসায়িক পরিকল্পনার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো বিপদ থেকে বাঁচার জন্যও ব্যবসায়িক পরিকল্পনার অবদান রয়েছে।

Photo: Numillenium Digital Technologies Ltd

পূর্ব থেকে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থাকলে হঠাৎ করে ব্যবসায়ের বিপর্যয় হলে শ্রমিক, কর্মীদের হারাতে হবে না, বরং বিপর্যয় থেকে কিভাবে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া যায় তার সঠিক কার্যক্রম ও পরিকল্পনা নিশ্চিত হবে।

এখন কথা হলো, আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনাটি কতটা মজবুত। ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় যদি অবাস্তব ও অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় উল্লেখ থাকে তাহলে তা কোনোভাবেই সঠিক হতে পারে না। তাই ব্যবসায়িক পরিকল্পনা হতে হবে যৌক্তিক, বাস্তবসম্মত ও পরিকল্পনামাফিক। আসুন জেনে নিই কিভাবে সঠিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনা লিখবেন তা সম্পর্কে।

ব্যবসায়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো লিখুন

ব্যবসায়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ ব্যবসায়িক পরিকল্পনার প্রাণ। ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় প্রথমে আপনার ব্যবসায়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ লিখুন।

Photo: Business Consulting

ব্যবসায়ের লক্ষ্যসমূহ ও উদ্দেশ্যসমূহ লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো আপনি আপনার ব্যবসাকে কোথায় নিয়ে যেতে চান, কী কী গোল অর্জন করতে চান এই সবকিছু এখানে উল্লেখ থাকবে। তবে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যবসা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো বিপদে পড়ে গেলে তা থেকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি অর্জন করা।

কর্মী

চলমান ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় আপনার বিশ্বস্ত কয়েকজন কর্মীর নাম লিখুন যারা যেকোনো বিপদে আপনার পাশে থাকবে, আপনাকে সাহায্য করবে এবং কখনো আপনাকে ঝুঁকিতে ফেলবে না।

Photo: Atlas Executive Consulting

এমন কয়েকজনের নাম লিখুন যারা অভিজ্ঞ। যেকোনো মূহুর্তে আপনি যাদের সাথে যেকোনো বিষয়ে পরামর্শ করতে পারেন তাদের নাম লিখুন। অভিজ্ঞ ও কৌশলী কর্মীদের উপযুক্ত পজিশনে নিয়োগ দিতে পারেন। যোগ্য ব্যক্তিদের যথাযথ স্থানে নিয়োগ দিলে কখনো অস্তিত্বহীনতায় ভুগতে হয় না।

বাহ্যিক পরিচিত লোক

ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ কর্মী ছাড়াও বাহ্যিক পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ লোক, কোম্পানি আপনাকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারে যেমন ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা, কোম্পানির এটর্নী, হিসাবরক্ষক, ব্যাঙ্কার, তথ্য প্রযুক্তি পরামর্শদাতা ইত্যাদি। চলমান ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় তাদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর লিখুন।

যন্ত্রপাতি

ধারাবাহিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় এমন সকল যন্ত্রপাতির নাম লিখুন যেসকল যন্ত্রপাতিগুলো আপনার ব্যবসার জরুরী মূহুর্তে, বিশেষ কোনো কাজে লাগে।

Photo: The Wire Realm

যন্ত্রপাতি, সফটওয়্যারগুলোর নাম ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় থাকলে জরুরী মূহুর্তে তা খুঁজে পাওয়া যাবে এবং সমস্যা সমাধান করা যাবে।

ব্যবসায়ের ডকুমেন্টস অর্থাৎ নথিপত্র

প্রতিটি ব্যবসায়ের খুব গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, ব্যবসায়িক কাগজপত্র থাকে। যেমন ট্যাক্সের কাগজপত্র, ব্যবসার রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র, অন্তর্ভুক্তিকরণের কাগজপত্র, ব্যাংকের সকল হিসাব, ইজারার নথিপত্র, কর্মীদের তথ্যসমূহ ।

Photo: professionalprogressions.com

এই ধরনের সকল জরুরী কাগজপত্র ও তথ্যসমূহ চলমান ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করুন। কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ের কারণ যেমন আগুনে যদি কাগজপত্র সব পুড়ে যায় তাহলে কী করবেন? ব্যবসায়িক দলিল, নথিপত্র সব কিছুই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় সবকিছু অন্তর্ভুক্ত রাখা উচিত।

প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম

ব্যবসায়ে যেকোনো সময় বিপদ ঘটতে পারে। কখনো কি ভেবেছেন যদি কোনো দিন ব্যবসায়ের উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম হারিয়ে যায় তাহলে কি করবেন? তবে ব্যবসায়ের শুরুতেই সকল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের উপর ইনস্যুরেন্স করে রাখা ভালো। শুধু ভালো বৈ কি নিরাপদ।

তবে ব্যাবসায়ের বিপদে ইনস্যুরেন্স কোম্পানি বা বীমা কোম্পানি সমপরিমাণ টাকা বা যন্ত্রপাতি সাথে সাথে দিবে না। আপনি নিশ্চয়ই বীমা কোম্পানির দিকে তাকিয়ে আপনার কাস্টমারদের সাথে আলাপ আলোচনা বন্ধ রাখবেন না। বসে না থেকে উৎপাদন চালিয়ে যেতে হবে। তাই প্রয়োজন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় এমন কোনো বিকল্প ব্যবস্থা উল্লেখ রাখুন যার মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারবেন।

প্রয়োজনীয় স্থান নির্বাচন

যদি বর্তমানে যেখানে আপনার ব্যবসা রয়েছে সেই জায়গাটি কোনো কারণে হারিয়ে যায় বা অন্য কোনো কারণে এই জায়গাটি ছেড়ে দিতে হয় তাহলে কী করবেন? ভেবেছেন কখনো? ঐ মূহুর্তে আপনার কর্মীরা কোথায় বসে কাজ করবে? নাকি ব্যবসার সব কাজ বন্ধ করে রাখবেন। ব্যবসার এই বিষয়গুলো খুব বিপদজনক। ব্যবসায়ের জন্য হুমকিস্বরুপও। ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় এসকল বিষয় উল্লেখ রাখুন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ উল্লেখ রাখুন। যদি পূর্বের জায়গাসংক্রান্ত ঝামেলার অবসান না হয় তাহলে নতুন করে কোথায় ব্যবসা স্থাপন করলে ভালো হয়, সকলের জন্য সুবিধাজনক হয় তার উল্লেখ রাখতে পারেন ব্যবসায়িক পরিকল্পনায়। তবে যেখানেই ব্যবসা স্থানান্তর করেন না কেন, উক্ত স্থানটি যেন সকল দিক থেকে সুবিধাজনক হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

নির্দেশিকা তালিকা

ব্যবসায়ের সঙ্কটজনক মূহুর্তে অন্যান্যদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য নির্দেশিত তালিকা পূর্বে থেকে ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় লিখে রাখুন। ব্যবসায়ের বিপদে এবং প্রয়োজনীয় মূহুর্তে বীমা কোম্পানিকে জানানো খুব দরকার। তাই তাদের যেভাবে জানাতে হবে সে নির্দেশনা, প্রয়োজনীয় তথ্য ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় লিখে রাখুন। জরুরী প্রয়োজনে এই তথ্যগুলো আপনাকে সাহায্য করবে।

ব্যবসায়িক পরিকল্পনার একাধিক কপি রাখুন

ব্যবসায়ের পুরো পরিকল্পনা লেখার পর আপনি অবশ্যই পুরো পরিকল্পনার হার্ডকপি ও সফটকপি নিজের কাছে রাখবেন। প্রয়োজনে একাধিক কপি করে রাখবেন।

Photo: Inc.

যদি কখনো একটি কপি খুঁজে পাওয়া না যায় তাহলে অন্য একটি কপি দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়া যাবে। নিজের কাছে সংরক্ষণ করার পাশাপাশি বিশ্বস্ত কর্মীদের কাছেও যেন সংরক্ষণ থাকে তা নিশ্চিত করুন। ব্যবসায়ে ঝুঁকি ও অনিশ্চিয়তা থাকবেই। তবে এটি ভাবা ঠিক নয় ব্যবসায়ে সবসময় শুধু ঝুঁকি থাকবে। ব্যবসায়িক পরিকল্পনা লেখা খুব সহজ। তাই প্রথমেই একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা লিখে ফেলুন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *