যেভাবে আকর্ষণীয় ফিচার নিবন্ধ লেখা যায়

photo: google

লেখালিখি একটি সৃজনশীল কাজ এবং প্রত্যেক লেখকের কিছু বিশেষত্ব থাকে। সুতরাং লেখক হতে হলে বা ভালো কিছু লিখতে হলে সৃজনশীল এবং মৌলিক চিন্তার অধিকারী হতে হবে। সাথে সাথে লেখার বিষয়বস্তু হতে হবে বুদ্ধিদীপ্ত, আলোকিত এবং ভবিষ্যৎ অনুসন্ধানী। লেখার বিষয়বস্তু এমন হওয়া উচিত যেন তা পাঠ করার সময় মনে হয় ঐশ্বরিক। প্রাঞ্জল রচনা সবসময়ই পাঠককে ধরে রাখে, পাঠকের মনকে আন্দোলিত করে। তাদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে এবং সবসময়ই মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে।

photo: clasicooo

কিন্তু নির্দিষ্ট বিষয়ে ফিচার বা নিবন্ধ লেখা আর সৃজনশীল লেখার মধ্যে কিছুটা তফাৎ আছে। সৃজনশীল লেখা সম্পূর্ণই লেখকের মস্তিষ্কজাত, যা সম্পূর্ণভাবেই সেই লেখকের বিশেষ পরিচয় বহন করে। কিন্তু ফিচার লেখা অনেকটা বিজ্ঞাপন লেখার মতো। একটি সুনির্দিষ্ট বিষয় বা কোনো পণ্য নিয়ে ফিচার লিখলে পাঠককে লেখার নৈপুণ্যের দিকে নয়, বরং ঐ সুনির্দিষ্ট বিষয় বা পণ্যের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করানোর উদ্দেশ্যে লেখা হয়।

এর জন্য লেখককে সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তু, পণ্য বা ক্রাফট নিয়ে গবেষণা করতে হয় এবং লেখার এমন চমৎকার পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হয় যাতে পাঠক মনোযোগী হবে। সাথে সাথে পণ্যটি ব্যবহার করতে আগ্রহী হয়ে উঠবে। সাধারণ মানুষ যখন এমন কোনো বিষয় বা পণ্য নিয়ে কিছু ভাবে না, তখন একটি লেখনীর মাধ্যমে এই বিষয়টি বা পণ্য সম্বন্ধে পাঠকের মনে কৌতূহল সৃষ্টি করতে হবে এবং পণ্যটি তার কাছে প্রয়োজনীয় করে তুলতে হবে।

photo: riveria global

সুতরাং চলুন আমরা এমন কিছু খুঁজে বের করি যা আমাদের নাতি-নাতনিদেরও ভালোলাগার বিষয়ে হবে। আমাদের নাতি-নাতনিরা আমাদের এই সময় সম্বন্ধে বলবে। সামগ্রিকভাবে বিষয়বস্তুগুলো উপস্থাপনের দুর্দান্ত উপায় আবিষ্কার করতে হবে, যাতে পাঠক অন্ততপক্ষে পছন্দ করে।

১. যথাযথ বক্তব্য উপস্থাপন করুন

ধরুন আপনি একজন ব্যাংকার এবং একটি নতুন স্যুট কিনতে চান। স্বভাবতই আপনি এমন একটি দোকান খুঁজে বের করলেন, যার সামনে বিক্রির জন্য একটি স্যুট ঝোলানো আছে। আপনি দোকানের মধ্যে প্রবেশ করলেন এবং জিন্স প্যান্ট ও টি-শার্ট পরা এক দোকানীর সাথে আপনার সাক্ষাৎ হলো।

photo: webcache.googleusercontent

দোকানী ছেলেটি এবং আপনার কথোপকথন যদি এমন হয় তাহলে আপনার প্রতিক্রিয়া কি হবে? দোকানী আপনাকে জিজ্ঞেস করল: “কি চায় স্যার?”

“আমি একটি স্যুট কিনতে চাই।”

“জী, বাইসাইকেল?”

“না, স্যুট। বাইরে যেমন একটা ঝোলানো আছে।”

“কিন্তু স্যার আমাদের এখানে এই একটি স্যুটই আছে। আপনি যদি চান তাহলে স্কেটবোর্ড বা বাইসাইকেল নিতে পারেন।”

“আপনারা স্যুট বিক্রি করেন না তাহলে প্রদর্শন করেছেন কেন?”

“আসলে আমরা আমাদের দোকানে আসা থেকে কাউকে বিরত রাখতে চাই না!”

এই আলাপচারিতার পর আপনার প্রতিক্রিয়া কী হবে? তারা যত ভালো স্কেটবোর্ড বা বাইসাইকেল বিক্রি করুক না কেন আপনি নিশ্চয়ই আর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়াবেন না। সকল ফিচার বা বিজ্ঞাপন লেখককে এই মৌলিক বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। আপনি যদি শুধুই স্কেটবোর্ড বিক্রি করেন, তাহলে কখনোই স্যুট খোঁজা কোনো ক্রেতার কাছে বিপণন করতে যাবেন না।

photo: medium

ফিচার নিবন্ধ বা বিজ্ঞাপন লেখার সময় বিষয়বস্তু হতে হবে যথার্থ। সুনির্দিষ্ট বিষয়ে লেখা নিবন্ধে শিরোনাম এবং বিষয়বস্তুর মধ্যে যৌক্তিক এবং যথার্থ মিল থাকতে হবে। আকর্ষণীয়, কিন্তু মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিবন্ধ লিখে কাউকে বিরক্ত করার বদলে আপনার মূল গ্রাহক বা ক্রেতার দিকে মনোযোগ দিন। তাদের পায়ে পা মিলিয়ে চলুন, তাদের মত করে চিন্তা করুন। তাদের ভালো লাগা এবং মন্দলাগা অনুধাবন করার চেষ্টা করুন, আর তার নিরিখে এমন কিছু লিখুন যা তাদের মন জয় করে নেয়। তারা যা পছন্দ করে তা আরও বেশি আকর্ষণীয় এবং মনোগ্রাহী করে উপস্থাপন করুন আর যা অপছন্দ করে তা পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন।

২. সমস্যাকে একটি ধারণায় পরিণত করুন

কোনো একজন ব্যক্তি কেন রেগে আছেন সেটা আপনি জানেন এমন তথ্য তাকে জানালে, তার রাগ কমে গিয়ে ভালো অনুভব হবে এমন কিন্তু নয়। অথবা ধরুন কারো মন খারাপ। আপনি যদি তাকে বলেন কেন আপনার মন খারাপ তা আমি জানি। আপনার এই কথায় তার মন খারাপ কমবে না, এমনকি তিনি নিজেকে আপনার থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবেন।

photo: steelcase

কিন্তু তার বদলে যদি আপনি বলেন, মন খারাপ থাকলে কী কী হতে পারে? মন খারাপ থাকা কেন ভালো নয়। অথবা রাগ বা দুঃখ থেকে কিভাবে নিস্তার পাওয়া যায়। তাহলে তিনি আপনাকে তার বন্ধু ভাববেন এবং আপনার প্রস্তাব বা আবেদন সহজেই গ্রহণ করবেন।

সুতরাং কোনো সমস্যার সমাধান নয়, বরং সমস্যাটিকে একটি ধারণায় রূপান্তরিত করুন এবং তার সম্ভাব্য সমাধান, ভাল দিক-মন্দ দিক  এবং আপনার পক্ষ থেকে কী করনীয় তা প্রকাশ করুন। ক্রেতা বা গ্রাহকের সমস্যাকে ব্যাখ্যা করুন। তাদেরকে জানান সমাধান করার পর কি হতে পারে আর সমাধান না করলে কি হতে পারে। পুরনো স্যুটে আপনাকে ভাল দেখাচ্ছে না, এটি বলার বদলে বলুন, পুরনো স্যুটে কী কী সমস্যা হতে পারে আর আপনি যদি স্যুট পাল্টান তাহলে ভালো কী কী ঘটতে পারে।

৩. ধারণা থেকেই মৌলিক আইডিয়া

কাগজের উপর একটি বৃত্ত আঁকুন। তারপর সেই বৃত্তের চারপাশে আরো একটি বৃত্ত, দ্বিতীয় বৃত্তের চারপাশে আরো একটি বৃত্ত আঁকুন। এবার কল্পনা করুন সবচেয়ে বাইরের বৃত্তটি একটি সমস্যা, আর দ্বিতীয় বৃত্তটি এই সমস্যা সম্পর্কিত সকল ধারণা। এবার কেন্দ্রের দিকে নজর দিন। নিঃসন্দেহে কেন্দ্রীয় বৃত্তটি একটি মৌলিক আইডিয়া, যাকে ঘিরে এত সমস্যা এবং সম্ভাবনা বিরাজমান।

photo: google

সমস্যাটির সমাধান করার জন্য কী করণীয় তা সহজেই আপনার কাছে ধরা দিবে না। আপনাকে তার সব রকম সম্ভাব্যতা নিয়ে কাজ করতে হবে, অর্থাৎ সম্পূর্ণ ধারণা নিয়ে এগোতে হবে। এবার এ সম্পর্কিত সকল ভাবনা লিখে ফেলুন এবং এই ধারণাগুলোকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করুন। এভাবে সমস্যাটিকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি মৌলিক আইডিয়ায় রূপান্তরিত করুন।

এভাবে সমস্যা সমাধান করে এগিয়ে যাওয়ার জন্যই তো আমরা পৃথিবীতে এসেছি। সুতরাং জগতের সকল সমস্যা একইভাবে সমাধান যোগ্য। লেখকরা ঠিক এই কাজটিই করে থাকেন। সৃজনশীল লেখনী হোক অথবা কোনো ফিচার নিবন্ধ হোক, সব লেখারই লক্ষ সমস্যার সমাধান করে একটি চমৎকার আইডিয়া দাঁড় করানো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *