জীবনের গন্তব্য খুঁজে পাচ্ছেন না? তাহলে এই নিবন্ধটি পড়ুন

photo: bbc

জীবনে কখনো কখনো বিরাট বিপর্যয় নেমে আসে। এমনকি আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাই। বহুদিনের সাজানো স্বপ্ন ও পরিকল্পনা ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যায়, অথবা আমরা জীবনের এমন পর্যায়ে এসে উপনীত হই যেখান থেকে ঠিক কোনো পথে যাওয়া উচিত তা নির্ধারণ করা যায় না। কখনো কখনো জীবন সত্যিই গন্তব্যহীন হয়ে যায়।

জীবনে বিপর্যয় আসবেই। জীবন এমনই অনির্ধারিত, অনির্ণীত! যদি এমন হয়, বিরাট বিক্ষিপ্ততা এসে ভর করে মনে। কোন পথে যাওয়া উচিত তা নির্ধারণ করতে না পারেন, তাহলে গন্তব্য আবার নতুন করে নির্ধারণ করুন।

photo: bbc

মাধ্যমিক স্কুলে পড়াকালীন অধিকাংশ মানুষ স্বপ্ন দেখে এমন একটা ক্যারিয়ারের, যা তাকে পরবর্তী জীবনে অর্থনৈতিক, পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে সুখী করে তুলবে। এটা সত্যিই অনেক কঠিন কাজ! কেননা এত কম বয়সে আপনি সত্যিই জানেন না ভবিষ্যতে কী আপনাকে সুখী করবে, বিশেষ করে আপনার বয়স যখন মাত্র কৈশোরে।

আমরা সত্যিই জানি না ভবিষ্যতে কী আমাদের সুখী করবে, এমনকি এখন থেকে ৫ বছর পর কোন কাজে আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করব তা এখনই বলে দেওয়া যায় না। কিন্তু যেটা বলা যায় তা হলো, এই মুহূর্তে আমাকে কি সুখী করে।

অধিকাংশ মানুষ ভবিষ্যৎ নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকে যে বর্তমানে মনোযোগ দেওয়ার সময়ই পায় না। ফলশ্রুতিতে তাদের বর্তমান অসুখী অবস্থায় কাটে এবং স্বপ্নের ভবিষ্যৎ কখনোই দেখা দেয় না। সুতরাং আপনি যদি গন্তব্যহীন হয়ে থাকেন, যদি এখনো না জেনে থাকেন আপনার কোন পথে যাওয়া উচিত, কী করা উচিত, তবে আজকের এই নিবন্ধ আপনার জন্য।

সম্পূর্ণ ভবিষ্যৎ কখনো আগেই কল্পনা করা যায় না

আপনার জীবনের পরবর্তী ঘটনা কী অথবা সামনে আপনার জন্য কী অপেক্ষা করছে তা কখনই আগে জানা যায় না। জীবন তাৎক্ষণিক! আপনি যা কখনো ভাবেননি আপনার জীবনে তাই ঘটতে পারে। কিন্তু আমরা যা করতে পছন্দ করি তা যদি ক্রমাগত করে যাই আর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করি তাহলে অবশ্যই তা সফল হয়।

photo: world transformed

ধরা যাক, ক্যারিয়ার হিসেবে আপনি গহনা বানাতে পছন্দ করেন। আপনি যদি ক্রমাগত এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যান পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে আপনি একজন দক্ষ গহনা শিল্পী হয়ে উঠবেন, এবং এই ক্ষেত্রে সাফল্যের পর আপনি চাইলে অন্যান্য হস্তশিল্প নিয়েও কাজ শুরু করতে পারবেন।

সুতরাং জীবন তাৎক্ষণিক হলেও তা প্রভাবিত হয় আমাদের কৃতকর্ম দ্বারা। আমরা জীবনের সাথে যেমন আচরণ করব জীবন আমাদের তাই ফেরত দিবে।

অস্বস্তিকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন

জীবন কখনো কখনো অস্বস্তিকর হয়। কখনো কখনো মনের সব শখ পূরণ করার জন্য হাতে পর্যাপ্ত টাকা থাকে না। নিজের সেরাটা নিয়ে আপন জনের সামনে উপস্থিত হওয়ার অর্থনৈতিক সক্ষমতা থাকে না। কিন্তু তাই বলে কী আমরা সম্পর্কগুলোকে আরো অস্বস্তিকর করে তুলবো?

photo: crosswalk

যদি সত্যিই আপনি কিছু করার বা কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য বদ্ধপরিকর হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই জীবনের কিছু অস্বস্তির সাথে আপনাকে আপস করতেই হবে। অনেক অপূর্ণ স্বপ্ন নিয়েও একটি চূড়ান্ত স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। সুতরাং চূড়ান্ত এবং কাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু পেতে ছোট ছোট অস্বস্তি ও অপূর্ণতাকে হাসিমুখে আলিঙ্গন করুন।

জীবন অনিশ্চিত! আপনি শুধু এগিয়ে যান

জীবন সত্যিই অনিশ্চিত! কখন আপনার সাথে কি ঘটবে তা আপনি জানেন না! হয়তো একসময় আপনার চাকরি ছিল, ভালো রোজগার ছিল, সম্মান ছিল, চারপাশে প্রচুর মানুষ ছিল। তাই আপনার সব সম্পর্কগুলো সুন্দর ছিল। কিন্তু যখন আপনি কোনো একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় জীবন থেকে ছিটকে পড়লেন, তখন মুহূর্তেই সব কিছু হারালেন।

photo: contunombre8.blogspot

এইসব দুর্ঘটনায় কখনো আমাদের হাত থাকে না। আমরা পরিস্থিতির শিকার। তবুও বিষন্নতা এবং দুঃখবোধ আমাদের ভারাক্রান্ত করে! কিন্তু তাই বলে আপনার জীবনের সবকিছুই কি শেষ হয়ে গেছে?

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করুন এবং সে পরিকল্পনা মতো ধীরে ধীরে এগিয়ে যান। প্রতিটি খারাপ ঘটনা ভালো কিছু ঘটানোর সুযোগ দিয়ে থাকে। সেই সুযোগটা ব্যবহার করুন।

বিক্ষিপ্ততা, আলসেমি ও নিজের অযাচিত অহং বন্ধ করুন

সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে আপনি তরুণ হচ্ছেন না, বরং বুড়িয়ে যাচ্ছেন। হ্যাঁ, এটাই নিদারুণ সত্য!

আপনি যদি এখনই আপনার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে না যান, আপনার স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা না করেন, তাহলে একসময় আপনি বন্ধুদের সাথে কিছু পার্টি আর ফেইসবুকে আপনার করা অসংখ্য পোস্ট ছাড়া পাশে আর কিছুই খুঁজে পাবেন না।

photo: envato

আপনি যদি সত্যিই কোন স্বপ্ন পূরণ করতে চান সেটা ক্যারিয়ার সম্পর্কিত হোক আর জীবন সম্পর্কিত হোক তাহলে এখনি তাকে আকড়ে ধরুন। ফেসবুকের নোটিফিকেশন বন্ধ করুন আর কাজে নেমে পড়ুন। শুধুমাত্র চিন্তা করে কোনো কাঙ্খিত লক্ষ্যে কখনোই পৌঁছতে পারবেন না।

নিজেকে প্রশ্ন করুন

নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করুন। তারপর জীবনের ছোট, বড় নানান অনির্ণীত প্রশ্ন নিজেকে করুন। নিজেকে জানার চেষ্টা করুন। মেডিটেশন করুন। একটি কাগজে সেই সব বিষয় লিখুন, যে ব্যাপারে আপনি আগ্রহী। সেই সব বিষয়ে বা সম্পর্কে বেশি গুরুত্ব দিন যার সাথে সময় বা টাকার কোনো সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক জীবনের। বড় স্বপ্ন দেখুন। নিজেকে শান্ত রাখুন আর নিজের স্বপ্ন পূরণে কাজে নেমে পড়ুন।

photo: graphcom

নিজেকে প্রস্তুত করুন

আপনার পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে যদি আবার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া লাগে তবে তার জন্য অর্থ ও সময় মজুদ করুন। আমি আমার লেখালেখি এবং সম্পাদনার কাজ শিখতে যথেষ্ট সময় নিয়েছে। যার ফলে এখন আমি অনেক বেশি লিখতে এবং সম্পাদনা করতে পারি। সুতরাং ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করুন। আপনার জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিজের দক্ষতা যতটা সম্ভব বাড়িয়ে তুলুন।

এভাবে চিন্তা করলে সত্যিই জীবনের যথার্থ লক্ষ্য আপনি খুঁজে পাবেন। জীবনের মর্ম উপলব্ধি করতে পারবেন, উপলব্ধি করতে পারবেন জীবনের নানান প্রাপ্তি ও সম্পর্কের গুরুত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *