মেশিন লার্নিং এর চাকরি-বাকরির খবরাখবর

প্রযুক্তিতে মেশিন লার্নিং বিষয়টি দ্রুত গতিতে বর্ধমান ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে একটি। এছাড়াও এটি এমন একটি ক্ষেত্র যা ক্রমেই বিভিন্ন শাখার কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কম্পিউটার প্রকৌশলের তৎপরতা এবং শেখার ইচ্ছা থাকার বাইরেও শিল্পে এর সম্ভাবনা কতটুকু? আর করার মতো এই সম্পর্কিত কয়টি শীর্ষ স্থানীয় চাকরি রয়েছে? মেশিন লার্নিং এর ক্ষেত্রে সেরা চাকরি-বাকরিগুলোর মধ্যে কোনগুলো আপনি করতে পারেন এবং সে বিষয়ে কিছু টিপস্‌ উল্লেখ করা হলো এই লেখায়।

মেশিন লার্নিং কী?

সারমর্ম করে বলতে গেলে, মেশিন লার্নিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষের কোনো রকম ইনপুট দেয়া ছাড়াই সফটওয়্যারকে সঙ্গতিপূর্ণ করে তোলার জন্য প্রোগ্রাম করা থাকে। ১৯৫০ সাল থেকে এই ধারণাটি প্রচলিত হয়ে আসলেও বর্তমানে এটি ব্যবসায়ের কাজে টেকসই একটি টুল হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিশেষ করে কৃষি, বিপণন এবং বীমা সম্পর্কিত কাজের ক্ষেত্রে বড় রকমের তথ্য বিশ্লেষণের জন্য এই টুলটি অধিক ব্যবহৃত হচ্ছে।

মেশিন লার্নিং প্রকৌশলী

যা করেন- বিদ্যমান মেশিন লার্নিং অবকাঠামো নিয়ে অনুসন্ধান বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান, সমাধান ফলপ্রসূ করার উপায় উন্নত করার কাজ করে, তথ্য বিশ্লেষণ এবং কার্যকরী ফলাফলের জন্য যথোপযুক্ত উপায় নির্ধারণ করে থাকেন। উপাত্ত বিজ্ঞানীর তুলনায় এই ভূমিকাটি অধিক বিশেষায়িত ও সংজ্ঞায়িত স্বচ্ছভাবে যার চূড়ান্ত লক্ষ্য সফটওয়্যার অপটিমাইজেশন।

যা দরকার- কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং গনিতের বিভিন্ন শাখা, সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ভিত্তি শক্ত হতে হবে। এই পেশার উচ্চ মর্যাদার পদগুলোর জন্য পূর্বশর্ত হতে পারে একই ক্ষেত্রের ডিগ্রী (এবং/ বা এই সম্পর্কিত কাজের অভিজ্ঞতা)। এছাড়াও পিএইচডি বা সমমানের ডিগ্রীধারীদেরও এই পদে চাকরির জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হয়।

অর্জন যেমন হতে পারে- লন্ডনের নামজাদা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেশিন লার্নিং প্রকৌশলীদের গড়পড়তা মাসিক আয় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার পাউন্ডের মতো। তবে এর চাইতেও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের মাসিক আয় ১ লক্ষ্য পাউন্ডের ওপরে এবং পদমর্যাদাও সে অনুযায়ী হয়ে থাকে।

যাদের জন্য উপযুক্ত- যাদের যন্ত্রপাতির সাথে কাজ করার উন্মাদনা বা প্রবল আগ্রহ ও উৎসাহ রয়েছে।

কিছু পরামর্শ- এখানে মেশিন লার্নিং প্রকৌশলীর পদগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। সেখান থেকে বুঝতে পারবেন যে, চাকুরি প্রার্থীদের প্রত্যাশিত যোগ্যতা কী কী রয়েছে এবং সে অনুযায়ী প্রতিটি লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন। আপনার যদি পূর্বের কোন যোগ্যতা না থাকে, তাহলে শুরুটা করার জন্য স্বীকৃত কোন কোর্স করাই হবে দ্রুততম ও সবচাইতে সহজ উপায়।

ছবিসূত্র: gettingsmart.com

উপাত্ত বিজ্ঞানী

যা করেন- অপেক্ষাকৃত কম দক্ষতা সম্পন্নদের কাছে বিষয়টি বোধগম্য করার জন্য মেশিন লার্নিং এর মাধ্যমে তথ্য মূল্যায়ন এবং উপস্থাপনের উপায় তুলে ধরারতে উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা। অন্য কথায় বলতে গেলে, ব্যবসায়ের অন্যান্য শাখার সুবিধার্থে তাঁরা বেশ বড় আকারের উপাত্ত সহজবোধ্য ও কার্যকরী করে তোলে।

যা দরকার- সংখ্যা, সমস্যা সমাধানের চমৎকার দক্ষতা এবং বিশদ বিবরণের যোগ্যতা। যদিও উপাত্ত বিজ্ঞানী পদের ক্ষেত্রে নিজস্ব উপায়েই কাজ করা সম্ভব, তবুও প্রাসঙ্গিক একটি ডিগ্রী থাকা অবশ্যই উপযোগী। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ করে উপাত্ত বিজ্ঞানের ওপর মাস্টার্স প্রোগ্রাম রয়েছে।

অর্জন যেমন হতে পারে- যুক্তরাজ্যে চাকরিরত একজন উপাত্ত বিজ্ঞানী বছরে আনুমানিক ৩৫ হাজার পাউন্ডের মতো অ্যায় করতে পারেন। আর উচ্চ পদস্থ একজন উপাত্ত বিজ্ঞানীর বাৎসরিক আয় হতে পারে আনুমানিক ৬০ থেকে ৮০ হাজার পাউন্ড।

যাদের জন্য উপযুক্ত- যারা সংখ্যা বা পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করতে বেশ আগ্রহী।

কিছু পরামর্শ- উপাত্ত বিজ্ঞানীর ভূমিকাটা যেহেতু খুব বিশদ তাই সেখানে সক্রিয়তাও বেশি। যদিও সেখানে পদগুলো একটি অনন্যটি থেকে ভিন্ন। যাইহোক, উপাত্ত পরিচালনা এবং উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়াটাই মুখ্য বিষয়।

ছবিসূত্র: Triometric

মেশিন লার্নিং রিসার্চার

যা করেন- পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো থেকে শুরু করে পরিকল্পনা পর্যন্ত সব কাজ তাঁরা করে থাকেন। বিভিন্ন রকম শিল্প যেমন- ঔষধ এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রের নানান যন্ত্রপাতির থেকে শুরু করে ব্যবহারকারীর কার্যকলাপের ওপর নির্ভর করে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন পর্যন্ত বিকাশের কাজ করে থাকে।

যা দরকার- কাজের একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ পদ্ধতি এবং উপাত্ত নিয়ে কাজ করার যথেষ্ট পরিমাণ অভিজ্ঞতা। এছাড়াও একই ক্ষেত্রের যেকোন বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী থাকলেও চলবে।

অর্জন যেমন হতে পারে- শুরুর দিকের পদগুলোতে ৩৫ থেকে ৭০ হাজার পাউন্ডের মতো মাসিক বেতন হতে পারে। আর উচ্চ পদস্থ মেশিন লার্নিং গবেষক পদের ক্ষেত্রে মাসিক আয় হয় এর চাইতেও বেশি।

যাদের জন্য উপযুক্ত- যারা সব কিছুতেই প্রশ্ন করতে উৎসুক

কিছু পরামর্শ- গবেষক পদে অগ্রগতির জন্য অভিজ্ঞতাটাই কিন্তু মুখ্য বিষয়। তাই যেকোন স্বেচ্ছাসেবী কাজে অংশগ্রহণ করাটা ফলপ্রসূ হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে এই সব পদের জন্য বাড়তি কিছু মানুষ সব সময়ই দরকার হয়। তাই তাদের কাছে ই-মেইল পাঠিয়ে জানিয়ে রাখতে পারেন যে, আপনি সেখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছুক।

ছবিসূত্র: Vimeo

কওয়ান্টিটেটিভ মেশিন লার্নিং রিসার্চার

যা করেন- সংখ্যাসূচক এবং গানিতিক জ্ঞানের মাধ্যমে মেশিন লার্নিং আর্থিক সংস্থানের জগতে প্রয়োগ করা হয় কাজটিই মূলত করা হয়ে থাকে।  এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই যা করা হয়ে থাকে তা হলো মেশিনকে আর্থিক বিষয় সমাধানের এবং পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের উপযোগী করে তোলা বা এআই ব্যবহার করে জটিল সব বাণিজ্যিক কৌশলের কাজ করা।

যা দরকার- কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং মেশিন লার্নিং এ পিএইচডি বা সমমানের ডিগ্রী বা গবেষণার অভিজ্ঞতা। আর সেই সাথে মাত্রিক আর্থিক সংস্থান বা একই ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা থাকা ভালো।

অর্জন যেমন হতে পারে- শুরুর দিকের পদগুলোতে আনুমানিক ৪৫ হাজার পাউন্ড এবং উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন পদগুলোতে ৮০ হাজার বা তার বেশি বাৎসরিক বেতন হতে পারে।

যাদের জন্য উপযুক্ত- যারা গুণাগুণের চাইতে পরিমাণের ওপর বেশি জোর দিয়ে থাকেন।

কিছু পরামর্শ-  এই পদে সফল ও অগ্রসর হওয়ার জন্য বাজারের ভেতর বাহির সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতে হবে। খুব বেশি অভিজ্ঞতা না থাকলে বাণিজ্যিক কাজকর্ম কার্যকরী করার জন্য বাজার সম্পর্কিত নানান বিষয়ে অনুসন্ধান ও বড় ধরনের উপাত্ত নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করা যেতে পারে।

পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট

যা করেন- মেশিন লার্নিং এর মাধ্যমে উপাত্তের কার্য সাধন বিশ্লেষণ করেন। পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট হিসেবে যথাযথভাবে কাজ করলে বা যথাযথ প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করলে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সময় অপচয় রোধ করা যায় এবং মুনাফা লাভ করা যায়। এছাড়াও বিপণনের কাজে জড়িতদের দক্ষতার সাথে কাজ এবং ই-কমার্স পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণের কাজ ও করা হয়ে থাকে।

যা দরকার- প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ডিগ্রী এবং অন্য কোন ক্ষেত্রে পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট হিসেবে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা। এর সাথে সাথে পরিসংখ্যান এবং ব্যবস্থাপনায়ও ভালো দখল থাকা প্রয়োজন।

অর্জন যেমন হতে পারে- এই পদে শুরুর দিকে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার পাউন্ডের মতো মাসিক বেতন হয়ে থাকে। আর সেই সাথে প্রতিষ্ঠান ভেদে বোনাস সহ অন্যান্য সুবিধা তো আছেই।

যাদের জন্য উপযুক্ত- যারা কর্ম সাধনে অধিক উৎসুক বা আগ্রহী।

কিছু পরামর্শ- এই ক্ষেত্রের বিভিন্ন রকম কাজে জড়িতদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। যাতে করে যেকোন রকম ইভেন্ট বা প্রকল্পে সহযোগিতামূলক কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়।

ছবিসূত্র: Twitter

Feature Image Source: smallbiztrends.com 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *