স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগ দেওয়া প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার মতো সহজ ব্যাপার নয়। কেননা স্টার্টআপ কোম্পানির চাকরি সম্বন্ধে অনেক নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত আছে। বলা হয়ে থাকে ৯০ শতাংশ স্টার্টআপ ব্যর্থ হয়। সুতরাং আপনি কি এমন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেওয়ার ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত? স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অর্থ আপনি এমন প্রতিষ্ঠানে কাজ নিতে চলেছেন যারা বিগত পাঁচ দশ বছরে বাজারে ছিল না, এমনকি ভবিষ্যতে টিকে থাকবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/03/1554005544026-1024x683.jpg)
স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগ দেওয়া অনেকটা নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে বাজি ধরার মতো; Source: Career Quest
তবে ঝুঁকি নেওয়ার মাধ্যমেই বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো সৃষ্টি হয়েছে। ফেইসবুক, অ্যাপেল বা অ্যামাজনের মতো বিলিয়ন ডলার ব্র্যান্ডগুলো স্টার্টআপ হিসেবেই জন্ম নিয়েছিল। সুতরাং ঝুঁকি নিয়ে যারা এইসব প্রতিষ্ঠানে শুরুতে যোগ দিয়েছেন আজ তারা প্রত্যেকেই সাফল্যের চূড়ান্ত শিখরে অবস্থান করছেন। আবার ফেইসবুক, অ্যাপেল, বা অ্যামাজনের সমসাময়িক সময়ে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য স্টার্টআপ শুরু হয়েছিল, যা হয়তো অল্প দিনের মধ্যেই হারিয়ে গেছে। কেননা সাফল্যের পূজারী প্রকৃতি সফল ব্র্যান্ডগুলো ছাড়া ব্যর্থ কোনো ব্রান্ডের নাম মনে রাখে না।
সুতরাং বলা যায়, স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগ দেওয়া অনেকটা নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে বাজি ধরার মতো। তবে স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার আগে কিছু বিষয় নিশ্চিত হয়ে নিলে ক্যারিয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। আজকের নিবন্ধে এমন কিছু প্রশ্ন বা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো। স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার আগে এই প্রশ্নগুলো নিজেকে করলে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে।
আপনি কি বেতন ছাড়া চাকরি করতে প্রস্তুত?
আপনি যখন নতুন কোনো টিমে যোগদান করবেন তখন আপনাকে ভালোবাসা, আন্তরিকতা, এবং গভীর আত্মবিশ্বাস নিয়ে যোগদান করতে হবে। সাথে সাথে একটি নির্মম সত্য মেনে নিতে হবে। সত্যিটি হলো, বেশিরভাগ স্টার্টআপে শুরুতে কর্মীদের কোনো সম্মানী দেওয়া হয় না। আসলে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো শুরুতে সব কর্মীর যোগ্য সম্মানী দেওয়ার উপযুক্ত অর্থনৈতিক অবস্থায় থাকে না।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/03/equipo-startup-bbva-1200x800-1024x683.jpg)
আপনি যদি ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার উন্নতির জন্য প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগ দেন তাহলে আপনার সিদ্ধান্ত ঠিক আছে; Source: BBVA
তবে সব স্টার্টআপের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু এই মানসিক প্রস্তুতি স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করবে।
আপনি কি প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে চাকরি করতে প্রস্তুত?
আপনি যদি স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে, স্টার্টআপ কোম্পানি শুধু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয় না, কখনো কখনো পেশাগত দিক থেকেও দুর্বল হয়। তাই এমন প্রতিষ্ঠানে হঠাৎ করেই চাকরি হারানোর ভয় থাকে। কেননা ইতিহাস বলে, বিশ্বব্যাপী সৃষ্টি হওয়া লক্ষ লক্ষ স্টার্টআপের সিংহভাগ ব্যর্থ হয়েছে।
তাই স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগ দিলে শুধু কাজের ব্যাপারে মনোযোগী থাকলে চলবে না। যে কোনো সময় এই চাকরি ছেড়ে অন্য চাকরিতে যোগ দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। সুতরাং আপনি যদি ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার উন্নতির জন্য প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগ দেন তাহলে আপনার সিদ্ধান্ত ঠিক আছে।
প্রতিষ্ঠাতা এবং তার দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে আপনি কতটা জানেন?
স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার পূর্বে প্রতিষ্ঠাতা এবং তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কি তাদের প্রথম স্টার্টআপ? তারা ব্যবসাক্ষেত্রে নতুন? কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী? এই স্টার্টআপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নির্ধারণ করবে তারা কীভাবে কোম্পানি পরিচালনা করবে।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/03/1554005650129-1024x475.jpg)
স্টার্টআপে যোগ দিতে হলে প্রতিষ্ঠাতা ব্যাকগ্রাউন্ড জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; Source: Inc
সহজ কথায় কোম্পানির পরিচালনা পরিষদ এবং তাদের দূরদর্শিতা বোঝার জন্য উপরিউক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন। তাহলে উক্ত স্টার্টআপ কোম্পানির সার্বিক চালচিত্র আপনার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
তাছাড়া কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার পর পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের চেয়ে কর্মক্ষেত্রে আপনি বেশি সময় ব্যয় করবেন। সুতরাং তাদের সাথে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির মিল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইসব বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে কোম্পানির পরিচালনা পরিষদ এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করুন।
কোম্পানির ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ
স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার সাহস করতে হলে আপনার মধ্যেও উদ্যোক্তা মানসিকতা থাকতে হবে এবং উক্ত স্টার্টআপ কোম্পানি নিয়ে উদ্যোক্তার মতো গবেষণা করতে হবে। কেননা যোগ দেওয়ার পর সবাই চাকরির নিরাপত্তা আশা করে। কিন্তু স্টার্টআপ কোম্পানিতে চাকরির কোনো নিরাপত্তা থাকে না। তবে আপনি যদি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী স্টার্টআপ কোম্পানি নিয়ে বাস্তবসম্মত গবেষণা করে সঠিক কোম্পানি নির্বাচন করতে পারেন তবে আপনার চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/03/1554005612997-1024x681.jpg)
বাজার চাহিদা অনুযায়ী এই কোম্পানি দীর্ঘদিন টিকে থাকবে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে; Source: You Have a Plan
যোগ দেওয়ার পূর্বে সম্ভাব্য স্টার্টআপ কোম্পানির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং তাদের উৎপাদিত পণ্য বা সেবার বাজার চাহিদা বিশ্লেষণ করে দেখুন, এই প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের সম্ভাব্যতা কতখানি। আপনি যদি সঠিক বাজার চাহিদা এবং কোম্পানির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন তাহলে সহজেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
কোম্পানির মূল্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি কী?
স্টার্টআপ কোম্পানির মূল্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট না হওয়ার অর্থ এই কোম্পানি পরিচালনার কোনো সুনির্দিষ্ট রুপরেখা নেই, যে রূপরেখা বাস্তবায়ন করে কোম্পানি নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করবে এবং সাফল্য বয়ে আনবে। এজাতীয় কোম্পানি সব সময় উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এমনকি এজাতীয় কোম্পানিতে কর্মীদের সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মঘন্টাও থাকে না।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/03/1554005563129-1024x683.jpg)
স্টার্টআপ কোম্পানির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ও ভালোভাবে জানতে হবে; Source: EU Neighbours
তাই যোগ দেওয়ার পূর্বে নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং সাক্ষাৎকারের সময় প্রশ্ন করে কোম্পানির দৃষ্টিভঙ্গি এবং মূল্য বোঝার চেষ্টা করুন। তাহলে স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
কোম্পানির প্রস্থান কৌশল কী?
স্টার্টআপ কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার পূর্বে উক্ত কোম্পানীর প্রস্থান কৌশল সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করুন। স্টার্টঅফ যদি কোনো কারণে ব্যর্থ হয় অথবা কর্মী ছাঁটাই করার প্রয়োজন হয় তবে তার প্রক্রিয়া কেমন হবে? যোগ দেওয়ার পূর্বে এসব বিষয়ে ভালোভাবে বুঝে নিন। তাহলে স্টার্টআপ কোম্পানির চাকরি হারালেও অর্থনৈতিক সংকটে পড়ার পূর্বেই অন্য চাকরি অনুসন্ধান করতে পারবেন।
Feature Image: BBVA