জীবনের একটা পর্যায়ে এসে মানুষ ক্যারিয়ার এবং ব্যক্তিগত সুবিধার লক্ষ্যে কাজ করে, এবং এজন্য সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্কের মধ্যে সুস্থ ভারসাম্য রক্ষা করা অপরিহার্য। কর্মক্ষেত্রে নিবিড় বন্ধুত্বের চেষ্টা করার পরিবর্তে, সহকর্মীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। এটি ঠিক যে কাজের জায়গায় বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ থাকার কারণে কাজে সন্তুষ্টি আসে, কর্মক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।

কর্মক্ষেত্রে নিবিড় বন্ধুত্বের চেষ্টা করার পরিবর্তে, সহকর্মীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের প্রতি মনোযোগী হতে হবে; image source: thejobnetwork.com

কর্মক্ষেত্রে সামাজিকতা

আমরা প্রায়ই “বন্ধু” হিসেবে তাদেরকেই স্বীকার করি যারা আমাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করে। অফিসে সামাজিকতা রক্ষার কারণে কাজের উপর মনোবল বৃদ্ধি এবং মানসিক চাপমুক্ত হতে একমাত্র সহকর্মীদের বন্ধুত্বপরায়ণ ব্যবহার‌ই সহায়তা করতে পারে, তবে আপনাকে এজন্য আপনাকে যা করতে হবে-

অফিসে মানসিক চাপমুক্ত হতে বন্ধুত্বপরায়ণ ব্যবহার‌ দরকার ; image source: implementonline.co

১. ব্যক্তিগত সীমানা নির্ধারণ করা

বেশিরভাগ কোম্পানিই শ্রেণিক্রমিক বা হায়ারার্কিয়াল। তাই চাকরিরতদের পদোন্নতির কথা যখন আসে, তখন অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব‌ই সংঘর্ষে মোড় নেয়। এটি এই কারণেই যে, বেশি আন্তরিকতা হ‌ওয়ার কারণে সেখানে পেশাদারিত্ব শিথিল হয়ে যায়। হয়তো আপনি বুঝতে পারেন না কখন আপনার বন্ধুদের প্রমোশনের পেছনে আমার অসম্ভব খারাপ লাগা কাজ করতে শুরু করে। অথবা আপনার প্রমোশনে অন্যদের। এরকম হয়ে গেলে সম্পর্ক সংশোধন করুন এবং নতুন করে ব্যক্তিগত সীমানা নির্ধারণ করুন। নাহলে আপনাকে এর মূল্য নিজের ক্যারিয়ারের ক্ষতি সাধন করেও দিতে হতে পারে। মনে করুন আপনি আপনার চাকরির বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। এজন্য আপনি নতুন চাকরি খুঁজতে চাইছেন বা খুঁজছেন। এ কথা আপনার সহকর্মীও জানেন। হঠাৎ করে আপনার পদোন্নতির খবরে আপনি আপনার কথা থেকে সরে আসলেন এবং আগের অফিসেই থেকে গেলেন। এই ঘটনাটি কিন্তু আপনার আর আপনার কলিগের মধ্যে বিরক্তি আর হতাশার জায়গা তৈরি করে।

ব্যক্তিগত সীমা বজায় রাখুন; image source: greenwichtime.com

২. বিশেষ কর্মসূচিতে বন্ধু ছাড়াও অন্যান্য সহকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা

যখন আপনি কোনও ধরনের প্রকল্পে কাজ করছেন তখন অফিস বন্ধুদের সহযোগিতা কামনা করা স্বাভাবিক। কিন্তু আপনার সুবিধাজনক অবস্থানের বাইরের লোকদের‌ও আপনাকে কাজের মধ্যে আনতে হবে। এরকম করলে আপনি নতুন কিছু করার সম্ভাবনা রাখবেন। আপনার বন্ধুদের পাশাপাশি অন্যরাও কাজ করলে কাজটিতে একতাবদ্ধতাও দেখা যাবে। আর সবার সাথে কাজ করতে পারার প্রবণতা বাড়লে তা আপনার জন্যেই লাভজনক।

সবাই মিলে কাজ করলে কাজে দ্রুততা বাড়ে; image source: yourcorporateblackgirl.com

৩. অফিস গসিপ এড়িয়ে চলা

আপনি কারো সাথে খুব বেশি ঘনিষ্ট হয়ে পড়লে অন্যান্য সহকর্মীরা এটি ভালো চোখে নাও দেখতে পারে। এর কারণ শুধু একজন বা কয়েকজনের সাথে বেশি মিশলে বাকিরা আপনাকে ভরসা করতে চায় না। আবার এমনও ভাবতে পারে আপনি অফিসের কাজের বাইরের কথায়‌ও আগ্রহী। অনেক সময় তারা হয়তো ভাববে আপনি গুজবে কান দিচ্ছেন বা সহকর্মীদের সাথে কারো কাজে হাসাহাসি করছেন। এটি মানুষকে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। যেকোনো কথা প্রয়োজনের অতিরিক্ত বলা আপনার জন্য ক্ষতিকর, কেননা আপনি জানেন না কখন আপনার এই তথ্যগুলোই আপনার বিরুদ্ধে কাজ করছে। তাই অফিসে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সবার সাথে কথা বলুন।

অফিস গসিপ এড়িয়ে চলাই শ্রেয়; image source: hiring.workopolis.com

৪. আপনার দলের প্রতিটি সদস্যকে সমান চোখে দেখা

পক্ষপাত এড়িয়ে চলার সর্বোত্তম উপায় – দলের প্রতিটি সদস্যের প্রতি সমান যত্ন, বিবেচনা এবং সম্মান সহ আচরণ করা। কাজের বেলায় সহকর্মী বা বন্ধু যেই থাকুক না কেন প্রতিটি ব্যক্তির ভাবনাকে মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে সফলতা অর্জন করতে পক্ষপাতী না হ‌ওয়া অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে প্রায়‌ই কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে যদি আপনি কোনো অফিসের কো-অর্ডিনেটর বা ম্যানেজার কিংবা টিম লিডার হয়ে থাকেন। আপনার অধীনস্থদের যেন এরকম মনে না হয় আপনি বেশি কাছের ব্যক্তিকে অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করেন বা অন্য কাউকে প্রয়োজনের চেয়ে কম ছাড় দেন। তাদের বোঝান তারা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ,‌ তবে তাদেরকে বেশি প্রীতি দেখানো থেকে বিরত থাকতে হবে।

বন্ধু হোক বা না হোক, সবাই সহকর্মী; image source: rewireme.com

মূলত, কর্মসংস্থাগুলো অনেক মানুষের নেটওয়ার্ক নিয়ে গঠিত। মানুষ পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখে প্রতিষ্ঠানের কাজে অগ্রগতি সাধন করে। ফলে কর্মক্ষেত্রে বন্ধুত্ব হতেই পারে- যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার কাজে সেটি কোনো বাধা আনছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তা প্রশংসনীয়। তবে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে যে, আপনার কতটা ঘনিষ্ঠতা গড়তে হবে কতটা দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সহকর্মীদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠা আপনার কর্মক্ষেত্রে যেন সমস্যার‌ও সৃষ্টি না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন সবসময়। আপনার কর্মজীবন শুভ হোক।

feature image source: cnbc.com