সফল রাষ্ট্রনায়ক মাহাথির মোহাম্মদের জীবনের গল্প

মাহাথির মোহাম্মদ সারা বিশ্বের কাছে এক নামে পরিচিত। তাকে বলা হয় অাধুনিক মালয়েশিয়ার রুপকার। পুরো নাম মাহাথির বিন মোহাম্মদ। মালয়েশিয়ার মতো দরিদ্র রাষ্ট্রকে তিনি রূপান্তর করেছেন একটি অত্যাধুনিক রাষ্ট্রে। তিনি সমগ্র বিশ্বের রোল মডেল, সত্যিকারের দেশপ্রমিক। তিনি ২২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০০৩ সালে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। অাকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তার জন্যই অাবারো ৯২ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সম্প্রতি দেশটির ১৪ তম সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন তিনি। সফল রাষ্ট্রনায়ক মাহাথির মোহাম্মদ এর জীবন সম্পর্কে অালোচনা থাকছে অাজ।

সূত্রঃ azhan.co

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

মাহাথির মোহাম্মদ ১৯২৫ সালের ১০ জুলাই মালয়েশিয়ার উত্তরঞ্চলীয় শহর এ্যালোর সেটরে জন্মগ্রহণ করেন। ভাই বোনদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। পিতা মোহাম্মদ ইস্কান্দার। তার বাবা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। ১৯৫৫ সালের ৫ অাগস্ট তিনি সিতি হাসমাহকে বিয়ে করেন। তাদের ৭ জন সন্তান রয়েছে।

শিক্ষা জীবন

মাহাথির মোহাম্মদের পড়াশোনা শুরু হয় মালয় স্কুলে। এরপর ভর্তি হন শহরের একটি ইংরেজি স্কুলে। ছোট বেলায় তাদের বাসায় একজন ধর্ম শিক্ষক ছিল। তিনি মাহাথিরকে পবিত্র কোরঅান এবং ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা দিতেন। কলেজের গন্ডি পেরিয়ে তিনি ভর্তি হন ‘সিঙ্গাপুর কিং এ্যাডওয়ার্ড কলেজে। সেখানে চিকিৎসা বিষয়ে পড়াশোনা করেন।

সূত্রঃ azham.co

কর্ম জীবন

পড়াশোনা শেষ করার পর ১৯৫৩ সালে সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়ায় ফিরে অাসেন। চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন সরকারি চাকরিতে। এক সময় সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে তার নিজ গ্রামে এ্যালোর সেটর এ মাহা ক্লিনিকে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৪ সালের নির্বাচনে জয় লাভ হবার অাগ পর্যন্ত তিনি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।

রাজনীতিতে প্রবেশ

কলেজে পড়ার সময় থেকেই রাজনীতিতে তার অাগ্রহের জন্ম হয়। চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে খুব সহজেই সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হয়েছে তার। ১৯৬৪ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তার বয়স ছিল ৩৯ বছর। নির্বাচিত হবার পর তিনি মালয়দের সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেন। ১৯৬৯ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নিজ দলের প্রধান এবং মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেংকু অাবদুর রহমানের সাথে মতের অমিলের কারণে ৩ বছর রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন।

১৯৬৯ সালের ৩০ মে চীনা এবং মালয়দের মধ্যেকার দাঙ্গার জন্য মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টেংকু অাবদুর রহমানকে তিনি দায়ী করেন। মাহাথির মোহাম্মদ রাজনীতিতে অাবার ফিরে অাসেন ১৯৭২ সালে। ১৯৭৪ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করার পর তিনি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। এর অাগে ১৯৭৬ সালে উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সূত্রঃ azhan.co

পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী

১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবার পর ২২ বছর ক্ষমতায় ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। দীর্ঘ ২২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০০৩ সালে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। ১৫ বছর পর মাহাথির মোহাম্মদ অাবারো মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। গত ৯ মে মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের দল বারিসান ন্যাশনালকে (বিএন) হারিয়ে মাহাথির মোহাম্মদের জোট জয় লাভ করে। নির্বাচিত হবার পরদিন শপথ নেন তিনি । এটা ছিল মালয়েশিয়ার ১৪ তম সাধারণ নির্বাচন।

সূত্রঃ azhan.co

পার্লামেন্টের ২২২টি অাসনের মধ্যে ১১৩টি অাসন পায় মাহাথির মোহাম্মদের দল পাকাতন হারাপান (পিএইচ)। অার ৭৯টি অাসন জিতে বারিসান ন্যাশনাল। ৯২ বছরে বয়সে প্রধানমন্ত্রী হওয়াটাই জানান দেয় তার জনপ্রয়িতা। সবচেয়ে বেশি বয়সে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে সারা বিশ্বে তাক লাগিয়েছেন তিনি। সততা, দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই বারবার ক্ষমতায় এসেছেন। প্রমাণ করলেন লক্ষ্য অর্জনে বয়স কোনো বাধা নয়। মাহাথির মোহাম্মদ এশিয়ার সবচেয়েে দীর্ঘ সময় গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ।

অাধুনিক মালয়েশিয়ার রুপকার

মাহাথির মোহাম্মদকে বলা হয় অাধুনিক মালয়েশিয়ার রুপকার। অাজকের মালয়েশিয়ার যে অামূল পরিবর্তন দেখছেন তা মাহাথির মোহম্মদের অবদান। ১৯৮১ সালে প্রধানমন্ত্রী নিবার্চিত হবার পরবর্তী ২২ বছরের শাসনামলে তিনি মালয়েশিয়াকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে করেছেন সমৃদ্ধ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মালয়েশিয়ার অার্থ সামাজিক অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। তিনি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেন।

শিক্ষা ক্ষেত্রে তার অবদান ভুলবার নয়। তার অামলে মালয়েশিয়ানদের শিক্ষার ৯৫ শতাংশ খরচ সরকার বহন করতো। মালয়েশিয়ার মুসলিমদের জন্য তিনি ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেন। তার দক্ষ নেতৃত্বে দরিদ্র রাষ্ট্র থেকে মালয়েশিয়া পরিণত হয় বিশ্বর ১৪তম অর্থনৈতিক রাষ্ট্রে। তার অামলে সব ধর্মের লোকেরা সমানভাবে রাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে বসবাসের সুযোগ পায়। মাহাথির মোহাম্মদের ‘ভিশন টোয়েন্টি টোয়েন্টি’ সারা বিশ্বের মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়। মালয়েশিয়ার ২৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমান জিডিপি তিনি ৯৫ দশমিক ২ বিলিয়নে উন্নীত করেন।

সূত্রঃ azhan.co

টুইন’স টাওয়ার, অাধুনিক ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পার্ক, অত্যাধুনিক বিমানবন্দর এবং হাইওয়ে নির্মাণ, নিজ দেশের সকলের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করার পাশাপাশি বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ, দরিদ্র রাষ্ট্র থেকে দেশকে অর্থনৈতিক দেশে স্থান দেওয়া সহ দীর্ঘ ২২ বছরের ক্ষমতায় মাহাথির মোহাম্মদের মালয়েশিয়ার ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।

মাহাথির মোহাম্মদ তার দায়িত্ব পালনে ছিলেন সচেষ্ট। সময়ের কাজ তিনি সময়েই সম্পন্ন করতেন। তার দক্ষ নেতৃত্বের জন্যই মালয়েশিয়া অাজ এত উন্নত। তার মতো দেশপ্রেমিক ক্ষমতায় থাকুন কে না চায়? তাই তো সুযোগ পেলেন অাবারো মালয়েশিয়াকে অারও সুন্দর করে গড়ার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *