কিছু গঠনমূলক বৈশিষ্ট্য যা আপনাকে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করবে

Source: 5paisa

আমাদের তথা বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত নন এরকম ব্যক্তি পাওয়া খানিক কষ্ট বটে। মূলত প্রত্যেক ব্যক্তিজীবনে ক্যারিয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রক্ষাপটে ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলার সাহস নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ের মানুষ ছাড়া কিছুটা বোকামি বললে ভুল হবে না। তবে পারিপার্শ্বিকতার প্রেক্ষিতে একজন গঠনমূলক চিন্তাকারী হিসাবে আপনার চিন্তাশক্তিকে জাগ্রত করা নিশ্চয়ই দোষের কিছু নয় এবং এটাও নিশ্চিত যে, আপনি এতক্ষণ ধরে যে বাক্যগুলো পড়লেন তা যদি গভীরভাবে উলবদ্ধি করতে না পারেন, তাহলে বুঝতে হবে, আপনি এখনো নিজের প্রতি সচেতন না।

যাই হোক, এবার চিন্তা করে বলুন তো, বাংলাদেশ তথা পৃথিবীব্যাপী ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বিষয় বা খাত কোনটি? আপনি ভাবতে থাকুন ততক্ষণে আমরা একটি পরিসংখ্যান দেখে আসি। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৭ বছরে বাংলাদেশ সরকারের রিজার্ভ টাকার পরিমাণ প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলারের একটু বেশি। কিন্তু ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া একটি অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার মাত্র ৫ বছরের মাথায় বিক্রি হয় প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলারে। আর এই অ্যাপলিকেশনটির নাম হোয়াটস আপ যা ২০১৪ সালে ফেসবুক কিনে নেয়।

Source: movingonmagazine

এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন প্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার কতটা সম্ভাবনাময়! আরো মজার বিষয় এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে শুধুমাত্র একটি কম্পিউটারই যথেষ্ট।  আর অতি মাত্রায় সৃজনশীল এবং সম্ভাবনাময় এই খাতটির অনেকগুলো সেক্টরের যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দ মতো ক্যারিয়ার গড়ার জন্য।

এজন্যই কয়েকটি পর্বে চেষ্টা করবো কিভাবে এই বিষয়গুলোতে আপনি ক্যারিয়ার শুরু করবেন বা এর কৌশলগুলো কী? এসব বিষয়ে প্রত্যেকটি পর্বে একটি করে বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম পর্বে কিছু অভ্যাসগত পরিবর্তনের কথা থাকছে যা প্রযুক্তিতিতে ক্যারিয়ার গড়ার প্রথম শর্ত।  তাহলে দেরি না করে চলুন শুরু করি।

লেগে থাকার অভ্যাস তৈরি করুন

জীবনে কোনো কিছুতে সফল হওয়ার প্রথম এবং একমাত্র শর্ত বলুন তো কি? আপনার ভাবার পালা শেষ এবার মিলিয়ে নিন। খুবই সহজ একটি কাজ যা কি না আপনার সফল ক্যারিয়ার নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর। আর এই মহা মূল্যবান কাজটি হলো লেগে থাকার অভ্যাস তৈরি করা। মজার বিষয় কি জানেন, চলমান জীবনে নানাবিধ মানুষিক চাপে একটি বিষয়ের উপর লেগে থাকা সত্যিই অনেক কঠিন।  তাহলে চলুন, কঠিন এই কাজটিকে সহজ করার কিছু অনুপ্রেরণা খুঁজে বের করি, আমাদের চলমান নিজস্ব জীবন থেকে।

Source: Tech Talk

আমরা প্রতিদিন আরকিছু করি আর না করি খাদ্য গ্রহণ এবং ঘুম এই দুইটি জিনিস আমাদের করতেই হয়, তাই না। আচ্ছা এবার ভাবুন, আপনি যদি ৭ দিন খাবার এবং ঘুম ছাড়া থাকেন তাহলে পৃথিবীতে আপনার বাঁচার সম্ভাবনা নাই বললেও চলে, এ ব্যাপারে আপনি আমি সবাই নিশ্চিত। জীবনের ছোট এই গাণিতিক ব্যাখ্যাটা আমরা সবাই বুঝি তাই না।

এবার সুন্দর এই ব্যাখ্যাটিকে আপনার ক্যারিয়ার সাথে তুলনা করুন। মোদ্দাকথা, আপনার বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাবার এবং ঘুম প্রয়োজন ঠিক তেমনি প্রতিদিন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর তথা ক্যারিয়ার উপর সময় দেওয়া অত্যান্ত জরুরী। আর তা না হলে দিনের শেষে রক্ত মাংসে গড়া মানুষ হয়েও আপনাকে জড়বস্তর মতো বাস করতে হবে এতে কোনো সন্দেহ নাই। এভাবেই দায়িত্ব নিয়ে লেগে থাকার অভ্যাস তৈরীর মাধ্যমে প্রযুক্তি তথা যেকোনো বিষয়ে সুনিশ্চিত ক্যারিয়ার গড়ার প্রস্তুতি নিন।

অনলাইন কমিউনিটির সাথে যুক্ত হন

একজন প্রযুক্তিপ্রেমীকে ব্যক্তিগতভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে অনলাইন কমিউনিটির জুড়ি মেলা দায়। কেননা একজন প্রযুক্তিপ্রিয় ব্যক্তি যখন কাজ করতে গিয়ে নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হোন, যেগুলো কোনো কোনো সময় একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব হয় না। আর ছোট বড় যেকোনো সমস্যাগুলোর তাৎক্ষণিক সমাধান পাওয়া জন্য অনলাইন কমিউনিটি অসাধারণ এক জায়গা। এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের সাথে আন্তরিকতার যোগাযোগ করার এটি একমাত্র মাধ্যম।

Source: Big4

যেখান থেকে প্রত্যেক প্রযুক্তিপ্রমীরা বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারেন খুব সহজেই। পৃথিবীর জনপ্রিয় অনলাইন কমিউনিটি গুলোর মধ্যে স্টাক ওভারফলো (Stack Overflow), কোডার ওয়াল (Coderwall), হ্যাশনোড অন্যতম। এছাড়াও বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য প্রোগ্রামাবাদ খুবই জনপ্রিয় একটি অনলাইন কমিউনিটি। যেখানে প্রোগ্রামিং এবং প্রযুক্তি বিষয়ক সকল প্রকার সমাধান বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া যায় খুব সহজেই।

প্রতিনিয়ত নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে

তথ্যপ্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার নির্বাচন পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় একই সাথে ভয়ানক একটি বিষয়। কেননা প্রযুক্তির প্রতিটি বিষয় অনেকবেশি পরিবর্তনীয়। এজন্যই একজন প্রযুক্তি প্রেমীকে প্রতিটি মূহুর্তের জন্য নানা রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়।  প্রযুক্তির বড় একটা অংশজুড়ে আছে প্রোগ্রামিং।  ফলে একজন প্রযুক্তিপ্রিয় ব্যক্তিকে বিভিন্নরকম প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, ডিজাইন প্যাটার্ন সহ ইত্যাদি নানা বিষয়ে পড়াশোনার মধ্যে থাকতে হয়।  আর এজন্যই এসব নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবসময় প্রস্তুত থাকতে হয়।

প্রজেক্ট ভিত্তিক কাজ করার চেষ্টা করুন

প্রযুক্তিতে উন্নত ক্যারিয়ার গড়তে নিজস্ব প্রজেক্টের বিকল্প নেই।  লক্ষ্য করুন, কোনকিছুতে ভালো করতে হলে ঐ বিষয়ের উপর বিস্তার পড়াশোনার যেমন প্রয়োজন ঠিক তেমনি পড়াশোনার পাশাপাশা যদি আপনি বিভিন্ন প্রজেক্টে ভিত্তিক কাজ করতে পারেন তাহলে নিঃসন্দেহে এটি আপনাকে চাকরীর বাজারে কয়েকধাপ উপরে রাখবে। বিভিন্ন প্রজেক্ট যেমন, নিজস্ব ওয়েবসাইট বানানো, ফ্রিল্যান্সিং করা বা গ্রুপ ভিত্তিক বড় কোনো প্রজেক্টে কাজ করা। বুঝতে কঠিন মনে হলে, চুলন বাস্তব একটা উদাহরণ জেনে নেই।

Source: Bureau of Labor Statistics

আমার প্রযুক্তি প্রেমী এক ছোটভাই প্রযুক্তি তথা প্রোগ্রামিং বিষয়ক যা শিখতো তা দিয়ে কিছু না কিছু বানাতো একেবারেই নিজের মতো করে। এর বেশ কিছুদিন মধ্যে আমরা জানতে পারলাম সে ছাত্রবস্থায় দেশে এবং দেশের বাইরের বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর হয়ে পার্ট টাইম জব করছে। কি অসাধারণ না!  তাই প্রযুক্তির অসাধারণ এই বিষয়গুলোকে সৃজনশীলতার সাথে ভালোবেসে ছোট শিশুর মতো খেলতে থাকুন দেখবেন ক্যারিয়ার স্বয়ংক্রিয়ভাবে উন্নত হয়ে গেছে।

দক্ষতা অর্জনে সবসময় সচেতন থাকুন

প্রযুক্তির বিষয়গুলো সহ প্রায় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে দক্ষতার গুরুত্ব অপরিসীম। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রকৃত দক্ষ মানুষ খুঁজে পাওয়া একটু কষ্টকর বটে। একটি পরিসংখ্যান দেখলে বিষয়টি উপলবদ্ধি করতে সুবিধে হবে। বাংলাদেশে গড়ে প্রতি চাকরীর জন্য আবেদন করেন প্রায় ৪৭ জন প্রার্থী। এখন আপনি বলুন, চাকরীদাতাগণ নির্ধারিত পোস্টে কাকে বেশি গুরুত্ব দিবেন, নিশ্চই যিনি সবার চেয়ে দক্ষ হবেন। এজন্যই ক্যারিয়ার হিসেবে যে বিষয়েই নির্বাচন করুন না কেন চেষ্টা করবেন সে বিষয়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ দক্ষতা অর্জন করতে। এছাড়াও প্রযুক্তির বিষয়গুলো অনেক বেশি টেকনিক্যাল এজন্যই একজন প্রযুক্তি প্রিয় ব্যক্তিকে টেকনিক্যাল দক্ষতার পাশাপাশি মানুষিক এবং নৈতিক দিকগুলোর প্রতি খেয়াল রাখা জরুরী।

Source: 5paisa

একটি কথা না বললেই নয়,  প্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য কম্পিউটার প্রকৌশল বা কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই), ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইটি) মত বেশকিছু বিষয়ে অধ্যায়ন করার সুযোগ আছে বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।  তবে মজার বিষয় আপনি অন্যবিষয়ে অধ্যায়ন করেও প্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন খুব সহজেই।  তবে এরজন্য উপরের বৈশিষ্ট্যগুলোকে অভ্যাসে পরিণত করা একান্ত প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *