ব্যবসা বা চাকরি উভয় ক্ষেত্রে যে দক্ষতাগুলো আবশ্যক

photo: careerbuilder for employers

জীবনের প্রয়োজনে আমরা নানান দক্ষতা অর্জন করি। শিশুকালে বাবার হাত ধরে প্রথম হাঁটতে শিখি। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের পাঠ নিতে নিতে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠি। তবে জীবনে অর্জিত সব দক্ষতা সব ক্ষেত্রে কাজে লাগে না।

photo: careerbuilder for employers

কোনো কোনো দক্ষতা শুধুমাত্র আপদকালীন সময়ে প্রয়োজন হয়। কোনো দক্ষতা দীর্ঘদিন পর পর প্রয়োজন হয়। আবার কোনো দক্ষতা প্রতি মুহূর্তেই প্রয়োজন হয়। এছাড়া ব্যবসা করতে যেমন কিছু বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয়, তেমনি অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চাকরি সম্পর্কিত কিছু বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এমন কিছু দক্ষতা আছে যা চাকরি বা ব্যবসা যে কোন ক্ষেত্রেই প্রতিনিয়ত প্রয়োজন হয়।

আজকের এই নিবন্ধে এমন কিছু দক্ষতা নিয়ে আলোচনা করবো যা ব্যবসা বা চাকরি উভয় ক্ষেত্রের সাফল্যের জন্য প্রয়োজন। অথচ আপাতদৃষ্টিতে আমরা এই দক্ষতাগুলোর বিশেষ গুরুত্ব উপলব্ধি করি না।

১. সময় নিয়ন্ত্রণ

সময় নিয়ন্ত্রণ এবং যথাযথভাবে পরিচালনা করতে পারা এক ধরনের শিল্প। বিজ্ঞানসম্মতভাবে এই শিল্পের ব্যবহার যারা করতে জানে ব্যাক্তি এবং কর্ম জীবনে তারাই সাফল্যের শীর্ষে আরোহণ করে। আপনি যদি এখনও সময় নিয়ন্ত্রণ করতে না শিখে থাকেন তবে আজই রুটিন মাফিক জীবন পরিচালনার মাধ্যমে সময়ের যথাযথ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

photo: kids-harbor

সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আপনি হারানো সম্মান, অর্থনৈতিক অবস্থা বা সামাজিক অবস্থান পুনরায় ফিরিয়ে আনতে পারেন। জীবনের ধ্বংসাত্মক আচরণ পরিহার করে নিজের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারেন।

সুতরাং আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসাব-নিকাশ করতে হবে সময়ের সাথে। সময় নিয়ন্ত্রণের এই বিশেষ দক্ষতা অর্জন করুন আর জীবনে সাফল্য বয়ে আনুন।

২. সঠিকভাবে পোশাক পরা

ফার্স্ট ইমপ্রেশন তথা প্রথম অনুভূতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো ক্ষেত্রে সামনে থাকা মানুষের মধ্যে আকর্ষণীয় প্রাথমিক প্রভাব সৃষ্টি করতে সঠিকভাবে পোশাক পরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সাথে সাথে নিজের পোশাক পরিচ্ছদ হালনাগাদ করা, হাল ফ্যাশন অনুসরণ করা, আপনি নিজেকে যতটা পেশাদারী দেখাতে চান তা পোশাকে ফুটিয়ে তোলা, নিজের শরীরকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা ব্যক্তি এবং কর্মজীবনের সাফল্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

photo: style rug

পোশাক-পরিচ্ছদের নিজস্বতা মানুষের ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। আপনি নিজেকে কেমন ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে চান তা মাথায় রেখে পোশাক নির্বাচন করুন। কর্পোরেট জগতে পোশাক খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কী রঙের শার্ট পড়লেন, তার সাথে কোন রঙের প্যান্ট মানানসই তা জানা যেমন জরুরী, একই সাথে জুতা, কোমর বন্ধনী এবং ঘড়ির বেল্টের রং সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়াও সমান জরুরী।

আপনাকে আরও জানতে হবে মুখে দাড়ির সাথে কেমন চুলের ফ্যাশন উপযুক্ত। আবার সেভ করা মুখের সাথে কেমন চুলের ফ্যাশন উপযুক্ত। কোন অনুষ্ঠানে কেমন পোশাক পরবেন তাও আপনাকে জানতে হবে। পোশাক নির্বাচনে আপনি যতটা দক্ষতার পরিচয় দিবেন মানুষের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা ততটাই বৃদ্ধি পাবে।

৩. নতুন মানুষের সাথে সাক্ষাৎ

চাকরি বা ব্যবসা সবক্ষেত্রেই কাজের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মানুষের সাথে সাক্ষা্ৎ করতে হয়। নতুন মানুষের সাথে সাক্ষাতের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়। এমনকি আপনি যদি অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ হয়ে থাকেন তবুও নতুন মানুষের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ এবং তার সাথে প্রাণবন্ত কথোপকথনের দক্ষতা আপনার মধ্যে থাকতে হবে।

তাছাড়া নতুন মানুষের সাথে সাক্ষাৎ নতুন কিছু জানার এবং শেখার পথ উন্মোচন করে। সুতরাং নতুন মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করতে ভয় পেলে চলবে না। নিজের জানাশোনার পরিধি বাড়ান এবং নিজেকে নতুন কিছু শেখার সুযোগ করে দিন।

photo: the spruce

সঠিক পোশাক নির্বাচন করা নতুন মানুষের মনে প্রভাব সৃষ্টি করার জন্য যেমন প্রয়োজন, তেমনি তার সাথে প্রানবন্ত কথোপকথনও সমান গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, মানুষের সাথে পরিচয় এবং আপনার কথোপকথনের দক্ষতার ভিত্তিতে উক্ত ব্যক্তির সাথে আপনার পরবর্তী সম্পর্ক নির্ধারিত হবে। সুতরাং নতুন মানুষের সাথে সাক্ষাতে তাকে প্রভাবিত করার বিশেষ দক্ষতা আপনার মধ্যে থাকতে হবে।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ

আপনার চারপাশে অনেক মানুষ দেখবেন যারা স্থুলতার কারণে দুর্বিষহ জীবন যাপন করে। আপনিও যদি স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন না হন, তবে অচিরেই আপনারও এমন পরিস্থিতি হতে পারে। সুতরাং নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হোন। স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে রেখে সবসময়ই সুঠামদেহী এবং হালকা-পাতলা থাকা বিশেষ ধরনের দক্ষতা, যা সব মানুষের মধ্যে থাকে না।

photo: rd

নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সব সময় সচেতন থাকলে খুব সহজেই কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য ধরে রাখা যায়। পরিমাণমতো খাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম, ব্যায়াম এবং কাজ আপনার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। এর কোনো একটির ঘাটতি পড়লে স্বাস্থ্য এলোমেলো হয়ে যেতে বাধ্য।

সুতরাং স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হতেই হবে। এটাকে বিশেষ দক্ষতা জ্ঞান করে সব সময় নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন থাকুন।

৫. মানুষের নাম মনে রাখা

মানুষের নাম মনে রাখা সত্যিই একটি বিশেষ দক্ষতা। আপনার চারপাশে এমন অসংখ্য মানুষ পাবেন যাদের সবার অভিযোগ “আমি মানুষের নাম স্মরণ রাখতে পারি না”! চাকরি বা ব্যবসার প্রয়োজনে পরিচিত হওয়া নতুন নতুন মানুষের নাম মনে রাখার দক্ষতা আপনাকে অর্জন করতে হবে। কেননা একজন মানুষের সাথে যোগাযোগের প্রথম এবং প্রধান শর্ত তাকে মনে রাখা। মানুষের নামে যদি ভুলে যান তাহলে তার সাথে অন্যান্য যোগাযোগ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।

photo: brainscape

সুতরাং কোনো নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হলে তার নাম শোনার পর একই নামে আপনার অন্য কোন বন্ধু থাকলে তার কথা মনে মনে স্মরণ করুন। অথবা নতুন পরিচিত মানুষটির নাম তার সাথে কথোপকথনের সময় অন্তত দুইবার উচ্চারণ করুন। তার সাথে কথোপকথন শেষ করে চলে আসার সময়ও নামটি কয়েকবার মনে মনে উচ্চারণ করুন। সব মিলিয়ে নামটি অন্তস্থ করার চেষ্টা করুন, যেন পরবর্তীবার তার সম্বন্ধে কিছু মনে করার চেষ্টা করলে শুরুতেই আপনার মস্তিষ্কে তার নামটি ভেসে ওঠে।

৬. বক্তৃতা দেওয়া

বেশিরভাগ মানুষের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভীতিকর কাজ হলো অনেক মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলা। অনেক মানুষের সামনে কথা বলা বা বক্তৃতা দেওয়া এক ধরনের বিশেষ দক্ষতা, যা সবার মধ্যে থাকে না। আপনি যদি এ ব্যাপারে ভীত হন, তাহলে কখনোই এই দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন না। কিন্তু যদি একটু চেষ্টা করেন তাহলে খুব সহজেই এই ভয় কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

photo: youthinc mag

কর্মক্ষেত্রে কর্মী পরিচালনা বা অন্য কোনো কোম্পানির সাথে বিশেষ মিটিংয়ে আপনাকে কথা বলতে হবে। আপনার যদি অন্য মানুষের সামনে কথা বলায় ভয় থাকে তাহলে এক্ষেত্রে আপনি ব্যর্থ হবেন।

সুতরাং ব্যক্তি এবং পেশাগত জীবনে সাফল্যের জন্য অনেক মানুষের সামনে কথা বলা বা বক্তৃতা দেওয়ার অভ্যাস সৃষ্টি করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *