স্বপ্নের চাকরি একবারে পাওয়া যায় না। তার জন্য যথেষ্ট কাঠ খড় পোড়াতে হয়। বুদ্ধিমান চাকরিপ্রার্থীরা স্বপ্নের চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত চুপচাপ ঘরে বসে থাকেন না। যে কোনো পদে সুযোগ পেলেই ঢুকে যান। তারপর ক্রমশ নিজেকে আরও প্রস্তুত করে এবং স্বপ্নের চাকরির জন্য চেষ্টা করেন।

Source: Cadensus

এমন চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা আমাদের চারপাশে অনেক আছে, যারা সুযোগ পেলে বর্তমান চাকরি ছেড়ে আরও উচ্চপদে নিজেকে আসিন করতে চায়। আপনিও যদি তাদের দলভুক্ত হয়ে থাকেন তবে আজকের নিবন্ধ আপনার জন্য।

আজকের নিবন্ধে আমরা আদর্শ চাকরিপ্রার্থীর এমন কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করব, যা চর্চা করলে স্বপ্নের চাকরি প্রাপ্তি আপনার জন্য সহজ হবে।

জীবনবৃত্তান্ত হালনাগাদ

নতুন চাকরি বা আরও উচ্চপদে চাকরি প্রাপ্তির জন্য সর্বপ্রথম আপনার জীবনবৃত্তান্ত হালনাগাদ করুন। উচ্চপদে চাকরি পাওয়ার জন্য বলা যায়, এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

এমনকি আপনি যদি নতুন চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে মরিয়া নাও হয়ে থাকেন, তবুও আপনার জীবনবৃত্তান্ত হালনাগাদ করুন এবং সব সময় আপডেট রাখুন।

নিখুঁত নির্বাচন

আপনি নিশ্চয়ই এরপর আরও উচ্চপদে চাকরি করতে চান। সুতরাং বর্তমান চাকরির চেয়ে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন চাকরি খুঁজে পেতে নিখুঁত নির্বাচনকারী হোন। বাজারে যখনই নতুন কোনো চাকরির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়, তখন ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন এবং নিজের বর্তমান চাকরির সাথে তুলনা করে দেখুন এখানে আবেদন করা আপনার জন্য যৌক্তিক কিনা।

Source: Twitter

শুধু উচ্চপদ বা অধিক স্যালারি বিবেচনা না করে, ভালোভাবে বিচার করে দেখুন, নতুন চাকরি আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ করে কি না।

নতুন কোম্পানির কর্মীর সাথে আলাপ

নতুন কোম্পানির চাকরি আপনার কাছে লোভনীয় হতে পারে। কিন্তু কোনভাবেই অন্ধ বিশ্বাস এবং আবেগপ্রবণ হয়ে চাকরির আবেদন করবেন না।

নতুন কোম্পানির কাজের পরিবেশ, এবং অভ্যন্তরীণ অবস্থা বোঝার জন্য উক্ত কোম্পানীর কোনো একজন কর্মীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করুন। কোম্পানি সম্বন্ধে তাকে প্রশ্ন করুন এবং ভেতরের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হালনাগাদ

নতুন চাকরিতে আবেদন করার পূর্বে আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো হালনাগাদ করুন। আপনি হয়তো বর্তমান কোম্পানিতে অল্প কিছুদিন চাকরি করছেন এবং এখানে থাকাকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একাউন্ট নিয়ে বিশেষ কিছু ভাবেননি।

Source: Willis Towers Watson Wire

তাই বলে নতুন চাকরির নিয়োগকারীরা যে আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যবেক্ষণ করবে না এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর সকল তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মূল্যায়ন করা হয়। সুতরাং নিজেকে আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করতে নতুন চাকরিতে আবেদনের পূর্বে নিজের সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একাউন্ট হালনাগাদ করুন। সকল তথ্য যাচাই বাছাই করে দেখুন।

সাক্ষাৎকারের কৌশল অনুশীলন

আপনার সর্বশেষ চাকরির সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর হয়তো অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেছে। আপনি বর্তমান ক্ষেত্রে ৪/৫ বছর কাজ করছেন। সুতরাং এই সময়ের মধ্যে নতুন কোথাও চাকরির সাক্ষাৎকার দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। চাকরির সাক্ষাৎকারেও এসেছে অভিনবত্ব।

সুতরাং নিজেকে সেরা আবেদনকারী প্রমাণ করতে চাকরির সাক্ষাৎকারের কৌশল নতুন করে অনুশীলন করুন। সাম্প্রতিক সময়ে চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে গেলে কেমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হতে পারে সে ব্যাপারে গবেষণা করুন।

অতীত পর্যালোচনা করে ভবিষ্যৎ জানুন

নতুন চাকরির সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হওয়ার পূর্বে নিজের অতীত পর্যালোচনা করুন এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাব্যতা বোঝার চেষ্টা করুন। অবশ্য জীবনবৃত্তান্ত হালনাগাদ এবং চাকরির সাক্ষাৎকার অনুশীলন আপনাকে অনেক কিছু শেখাবে।

Source: The Broke Agent

এর বাইরে নিজের সম্পূর্ণ কর্মজীবন মূল্যায়ন করুন। আপনার শক্তি, সামর্থ্য, দক্ষতা, দুর্বলতা, পছন্দ, অপছন্দ বোঝার চেষ্টা করুন। অতীত কর্মজীবনের পর্যালোচনা এবং নিজের সাম্প্রতিক অবস্থা আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিবে।

নতুন কোম্পানির অতীত জানুন

অধিকাংশ ক্ষেত্রে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও প্রার্থীরা নিয়োগকারীদের সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পারে না। ফলে স্বপ্নের চাকরি হাতছাড়া হয়ে যায়। এর প্রধান কারণ সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়া কোম্পানি সম্বন্ধে অধিকতর গবেষণা না করা।

সুতরাং নিজেকে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করতে আবেদন করা কোম্পানি এবং সেখানে আপনার সম্ভাব্য ভূমিকা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করুন। জানার চেষ্টা করুন কেন তাদের কোম্পানি সৃষ্টি হয়েছে? তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? তারা কাদের সেবা দিয়ে থাকে, এবং কেন তারা গুরুত্বপূর্ণ?

বর্তমান চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরি কেন?

বর্তমান চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দিতে গেলে আপনাকে নিশ্চিতভাবেই একটি কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। নিয়োগকারীরা আপনার কাছে জানতে চাইবে, আপনি কেন বর্তমান চাকরি ছাড়তে চান এবং নতুন চাকরিতে যোগ দিতে চান?

Source: Workopolis

এই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্যই আপনাকে একটি যৌক্তিক এবং সন্তোষজনক কারণ বলতে হবে। মনে রাখবেন এই প্রশ্নের মাধ্যমে নিয়োগকারীরা আসলে জানতে চাই আপনি নিজের সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন কিনা। সাথে সাথে বোঝার চেষ্টা করে আপনার ব্যক্তিত্ব এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী।

নতুন কোম্পানির সংস্কৃতি

আমাদের প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত ভালোলাগা এবং পছন্দ অপছন্দ আছে। তাই একটি কর্মপরিবেশ কিছু মানুষ পছন্দ করে, আবার কিছু মানুষ অপছন্দ করে।

সুতরাং আপনি যে কোম্পানিতে যোগ দিতে চলেছেন সেখানকার সংস্কৃতি সম্বন্ধে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করুন। আপনার ব্যক্তিত্ব এবং ধর্ম অনুভূতির সাথে উক্ত প্রতিষ্ঠানের পরিবেশের কোনো সংঘর্ষ আছে কিনা তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখুন।

Source: Glass Door

বেশিরভাগ চাকরি প্রার্থী আবেদন করার সময় শুধু পদমর্যাদা এবং সম্মানী বিচার করে, কর্মপরিবেশ নিয়ে চিন্তা করে না। কিন্তু যোগ দেওয়ার পর তারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে কর্মপরিবেশ নিয়ে। সুতরাং শুধু পদমর্যাদা এবং স্যালারির অংক বিবেচনা করা নয়, কর্মপরিবেশ নিয়েও ভাবুন।

নতুন কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করার আগে নিজেকে ভালোভাবে জানুন। আপনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য যোগ্য কিনা, নতুন কাজ আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে যায় কিনা, এই চাকরি আপনার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি করে কিনা? যদি সব দিক বিবেচনায় আপনার অবস্থার উন্নতি হয়, তবে আজই নতুন চাকরির জন্য আবেদন করুন এবং স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়ে তুলুন।

Feature Image: Twitter