পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকে এবং সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলে। কিছু মানুষের স্বপ্ন বা লক্ষ্যগুলো খুবই পরিকল্পিত এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য থাকে একটা মাস্টার প্ল্যান। এই শ্রেণির মানুষগুলো কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্যের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়িত করতে থাকে পরিকল্পনার প্রতিটি অংশ। একদিন এই মানুষগুলোই আরোহণ করতে সক্ষম হয় সফলতার শিখরে

Source: marketingland.com

আবার কিছু মানুষের স্বপ্ন থাকে অপরিকল্পিত, অগোছালো। এরা স্বপ্ন পূরণের জন্য ঠিক যতটা পরিশ্রম প্রয়োজন, সেটা দিতে রাজি থাকে না। তাই একদিন এই শ্রেণির মানুষগুলো তাদের অপরিকল্পিত স্বপ্নের মতোই হারিয়ে যেতে থাকে। জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে প্রথমে চাই একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সঠিক পরিকল্পনা। এজন্য প্রয়োজন কর্মক্ষেত্রের সঠিক পর্যালোচনা বা ক্যারিয়ার রিভিউ। যার মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর। এগুলো দ্বারা বুঝতে পারবেন, লক্ষ্য অর্জনে সঠিক পথেই রয়েছেন, নাকি নতুন পথ খুঁজে বের করার সময় এসে গেছে। আজ আপনাদের সাথে কর্মক্ষেত্র পর্যালোচনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোকপাত করবো।

ক্যারিয়ার অ্যাসপাইরেসন

ক্যারিয়ার অ্যাসপাইরেসন বলতে বোঝায় কর্মজীবনে আপনি কী আশা করেন বা আপনার আকাঙ্ক্ষা কী। এক্ষেত্রে আমাদের কর্মজীবনের স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য খুঁজে বের করতে হবে। এবার নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, এই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য আসলে কতটা বাস্তবসম্মত?

Source: jehovahsolutions.com

আবার আমাদের ভেবে দেখা উচিৎ যে, আমাদের লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান কর্মক্ষেত্রটি সহায়ক হতে পারবে? যদি লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হয়, তবেই কেবল এই কর্মক্ষেত্রে বর্তমান থাকা যৌক্তিক হবে। নইলে সময় এসে গেছে কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করার।

খুঁজুন নিজের সবল এবং দুর্বল দিকগুলো

পৃথিবীতে সকল মানুষ সমান গুণ নিয়ে জন্মায়। এমন কোনো মানুষ নেই, যিনি বেশি গুণ নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেছেন। মানুষ জন্মের পর থেকে প্রয়োজনীয় গুণগুলো অর্জন করতে থাকে এবং সেই সকল গুণের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এগিয়ে চলে সফলতার পথে। তাই একটু ভেবে দেখুন সফলতা অর্জন করতে হলে যে সকল গুন অর্জন করা প্রয়োজন, সেগুলো কি আপনার মাঝে আছে? যে গুণগুলো আপনার মাঝে রয়েছে সেগুলোই বা কতোটা উপযুক্ত? এক্ষেত্রে অবশ্যই নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে হবে।

Source: Indeed.com

যদি আপনার মাঝে উপযুক্ত গুণের অপর্যাপ্ততা থাকে তাহলে খুঁজে বের করুন কোথায় এবং কীভাবে এই গুণগুলো অর্জন করা সম্ভব। এভাবে নিজের দুর্বল দিকগুলো হ্রাস করে এগিয়ে চলুন সফলতার পথে।

ব্যক্তিগত জীবনের মূল্যবোধ

কর্মক্ষেত্রে উন্নতির পরিকল্পনায় যে সকল বিষয় অধিক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিৎ, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ব্যক্তিগত জীবনের মূল্যবোধ। তাই কর্মক্ষেত্র পর্যালোচনার এই পর্যায়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি এখন যে কর্মক্ষেত্রে বর্তমান রয়েছেন সেখানে কর্মজীবন ও বাস্তব জীবন ঠিক কতটা ভারসাম্যপূর্ণ? ঠিক কতটা সময় আপনার ব্যক্তিগত জীবনে ব্যয় করা দরকার। আর কতটা সময় ব্যয় করতে পারছেন?

Source: iliketowastemytime.com

যদি কর্মজীবনের সাথে বাস্তব জীবনের সামঞ্জস্যতা না থাকে, তাহলে একসময় আর জীবনের লক্ষ্যে অবিচল থাকা সম্ভব হবে না। জীবন হয়ে উঠতে পারে অসহনীয় এবং অতৃপ্ত। তাই কর্মক্ষেত্র নির্বাচনে ব্যক্তিগত জীবনকে অধিক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করুন।

বর্তমান কর্মক্ষেত্রে নিজের অবস্থান

কর্মক্ষেত্র পর্যালোচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হচ্ছে, আপনার বর্তমান কর্মক্ষেত্রে নিজের অবস্থান। আমাদের একটু ভেবে দেখা উচিৎ যে, বর্তমান কর্মক্ষেত্রে আমরা কোন অবস্থানে রয়েছি আর এই অবস্থানে আমাদের নিজস্ব অনুভূতি কী? আসলে আমরা নিজেদের কোন অবস্থানে দেখতে চাই? এই কর্মক্ষেত্রটি আমাদের আনন্দ দিতে পারছে নাকি আরও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে?

Source: lifeandmyfinances.com

যদি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পজিটিভ না হয়, তাহলে উচিত হবে কর্মক্ষেত্রটি পরিবর্তন করে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা। এতে করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ

প্রতিটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা থাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। আপনারও নিশ্চয়ই এরকম এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তাই একটু ভেবে দেখুন বর্তমান এই কর্মক্ষেত্রটিতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ কতটা রয়েছে। বর্তমান কর্মক্ষেত্রটি আপনার দক্ষতার কতটুকু মূল্যায়ন করছে? এই কর্মক্ষেত্রটি ঠিক কতটা বাস্তবসম্মত?

Source:searchengineland.com

যদি যোগ্যতা এবং দক্ষতার সঠিক মূল্যায়ন না পেয়ে থাকেন এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ না থাকে, তাহলে কখনোই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন না। এমতাবস্থায় নতুন কর্মক্ষেত্র খুঁজে নেওয়াই উচিৎ হবে। এমন একটি কর্মক্ষেত্র খুঁজুন, যেখানে যোগ্যতা ও দক্ষতার সঠিক মূল্যায়ন পাওয়া সম্ভব হবে। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।

কর্মক্ষেত্রের বাইরে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা

মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে। যদি আপনারও এরকম পরিকল্পনা থাকে তাহলে বিবেচনা করুন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঠিক কতটা সুযোগ আছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে লক্ষ্য অর্জনের পথে কতটুকু সহায়ক হতে পারে? যদি সুযোগ থাকে তাহলে সুযোগের সঠিক ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভাবুন

প্রতিটি বিষয়ের ভালো এবং মন্দ দিক থাকে। তাই যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে ভালো মন্দ সকল বিষয়ে ভেবে নিন। এতে করে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এড়ানো সম্ভব হবে নইলে পরবর্তীতে ভুল শোধরানো সহজ হবে না।

Source: kyabae.com

আর তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে নিজেকে ভালো করে প্রশ্ন করুন। আসলে আপনার লক্ষ্য কী? এই লক্ষ্য অর্জন ঠিক কতটা কঠিন হবে? এই লক্ষ্য অর্জন আপনার জীবনে ঠিক কতটা কাজে দিবে? কতিপয় এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর পেলেই কেবল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। ঠিক এইভাবে সকল খুঁটিনাটি বিষয়ে ভেবে সিদ্ধান্ত নিলে তবেই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা এড়ানো যাবে।

Feature Image Source:newstepsystems.com