পারিবারিক বাজেট ঠিক রাখার কার্যকর কিছু কৌশল

আপনি কি পারিবারিক বাজেট নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন? শত চেষ্টা করেও পারিবারিক বাজেট ঠিক রাখতে পারছেন না? বিচলিত হবেন না। এই সমস্যায় আপনি একা নন, আরো অসংখ্য মানুষ জর্জরিত।

Photo: wwfcu

পারিবারিক বাজেট ঠিক রাখা সত্যিই খুব কঠিন। কেননা পরিবার সব সময় একই গতিতে চলে না। মাসের শুরুতে মনে হয় সবকিছু ঠিক আছে, কিন্তু মাসের মাঝ বরাবর এসে দেখা যায় আপনার সব পরিকল্পনা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আপনি অনেক ভেবেচিন্তে পারিবারিক বাজেট নিশ্চিত করবেন। তারপর দেখবেন আপনার পরিকল্পনা এলোমেলো হয়ে গেছে।

তাহলে উপায় কী? পারিবারিক বাজেট ঠিক রাখতে হলে আপনাকে কৌশলী হতে হবে। আজকের নিবন্ধে পারিবারিক বাজেট ঠিক রাখার কিছু মোক্ষম কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো।

প্রতিমাসে একটি বিষয় চিহ্নিত করুন

বলা হয়ে থাকে, রোম শহর একদিনে সৃষ্টি হয়নি। তেমনি কোনো ভালো বা বদ অভ্যাস একদিনে সৃষ্টি হয় না। একইভাবে একটি কার্যকর বাজেট একদিনে নিশ্চিত করা যায় না। তাই প্রতি মাসে সমাধান করার জন্য একটি করে বিষয় বা সমস্যা নির্বাচন করুন। হতে পারে কোনো বদ অভ্যাস, অতিরিক্ত খরচ করার বাহানা অথবা অতি প্রয়োজনীয় কোনো পারিবারিক সংস্কার।

Photo: Reader’s Digest

পছন্দের কফিশপে ঘন ঘন যাওয়া বন্ধ করুন। নিয়মিত বাইরে খাওয়া এবং অতিরিক্ত বিল করার বদ অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করুন। অর্থাৎ এ জাতীয় একাধিক খরচের খাত থাকলে প্রতিমাসে সেখান থেকে একটি করে খাত নির্বাচন করুন এবং ক্রমশ তা ত্যাগ করুন।

এভাবে ছোট ছোট বিজয় উদযাপন করুন, সব সময় নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখুন। যা আপনাকে অর্থনৈতিকভাবে আরো ইতিবাচক হতে সহযোগিতা করবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই প্রচেষ্টা আপনার সামগ্রিক বাজেটের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বড় কেনাকাটা সকালে করুন

আপনি যদি সন্ধ্যায় বা বিকালে বড় ধরনের কেনাকাটা করতে বের হন, তবে অল্প সময়ে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। তাই সকল বড় ধরনের কেনাকাটা সকালে করুন।

প্রশ্ন হলো কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ? বিকালে কেনাকাটার বদলে সকালে কেনাকাটা করলে কী এমন সাশ্রয় হবে? আসলে ক্লান্ত হয়ে গেলে আমাদের বিবেচনাবোধ এবং বুদ্ধিমত্তা ভালোভাবে কাজ করে না। যার ফলে অপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিস কেনা হয়ে যায়।

Photo: NEWS10 ABC

বিপরীতে সকালে আমাদের মস্তিষ্ক শান্ত থাকে এবং সারাদিনের কর্ম উদ্দীপনা নিয়ে সম্পূর্ণ সক্রিয় থাকে। তাই সকল বড় ধরনের কেনাকাটার সিদ্ধান্ত সকালে নিলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং নিজের সঠিক বিচার বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সাশ্রয়ী এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। যা সামগ্রিকভাবে আপনার পারিবারিক বাজেটের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ক্ষুধার্ত অবস্থায় মুদি দোকানে যাবেন না

কথাটা শুনে নিশ্চয় হাসি পাচ্ছে? কিন্তু এর একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। আপনি যখন ক্ষুধার্ত, তখন মুদি দোকানে কেনাকাটা করতে যাবেন না। কেননা তখন বিচার-বিবেচনার চেয়ে আবেগ বেশি কাজ করে এবং ক্ষুধার্ত অবস্থায় সবকিছুই সুন্দর দেখায়। যার ফলে আপনার মুদি দোকান থেকে কেনাকাটা লিস্টে নেই এমন জিনিসও পছন্দ হয়ে যাবে এবং আপনি কিনে ফেলতে পারেন।

Photo: Washington English Center

বিপরীতে মুদি দোকানে কেনাকাটা করতে যাওয়ার পূর্বে পেট পুরে খেয়ে নিন। নিজের পাকস্থলী পূর্ণ হবার পর মুদি দোকানের কেনাকাটার লিস্ট হাতে নিন। এ অবস্থায় আপনি ওই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় খাদ্যের পার্থক্য বুঝতে পারবেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন।

পণ্যের এক তারকা রিভিউ পড়ুন

পণ্যের রিভিউ পড়ার ক্ষেত্রে সব সময় এক তারকা রিভিউ পড়ার চেষ্টা করুন। আপনি যদি সেরা পণ্যগুলোর দীর্ঘ ও অধিক রিভিউ পড়েন, তবে ওই পণ্যটি কেনার ব্যাপারে আপনার আগ্রহ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। যার ফলে আপনার কাছে সময় ও অর্থের মূল্য ওই পণ্যটি পাওয়ার সাপেক্ষে গৌণ হয়ে যাবে। এমনকি কোনো বিশেষ প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও আপনি পণ্যটি কেনার ব্যাপারে উদগ্রীব হয়ে উঠবেন।

Photo: Criteek

তাই সব সময় পণ্যের এক তারকা রিভিউ পড়ুন। এক তারকা রিভিউ পড়লে আপনি পণ্যটি সম্বন্ধে জানবেন, কিন্তু বিশেষ প্রয়োজন না থাকায় কেনার ব্যাপারে আগ্রহ সৃষ্টি হবে না। যা স্পষ্টতই আপনার পারিবারিক বাজেট সাশ্রয় করবে।

কার্ডে যোগ করার পরের দিন অনলাইন কেনাকাটা করুন

অনলাইন কেনাকাটা সাধারণত দুই ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে পণ্যটি পছন্দ করে কার্ডে যোগ করতে হয়। তারপর দ্বিতীয় ধাপে কার্ড রিভিউ করে মূল্য পরিশোধের জন্য প্রেস করতে হয়। সকল ভুল সিদ্ধান্ত এই দ্বিতীয় ধাপের শুরুতে গৃহীত হয়। কেননা একবার কার্ডে যোগ করার পর দ্বিতীয়বার কখনোই ভালো করে পর্যালোচনা করা হয় না যে, এই পণ্যটি সত্যিই আমার প্রয়োজন কিনা।

Photo: ColourBox

তাই কোনো পণ্য পছন্দ হলে কার্ডে যোগ করার পর অন্তত একদিন অনলাইন থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক দিন যাপন করুন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কার্ড চেক করে দেখুন, আপনার যোগ করা পণ্যগুলো তখন পর্যন্ত আপনার কাছে প্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে কিনা। তখন যদি প্রয়োজনীয় মনে হয়, তবে পণ্যগুলো কিনে ফেলুন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দিন সকালে সিদ্ধান্ত নিলে অনেকের সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয় এবং সত্যিই যদি কোনো পণ্য শুধু ভালো লাগার কারণে কার্ডে যোগ করা হয়ে থাকে তবে পরদিন সকালের বিবেচনাবোধ সেই পণ্যকে আর গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না।

এভাবে সিদ্ধান্ত নিলে অপ্রয়োজনীয় অনেক খরচের হাত থেকে আপনি বেঁচে যাবেন। যার ফলে আপনার পারিবারিক বাজেটের ব্যয় অনেকাংশে কমে যাবে এবং আপনার পক্ষে বাজেট ঠিক রাখা অনেক সহজ হবে।

Feature Photo: wwfcu

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *