সফল হতে চান? তাহলে এই তত্ত্ব মেনে চলুন

photo: edce

শিশুকালে কে কে কোনো মেলা, অনুষ্ঠান বা ব্যস্ত সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে পেশাদার জাদুকর বা সার্কাস খেলোয়াড়দের একসাথে অনেকগুলো বল নিয়ে খেলা করতে দেখেছেন? আমি দেখেছি! বাবার সাথে স্থানীয় হাটে গিয়ে প্রায়ই এমন খেলা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তবে তখন পর্যন্ত এজাতীয় কোনো খেলার নাম আমি জানতাম না। কিন্তু প্রতিবারই তাদের রঙিন বলগুলো নিয়ে খেলা করতে দেখে মুগ্ধ হতাম। আপনাদের শৈশবেও নিশ্চয়ই এমন অভিজ্ঞতা আছে?

photo: ipleaders

ছোটবেলার সেই আমি এখন ঐ খেলোয়াড়দের চেয়েও বড় খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছি! নিশ্চয়ই আপনারাও? আমরা বড় হওয়ার পর আরো বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করি, এমনকি সেই খেলোয়াড়ের চেয়েও অনেক ভারি, গুরুত্বপূর্ণ এবং বাস্তবসম্মত অনেকগুলো বল আমরা একহাতে নিয়ন্ত্রণ করি।

পরিবার, বন্ধু, স্বাস্থ্য এবং কাজ এই চারটি বিষয় আমাদের একসাথে সামাল দিয়ে চলতে হয়। আমার বিশ্বাস আমাদের সবারই এই চারটি বিষয় সাথে নিয়েই পথ চলতে হয়। আমাদের পরিবার এবং বন্ধুদের সময় দিতে হয়, নিজের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হয়, আবার নিজের জন্য নির্ধারিত কাজ শেষ করতে হয়।

আজকের নিবন্ধ আমি আপনাদের জানাবো এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে সাফল্যের পথে এগোনো যায়। সবকিছু কিভাবে একসাথে সামাল দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ছিনিয়ে আনতে হয়।

চার দহনকারী তত্ত্ব

photo: seanwes

ডেভিড সেড্রিসের ‘চার দহনকারী তত্ত্ব’ অনুযায়ী পরিবার, বন্ধু, স্বাস্থ্য এবং কাজ এই চারটি বিষয় একসাথে জীবন নামের চুলার প্রধান চারটি জ্বালানি। জীবনে সফল হতে হলে এই চারটি বিষয় থেকে যেকোনো একটি বিষয় আপনাকে বাদ দিতে হবে এবং সুনিশ্চিতভাবে সফল হতে হলে যেকোনো দুইটি বিষয় বাদ দিতে হবে।

আপোষ এবং ভারসাম্য

ব্যক্তি এবং কর্মজীবনের ভারসাম্য কি সত্যি সম্ভব? জীবনের এই চার দহনকারী বিষয়ের যেকোনো দুইটি একত্রিত করে ব্যস্ততা কমিয়ে আনা সম্ভব? অথবা এই চারটি বিষয়কে একসাথে এগিয়ে নিয়ে সফল হওয়া সম্ভব?

photo: youtube

আসলে জীবন একটি আপোষের ক্ষেত্র! এখানে প্রতিমুহূর্তেই আমাদের আপোষ করে চলতে হয়। আমরা একই সাথে যতটা সেরা কর্মী, পিতামাতা, স্বামী বা স্ত্রী এবং বন্ধু হওয়ার কথা ভাবি, বাস্তবে একইসাথে এতকিছু করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না। আপনি কি এরপরও কর্মক্ষেত্রের সাফল্যের জন্য অফিসে একটি নতুন প্রকল্পের দায়িত্ব নিতে চান এবং একই সাথে বন্ধুদের সব পার্টিতেও যোগ দিতে চান? আপনি কাজের ফাঁকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে চান আবার ছেলের হোমওয়ার্কে সাহায্য করতে চান?

একসাথে এতকিছু করা কঠিন সত্যি, কিন্তু অসম্ভব নয়। তবে এর জন্য আপনাকে কিছু বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হবে। নতুন করে কিছু বিষয় সাজাতে হবে।

অপ্রয়োজনীয় মানুষ এবং কাজে সময় দেওয়া বন্ধ করুন

আপনি কি অপ্রয়োজনীয় কাজের চাপে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সময় পান না? বাইরের মানুষকে সময় দিতে গিয়ে পরিবারকে সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না? চিন্তা করুন এবং আপনার কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করুন।

আপনার জীবনের অধিক গুরুত্বপূর্ণ আর কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ কী তা বুঝে নিন এবং এর ভিত্তিতেই দৈনন্দিন কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করুন। ভেবে দেখুন, অফিস শেষে সহকর্মীদের সাথে সারাদিন কাজ করার পর আবার সন্ধ্যার বিশেষ চা-চক্রের প্রয়োজন আছে কি? আভিজাত্যের গলফ খেলা আপনার জীবনে কতটা প্রয়োজনীয়?

photo: edce

এ অপ্রয়োজনীয় কাজগুলো জীবন থেকে বাদ দিন। বিশ্রাম নিন। নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে সময় দিন। কাজ শেষে বাড়িতে ফিরে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে নিজের সন্তানের সাথে খেলা করুন। নিজের স্বামী বা স্ত্রীকে একান্ত সময় দিন।

এইসব ছোট ছোট পরিবর্তন আপনার দৈনন্দিন জীবনকে আরো বেশি স্বচ্ছন্দময় করে তুলবে, আপনার জীবনকে আরো বেশি পরিপূর্ণ করে তুলবে।

একই সময়ে শুধু একটি কাজে মনোযোগ দিন

আমরা মনে করি, একই সাথে অনেকগুলো কাজ করতে পারা বিশেষ ধরনের দক্ষতা। যারা একসাথে অনেক কিছু করতে পারে তারাই জীবনে সফল হয়। কিন্তু আদতে এটা একটা ভুল ধারণা। গবেষণায় দেখা গেছে, একসাথে অনেকগুলো কাজ করলে সুনির্দিষ্ট একটি কাজের দক্ষতা হ্রাস পায় এবং কাজের মান ভালো হয় না। তাছাড়া অল্প সময়ে কাজে বিরক্তি চলে আসে।

photo: media.consensys

সুতরাং একসাথে অনেকগুলো কাজ করে নিজেকে সুপারম্যান জাহির করার বদলে এক সময়ে সুনির্দিষ্ট একটি কাজে মনোযোগ দিন। এতে আপনার কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, কাজ দ্রুত হবে এবং মানসিক প্রশান্তি আসবে। আবার দ্রুত কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় আপনি পরিবারকেও পর্যাপ্ত সময় দিতে পারবেন।

দিনশেষে কাজের হিসাব

সারাদিন শুধু কাজ, কাজ আর কাজ, এই ধারণা থেকে বের হতে হবে। প্রতিটি দিনের শেষে অল্প কিছু সময় নিন সারাদিনের কর্মতৎপরতা পর্যালোচনা করার জন্য। মিলিয়ে দেখুন সারাদিনে আপনার কী কী করার ছিল, আর কী কী করতে পেরেছেন। আপনি কি পরিকল্পনা মতো সবকিছু করতে পেরেছেন? এই ভাবনা নিজের কর্মদক্ষতা ও পরিবারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

photo: medium

আপনি সারাদিনে কী কী কাজ করতে চান আর তার বিপরীতে কী কী অর্জন করতে চান তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করুন। সেই তালিকা অনুযায়ী পরবর্তী দিন কাজে নেমে পড়ুন। এভাবে প্রতিদিনের ছোট ছোট পরিকল্পনা আপনার জীবনকে অনেক বেশি সুখী করে তুলবে।

কেননা প্রতিদিনের কর্ম পর্যালোচনা আপনার স্বভাব চরিত্র উন্নয়ন এবং কাজের সর্বোত্তম পন্থা নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এভাবে পরিকল্পিত জীবন যাপন করুন, সুখে থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *