ক্যারিয়ারে ভালো কিছু করতে হলে পৃথিবীর জন্য ভালো কিছু করুন

ক্যারিয়ার” শব্দটি বর্তমানে প্রতিটি মানুষের কাছেই একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সাধারণত ক্যারিয়ার বলতেই আমরা অর্থ উপার্জনের মাধ্যমকে বুঝি। যখন থেকে ক্যারিয়ার সম্পর্কে বোঝার ক্ষমতা সৃষ্টি হয়, তখন থেকেই লেখাপড়া শেষ করে একটি ভালো বেতনের চাকরি করা আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ক্যারিয়ার নির্বাচনে সবচেয়ে জরুরি বিষয় এটি নয়।

বরং কোন কাজটি করতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, আপনার কাজটি পৃথিবীর কোনো উপকারে আসবে কিনা এবং আপনার কাজের ফলে মানুষ উপকৃত হচ্ছে কিনা- এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। তাই নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে এমন কোনো কাজকে নির্বাচন করুন, যার মাধ্যমে আপনি অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেও কাজ করতে পারবেন।

ভালো ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে সর্বপ্রথমে পৃথিবীর জন্য ভালো কিছু করুন; Source: lyl-ingenieria.com

আমরা যেমন নিজেদের ক্যারিয়ারের জন্য প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি, দক্ষতা ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবকরা মানুষের কল্যাণের জন্য আরও বেশি পরিশ্রম করতে পারে। বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর সফল মানুষদের নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন যে, মানুষগুলোর পেশা, ভাষা, সংস্কৃতি ভিন্ন হওয়ার সত্ত্বেও একটি ক্ষেত্রে তাদের দারুণ মিল- তারা সবাই নিজেদের কাজের দ্বারা পৃথিবী এবং পৃথিবীর সকল মানুষের কল্যাণ সাধন করছে। তাই আপনার স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের দ্বারা বিশ্বের মানুষদের সাহায্য করার জন্য এই পদক্ষেপগুলো গুরুত্বের সাথে অনুসরণ করুন।

১. দক্ষতা বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সনাক্ত করুন

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেকেই নিজের মেধা এবং দক্ষতা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। বস্তুত নিজের উপর যথেষ্ট অনাস্থা থেকেই এ ধরনের দ্বিধাদ্বন্দের সৃষ্টি হয়। এর থেকে উত্তরনের জন্য প্রয়োজন আত্মপর্যালোচনা এবং তার উপর ভিত্তি করে নিজের অবস্থান নির্ধারন করা, নিজের দক্ষতা এবং পারদর্শীতা সনাক্ত করা। অর্থাৎ নিজের জায়গা থেকে পৃথিবীকে ভালো কিছু উপহার দিতে হলে চাই সঠিক দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা।

আপনার দক্ষতা বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহ সনাক্ত করুন; Source: Nejc Slovnik

তাই আপনি আপনার কর্মজীবনটি এমন একটি প্রকল্প থেকে শুরু করুন, যেখানে থাকলে আপনার দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা সৃষ্টি হবে এবং সেগুলোকে বিকাশিত করার সুযোগ পাবেন। একটি নির্দিষ্ট সময় পর আপনি নিজের শক্তিগুলো সম্পর্কে জানার জন্য এই তিনটি পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখুন।

  • আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি সম্পর্কে পুরানো সহকর্মী, বন্ধু এবং অতীত পরিচালকদের সাথে কথা বলুন।
  • যে কাজগুলো আপনার দক্ষতার উপর নির্ভর করে, সেগুলোতে অতীতের তুলনায় ভালো ফলাফল পাচ্ছেন কিনা তা লক্ষ্য করুন।
  • আপনার দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করার জন্য আপনার জীবনবৃত্তান্ত এবং কাজের ভুলভ্রান্তি সম্পর্কে পরিচালকগণ বা সম্ভাব্য নিয়োগকারীদের কাছ থেকে যে প্রতিক্রিয়া শুনেছেন তা গ্রহণ করুন এবং পরবর্তী স্তরে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে কী করতে হবে তা সনাক্ত করুন।

২. দক্ষতাগুলো বিকাশিত করার জন্য পরামর্শ নিন

সাধারণত দক্ষতা বিকাশের জন্য দিকনির্দেশনা পাওয়ার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো আপনার মতো অন্যরা যারা একই কাজ করছে তাদের সাথে আলোচনা করা। আর তা করার একটা সহজ উপায় হলো আপনার বিভাগের পরিচালক বা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে সময় কাটানো, তাদের থেকে পরামর্শ নেওয়া এবং তাদের কাজগুলোকে সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা।

আবার আপনার মতো একই কাজ করে এমন বন্ধুবান্ধব ও পরামর্শদাতাদের থেকেও আপনি অনেক কিছু জানতে পারেন। তাদের সাথে আপনার দুর্বলতাগুলো নিয়ে আলোচনা করুন এবং কিভাবে তা বিকাশিত করা যায় সে সম্পর্কে ধারণা নিন। তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এমন অন্যান্য ব্যক্তিদের খুঁজে নিন যারা তাদের দক্ষতা বিকাশের চেষ্টা করছে অথবা বিকাশ করেছে। কারণ তাদের পরামর্শই আপনার সবচেয়ে বেশি উপকারে আসবে।

৩. শেখার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

আপনি আপনার কাজ দিয়ে যদি পৃথিবীর মানুষদের উপকার করতে চান তাহলে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করুন। আর সেজন্যই আপনাকে নিজের ক্যারিয়ারের প্রতি হতে হবে খুবই দায়িত্বশীল। তাই ক্যারিয়ারের জন্য আগে যথাযথভাবে শেখার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।

ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে চাইলে সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; Source: blueocean.ca

“Choosing a goal and sticking to it changes everything.”

-Scott Reed

অর্থাৎ একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং সেটির সাথে আঁকড়ে থাকার মাধ্যমেই সফল হওয়া সম্ভব। আপনি ক্যারিয়ারে উন্নয়নের জন্য কী কী শিখতে চাচ্ছেন এবং অন্যরা এই বিষয়গুলো কিভাবে আয়ত্ত্ব করছে সবদিক বিবেচনা করে শেখার চেষ্টা করুন। এর মাধ্যমেই আপনি ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে পারবেন।

৪. পছন্দের কাজটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিন

ক্যারিয়ার শুরু করার পর ‘কাজ ভাল লাগে না’ রোগে ভুগতে না চাইলে প্রথমেই ভেবে নেওয়া উচিত কী ভাল লাগে। আপনি কী করতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন তা ভাবুন। এবং সেই কাজটা আসলে সিরিয়াস ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া যায় কিনা বা এটা প্রচলিত কিনা সেই বিষয়ে খোঁজ করুন। ধরুন আপনি লিখালিখি ভালবাসেন, তাহলে অবশ্যই আপনার জন্য ব্লগিং অথবা সংবাদপত্রে লেখালেখির চাকরিটাই ভালো হবে।

আবার সেই সাথে আপনি সমাজসেবামূলক কাজও করতে পারবেন। ঠিক তেমনি প্রতিটি পেশা থেকেই সেচ্ছাসেবামূলক কাজকর্ম করা যায়। শুধুমাত্র যদি আপনি আপনার পেশাটাকে ভালোবাসেন তবেই সেটা সম্ভব। তাই নিজের অপছন্দের কাজকে কখনো ক্যারিয়ার হিসেবে নেবেন না। কারণ তখন আপনার ক্যারিয়ারটাকেই আপনার বোঝা মনে হবে।

৫. আপনার কাজের প্রতিফলন থেকে শিখুন

আপনার পূর্ববর্তী কাজের প্রতিফলন থেকে শিখুন; Source: Toronto Teacher Mom

অতীতে আপনি যে কাজগুলো করেছেন তা থেকে শেখার সবচেয়ে শক্তিশালী উপায় হলো ‘প্রতিফলন’। থিং ব্যাক, থিঙ্ক থ্রো, থিওউ ফরোয়ার্ডের মতো প্রতিফলনের কাঠামোগুলো ব্যবহার করে আপনি কীভাবে আপনার কাজটি সম্পন্ন করেছেন এবং কীভাবে এই প্রতিফলনটি আপনার কাজকে এগিয়ে যেতে প্রভাবিত করতে পারে তা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। আপনি একবার যা শিখেছেন তা বার বার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করুন। এবং আপনার শেখার অভিজ্ঞতাটি বন্ধু বা সহকর্মীর সাথে আলোচনা করুন। যার মাধ্যমে আপনি আপনার পরিবর্তনটা বুঝতে পারবেন এবং পরবর্তীতে সেই কৌশলগুলো যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন।

Featured Image Source: soulmusings.org

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *