জীবন বীমা করার ব্যাপারে আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষ উদাসীন। কেউ কেউ জীবনে নানা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করলেও জীবন বীমা করার কথা ভাবে না। আবার কেউ কেউ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেও নানা জটিলতার ভয়ে বীমা করে না। আবার অনেকে মনে করে জীবন বীমা করলে মাসে মাসে বীমার টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে দৈনন্দিন জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। আসলে এই ধারণা ভুল। দৈনন্দিন রোজগার থেকে দৈনন্দিন জীবন চলে। আর প্রত্যেক মানুষ নিশ্চয়ই অর্থ সঞ্চয়ের গুরুত্ব বোঝে। এমনকি যারা জীবন বীমা করতে ভয় পায় তারাও প্রতিমাসে কিছু না কিছু সঞ্চয় করার চেষ্টা করে।

Source: Life Insurance 411

আপনি যদি প্রতিমাসের রোজগার থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা সঞ্চয় করেন তাহলে বছর শেষে প্রতিমাসের নির্দিষ্ট অংকের ১২ গুণ টাকা একসাথে হাতে পাবেন। ভেবে দেখুন একবছর সঞ্চয় করার পর যদি আপনি মারা যান তবে আপনার পরিবার মাত্র ১ বছরের সঞ্চয় পাবে, যা দিয়ে তাদের ভবিষ্যত জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু আপনি প্রতি মাসের একই পরিমাণ টাকা যদি ব্যক্তিগতভাবে সঞ্চয় না করে ১০ বছর মেয়াদী জীবন বীমায় জমা করতে থাকেন তবে এক বছর পর মারা গেলে আপনার পরিবার বীমার সম্পূর্ণ ১০ বছর মেয়াদের অর্থ পাবেন। নিঃসন্দেহে যা এক বছরের সঞ্চয়ের দশগুণ।

Source: Client Focused Advisors

জীবন বীমা করার এমন আরো অনেক সুযোগ সুবিধা আছে। আজকের নিবন্ধে অর্থনৈতিক কিছু জটিল হিসাবের কথা উল্লেখ করব, যে সকল ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য আপনার অবশ্যই জীবন বীমা থাকা উচিত।

উত্তরাধিকারদের ঝগড়া থামাতে

বাংলাদেশের সিংহভাগ পরিবারে পিতার মৃত্যুর পর সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করা নিয়ে বিবাদ সৃষ্টি হয়। সম্পত্তির ভাগ বুঝে নিতে আপন ভাইকে খুন করার মতো খবরও আমরা হরহামেশা পত্রিকায় দেখি। এমনকি পিতা সন্তানদের যতো সৎ পরামর্শই দিক না কেন, তার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকাররা এসব পরামর্শ ভুলে গিয়ে সম্পত্তি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যে কারণে বিবাদ সৃষ্টি হয়।

আপনি চাইলে সন্তানদের ভবিষ্যত বিবাদ মেটানোর জন্য নগদ অর্থের ব্যবস্থা করে যেতে পারেন। যে অর্থ পেলে তারা আপনার গড়ে তোলা স্বপ্নের বাড়ি ভাঙবে না, এমনকি সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব সংঘাতে জড়িয়ে পরস্পরের শত্রু হবে না।

Source: The Quotable Coach

এর জন্য প্রয়োজন হবে শুধু একটি জীবন বীমার। ধরা যাক আপনার একটি বাড়ি আছে এবং উত্তরাধিকার হিসেবে দুই সন্তান আছে। আপনার মৃত্যুর পর এক সন্তান চাইল আপনার বাড়িতে তার ভাগের অংশ সে বিক্রি করে দিবে। অন্য সন্তান চাইল বাড়িটা বিক্রি না করে ঐতিহ্য ধরে রাখতে। এ অবস্থায় দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব হবে। কিন্তু আপনি যদি জীবন বীমা করে দুই সন্তানের জন্য সম্পত্তি বিক্রি না করেই অধিক অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করে যান, তবে যেমন আপনার বাড়িটি ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে, তেমনি সন্তানদের মধ্যেও কোনো বিবাদ হবে না।

উত্তরাধিকারদের সম্পত্তির কর এবং সরকারি খরচ

আপনি যদি বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকেন এবং তার বিপরীতে মোটা অংকের সরকারি কর এবং প্রশাসনিক খরচ বহন করতে হয়, তবে অবশ্যই আপনার একটি জীবন বীমা করা উচিত। কেননা আপনার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকাররা অধিক কর এবং প্রশাসনিক খরচ মেটাতে না পেরে সম্পত্তি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমনকি সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করে অন্য অংশের কর পরিশোধ করার সিদ্ধান্তও নিতে পারে। যা আপনার ঐতিহ্য এবং সম্পত্তি নষ্টের কারন হবে। যে উত্তরাধিকারদের জন্য আপনি এই সম্পত্তি রেখে গেছেন তারা তা রক্ষণাবেক্ষণ করতে ব্যর্থ হবে।

Source: Euro Kerdos Magazine

আপনি এই স্টেট বা সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটানোর তহবিল হিসেবে জীবন বীমা করতে পারেন। যার ফলে আপনার উত্তরাধিকাররা সম্পত্তি নষ্ট না করেই সকল রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটাতে সক্ষম হবে।

পরিবারের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সদস্যের নিরাপত্তা

অনেকের পরিবারে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সদস্য থাকে। যেমন কারো সন্তান বা ভাই প্রতিবন্ধী অথবা দুর্ঘটনায় শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। যার পক্ষে নিজে রোজগার করে জীবন চালানো কঠিন। তার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আপনি একটি স্থায়ী জীবন বীমা করতে পারেন। আপনি যতদিন জীবিত থাকবেন ততোদিন তো তার খোঁজ নিবেন। আপনার মৃত্যুর পর এই স্থায়ী জীবন বীমা তার একমাত্র অর্থনৈতিক অবলম্বন হয়ে উঠবে। যার উপর ভর করে সে তার পরবর্তী জীবন চালিয়ে নিতে পারবে।

নিজের অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার খরচ

সচেতন মানুষ শুধু জীবিত অবস্থায় জীবনের পরিকল্পনা করে না। তার মৃত্যুর পর পরিবার কী কী সমস্যায় পড়তে পারে, এসব নিয়েও সে ভাবে। সেই বিবেচনা থেকে আপনার পারিবারিক অবস্থা বুঝে নিজের অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার খরচ আপনি আগেই প্রস্তুত করতে পারেন। এছাড়া অঞ্চল ভেদে সামাজিক কারণে কোনো মানুষের মৃত্যুর পর নানা আচার অনুষ্ঠানের রেওয়াজ থাকে। এ সকল আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে হলে পর্যাপ্ত অর্থের প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের পক্ষে যা বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আবার এসব আচার-অনুষ্ঠান না করলে সামাজিকভাবে পরিবারকে ছোট হতে হয়।

Source: Funeral Costs Help

নিজের অন্তষ্টিক্রিয়া এবং তার পরবর্তী এই সব খরচ মেটানোর জন্য আপনি স্থায়ী জীবন বীমা করতে পারেন। যা আপনার পরিবারকে যেমন শাস্তি দিবে, তেমনি আপনার প্রতি পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধাবোধ আরো বৃদ্ধি পাবে।

মানুষের জীবনে এমন আরো অনেক জটিল অর্থনৈতিক হিসাব আছে, যা খালি চোখে দেখা যায় না। এ জাতীয় নানা জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য জীবন বীমা হতে পারে সবচেয়ে বড় ঢাল। সুতরাং বুঝে শুনে জীবন বীমা করুন এবং নিজের ও পরিবারের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন।

Feature Image: Client Focused Advisors