কর্মক্ষেত্রে অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ কেন বেশি প্রয়োজন

photo: personal care dentistry

কর্মক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা এবং অঞ্চলের মানুষ একত্রে কাজ করেন। ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব পালন করলেও সবাই মিলে একটি প্রতিষ্ঠানকে সফল করে তোলার চেষ্টা করেন। সম্মিলিত কাজে কোনো কর্মী সফল হযন, আবার কোনো কোনো কর্মী ব্যর্থ হন। আপনি হরহামেশাই এমন অনেক সহকর্মীকে দেখবেন যারা অত্যন্ত বাকপটু স্বভাবের কিন্তু কাজের ব্যাপারে ততটা দক্ষ না। আবার এমন অনেক সহকর্মীকে দেখবেন যারা খুব কম কথা বলে কিন্তু কাজের ব্যাপারে সবার চেয়ে বেশি দক্ষ। এই দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষকে অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ বলা হয়।

photo: eric huber

অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষের বিশেষ কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে যে কারণে তার সব জায়গাতেই অনন্য। আমি ইতিপূর্বে অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকের নিবন্ধ অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষের এমন কিছু বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করবো, যা কর্মক্ষেত্রে তাদের বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। বলার অপেক্ষা রাখে না নিয়োগকর্তারা এমন স্বভাবের মানুষকেই প্রত্যাশা করেন।

১. দীর্ঘসময় কাজ করতে বিরক্ত বোধ করেন না

অন্তর্মুখী মানুষের কাজের প্রতি গভীর মনোযোগী হওয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা আছে। তারা নিজ উদ্যোগেই গভীর মনযোগে লম্বা সময় কাজ করতে ভালোবাসেন, যদি সেই কাজের পরিবেশ শান্ত এবং শান্তিপূর্ণ হয়। কাজের পরিবেশ যদি অন্তর্মুখীদের মনের মতো হয় তবে তারা যেকো্নো দীর্ঘ প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে সমান মনোযোগী হয়ে করে যেতে সক্ষম। এবং তারা এমন কাজ উপভোগ করেন।

photo: HuffingtonPost

এর বিপরীতে বহির্মুখী স্বভাবের মানুষ দীর্ঘ সময় কাজ করতে পারেন না। লম্বা সময় কাজ করতে গেলেই তারা একাকীত্ব বোধ করে এবং নিজেই নিজের কাছে বিরক্ত হয়ে ওঠেন। বহির্মুখীরা দীর্ঘসময় কাজ করলে বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং দ্রুত অন্য কারো সঙ্গ পেতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। অফিসের মধ্যেই চা-কফি খাওয়ার বাহানায় তারা অন্যদের সাথে খোশগল্পে মেতে ওঠে এবং নিজের একাকীত্ব দূর করার চেষ্টা করে।

সুতরাং দীর্ঘমেয়াদী এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য অন্তর্মুখী মানুষই বেশি ভালো। এ কারণে নিয়োগকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ এবং দীর্ঘমেয়াদী কাজের জন্য অন্তর্মুখী স্বভাবের কর্মী খোঁজেন।

২. একা একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে পিছপা হন না

বহির্মুখী স্বভাবের মানুষেরা যেখানে একটি প্রকল্প দলবদ্ধভাবে অনেকে মিলে করতে পছন্দ করেন, অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষেরা সেখানে একা একাই কোনো বড় প্রকল্প গ্রহণ করতে ভালোবাসেন। তারা নিজের মতো করে কাজ করেন। নিজেই নিজেকে প্রস্তুত করেন। এভাবে তারা আরো বেশি সৃজনশীল হয়ে ওঠেন। তারা একা যেকোনো বড় প্রকল্পের মধ্যে ডুব দিয়ে সফল করে তুলতে পারেন।

photo: telediario digital

বড় প্রকল্প গ্রহণ এবং তা সার্বিকভাবে সফল করে তোলার জন্য এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সেই কারণে বড় বড় সাফল্য আসে একক ব্যক্তির হাত ধরে। যেমন গবেষণা। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যত বড় বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং আবিষ্কার হয়েছে তার পেছনে সুনির্দিষ্ট একজন বিজ্ঞানীর নিরলস শ্রম রয়েছে। বিজ্ঞানী, লেখক, শিল্পী এই শ্রেণীর মানুষেরা সব সময় অন্তর্মুখিতার কারণে সাফল্যের শীর্ষে অবস্থান করেন।

সুতরাং এমন গভীর মনোযোগী ও সাহসী কর্মীদের সব কোম্পানি প্রত্যাশা করে। তাই স্বভাবতই অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষদের কর্মক্ষেত্রে বিশেষ কদর থাকে।

৩. কাজের সময় বাধা পেলে বিরক্ত হন

অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষেরা কখনই কাজের সময় কোনো প্রকার প্রশংসা বা প্রতিবন্ধকতা কামনা করেন না। এতে তাদের কাজে মনোযোগ নষ্ট হয়। তার বর্তমান প্রকল্প এবং ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই কারণে অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষেরা কাজের সময় বন্ধু, আত্মীয়স্বজন বা অন্য কারো সহচার্য কামনা করেন না। এমনকি তারা কাজ করতে করতে তাৎক্ষণিক আসা ফোন কলেও সাড়া দেয় না। ফোন কলগুলো ভয়েস মেইলে চলে গেলে বা ব্যর্থ হয়ে গেলে তারা মোটেও বিচলিত হযন না। বরং কাজ শেষ করে সে অন্যের সাথে যোগাযোগের ব্যাপারে মনোযোগী হন।

photo: thoughts-about-god

অন্যদিকে বহির্মুখী স্বভাবের কর্মীরা মনে মনে অন্যদের সহচার্য আশা করেন এবং কাজের সময় কেউ তাকে বাধা দিলে বা অন্য কিছু বলতে চাইলে তাতে মনোযোগী হন। কেননা তারা দীর্ঘ সময় কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তাই অন্য কারো সহচার্য পেলে একঘেয়েমি দূর করার বাহানায় তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো অন্তর্মুখীদের নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হওয়ার আরো একটি বড় কারণ এটি।

৪. কাজের সময়সীমা বা চুক্তি ভঙ্গ করেন না

যেহেতু কাজের পরিকল্পনা এবং প্রক্রিয়ায় অন্তর্মুখীরা অনেক বেশি পারদর্শী হয়ে থাকেন। তাই তারা সময়কে নিয়ন্ত্রণ করতে জানেন। যথাসময়ে কাজ শেষ করা বা চুক্তি অনুযায়ী কাজ করার ব্যাপারে তাদের বিশেষ নজর থাকে।

photo: inbound minds

এর বিপরীতে বহির্মুখী স্বভাবের মানুষ কাজের সময়সীমার ব্যাপারে উদাসীন হয়ে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বহির্মুখী স্বভাবের মানুষ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হন। এই কারণে কর্মক্ষেত্রে অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কেননা ব্যবসায় চুক্তি মান্য করা এবং সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

৫. তারা কাউকে ঘৃণা করে না

যেহেতু অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ নিজের কাজের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করে না, এবং তিনি নিজেই নিজের সমালোচনা করতে পারেন। তাই অন্য কাউকে দোষারোপ করা বা ঘৃণা করারও প্রয়োজন হয় না। তারা শুধু নিজের কাজে ব্যস্ত থাকেন। কিছু ভাল বন্ধু নির্বাচন করে নেন। আবার সেই বন্ধুদের থেকে খুব বেশি প্রত্যাশা করেন না। বন্ধুরা তাকে সময় না দিলেও সে মন খারাপ করেন না।

photo: personal care dentistry

আপনি যদি অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষদের বুঝতে পারেন তবে আপনি একজন শান্ত, গভীর এবং বিশ্বাসী মানুষকে খুঁজে পাবেন, যার সাথে ব্যক্তিগত বা পেশাদারী যেকোনো সম্পর্ক নিরাপদ থাকে। অন্তর্মুখী মানুষকে ভালোভাবে জানার পর নিশ্চয়ই আপনি বন্ধু হিসাবে এমন মানুষকে পেতে চাইবেন। কেননা তারা আপনার জীবনেও পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তারা সবকিছুর ব্যাপারে গভীর মনোযোগী এবং শ্রেষ্ঠতম হয়ে থাকে। তাই এমন মানুষকে বন্ধু হিসেবে পেলে আপনার জীবনেও ভালো কিছু ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *