বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ ছাড়াও সফল হওয়া যায় যেসব কাজে

photo: rd

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেও অনেক মানুষ কাঙ্ক্ষিত চাকরি পায় না। তাহলে যাদের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী নেই তাদের অবস্থা কী? তারা কী আদৌ কোনো চাকরি পাবেন? আসলে চাকরি পাওয়া শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের উপর নির্ভর করে না। অনেক ক্ষেত্রে চাকরি পাওয়া নির্ভর করে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতার উপর।

photo: wellspring med

আমি ইতিপূর্বে দুটি নিবন্ধ এমন কয়েকটি চাকরি নিয়ে আলোচনা করেছি, যা পেতে হলে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের প্রয়োজন নেই। আজকের নিবন্ধে আরো কয়েকটি চাকরি নিয়ে আলোচনা করবো। এই চাকরিগুলো পেতেও আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের প্রয়োজন হবে না। প্রয়োজন হবে শুধু আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতার।

১. পাওয়ার প্লান্ট অপারেটর

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা: মাধ্যমিক স্কুল পাস বা ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী।

এই কাজটি অনেকটা বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন মেরামত কাজের মতো। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন মেরামতের সাথে এই কাজের কিছুটা পার্থক্য আছে। পাওয়ার প্ল্যান্ট অপারেটরদের সব সময় একই জায়গায় অবস্থান করে কাজ করতে হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন মেরামতকারীদের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাজ করা লাগে।

photo: nevada clean energy

পাওয়ার প্ল্যান্ট শ্রমিকদের প্রধান কাজ হলো বৈদ্যুতিক শক্তি বিতরণ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা। তবে এই কাজটি করার জন্য বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণের দরকার হয় না। মাত্র কয়েকদিনের জানা-বোঝা এ কাজ করার জন্য যথেষ্ট। উন্নত বিশ্বে পাওয়ার প্লান্ট অপারেটরদের মাসিক সম্মানী প্রায় ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার।

২. দাঁত পরিষ্কারক

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা: সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিপ্লোমা অথবা বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত।

শুনতে অবাক লাগলেও এটি সম্পূর্ণ একটি আলাদা পেশা। তবে দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ ভেবে ভুল করবেন না। আপনারা নিশ্চয় দেখেছেন, দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আরেকজন সাহায্যকারী থাকেন, যিনি মূলত শুধু দাঁত পরিষ্কার এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে এজাতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। দন্ত পরিষ্কারকের দক্ষতার উপর নির্ভর করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শের পর আমাদের দাঁত কতটা সুস্থ হয়ে উঠবে।

photo: stlawyers

২০১২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উন্নত বিশ্বে এই কাজ করে প্রায় ৭০ হাজার মার্কিন ডলার সম্মানী পাওয়া যায়। বাংলাদেশেও এই পেশার যথেষ্ট কদর রয়েছে। সুতরাং আপনি চাইলে দাঁতের চিকিৎসা করা হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিতে পারেন।

৩. লিফট মেরামতকারী এবং নির্দেশক

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা: মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাস বা সমমান ডিগ্রী।

লিফট সম্পর্কিত সার্বিক বিষয়, যেমন মাউন্টিং, ফিক্সিং এবং এ সম্পর্কিত অন্যান্য দক্ষতা অর্জন করে এই চাকরি পাওয়া যায়। এর জন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না।

photo: macleans

সার্বক্ষণিকভাবে কোনো বহুতল ভবনের লিফট পর্যবেক্ষণ, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামত করা এই কর্মীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। উন্নত বিশ্বে সুউচ্চ ভবনের লিফট মেরামত এবং নির্দেশনাকারীদের মাসিক সম্মানী প্রায় ৭০ হাজার মার্কিন ডলার।

৪. পরিবহন, সংগ্রহশালা বা বিতরণ ম্যানেজার

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা: মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাস বা সমমান।

প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা খাতে যাদের দক্ষতা আছে তারা পরিবহন ব্যবস্থাপনায় যোগ দিতে পারেন। এই চাকরিতে যোগ দিলে আপনাকে সরকারি নীতি অনুসারে যেকোনো পরিবহন কোম্পানির সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিতে হবে। এছাড়া এর কাছাকাছি আর একটি পেশা কোনো সংগ্রহশালা বা সংরক্ষণশালা ব্যবস্থাপনা করা। সেক্ষেত্রেও আপনাকে একটি বিশাল সংগ্রহশালা সার্বক্ষণিক তদারকি, পরিচর্যা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।

photo: wisegeek

এছাড়া আপনি যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিতরণ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন তবে আপনাকে তাদের পণ্য বা সেবার যথাযথ বন্টন নিশ্চিত করতে হবে। উন্নত বিশ্বে এ ধরনের চাকরির সম্মানী অনেক বেশি, প্রায় ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। তবে বাংলাদেশে এত বেশি সম্মানী পাওয়া না গেলেও কাজটি খুবই আরামদায়ক।

৫. এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা: সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ।

এয়ার ট্রাফিক কনট্রোলারের কাজ খুবই পরিচ্ছন্ন। এই কাজের জন্য কর্মীদের উচ্চ হারে বেতন দেওয়া হয়ে থাকে। বিমানবন্দর অধ্যুষিত আকাশসীমা পর্যবেক্ষণ এবং সেই তথ্য বৈমানিককে জানিয়ে বিমানের সফল এবং নিরাপদ অবতরণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার। বিমানবন্দর এবং উড়ন্ত বিমানের মাঝের দূরত্ব বা কাছাকাছি দুটি বিমানের মধ্যকার দূরত্ব ইত্যাদি তথ্য নিশ্চিতভাবে বৈমানিককে জানিয়ে থাকে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার।

তাই আরামদায়ক কাজ হলেও এই কাজটি খুবই সতর্কতার সাথে সম্পাদন করতে হয়। এখানে একটি ভুল তথ্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সম্প্রতি নেপালের কাঠমান্ডুতে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে! কাজের গুরুত্ব যেমন বেশি, তেমনি সম্মানীও আকাশচুম্বী। ২০১২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উন্নত বিশ্বে একজন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের মাসিক বেতন প্রায় ১ লক্ষ ২২ হাজার মার্কিন ডলার।

photo: rd

আমার ধারাবাহিক এই নিবন্ধগুলোতে উল্লেখিত চাকরিগুলো প্রমাণ করে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী থাকলেই কর্ম জীবনে সফল হওয়া যায় এমন নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী না থাকলেও সফল হওয়া যায় এবং স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করা যায়। তবে যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে প্রধান যোগ্যতা হলো দক্ষতা। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা স্কুল কলেজে না পড়েও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হয়েছেন, সাফল্য বয়ে এনেছেন।

সুতরাং আপনার যদি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী না থাকে, তবে হতাশ হবেন না। বরং আপনার জন্য আছে অসংখ্য সম্মানজনক পেশা। আপনার শুধু দরকার আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতা। আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে চললে বিশ্ববিদ্যালয় সনদ না থাকা কখনো আপনার সাফল্যের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *