যেসব পুরনো জিনিস বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা যায়

photo: Lifehack

বাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা জিনিস আমরা ব্যবহার করি। এইসব জিনিস ব্যবহার করতে করতে এক সময় তার ব্যবহার উপযোগিতা হারায়। তখন আমরা পুরনো জিনিস হিসেবে এগুলো সংরক্ষণ করি।

photo: Lifehack

আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সাথে সাথে এমন অনেক জিনিস জমতে থাকে, যার আদতে আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। বাড়িতে জমতে থাকা এমন পুরনো জিনিসপত্র বিক্রি করে অর্থ রোজগার করা যায়। প্রশ্ন হলো, কি সেই জিনিস? বাড়িতে থাকা কী কী বিক্রি করে অর্থ আয় করা যায়? আজকের নিবন্ধে এমন কয়েকটি জিনিস নিয়ে আলোচনা করবো, ব্যবহারের পর পুরোনো হয়ে গেলেও যা বিক্রি করে টাকা-পয়সা রোজগার করা সম্ভব।

১. পুরনো বই

পুরাতন বইয়ের বেচাকেনা সম্বন্ধে নিশ্চয়ই আপনি ইতিমধ্যে জেনে থাকবেন। আপনার বাড়িতে থাকা পুরনো বই বিক্রি করে আপনি অনায়াসে বাড়তি কিছু অর্থ রোজগার করতে পারেন। ঢাকার নিউ মার্কেটের পাশে নীলক্ষেতে রয়েছে বিশাল পুরাতন বইয়ের বাজার। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নিজেদের ব্যবহৃত পুরাতন বই এখানে বিক্রি করে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ মূল্য ফেরত পেতে পারে। শিক্ষার্থীদের পুরাতন বই বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের এটি একটি চমৎকার উপায়।

photo: wahadventures

তবে প্রশ্ন হলো, সৃজনশীল বিভিন্ন বইও কি এভাবে বিক্রি করা যায়? হ্যাঁ, যায়। যদি আপনার বই সংরক্ষণ করার শখ না থাকে, অথবা বাড়িতে থাকা লাইব্রেরি পূর্ণ হয়ে বই রাখার আর জায়গা না থাকে, তবে আপনি বেছে বেছে কিছু বাড়তি বই বিক্রি করে বাড়তি অর্থ রোজগার করতে পারেন। কিছু পুরনো বই বিক্রি করে দিলে একদিকে যেমন বাড়িতে কিছুটা জায়গা বের হবে, অন্যদিকে কিছু বাড়তি অর্থ রোজগার হবে।

শুধুমাত্র স্থানীয় বই বিক্রয় কেন্দ্র নয়, বিশ্বব্যাপী এখন অনেক অনলাইন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে পুরাতন বই বিক্রি করার জন্য। সুতরাং আপনি চাইলে আজই পুরাতন বইয়ের ব্যাপারে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে বাড়তি অর্থ রোজগার করতে পারেন।

২. সোনার গহনা

সোনার গহনা অর্থ উপার্জনের জন্য একটি চমৎকার উপাদান। কেননা সময়ের সাথে সাথে পুরাতন হলে অন্যান্য জিনিসের দাম কমলেও সোনার গহনা আর জমির দাম কখনও কমে না। আপনি চাইলে বাড়তি অর্থ রোজগারের জন্য নিজের বাড়তি কিছু সোনার গহনা বিক্রি করে দিতে পারেন।

photo: gold-traders

বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং উৎসব উপলক্ষে আপনজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে পাওয়া সোনার সব গহনা হয়তো আপনার ব্যবহার করা হয় না। এমনকি এইসব গহনা আপনি কোনো কালও ব্যবহার করবেন না। তাহলে অযথা এই গহনাগুলো ঘরে পড়ে থেকে লাভ কি? তার চেয়ে নিকটস্থ স্বর্ণকারের কাছে গিয়ে এই গহনাগুলো বিক্রি করে আপনি খুব সহজেই বাড়তি অর্থ রোজগার করতে পারেন। তাতে অতিরিক্ত সোনার গহনার নিরাপত্তার বাড়তি দুশ্চিন্তা থেকে যেমন আপনি পরিত্রাণ পাবেন, তেমনি কিছু বাড়তি অর্থ রোজগারও হবে।

৩. পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সাথে সাথে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য অনেক কিছু বাড়িতে জমতে থাকে। যেমন কাচের বোতল, কৌটা, প্লাস্টিকের ক্যান, বোতল, ব্যাগ, খবরের কাগজ। এইসব জিনিস সচরাচর বাড়ির আঙিনায় এখানে সেখানে আমরা ফেলে রাখি। এই জিনিসগুলো যত্রতত্র ফেললে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হয়, তেমনি এই জিনিসগুলো ঘরবাড়ি নোংরা করে। তার চেয়ে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য এই জিনিসগুলো জমিয়ে রাখলে তা বিক্রি করে বেশ অর্থ রোজগার করা যায়।

photo: hesed

নিশ্চয়ই কেউ কেউ আমার সাথে দ্বিমত করবেন। বলবেন আমার এত অর্থের সংকট পড়েনি যে, প্লাস্টিকের বোতল বা কাঁচের কৌটা বিক্রি করে অর্থ রোজগার করতে হবে! নিশ্চয়ই তাই, আমিও মনে করি আপনি এতটা অভাবী না। কিন্তু যত্রতত্র ফেলার কারণে এই জিনিসগুলো আপনার চারপাশের পরিবেশ যেমন নষ্ট করছে, তেমনি বাড়ির বসবাসযোগ্যতাও কমে আসছে। সুতরাং অর্থ রোজগারের জন্য নয়, বরং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনেই এই জিনিসগুলো জমিয়ে রাখুন আর বিক্রি করে দিন।

৪. রক্ত

মুমূর্ষু মানুষের জীবন বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন হয়। এই রক্ত সরবরাহের জন্য অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মাধ্যমে মানুষ স্বেচ্ছায় মুমূর্ষু মানুষের জীবন বাঁচাতে রক্ত দিয়ে থাকে।

photo: HowStuffWorks

তাছাড়া আপনি নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রত্যেক সুস্থ মানুষ রক্ত দিতে পারেন। আপনিও চাইলে রক্ত দিয়ে অন্য মানুষের জীবন বাঁচাতে পারেন। এক্ষেত্রে আমার প্রথম পরামর্শ থাকবে আপনি বিনামূল্যে মানুষকে রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করুন। তারপরও আপনি যদি চান, তবে নিজের রক্ত বিক্রি করে বাড়তি কিছু অর্থ রোজগার করতে পারেন।

৫. ডিম বিক্রি

বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে প্রায় সব বাড়িতে গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগি পালনের রেওয়াজ ছিল। যদিও বর্তমান সময়ে এসে যৌথ পরিবার প্রথা ভেঙে যাওয়ায় পশুপালনের এই ধারণা অনেকটা বদলে গেছে। একক পরিবারগুলো ব্যবসা বা চাকরির প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছে। তাই এখন হাঁস-মুরগির খামার ছাড়া বাড়িতে সচরাচর ডিম খুব একটা উৎপাদন হয় না।

photo: amazon

আপনি চাইলে বাড়িতে হাঁস মুরগি পালন করে পরিবারের ডিম এবং মাংসের চাহিদা পূরণ করতে পারেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত ডিম এবং হাঁস-মুরগি বিক্রি করে বাড়তি অর্থ রোজগার করতে পারেন। এতে পরিবারের খাদ্য চাহিদা যেমন পূরণ হবে, তেমনি আপনার পরিবার আরো বেশি স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।

বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে জমা হওয়া পুরনো জিনিস বিক্রি করে নিজের বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। সাথে সাথে বাড়তি পাওয়া হিসেবে রোজগার করুন অর্থ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *