ব্যবসায়িক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন এবং উন্নতি সাধনের জন্য যেকোনো ব্যবসায়িক পরিস্থিতিকে পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন, বিশ্লেষণ ও ব্যবসায়িক তত্ত্ব প্রয়োগ করে যে বিবরণী তৈরি করা হয় তাকে ব্যবসায়িক প্রতিবেদন বা বিজনেস রিপোর্ট বলা হয়।
এই প্রতিবেদন পরিচালনা পরিষদকে যেকোনো ব্যবাসায়িক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তবে ব্যবসায়িক প্রতিবেদন যে কেবল পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তৈরি করা হয়, তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন কারণে ব্যবসায়িক প্রতিবেদন তৈরি করার প্রয়োজন হয়।
ব্যবসায়িক প্রতিবেদন বিভিন্ন ধরণের হতে পারে,
- Informational reports.
- Analytical reports
- Research reports
- Statutory reports
- Non statutory reports
- Routine report
- Special reports
- Annual Reports
- Periodic Reports
একটি ব্যবসায়িক প্রতিবেদনে ১-২ পেইজ থেকে শুরু করে ১০০ পেইজ বা একাধিক অধ্যায় থাকতে পারে। এটা নির্ভর করে প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুর উপর।
একটি ব্যবসায়িক প্রতিবেদনে মূলত ৫টি অংশ থাকে,
১. এক্সিকিউটিভ সামারি (Executive Summary)
২. ইন্ট্রোডাকশন (Introduction)
৩. বডি (Body)
৪. ফাইন্ডিংগস এন্ড রেকোমেনডেশন ( Findings And Recommendation)
৫. কনক্লুশন (Conclusion)
এবার চলুন এ অংশগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
১. এক্সিকিউটিভ সামারি (Executive Summary)
পুরো প্রতিবেদনের মূল সারাংশ তুলে ধরা হয় এক্সিকিউটিভ সামারিতে। প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো এ অংশে সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করা হয়। এক্সিকিউটিভ সামারি ১০০ শব্দের মধ্যে লিখলে ভালো হয়।
২. ইন্ট্রোডাকশন (Introduction)
এক্সিকিউটিভ সামারির পরে যে অংশটি আসে তা হলো ইন্ট্রোডাকশন, যা এক্সিকিউটিভ সামারির তুলনায় একটু বড় হয়।
ইন্ট্রোডাকশনে আপনার প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য, কেন এ প্রতিবেদন করা প্রয়োজন, এই প্রতিবেদন কীভাবে কাজে লাগবে, কী ধরনের কাজ এখন পর্যন্ত করা হয়েছে, কোন মেথড বা পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে অর্থাৎ আপনি কী প্রতিবেদনের যাবতীয় তথ্য সরাসরি সাক্ষাৎকার নিয়ে, প্রশ্নাবলী (questionnaire) বণ্টন করে না গবেষণা করে সংগ্রহ করেছেন এসব বিষয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিতে হবে।
৩. বডি (Body)
পুরো প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু এ অংশে বিশদ আকারে বর্ণনা করা হয়। এছাড়াও এ অংশে প্রতিবেদনের সকল ডাটা সমূহ টেবিল, গ্রাফ অথবা ডায়াগ্রাম আকারে উপস্থাপন করতে হবে। এ অংশটি ৪০০ শব্দের মধ্যে হলে ভালো হয়।
৪. ফাইন্ডিংস ও রেকোমেনডেশন (Findings And Recommendation)
সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে আপনি কী কী খুঁজে পেলেন অর্থাৎ ফলাফল, সুযোগ সুবিধা, সীমাবদ্ধতা কী ছিলো তা ফাইন্ডিংস অংশে উল্লেখ করতে হবে।
রেকোমেনডেশন অংশে মূলত প্রতিবেদন সম্পর্কে আপনার নিজস্ব মতামত উল্লেখ করতে হবে। কীভাবে ব্যবসায়ের লক্ষ্য অর্জন করা যায়, ব্যবসায়ে আরো উন্নতি সাধন করা যায়, অথবা নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হলে সে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে কী বুঝতে পারলেন, কোন সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়, কোন সিদ্ধান্তে ঝুঁকির পরিমাণ বেশি এসব সম্পর্কে নিজস্ব মতামত উল্লেখ করতে হবে। এ অংশটি ৪০০ শব্দের মধ্যে হলে ভালো হয়।
৫. কনক্লুশন (Conclusion)
এই অংশে মূলত আপনি উল্লেখ করবেন, আপনার প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলো কী ছিল এবং আপনার প্রতিবেদনের ফলাফলগুলো কতোটা কার্যকারী, আর সেই সাথে প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো কী ছিলো তা আবার সংক্ষেপে উল্লেখ করে লেখা শেষ করতে পারেন।
এছাড়া আপনি যদি রিপোর্ট তৈরির জন্য কোনো বই, জার্নাল বা ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন তাহলে সে সূত্রগুলো কনক্লুশনের পরে রেফারেন্স অংশে ক্রমানুসারে উল্লেখ করতে হবে। কনক্লুশন অংশটি ১০০ শব্দের মধ্যে লিখলে ভালো হয়।
এবার জেনে নিই, ব্যবসায়িক প্রতিবেদন লেখার সময় যে সব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
- সবার আগে প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য কীভাবে ও কোন ফরম্যাটে লিখবেন তা ঠিক করুন। প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য অবশ্যই পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করতে হবে। আপনি যদি উদ্দেশ্য লিখতে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন, তাহলে কিন্তু প্রতিবেদনের মূলভাব নষ্ট হয়ে যাবে।
- আপনার প্রতিবেদনটি যে শুধু প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা পড়বেন, তা কিন্তু নয়। প্রতিষ্ঠানের বাইরের অনেক মানুষও পড়তে পারেন। তাই আগে প্রতিবেদনের পাঠকদের চিহ্নিত করুন।
- আপনার প্রতিবেদনটি সিইও, সিসিও অথবা নির্দিষ্ট কোনো বিভাগের কর্মকর্তারা পড়বেন নাকি শেয়ার হোল্ডার, ক্লায়েন্ট বা জনসাধারণের উদ্দেশ্যে লিখতে হবে তা আগে চিহ্নিত করতে হবে এবং পাঠক শ্রেণির প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রতিবেদনটি তৈরি করতে হবে।
- প্রতিবেদনটি তৈরি করতে আপনার কী কী তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, তা আগে খুঁজে বের করুন।
- প্রতিবেদনে আপনি যেসব তথ্য উল্লেখ করবেন তা হতে হবে সম্পূর্ণ নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য।
- সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে গেলে রিপোর্ট লেখা শুরু করুন।
- প্রতিবেদনের বক্তব্যের মধ্যে স্পষ্টতা থাকতে হবে, যাতে করে সব বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা লাভ করা যায়।
- রেকোমেনডেশন অংশটি লেখার সময় যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে লিখুন। সব তথ্য ও ফলাফল ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে নিজস্ব মতামত দিন।
- রিপোর্টে এক্সিকিউটিভ সামারি সবার আগে দেয়া থাকলেও এ অংশটি সবার পরে লেখা ভালো। কারণ যেহেতু আপনাকে পুরো রিপোর্টের সারমর্ম দিতে হবে এক্সিকিউটিভ সামারিতে, তাই রিপোর্টের সব অংশ সম্পন্ন করার পরে এক্সিকিউটিভ সামারি লিখলে আপনার জন্য সুবিধা হবে।
- রিপোর্ট জমা দেয়ার আগে কয়েকবার রিভিশন দিন। কারণ ছোট একটি ভুলের কারণে আপনার প্রতিবেদনের মান খারাপ হতে পারে। তাই ভালোভাবে খেয়াল করে দেখুন, রিপোর্টে কোন ভুলত্রুটি রয়েছে কি না। সবকিছু পরীক্ষা করে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হয়ে তারপর প্রতিবেদনটি জমা দিন।
Featured Image: rospaworkplacesafety.com