ইন্দোনেশিয়া সরকারের দারমাশিশওয়া স্কলারশিপ, মাসে হাত খরচ ৬০০-১০০০ ডলার, সঙ্গে অন্য সুবিধা

ইন্দোনেশিয়া ১৭ হাজার দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত একটি দেশ। দেশটি নেদারল্যান্ডের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করার পর থেকে শিক্ষা, শিল্প, কৃষি তথা সামগ্রিক দিক থেকে আজ উন্নত। দেশটির রাজধানী জাকার্তাকে বলা হয় এশিয়ার নিউইয়র্ক। দেশটিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে উচ্চতর জ্ঞানার্জনের সুবর্ণ সুযোগ। ইন্দোনেশিয়ান দূতাবাসের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রতিবছর ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপের আবেদন চাওয়া হয়। ইন্দোনেশিয়ান দূতাবাসের প্রত্যেক কর্মকর্তা–কর্মচারীর ব্যবহার আমায়িক, যা দেখে যে কেউ ইন্দোনেশিয়ায় পড়তে, ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কে জানতে অণুপ্রাণিত হবেন।

প্রতিবছর ইন্দোনেশিয়ান সরকার তিন ধরনের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে থাকে। তিন মাসের কালচালারাল এক্সচেঞ্জ, দারমাশিশওয়া ও কেএনবি। দারমাশিশওয়া ও কেএনবি ইন্দোনেশিয়ান সরকারের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাবৃত্তি। দারমাশিশওয়া শিক্ষাবৃত্তি এক বছরের, কেএনবি শিক্ষাবৃত্তি তিন বছরের। উভয় শিক্ষাবৃত্তিতে ইন্দোনেশিয়ান ভাষাশিক্ষা বাধ্যতামূলক। দারমাশিশওয়া শিক্ষাবৃত্তি সাধারণত ইন্দোনেশিয়ান ভাষা, সংস্কৃতি, হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও চারুকলার ওপর দেওয়া হয়ে থাকে। কেএনবি ইন্দোনেশিয়ান সরকারের তিন বছরের শিক্ষাবৃত্তি, যা মোটামুটি প্রচলিত সব বিষয়ের ওপরই দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে তিনজন এই শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে থাকেন। বৃত্তির কাভারেজ হিসেবে প্রতি মাসের হাতখরচ বাবদ ৬০০ থেকে ১০০০ ইউএস ডলার প্রদান করা হয়। এই অর্থে বেশ আরামেই ইন্দোনেশিয়ার যেকোনো শহরের থাকা যায়।

এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার প্রায় অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিজস্ব শিক্ষাবৃত্তি রয়েছে। যেখানে সুবিধা ও বৃত্তির পরিমাণ বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী আলাদা। এখন চলছে দারমাশিশওয়া স্কলারশিপের আবেদন। অনলাইনে আবেদন করা যাবে আগামী ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। ক্লাস শুরু হবে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র—

১. সাধারণ স্নাতক পাস হতে হবে। ফলাফল সিজিপিএতে ৩ দশমিক ৫ থাকলে ভালো হয়;
২. সব একাডেমিক সার্টিফিকেট;
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের অনুমোদন;
৪. পাসপোর্ট
৫. মেডিকেল ক্লিয়ারেন্স
৬. রিসার্চ প্রপোজাল।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বৃত্তির ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব চাহিদা। কেএনবি শিক্ষাবৃত্তির আবেদন সাধারণত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে একইভাবে দূতাবাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে সেমিস্টার শুরুর পূর্বে শিক্ষাবৃত্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

স্কলারশিপে যা যা মেলে—

১. প্রতি মাসের শিক্ষাবৃত্তির অর্থ
২. সব রকম বই ও অন্যান্য শিক্ষাসামগ্রী (স্কলারশিপ ভেদে আলাদা)
৩. যাতায়াতের বিমান টিকিট (স্কলারশিপ ভেদে আলাদা)
৪. ডরমেটরির সুবিধা (স্কলারশিপ ভেদে আলাদা)

ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আনন্দের সঙ্গে পাঠদান। এ ছাড়া বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণ ও ইন্দোনেশিয়ান খাবার–সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার একটা বিশাল সুযোগ থাকে দেশটিতে পড়তেএলে। সাগর ও পাহাড়বেষ্টিত এ দেশে বিদেশিদের নিরাপত্তার ব্যাপারে ইন্দোনেশিয়ান সরকারের নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রশংসনীয়। এখানে জীবনযাপনের খরচ বাংলাদেশের মতোই। ইন্দোনেশিয়ার মানুষ সাধারণত অতিথিপরায়ণ। তাই রাস্তা ভুলে গেলে সহজেই এখানকার মানুষদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়া যায়। জাভানিজ সংস্কৃতি, বালি নাচ অথবা চাইলেই হারিয়ে যাওয়া যায় জাভার প্রকৃতির ভেতর। আর মানুষের সাদামাটা জীবনযাপন দেখে অনুপ্রাণিত হওয়ার অনেক কিছুই আছে এই ১৭ হাজার দ্বীপের দেশ ইন্দোনেশিয়ায়।

দারমাশিশওয়া স্কলারশিপের আবেদনের পদ্ধতি ও বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

লেখক: মো. এরফান রাশেদ, দারমাশিশওয়া স্কলার ২০১৯-২০২০ (Collected)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *