হাল না ছেড়ে সফল হওয়া ১০ অসাধারণ মানুষের গল্প

0

কখনো কখনো প্রতিবন্ধকতা ও ব্যর্থতা তুষারস্তুপের মত জমা হয়। এমন অবস্থায় আপনি প্রচন্ডরকম হতাশ হয়ে পড়েন আর চেষ্টা করার যাবতীয় শক্তি হারিয়ে ফেলেন। আমরা আপনার জন্য সফল মানুষদের মধ্য থেকে কিছু অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষের গল্প খুঁজে বের করেছি, যারা দেখিয়েছেন আশা না হারিয়ে স্বপ্নের পিছে ছুঁটালে কতটা সফল হওয়া যায়!

উডি অ্যালেন

উডি অ্যালেন, পরীক্ষায় ফেল করায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন! photo source: Reuters

চার চারবার একাডেমি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী, কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা উডি অ্যালেন চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেল করার কারণে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন! তবুও তিনি বিপর্যস্ত হননি – যদিও তার কাছে ওখানে পড়া বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা ছিল – এবং শেষ পর্যন্ত তার লক্ষ্য অর্জন করেন।

উরসুলা বার্নস

উরসুলা বার্নস, একটি প্রমোশনের জন্য ১০ বছর অপেক্ষা করেছিলেন photo source: Reuters

উরসুলা বার্নস নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ট্যান্ডন স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে মাস্টার শেষ করার পর আমেরিকান জেরক্স কোম্পানিতে ইন্টার্নশীপ শুরু করেন। কোম্পানীটি তরুণী উরসুলার উচ্চাকাঙ্ক্ষার সুযোগ নিয়ে তাকে একজন সহকারী হিসাবে নিয়োগ করেন। এমনকি তার ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত তাকে জুনিয়ার অফিসার পদেই রেখে দেওয়া হয়।

উরসুলা আত্মবিশ্বাস হারাননি, হতাশ হননি। ১০ বছর পর তিনি তার শ্রম আর ধৈর্যের প্রতিদান পেতে শুরু করেন। প্রথমে উরসুলাকে কোম্পানীর আন্তর্জাতিক উৎপাদন বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট করা হয় এবং এখন তিনি কোম্পানীর চেয়ারম্যান!

হারল্যান্ড স্যান্ডার্স

হারল্যান্ড স্যান্ডার্স, তার রেস্তোরাঁ দেউলিয়া হয়েছিল photo source: Wikimedia

কর্নেল স্যান্ডার্সের প্রথম রেস্তোরাঁটি প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে পারেনি এবং শেষপর্যন্ত দেউলিয়া হয়ে যায়। ৬৫ বছর বয়সে হারল্যান্ড স্যান্ডার্স সারা যুক্তরাষ্ট্রে ঘুরে ঘুরে তার বিশেষ সুস্বাদু চিকেন ফ্রাই বিক্রি করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা শুরু করেন। তিনি যথারীতি ১,০০৮ বার প্রত্যাখ্যাত হন! তবুও তিনি হতাশ হননি, এবং তাঁর অনন্য স্বাদের চিকেন রেসিপির প্রতি বিশ্বাস হারাননি, যা শেষপর্যন্ত আজকের বিশ্বখ্যাত কেএফসিতে পরিণত হয়েছে।

এলন মাস্ক

এলন মাস্ক, বহিষ্কার হয়েছিলেন, photo source: Reuters

কানাডিয়ান-আমেরিকান ধনকুবের এলন মাস্ক প্রায় পেপালকে দেউলিয়া করে ফেলেছিলেন! ফলস্বরূপ, একটি অবকাশ যাত্রাকালে বিমানের মধ্যে থাকা অবস্থায় তিনি পেপাল পরিচালনা পরিষদের দ্বারা বরখাস্ত হওয়ার খবর পান।

১৬ বছর পর তিনি X.com ডোমেন কেনেন – এটি বিশ্বের অন্যতম প্রথম অনলাইন ব্যাংক – যা পরবর্তিতে পেপাল অধিগ্রহণ করে। পেপাল ফিরে পেতে তিনি ব্যয় করেন ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা একসময় তারই মালিকানায় ছিল। তাঁর সাফল্যের অনন্য উদাহরণ আমাদের শেখায়, ব্যর্থতা আসে এই জন্য যে আমরা যেন আরও বড় অর্জনের জন্য চেষ্টা করি।

আন্না উইন্ট্রো

আন্না উইন্ট্রো, একটি ফ্যাশন ম্যাগাজিন থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন, photo source: Reuters

অর্ধ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করার পর, শুধু সম্পাদকের সাথে মতবিরোধের কারণে হারপার’স বাজার ফ্যাশান ম্যাগাজিনের কলামিস্টের পদ থেকে আন্না উইন্ট্রোকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বিখ্যাত ভোগ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক আন্না মনে করেন ওই ঘটনাটি তাকে আরও বেশি অর্জন করতে উৎসাহিত করেছে।

সেসময় থেকেই আন্না বিশ্বাস করেন, আপনি যদি কোন কিছুর ব্যাপারে নিশ্চিত হোন বা কোন কিছুর ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন, তো আপনার মতামতে অবিচল থাকা বাঞ্চনীয়, কেননা চিন্তার স্বতন্ত্রতা সবসময় প্রশংসার দাবিদার।

হাওয়ার্ড সূলজ

হাওয়ার্ড সূলজ, নিজের আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে না দেওয়ায় পদত্যাগ করেছিলেন photo source: Reuters

হাওয়ার্ড সূলজ কফি দানা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান স্টারবাকস্‌ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তার পদত্যাগের কারণ ছিল, তার পরিকল্পিত চেইন কফি শপের আইডিয়া স্টারবাকস ম্যানেজমেন্ট পছন্দ করেননি।

হাওয়ার্ড স্বপ্ন দেখতেন, বিশেষ কিছু করতে, মানসম্পন্ন কফি আর চমৎকার পরিবেশের সমন্বয় করতে যাতে মানুষ আবার এই দোকানমুখি হয়। পদত্যাগের ২ বছর পর সুলজ স্টারবাকস্‌ কিনে নেন আর স্টারবাকসকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় এবং বিশ্বের অন্যতম পরিচিত ব্রান্ডে পরিণত করেণ।

স্ট্যানলি স্মিথ

স্ট্যানলি স্মিথ, বল বয় হওয়ার যোগ্য ছিলেন না, photo source: Reuters

ক্যারিয়ারের শুরুতেই প্রফেশনাল টেনিস খেলোয়াড় স্ট্যানলি রজার স্মিথ ডেভিস কাপের আয়োজকদের কাছ থেকে অস্বীকৃতি পেয়েছিলেন, কেননা তিনি বিশৃঙ্খল আর বিভ্রান্ত ছিলেন। এমনকি এই অস্বীকৃতির পর তাকে খেলোয়াড়দের বল কুড়িয়ে ফেরত পাঠানো বল বয়ও হতে দেওয়া হয়নি!

তবুও স্মিথ বিশ্বাস করতেন যে, টেনিসই তার শেষ গন্তব্য। তিনি তার লক্ষ্য থেকে একটুও বিচ্যুত হননি এবং শেষ পর্যন্ত মার্কিন টেনিসে ৮ বার কাপ অর্জন করেন। তিনি প্রমান করেছেন যে, তাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছিল।

নিক উডম্যান

নিক উডম্যান, কোম্পানি দেউলিয়া হয়েছিল photo source: Wikimedia

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করার পর নিক “ফানবাগ” নামে একটি গেমিং প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেন, যা সফল হওয়া সত্ত্বেও, শীঘ্রই দেউলিয়া হয়ে যায়। কোনভাবে এই ব্যর্থতার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে নিক বন্ধুদের সাথে সার্ফ (ছোট মসৃণ বোট নিয়ে সমুদ্রেতরঙ্গের সাথে খেলা করা) করতে অস্ট্রেলিয়া যান। পেশাদার সার্ফারদের সার্ফ দেখতে দেখতে তিনি সুবিধাজনক ও ছোট অ্যাকশান ক্যামেরা “গো প্রো” তৈরির পরিকল্পনা করে ফেলেন – যা পরবর্তিতে তাকে কোটিপতি বানিয়ে দিয়েছে! নিকি নিশ্চিত, ওই ব্যর্থতা না এলে সে কখনোই তার এমন শখকে কাজে পরিণত করতেন না।

সোচিরো হোন্ডা

সোচিরো হোন্ডা, উচ্চশিক্ষা ডিগ্রি নেই photo source: Reuters

সোচিরো হোন্ডা খুব দরিদ্র পরিবারে বড় হয়েছেন, এবং শৈশব থেকেই তার বাবাকে সাহায্য করতে হয়েছে। তিনি স্নাতক শেষ করার পর আর পড়াশোনা করেননি, বরং একজন সাধারণ মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। এসময় তিনি বাইসাইকেলে পুরানো ইঞ্জিন স্থাপন করে এবং ব্যয়বহুল উপকরণ ক্রোম চাকা ও চামড়ার সিটের ব্যবহার করে নিজের জন্য মোটরসাইকেল তৈরি করার স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন সত্যি হতে বাধ্য যদি আপনি অন্তহীনভাবে আপনার লক্ষ্যের দিতে এগিয়ে যান। কিছুদিন পরে, সোচিরো হোন্ডা কোম্পানি খুলতে সক্ষম হন, যা আজকের বিশ্বের অন্যতম সেরা মোটরসাইকেল উৎপাদক।

গ্যাব্রিয়েল জেসুস

গ্যাব্রিয়েল জেসুস, বিশ্বকাপের আগে উপার্জনের জন্য রাস্তা রং করেছেন photo source: Reuters

বিখ্যাত ম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবের ফরোয়ার্ড খেলোয়াড় এবং ব্রাজিলের জাতীয় দলের ফুটবলার গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে কে না চেনে! মাত্র কয়েক বছর আগে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে তিনি খালি পায়ে ব্রাজিলের রাস্তা রং করেছেন শুধু অর্থ উপর্জনের জন্য। তারপর টিভিতে একদিন প্রিয় দলের ফুটবল খেলা দেখে সিদ্ধান্ত নেন নিজের দেশের জন্য তিনিও একদিন খেলবেন। বাকিটা ইতিহাস। তিনি এটা করে দেখিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্রাজিলের হয়ে ২০১৫ ফিফা অনুর্ধ-২০ বিশ্বকাপে রানার্স-আপ এবং ২০১৬ অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেন। এই পেশাদার ফুটবলার এখন সপ্তাহে ৮০,০০০ ডলার রোজগার করেন।

 ব্রাইট সাইড অবলম্বনে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *