সফলভাবে এনজিও শুরু করার ১০টি ধাপ

ছোট হোক বা বড়, মানবতা ও সামাজিক সহযোগিতায় এনজিওর কার্যক্রমের তুলনা হয় না। নিজের এটি এনজিও যদি আপনিও শুরু করতে চান, তবে সেক্ষেত্রে কিছু বিষয় আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আজ কথা হোক সেই বিষয়গুলো নিয়েই।

প্রথম ধাপ- গভীরতাটা বুঝেই শুরু করা দরকার

নতুন নতুন সব কর্মীরা নানান রকম উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হন। কেউ কেউ আবার সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করার জন্য প্রতিজ্ঞা করে ফেলেন। তবে কয়েক মাস যেতে না যেতেই সদ্য আগত এ সকল উদ্যমীদের আর দেখা মেলে না। তাই বলে শুরুতে যে উদ্যমটা কাজ করে তা ধুপ করে কমে যাওয়ার কোনো কারণই নেই। তবে নিজস্ব এনজিও শুরু করার আগে কিছুদিনের জন্য একই ধরনের কোন কাজে নিযুক্ত হওয়াই শ্রেয়।

আপনি যদিও আসলেও এনজিওতে কাজ করতে ভালোবাসেন বা কাজটা আপনার জন্য উপযুক্ত হয় তাহলে আপনার সেই চাকরির অভিজ্ঞতা থেকেই আপনি বুঝতে পারবেন। আপনি যদি সহজেই সেই কাজের সাথে মানিয়ে যান, তবে সেই অনুপ্রেরণায় আপনি নিজের এনজিও শুরু করতে পারবেন। তাই এনজিও শুরু করার প্রতিশ্রুতি নেয়ার আগে অবশ্যই একই ধাঁচের যেকোন এনজিওতে কাজ করে অভিজ্ঞতা নিয়ে নিন।

ছবিসূত্র: blog.brac.net

দ্বিতীয় ধাপ- সঠিক পথে এগিয়ে যান

‘’একজন নেতার প্রধান কাজ হলো নিজেদেরকে অপ্রচলিত করা’’- লাও সু

অপ্রচলিত বা সেকেলে হওয়াটাই সকল এনজিওর প্রাথমিক লক্ষ্য। সেখানে কাজের জন্য আপনাকে ক্রমাগত সংগ্রাম করে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে অপ্রচলিত বা সেকেল হওয়াটা দু’টি পর্যায়ে কার্যকরী হয়। আপনার ব্যক্তিগত নিযুক্তির সাপেক্ষে, আপনাকে এমনভাবে আপানার এনজিওতে কাজ করতে হবে যেন তা স্বাধীনভাবে আপনার নেতৃত্বেই পরিচালনা করতে পারেন। আপনার এনজিওর দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য থাকা উচিত সমস্যার সমাধান করা। লাও সু এর পরামর্শটি চর্চায় রাখুন। তাহলে অসামান্যভাবে মানুষের সেবা করতে পারবেন এবং এই অভিজ্ঞতার প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করবেন।

আপনি যদি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার চেষ্টা করেন, তবে নির্ভরতা বিকাশ পাবে। আর একবার এই নির্ভরতা শুরু হলে তা ছেড়ে দেয়া বা বন্ধ করা কঠিন হয়ে যায়। নির্ভরতা অনেক ক্ষেত্রে এনজিও স্বেচ্ছাসেবীদের আটকে বা জড়িয়ে পড়ার একটি অনুভূতির সম্মুখীন করতে পারে। এছাড়াও যেসব মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য আপনি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবেন তাদেরও একটি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হতে পারে।

তৃতীয় ধাপ- আপনার লক্ষ্যগুলো স্পষ্ট করুন

নিজের এবং এনজিওর জন্য স্পষ্ট এবং অর্জন যোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। বিশ্বের ক্ষুধা মন্দা নিবারণ বা দূর করা একটি  মহান লক্ষ্য। তবে এতো বড় পরিসরে গম্ভীরভাবে এই সমস্যাটি সমাধানের আশা আপনি করছেন না। সেক্ষেত্রে আপনি খুব ছোট পরিসর থেকে তা শুরু করতে পারেন। সচরাচরই ইতিবাচক পরিবর্তন ছোট পরিসর থেকেই শুরু হয় এবং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এমনই এক পরিস্থিতির আদর্শ দৃষ্টান্ত হলো কম্বোডিয়ার স্টারফিশ এনজিও।

ছবিসূত্র: Conservation International

চতুর্থ ধাপ- কার্যকরী একটি পরিকল্পনা করুন

এনজিওকে কার্যকরী করার জন্য কাজের একটা পরিকল্পনা থাকা দরকার। যেকোনো একটি সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব বাছাই করুন। আর অবশ্যই খেয়াল রাখুন যেন আপনার এনজিও দাতা এবং স্বেচ্ছাসেবীদের আকৃষ্ট করে। যে উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নিয়ে আপনি আপনার এনজিও শুরু করবেন তা যেন বহাল থাকে সেদিকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে। কাজের পরিকল্পনা নিয়ে সময় দিন, ভাবুন। কঠোর পরিশ্রমটা বেশ জরুরী, কিন্তু ভালো একটি পরিকল্পনা ছাড়া কঠোর পরিশ্রম করা সময় এবং অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়!

পঞ্চম ধাপ- একটি ওয়েবসাইট তৈরি করুন

যতটা দ্রুত সম্ভব আপনার এনজিওর জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলুন। একটি ভালো ওয়েবসাইট আপনাকে প্রচারে সাহায্য করবে, স্বেচ্ছাসেবীদের আকর্ষণ করবে, তহবিল সংগ্রহে সাহায্য করবে বেনং নিজস্ব একটি পরিচয় তৈরি করবে। ওয়েবসাইটে বার্তালাপ বিনিময়ের ব্যবস্থা থাকলে আলাদা করে মিটিং বা ছোটখাটো ব্যবস্থাপনার কাজের সময়টাও বেঁচে যায়। ওয়েবসাইটে দৃষ্টি আকর্ষণের বিস্তার ও সময়টা বেশ কম থাকে। তাই তা খুব স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।

ছবিসূত্র: Second Marshmallow

ষষ্ঠ ধাপ- জানার চেষ্টা করুন

এনজিওর ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ের জ্ঞান থাকা খুব জরুরী। যদি আপনার জন্মস্থানেও এনজিও খুলে থাকেন, তবুও আপনার গবেষণা বা অনুসন্ধান করা এবং পরিচিতি বাড়ানো প্রয়োজন। ভিনদেশী সংস্কৃতিতে কাজ করতে চাইলে সেখানকার মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং সারা বিশ্ব নিয়ে তাদের ধ্যান ধারণা সম্পর্কে জানাটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় জ্ঞান আপনার এনজিওকে আরও কার্যকরী করে তুলবে। মনে রাখতে হবে যে, স্থানীয় জ্ঞান ছাড়া এনজিওতে কাজ করলে ভালো তো নয়ই, বরং উল্টোটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

সপ্তম ধাপ- আপনার এনজিওর আর্থিক চাহিদা ধার্য করুন

টাকা পয়সার বিষয়টিতে আসলেই বেশ ভালো পরিমাণে দলিলপত্র সম্পর্কিত কাজের প্রয়োজন হয় এবং সেই সাথে দলগত ব্যাপারটিও চলে আসে। এনজিওতে সাধারণত যে ধরনের কাজ করা হয়, তার সাথে তহবিলের পরিমাণের বিষয়টি একেবারে বিপরীতভাবে সম্পৃক্ত। তাই বলা হয়ে থাকে যে, কম অর্থ দ্বারা পরিচালিত এনজিওগুলো প্রতি ঘণ্টায় অপেক্ষাকৃত বেশি ভালো কাজ করে এবং সেই অনুযায়ীই ব্যয় করে থাকে। এনজিওর ক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো অর্থের চাহিদাটা কমিয়ে আনা।

প্রতিষ্ঠিত কোনো এনজিও খুঁজুন যার সাথে থেকে কাজ করতে পারবেন। ট্যাক্স বাদে অনুদান এবং আর্থিক সহায়তা আপনার এনজিওর নামে তাদের কাছে আসবে। আর এই বিষয়টি স্থানীয় শান্তি কেন্দ্রের সাথে ৩০ মিনিট কথা বলার মতোই সহজ। এখন আপনি বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, মঞ্জুরি সংস্থান এবং সরকার থেকে আর্থিক সহযোগিতা চাইতে পারেন। প্যেপালের ডোনেট বাটন আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটরদের কাছ থেকে অনুদান পাওয়ার সবচাইতে সহজ উপায়।

ছবিসূত্র: Lapsi.al

অষ্টম ধাপ- পারস্পরিক সম্পর্কের কোনো বিকল্প নেই

একই ধরনের কাজের সাথে জড়িত মানুষ এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে বন্ধুত্ব করুন। এতে করে তাদের সফলতা এবং ভুলগুলো থেকে আপনি শিক্ষা নিতে পারবেন। এছাড়াও এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে, সর্বোচ্চ কার্যকারিতার জন্য কখন দলবদ্ধ হয়ে এবং কখন কাজ সবার মাঝে ভাগ করে দিতে হবে। পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ওয়েবসাইট একটি ভালো মাধ্যম

নবম ধাপ- ভারসাম্য রাখতে হবে

আপনি আপনার এনজিওতে কতটুকু সময় দিতে চান সে বিষয়ে বাস্তববাদী হন। আপনার ধারণক্ষমতার বাইরে গিয়ে কাজ করলে দীর্ঘ মেয়াদে তা উপকারের চাইতে অপকারের দিকেই যাবে। তাছাড়া ব্যক্তিগত এবং পেশা জীবনের মধ্যকার ভারসাম্য রক্ষা করাই সাফল্যের চাবিকাঠি।

ছবিসূত্র: The Conversation

দশম ধাপ- সবকিছু পুনরায় মূল্যায়ন করুন

এনজিওর পেছনে কতোটা সময়, অর্থ এবং পরিশ্রম ব্যয় হচ্ছে তা মুখ্য বিষয়। কী কী কারণে হচ্ছে বা সবকিছু তদারকি করে তা সঠিকভাবে কাজগুলো সম্পন্ন করার উপায়টি আপনাকেই বের করতে হবে। তবে আপনার এনজিওর বাইরে অন্য কাউকে মূল্যায়ন করতে বলার ব্যাপারে দ্বিধাবোধ করবেন না। অবিরত সচেতনতার মাধ্যমে আপনি আপনার মূল লক্ষ্যের প্রতি দৃঢ়তা ও পুঁজির জোরে এগিয়ে যাবেন।

Feature Image Source: www.iajfl.org

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *