খুচরো শিল্পের সেরা ৫টি চাকরি

খুচরো শিল্প বর্তমান শ্রমবাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে, বেশ লাভজনক ব্যবসায়িক উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কোনো একটি উৎপাদিত পণ্য সর্বপ্রথম পাইকারী বিক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয়। পাইকারী বিক্রেতারা সেই পণ্য আবার খুচরো বিক্রেতার কাছে সুবিধাজনক দামে বিক্রি করে থাকে। খুচরা বিক্রেতারা পাইকারী বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রয়কৃত পণ্য, ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। সাধারণত ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী সীমিত পরিমাণ দ্রব্য নির্দিষ্ট মূল্যে খুচরা বিক্রি করা হয়ে থাকে।

Source: gijobs.com

এক্ষেত্রে ভোক্তা এবং ব্যবসায়ী উভয়েই লাভবান হওয়ার মাধ্যমে শ্রমবাজারে ভারসাম্য অর্জিত হয়। নিজের প্রতিভার সর্বোচ্চ প্রয়োগ এবং সময়ের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে এ শিল্পে সম্ভাব্য সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। খুচরো শিল্পে কাজের ধরন অনুযায়ী বেশ কিছু চাকরির পদও সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকলে, এই খুচরো শিল্পে সহজেই ক্যারিয়ার গঠন করা সম্ভব। খুচরো শিল্পে কর্মজীবন শুরু করতে চাইলে, এই শিল্পের কাজের ধরন ও চাকরির পদ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন খুবই জরুরী। এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে এ আর্টিকেলটি পড়ুন। কারণ আমি এ আর্টিকেলটিতে খুচরো শিল্পের সেরা ৫টি চাকরি সম্পর্কে আলোচনা করবো।

১. বিক্রয় সহায়তাকারী

বিক্রয় সহায়তাকারী মূলত পণ্য-সামগ্রী বিক্রয় করে থাকে। বিক্রয় সহায়তাকারীরা কোম্পানির বিশেষ ব্যবসাসিক লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। তারা ক্রেতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবদিহিতা, লেনদেনে সহযোগিতা এবং পণ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারনা প্রদান করে থাকে। এ কাজের জন্য একজন আত্মবিশ্বাসী, বহির্মুখী, প্রাণোচ্ছল এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন হয়। সকল প্রকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারার দক্ষতা এক্ষেত্রে অনেকটাই বাধ্যতামূলক।

Source: thejobnerwork.com

নিজের জ্ঞান ও সৃষ্টিশীল দক্ষতার মাধ্যমে নতুন নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারাও, এই কাজের জন্য একান্ত জরুরী। সাধারণত একজন বিক্রয়কারীর গড় বার্ষিক বেতন প্রায় ১২ হাজার থেকে ১৬ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় ১৩ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। সততা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাভেদে এই বেতন কাঠামো ভিন্ন হতে পারে।

২. স্টোর ম্যানেজার

স্টোর ম্যানেজার সাধারণত গুদামের সার্বিক দেখাশোনা করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। একজন দায়িত্বশীল স্টোর ম্যানেজার যেকোনো কোম্পানির সাফল্যের পেছনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এ কাজটি করার জন্য সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচন এবং অন্যদের সঠিকভাবে কোনো কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করার বিশেষ গুণাবলি থাকা প্রয়োজন।

Source: internetvibes.net

কর্মক্ষেত্র ও গুদামের আকারের উপর বেতন কাঠামো নির্ভর করলেও, একজন স্টোর ম্যানেজারের গড় বার্ষিক বেতন সাধারণত বিশ থেকে ত্রিশ হাজার পাউন্ডের মধ্যে হয়ে থাকে, যা বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী প্রায় একুশ লক্ষ থেকে বত্রিশ লক্ষ টাকা। স্থান ও দক্ষতাভেদে এই সীমারেখা ভিন্ন হতে পারে। নেতৃত্বপ্রদানকারী গুণাবলি সম্পন্ন এবং দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী মানুষদের জন্য এ কাজটি খুবই উপযুক্ত।

৩. ব্যবসায়ী

ব্যবসায়ীদের খুচরো শিল্পের প্রাণস্বরূপ মনে করা হয়। একজন ব্যবসায়ীর বাণিজ্যিকভাবে পণ্য বিক্রয়েরক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে পারা, ব্যবসায়িকক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন, সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে নতুন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের সামর্থ্য থাকাসহ বিভিন্ন দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকা জরুরী।

Source: news.com

ব্যবসায়ীদের আয় সঠিকভাবে নিরূপণ করা বেশ কঠিন। তবে সাধারণত একজন খুচরো শিল্প ব্যবসায়ীর বার্ষিক গড় আয় প্রায় ১৫ থেকে ২৪ হাজার পাউন্ডের মধ্যে হয়ে থাকে, যা বাংলাদেশের মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৬ লক্ষ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা।

৪. বায়ার

বায়ার মূলত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করে থাকে। পণ্য ক্রয়ের বিস্তার সাধারণত বায়ারের কেনার অভ্যাস,পণ্যের মূল্য, মান, অন্য ক্রেতাদের কেনার প্রবণতা ইত্যাদি বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। বাণিজ্যিক বিষয়ে সতর্কতা, সূক্ষ্মদৃষ্টি ও দূরদর্শিতা এ কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একজন অনভিজ্ঞ বায়ারের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ১৪ হাজার পাউন্ড বা ১৫ লাখ টাকার কাছাকাছি হলেও, দক্ষতা ও যোগ্যতাভেদে প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড বা ৩১ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। দূরদর্শী সম্পন্ন লোকের জন্য এ কাজটি বেশ মানানসই।

Source: theadvocate.com

নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যাপারে অবগত থাকা, বর্তমান মার্কেট প্লেসের ফ্যাশন ট্রেন্ডের প্রতি সচেতনতা, জনসাধারণের চাহিদা ইত্যাদি বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখলে, এ কাজে সফল হওয়া অনেকটাই সহজসাধ্য হয়ে উঠবে। আবার পরবর্তী সময়ে কোন জিনিসটি বাজারে জনপ্রিয় হতে চলেছে, সেটা পূর্বানুমান করার বিশেষ দক্ষতা, সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় বেশ এগিয়ে রাখবে।

৫. সদর দপ্তরে চাকরি

সাধারণত কোনো শিল্পের সমস্ত কার্যক্রম সদর দপ্তর থেকেই নিয়ন্ত্রন করা হয়। খুচরো শিল্পের সদর দপ্তরে বিভিন্ন ধরনের চাকরি পদ রয়েছে। পণ্য সম্পর্কে জ্ঞান, দলের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করার যোগ্যতা এবং ব্যতিক্রমধর্মী কলাকৌশল গ্রহণের দক্ষতা থাকা, সদর দপ্তরে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে থাকে। অবশ্য চাকরিভেদে যোগ্যতা ও দক্ষতার কিছুটা পার্থক্য হয়ে থাকে। সাধারণত খুচরো শিল্পের সদরে দপ্তরে কাজ করা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন কাঠামো প্রায় ১৫ হাজার পাউন্ড বা ১৬ লাখ টাকা থেকে ৩০ হাজার পাউন্ড বা ৩১ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। নেতৃত্ব প্রদানের বিশেষ দক্ষতা থাকলে, তা এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

Source: financialexpress.com

বলা হয় যে, খুচরো পণ্যে ব্যবসা গঠন তুলনামূলক বেশ সহজসাধ্য। এই শিল্পে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করতে বড় অংকের মূলধনের প্রয়োজন হয় না। শহরে কিংবা গ্রামে,ব্যবসায়ীর যেকোনো সুবিধাজনক স্থানে এ ব্যবসা করা যায়। আইনি জটিলতা কিংবা কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায়, অনেকেই এ ব্যবসা বেছে নিচ্ছেন। বাংলাদেশে যথেষ্ট দক্ষ লোক না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশীরা আমাদের দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে নিয়ে যায়।

Source: reed.co.uk

তবে বর্তমানে চাকুরীর বাজারে মন্দার কারণে, তরুন প্রজন্মের অনেকেই এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। অনেকেই খুচরো শিল্পে ক্যারিয়ার গঠন করার স্বপ্নও দেখা শুরু করছে। আপনিও যদি এই শিল্পে ক্যারিয়ার গঠন করার স্বপ্ন দেখেন, তবে দক্ষতা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে, এ ৫টি চাকরি থেকে কোনো একটিকে ক্যারিয়ার গড়ার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারেন। এতে খুবই সহজেই কর্মজীবনে সফলতার মুখ দেখতে সক্ষম হবেন বলে প্রত্যাশা করা যায়।

Featured Image:Jobgranny.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *