কাজের নেশায় আসক্ত বসের অধিনে কাজ করতে হলে জেনে নিন কিছু সহায়ক পরামর্শ

পৃথিবীতে কিছু কাজপ্রিয় মানুষ রয়েছে। এই মানুষগুলো সবসময় কাজ করতেই ভালোবাসেন। কাজ ভালোবাসা খারাপ নয়। আমাদের প্রত্যেকের কাজের প্রতি সচেতন হওয়া উচিৎ। কিন্তু এদের মাঝে কিছু মানুষ রয়েছে, যারা শুধুমাত্র কাজপ্রিয় নন, এরা কাজের নেশায় আসক্ত। এই মানুষগুলো কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে পার্থক্য ভুলে যান। পরিবার, সমাজ, দেশ এমনকি নিজের প্রতি তাদের দায়িত্বও ভুলে যান। এই সমস্যাটি আরও প্রকট হয়, যখন এই কাজে আসক্ত মানুষগুলো নিজের নীতি অন্যের ওপর প্রয়োগ করতে চান।

Source: roberthalf.com

যদি আপনারও এরকম অতিরিক্ত কাজপ্রিয় বস থাকে, তাহলে আপনিও রয়েছেন মহা সমস্যায়। কারণ, আপনি আপনার বসকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। আবার তার স্বভাবও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। তাহলে কী করা উচিৎ? আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি জানাবো আপনার কী করা উচিৎ।

কর্মক্ষেত্র নির্বাচনে সচেতন হন

কিছু কিছু বস বা ম্যানেজার রয়েছে, যারা অধিক কাজপ্রিয়। তারা কাজের সময় ভুলেই যান, তাদেরও একটি ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে। শুধু তাই নয়, তার অধীনস্থদের ব্যক্তিগত জীবনের কথাও ভুলে যান। আবার এমন কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড চলে টানা কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ।

জীবন মানে শুধু কাজ করে যাওয়া নয়। কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য হচ্ছে, আসল জীবনের মানে। এই বিষয়ে ভারতের বিখ্যাত লেখক চেতন ভগত বলেছেন,

‘সফলতা মানে হচ্ছে, ভারসাম্যপূর্ণ জীবন। যেখানে, জীবনের প্রতিটি অংশ থাকবে সুষম পর্যায়ে।’

Source: workplaceinsight.net

তিনি আরও বলেন ‘আপনি কাজের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করতে পারবেন। কিন্তু টাকা দিয়ে জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলো কিনতে পারবেন না। তাই এক সময় হতাশ হয়ে পড়বেন। তখন কিছুই করার থাকবে না।’

তাই কর্মক্ষেত্র নির্বাচনে সচেতন হন। এরকম একটি প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করুন, যেখানে আপনার কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবন উপভোগ করতে পারবেন।

একটি সীমারেখা তৈরি করুন

যদি ভুলক্রমে এরকম কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে থাকেন, অথবা কাজের নেশায় আসক্ত ম্যানেজারের অধীনে কাজ করতে হয়, তাহলে ভয় না পেয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে আলোচনা করুন। রেগে যাবেন না। শান্ত থেকে আপনার মতামত শেয়ার করুন। এ বিষয়ে বিখ্যাত লেখক ব্রায়ান রবিনসন বলেন ‘শান্ত থেকে সমস্যার কথা বলুন। যদি আরও বেশি সমস্যা তৈরি করে, তাহলে কর্মক্ষেত্রটি ছুঁড়ে ফেলে জীবনকে সামনে নিয়ে আসুন’।

Source: YouTube

তিনি আরও বলেন ‘একজন কাজের নেশায় আসক্ত ব্যক্তি বুঝতে পারে না, তিনি যে নীতি অনুসরণ করে হাঁটছেন সেটি জীবনকে ভারসাম্যহীন করে তুলছে। শুধু তাই নয় অন্যের জীবনকেও ভারসাম্যহীন করে দিতে পারে। এই মানুষগুলো যেকোনো মূল্যে কাজ আদায় করে নিতে চান’। এক্ষেত্রে ম্যানেজার এবং প্রতিষ্ঠানকে স্পষ্ট করে বলুন যে, আপনি আপনার নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত কাজ করতে পারবেন না। মনে রাখবেন, কাজের চেয়ে জীবনের ভারসাম্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করুন

ধরুন, আপনার বস একটি কাজের জন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও অফিসে আসতে বললেন। যদি এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে বসের অনুরোধ রাখা যেতে পারে। কিন্তু যদি নিয়মিত হয়, সেক্ষেত্রে আপনি ভেবে দেখুন, আপনার পক্ষে সম্ভব কি না। যদি সম্ভব না হয়। তাহলে নমনীয় ভাবে বলুন,

Source: blog.shrm.org

‘আমি কাজটির গুরুত্ব বুজতে পেরেছি, কিন্তু কিছু পারিবারিক সমস্যার কারণে আসতে পারবো না’।এভাবে প্রতিটি সমস্যা বসের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।

কিছু ক্ষেত্রে ত্যাগের মানসিকতা প্রদর্শন করুন

মাঝে মাঝে বস এমন কিছু অনুরোধ করে থাকেন যা গ্রহণ না করে উপায় থাকে না। ধরুন, সপ্তাহের ছুটির দিনে একটি প্রজেক্ট সম্পন্ন করে দিতে বললেন। আপনিও এই কাজের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন। এ অবস্থায় যদি আপনার ব্যক্তিগত জীবন এবং পারিবারিক জীবনে সমস্যা না হয়, তাহলে একটু ছাড় দিতে পারেন।

Source: blog.monese.com

এ বিষয়ে রবিন্সন বলেন ‘যদি আপনার বস কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য একটু অতিরিক্ত সময় কাজ করার অনুরোধ করেন এবং এতে আপনার খুব বেশি সমস্যা না হয় তাহলে কিছুটা ছাড় দিন। আপনার বসকে বলুন, আমি এই কাজের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছি। তাই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কাজটি সম্পন্ন করতে চাই’। এক্ষেত্রে আপনার ছাড় দেওয়ার মানসিকতা প্রদর্শিত হবে।

তবে মনে রাখবেন, জীবনের ভারসাম্যের প্রশ্নে ছাড় দেওয়া উচিৎ নয়।

কিছু ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করুন

যদি কাজের নেশায় আসক্ত বস আপনার ওপর এমন একটি কাজ চাপিয়ে দেয়, যা অনেক সময় ধরে করতে হবে। যে কাজটি ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলবে। এক্ষেত্রে আপনার বসকে কাজটি একটু নমনীয় করার অনুরোধ করতে পারেন। যদি তিনি না মানেন, তাহলে সরাসরি বলে দিন আপনার পক্ষে এই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। বোঝাতে চেষ্টা করুন, কাজটি আপনার ব্যক্তিগত জীবনকে প্রভাবিত করবে।

Source: leadwithastory.com

আপনার সীমারেখায় অটল থাকুন। জীবনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কঠোর হওয়া উচিৎ। এ বিষয়ে ব্রাউনলি বলেন ‘যদি আপনি আপনার মতামতকে সম্মান না করেন, তাহলে অন্য কেউ সম্মান করবে না’। তাই নিজের মতামতকে প্রাধান্য দিন।

আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন

আজ পর্যন্ত যেসকল মানুষ সফল হয়েছেন, তারা সবাই অসীম আত্মবিশ্বাসী মানুষ। বিখ্যাত সফল প্রতিষ্ঠান আলিবাবা ডট কম এর চেয়ারম্যান জ্যাক মা বলেন, ‘আমি একটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ভিউ দিয়েছিলাম। সেদিন ২৫ জনের মাঝে ২৪ জনের চাকুরী হয়েছিল। কিন্তু একজনের হয়নি। সেই একজন ছিলাম আমি। আজ আমি আলিবাবা ডট কমের চেয়ারম্যান। তাই আত্মবিশ্বাস হারাবেন না। পরিশ্রম করে এগিয়ে চলুন। একদিন সফল হবেন’।

Source: sircharlescaryinc.com

চেষ্টা করুন পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। কারণ, জীবনের ভারসাম্য সবার আগে। এক্ষেত্রে নতুন কর্মক্ষেত্রে খুঁজে বের করুন। এরপর বর্তমান কর্মক্ষেত্র ছেড়ে দিন। আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন। পরিশ্রম করে এগিয়ে চলুন। জীবনে সফলতা আসবেই।

Feature Image Source: wsj.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *