কানাডায় ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলে পড়ুন (১ম পর্ব)

একটি সময়ে পৃথিবীর যেকোনো দেশের নাগরিকদের যেকোনো রাষ্ট্রে অবাধে প্রবেশাধিকারের সুযোগ বিদ্যমান ছিলো। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় নিজ দেশের বাইরে গমন করা বেশ জটিল হতে থাকে। বর্তমান সময়ে নানাবিধ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে হয়। এসব প্রক্রিয়া রাষ্ট্র অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

Source: visaplace.com

সাধারণত মানুষ উচ্চশিক্ষা অর্জন ও কর্মজীবন শুরু করার জন্য বিদেশে গমন করে থাকে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া যতটা সহজ, বরং কর্মজীবন শুরু করা তারচেয়ে বেশ কঠিন। আপনি যদি দেশের বাইরে কর্মজীবন শুরু করতে চান, তবে আপনার শুধুমাত্র ব্যক্তিগত দক্ষতা থাকলেই হবে না, বরং যে দেশে ক্যারিয়ার গড়তে চান, সে দেশে কীভাবে বাহিরের রাষ্ট্রের নাগরিকেরা কাজ করার সুযোগ পেতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে এবং তদানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবেই আপনি সে দেশে কাজ করার সুযোগ পাবেন, অন্যথায় আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আপনি ক্যারিয়ার গড়তে ব্যর্থ হবেন। বিশ্বের বেশ কিছু রাষ্ট্র রয়েছে, যেসব দেশে সাধারণত মানুষ ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছা পোষণ করে থাকে।

Source: anadventurousworld.com

তেমনি একটি রাষ্ট্র হলো কানাডা। বসবাসের জন্য কানাডাকে পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম একটি সেরা দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এদেশের জীবনযাত্রার মান খুবই উন্নত এবং দেশটি সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যে ভরপুর। এছাড়াও কানাডিয়ানেরা শিক্ষিত, উদার ও খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার জন্য সুপরিচিত। আপনার যদি স্বপ্ন থাকে কানাডায় ক্যারিয়ার শুরু করবেন, তাহলে আপনার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে, কানাডা সম্পর্কে যা যা জানা দরকার, তা এই আর্টিকেলটিতে পাবেন। তাই আপনি কানাডায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে প্রথমেই এই আর্টিকেলটি পড়ুন।

দেশ পরিচিতি

কানাডা উত্তর আমেরিকার উত্তরাংশে অবস্থিত একটি দেশ। এদেশের দশটি প্রদেশ ও তিনটি অঞ্চল আটলান্টিক থেকে প্যাসিফিক এবং উত্তরে আর্কটিক সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত, যা এই দেশটিকে মোট আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তর দেশে পরিণত করেছে। বিশাল উপকূল তীরবর্তী অঞ্চল, বিস্তীর্ণ স্থলভাগ, মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার অনেক মিল আছে।

Source: campcanada.co.uk

কিন্তু অমিলও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটিশ ঐতিহ্য এড়িয়ে চলার প্রবণতা থাকলেও কানাডার লোকেরা ব্রিটিশ ঐতিহ্যের জন্য বেশ গর্ব করে। বিশেষ করে ইউরোপের দুটি দেশ ব্রিটেন আর ফ্রান্সের অভিবাসীদের মাধ্যমে কানাডার ইতিহাস আর ঐতিহ্য যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছে। ফরাসি ও ইংরেজি দুটি ভাষাই কানাডায় প্রচলিত আছে। বিশেষ করে কানাডার কুইবেক ও নিউ বার্নসউইকের অধিবাসীরা প্রধানত ফরাসি ভাষায় কথা বলে। ফলে যারা কানাডা যাওয়ার কথা চিন্তা করছেন, তাদের এই দুইটি ভাষার একটি অবশ্যই জানা দরকার। কানাডার জনসংখ্যা প্রায় ৩৭ মিলিয়ন।

Source: huffingtonpost.ca

আশ্চর্যজনকভাবে কানাডার অধিবাসীদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশির বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আছে এবং এটি বিশ্বের অন্যতম উচ্চ শিক্ষিত দেশ হিসেবে পরিচিত। এ দেশের আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা; ১৯৪৭ সালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পরিচিতি

কানাডায় বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। আর প্রতি বছরই এই দেশটি ক্রমশ উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। যদিও অন্যান্য উন্নত দেশের মতো কানাডার মার্কেট পরিধি তেমন বৃহৎ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ না। তবুও বিভিন্ন অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও কানাডার ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থিতিশীল ছিলো। বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম সেরা পাঁচটি শিল্পক্ষেত্র হলো,

১. কৃষি

প্রাকৃতিক ও ভূ-প্রকৃতিগত কারণে কানাডা কৃষি কাজের জন্য একটি উর্বর ভূমি। বিভিন্ন ধরনের কৃষিদ্রব্য এ দেশে উৎপন্ন হয়ে থাকে। কৃষি পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে এ দেশকে পৃথিবীর অন্যতম প্রথম সারির দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

Source: thecanadianencyclopedia.ca

অবস্থানগত কারণে এদেশের অধিকাংশ কৃষিপণ্যই আমেরিকায় রপ্তানি করা হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কানাডার কৃষি পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে। কৃষি ব্যবস্থায় উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগের ফলে, প্রতিনিয়তই এদেশের কৃষিক্ষেত্র উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।

২. শক্তি

কানাডায় প্রচুর পরিমাণে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে। শক্তি সম্পদের প্রাচুর্যতার কারণে, এ দেশটি পৃথিবীর অন্যতম প্রথম সারির এনার্জি রিসোর্স সরবরাহকারী দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। সানকোয়ার এনার্জি ইনকর্পোরেটেড, কানাডিয়ান ন্যাশনাল রিসোর্সেস লিমিটেডের মতো নেতৃস্থানীয় সংস্থাগুলো, বিভিন্ন ধরনের শক্তি সম্পদ সরবরাহ করে থাকে।

Source: wikibizpedia.com

বিশ্বজুড়ে এদের নেটওয়ার্ক বিদ্যমান আছে। কানাডা প্রাকৃতিক শক্তির সঙ্গে সৌরশক্তি ও বায়ু শক্তি উৎপাদনেও সাফল্য দেখিয়েছে। এসব শক্তি সম্পদ শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রচুর জনবলের প্রয়োজন হয়। ফলে কানাডায় শক্তি সম্পদ শিল্পে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য প্রচুর সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে।

৩. প্রযুক্তি

প্রযুক্তি খাতেও কানাডা পিছিয়ে নেই। পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী প্রযুক্তি শিল্পের দেশ হলো কানাডা। প্রযুক্তি শিল্পকে উন্নত করার জন্য সরকারিভাবে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে যেনো প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো কানাডায় সহজে প্রবেশ করতে পারে, সেজন্য সরকার বিভিন্ন সময় ভিসা কার্যক্রমে, বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসে। এতে খুব সহজেই বিভিন্ন প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলো কানাডায়, তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।

Source: nationalpost.com

ফলাফলস্বরূপ কানাডার প্রযুক্তিখাত ক্রমশ উন্নত হওয়ার সুযোগ পায়। আপনার যদি ভালো প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা থেকে থাকে। তবে কানাডায় এসে প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠানে সহজেই ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজের অপার সুযোগ ও সুবিধা রয়েছে।

৪. পরিষেবা

এদেশের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষ পরিষেবাক্ষেত্রের বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত। খুচরো, ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি হলো অন্যতম সেরা পরিষেবাসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষেরা কানাডার এই পরিষেবাক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত আছে। আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলে, আপনিও খুব সহজেই কানাডার বিভিন্ন পরিষেবাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।

৫. ম্যানুফ্যাকচারিং

সক্রিয় যন্ত্রাংশ উৎপাদন করাকে, এই দেশের অন্যতম দ্রুতগতির ক্রমবর্ধমান ম্যানুফ্যাকচারিংক্ষেত্র হিসেবে মনে করা হয়।

Source: ediweekly.com

দেশ ও বিদেশের সব ধরনের নাগরিকদেরই এই ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে। তাই আপনি যে দেশের নাগরিকই হোন না কেনো, আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলে, কানাডার ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।
কানাডার আরো কাজেরক্ষেত্র ও বিভিন্ন নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটির দ্বিতীয় তথা শেষ পর্বটি পড়ুন। দ্বিতীয় পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

Featured Image:Anadventurousworld.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *