পেশাদারি অন্যায় সম্পর্কে জানেন আপনি?

যখনই আপনি একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হচ্ছেন তখনই আপনি অনেকগুলো নতুন নিয়মে আবদ্ধ হচ্ছেন। এখানে আপনি চাইলেই নিজ মনমতো কিছু করতে পারবেন না। পেশাদারি জীবনে কিছু কাজকে ‘অন্যায়’ হিসেবে মানা হয়। আর এই অন্যায়গুলোর কোনোটার অভ্যাস যদি আপনার ভেতর থেকে যায় তাহলে তা বাদ দেওয়ার এখনই সময়।

চলুন জেনে নিই কী সেই পেশাদারি অন্যায়গুলো-

অহংকার

কর্মক্ষেত্র এমন একটা জায়গা যেখানে ‘অহংকার’ ব্যাপারটা আপনার সুনামকে খুব দ্রুত বদলে দিতে পারে দুর্নামে। হতে পারে আপনি খুব ভালো কাজ জানেন বা করছেনও, কিন্তু এর মানে এই নয় যে, সে জন্য আপনাকে অহংকারি হতে হবে।

স্পার্ক এলিটের প্রতিষ্ঠাতা এন্ড্রিউ স্পার্কের মতে, কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো মানুষ তিনি যিনি সবার কাছ থেকেই শিখতে পারেন।

কর্মক্ষেত্রে অহংকারকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না কখনোই; image source: PA Life

আপনি যে কাজটি করছেন সেটিই যে কেবল সর্বজন গৃহীত বা সবচেয়ে ভালো হবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে নিজের সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করুন। অহংকার না করে, সবার সাথে মিলে কাজ করুন, দিনশেষে আপনি যে সেরাদের মধ্যে থাকবেন তা কিন্তু বলাই যায়।  

মেরুদণ্ডহীন

আপনি কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে এসেছেন এ  কথা সত্যি। উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা ম্যানেজারের দেওয়া কিছু কাজ নিত্য কাজের বাইরে করতে হয় সেটাও সত্যি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনি সব কিছুই করবেন!

যদি এমনটা হয় তবে খুব বেশিদিন লাগবে না আপনাকে কর্মক্ষেত্রেই ‘মেরুদণ্ডহীন’ শব্দটি শুনতে! এমন কোনো পরিস্থিতির মাঝে পড়তে না চাইলে ‘না’ বলতে শিখুন। সিনিয়র কারও কাছ থেকে কাজ পেয়েও সেটিকে ‘না’ বলার অর্থ হচ্ছে আপনি একটি অদৃশ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। তবে মনে রাখবেন, ভালো কাজের জন্য যদি আপনি ‘না’ বলেন তবে সেটি সত্যিই সাহসের কাজ।

অতিরিক্ত চাপ নিয়ে কাজ করা উচিৎ নয় কখনোই; image source: the telegraph

ক্যারিয়ার কোচ স্যালি ব্ল্যানসার্ড বলেন, ‘আমরা এমন কিছু মানুষের মাঝে কাজ করি যারা সব কিছু করতে চায়। কিন্তু একজন মানুষের পক্ষে যে সবকিছু করা সম্ভব নয়।

কাজের মাঝে কখনো কখনো গতি কমাতে হয়, কাজকেও কখনো না বলতে হয় নইলে কর্মক্ষেত্রও বিষাদময় হয়ে ওঠে।  

স্বার্থপরতা

কর্মক্ষেত্র এমন একটা জায়গা যেখানে ‘সবাই একজনের জন্য এবং একজন সবার জন্য’। এখানে স্বার্থপর, মিশতে না চাওয়া মানুষদের অগ্রাধিকার নেই বললেই চলে।

কর্মক্ষেত্রে অন্যকে সাহায্য করার মানসিকতা থাকতে হবে। এখানে স্বার্থপরতার জায়গা নেই; image source: berufebilder

এই বিষয়ে ওয়ার্কপ্লেস রিসার্চ এসোসিয়েটস এর প্রিন্সিপাল জুলি ওয়েস্ট বলেন, কর্মক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে একটি ভালো অবস্থানে থাকতে হবে। তবে সাথে এটাও বুঝাতে হবে যে আপনি সকল কাজের প্রতি আগ্রহী।

অন্যকে সাহায্য করার মানসিকতা আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যায়। যে সকল ব্যক্তি আগ্রহভরে কাজ করতে চান অথবা নিজের গ্রুপকে সকল কাজে সহযোগিতা করেন তারা খুব দ্রুত সফল হোন।

অসন্তুষ্টি

কর্মক্ষেত্রে যে পদেই আপনি কাজ করুন না কেন সবার আগে সন্তুষ্ট মনোভাব থাকতে হবে। কাজে বিরক্তি আসবে, খারাপ লাগা আসবে। কিন্তু এটিকে কখনোই দীর্ঘ করতে দেওয়া যাবে না।

কর্মক্ষেত্রে অসন্তুষ্টি হতে পারে বিষাদের কারণ; image source: Business News Daily

কর্মী যদি নিজ কাজে অথবা জীবনের অন্য কোনো দিক সম্পর্কে সন্তুষ্ট না থাকতে পারেন তবে তার সব সময় পরিবর্তনের একটা ক্ষমতা থাকে। শুধু বিশ্বাস রাখতে হবে, যে কোনো ভিন্ন কিছুই হোক, মানিয়ে চলা সম্ভব।

সন্তুষ্টি ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নিজের ভেতর। কাজকে ভালোবাসা জরুরি। মনের বিরুদ্ধে কাজ করে খুব ভালো কিছু কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়।

তুলনা

অন্যের সাথে তুলনা বিষয়টি অনেকেই হয়ত ইচ্ছে করে করেন না। এটি হয় অনৈচ্ছিক আর অবচেতনভাবে। তবে যেভাবেই হোক, এতে অনেকেই বেশ আনন্দ পান।

কিন্তু কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পর এটি কেউই খুব ভালো চোখে দেখেন না। নিজেকে কখনো অন্যের সাথে তুলনা করতে যাবেন না। আপনি অন্যের চেয়ে ভালো কাজ পারেন এই ধরনের কোনো কথা বা কাজ কখনোই সম্মুখে প্রকাশ করা যাবে না।

কাজে মন্থরগতি

কাজে সফল হবার অন্যতম মূলমন্ত্র হচ্ছে কখনো মন্থরগতি সম্পন্ন হওয়া যাবে না। কাজের গতি কমে গেলে ফের কাজে ফিরে আসা খুব কঠিন। কাজে বিরক্তি লাগলে বিশ্রাম নিন। কিন্তু মন্থরভাব কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

কৃতজ্ঞতাহীন

সবার সাথে মিলেমিশে কাজ করছেন কিন্তু শেষ অবধি কাউকে একটা ছোট্ট ‘ধন্যবাদ’ও দেননি কখনো? কর্মক্ষেত্রে এটিকে কিন্তু বেশ বড় ‘অপরাধ’ হিসেবে ভাবা হয় জানেন? কর্মক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ খুব জরুরি।

সহকর্মীদের সাথে কাজ করতে গিয়ে হয়ত আমরা ভাবি সাহায্য করা তো তাদের কাজেরই একটা অংশ। কিন্তু এই মনোভাব থেকে বের হয়ে আসা জরুরি। কাজ শেষে সহকর্মীকে একটা ছোট্ট ‘ধন্যবাদ’ দিন। এতে কিন্তু কোনো স্বার্থ মিশে নেই। এটা আপনার সদাচরণেরই একটি অংশ বলতে পারেন। এমনটিতে সহকর্মীর সাথে একটি ভালো সম্পর্ক তো বটেই, কাজেও স্পৃহা বাড়বে।

Feature image: ionos.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *