গ্রাহকদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কর্মচারীদের যে ১২টি দক্ষতা থাকতে হয়

যেকোনো ব্যবসার অগ্রগতি অনেকাংশেই নির্ভর করে গ্রাহক সেবা দেওয়ার উপর। যদিও আমরা জানি ব্যবসার সফলতা নির্ভর করে পণ্যের মান ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা পরিষদের উপর, তবুও ব্যবসা ঝুঁকিতে পড়তে পারে যদি গ্রাহকেরা অসন্তুষ্ট হন। তাই নিয়োগকর্তারা কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্মীর দক্ষতার উপর বিশেষ জোর দিয়ে থাকে। ভালো গ্রাহক সেবা দেওয়ার উপরে কর্মচারীদের ক্যারিয়ার নির্ভর করে। এজন্য কর্মীদের বেশকিছু বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতেই হবে, যদি কেউ কর্মী হিসেবে ভালো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চায়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রাহক পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্মচারীদের যে ১২ টি দক্ষতা থাকলে ব্যবসায় সাফল্য অর্জনের পথ মসৃণ হবে ও কর্মীদের ক্যারিয়ার উজ্জ্বল থেকে উজ্জলতর হবে।

Source; www.adeccousa.com

১. ধৈর্য

একজন কর্মচারীকে প্রচুর ধৈর্যশীল হতে হবে। কাস্টমার অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা বলবে, সেগুলোও মনযোগ সহকারে শুনতে হবে আবার বেশীরভাগ সময়ই গ্রাহক আপনার সাথে আপোষ করতে চাইবে না এবং আপনার সাথে বিপরীত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করবে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হলে আপনাকে ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিতে হবে। যদি ধৈর্যশীল না হন, তবে গ্রাহক দ্বিতীয়বার আর পণ্য নিতে আসবে না। তাই একজন কর্মচারীর ধৈর্যশীলতার গুণটি আয়ত্ত করেতেই হবে।

Source; www.helpscout.net

২. আত্মনিয়ন্ত্রণ

কিছু কিছু কাস্টমার আসবে, যারা কর্মচারীদের সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বলবে। এক্ষেত্রে কর্মচারীও যদি পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখায়, তবে তা ব্যবসার জন্য হুমকি স্বরূপ হতে পারে। এজন্য এমন পরিস্থিতিতে সেবা দাতাকে আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কাস্টমারকে নরম স্বরে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করতে হবে। এতে কাস্টমারই লজ্জা বোধ করবে তার নিজের আচরণের জন্য এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি ইতিবাচক ধারণা জন্মাবে।

৩. সম্মান প্রদর্শন

গ্রাহকদের প্রতি যথাযথভাবে সম্মান দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে একজন কর্মচারী গ্রাহকের কথা মনযোগ দিয়ে শুনবে, কাস্টমার যখন কথা বলবে তখন তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবে এবং গ্রাহক কথা শেষ না করা পর্যন্ত থামিয়ে দিবে না বা কথার মাঝে কথা বলবে না। এতে গ্রাহকের মনে হবে যে, আপনি তাকে যথার্থ সম্মান করতেছেন। এমন আচরণ প্রদর্শন করতে পারলে গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব।

Source; www.thecsaedge.com

৪. যোগাযোগ দক্ষতা

একজন কর্মীর অবশ্যই যোগাযোগের উপর ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। যোগাযোগের দক্ষতা নির্ভর করে শরীরের ভাষা, মুখের অভিব্যক্তি, কন্ঠের আওয়াজ এবং আরও অনেক কিছুর উপর। একজন বিকৃত প্রকৃতির কাস্টমারের সাথে কথা বলার সময়ও একজন সেবা দাতার শরীর ও কন্ঠস্বরকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে হবে ও ইতিবাচক ভাষায় কথা বলতে হবে, এতে কাস্টমারের ভিতর ভালো ইম্প্রেশন তৈরি হবে।

Source; www.chron.com

৫. পণ্য সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান রাখা

একজন কর্মীকে অবশ্যই পণ্য সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য জানতে হবে। গ্রাহক পণ্যের ব্যাপারে নানাকিছু জানতে চাইবে, আর কর্মচারী যদি যথাযথ তথ্য দিয়ে গ্রাহককে পণ্য সম্পর্কে অবগত করতে না পারে, তবে গ্রাহক কখনই পণ্য ক্রয়ে আগ্রহ দেখাবে না।

৬. ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা

একজন কর্মচারীকে অবশ্যই ভাষার ক্ষেত্রে দক্ষ হতে হবে। কর্মীদের কথার মাধ্যমেই গ্রাহকেরা পণ্য সম্পর্কে ধারণা পাবে। গ্রাহক পণ্য ক্রয় করবে কি করবে না, তা অনেকটাই নির্ভর করে কর্মচারীদের ভাষা ব্যবহারের কৌশলের উপর। তাই একজন দক্ষ কর্মচারীর অবশ্য ইতিবাচক ভাষা ব্যবহারের উপর দক্ষতা থাকতে হবে।

Source; www.bizlibrary.com

৭. সহানুভূতি

গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে সহানুভূতি প্রকাশ। কোন কারণে কাস্টমার যদি পণ্যের ত্রুটি পায় এবং এসে অভিযোগ করে, তবে সেক্ষেত্রে তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলে গ্রাহক সন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে পণ্য ক্রয়ে দ্বিধা করবে না।

৮. গ্রাহককে বুঝতে পারা

একজন কর্মীর অবশ্যই গ্রাহকদের বুঝতে পারার দক্ষতা থাকতে হবে। গ্রাহক সব সময় স্বশরীরে হাজির হবে না, তাই শুধু শরীরের ভাষাই বুঝলে হবে না বরং কথা বলার মাধ্যমে তার মনস্তাত্ত্বিক পরিস্থিতিও অনুধাবন করতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতা বেশ কাজে দিতে পারে। অনেক সময় কাস্টমারকে ভালোভাবে বুঝতে না পারার কারণে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়, যা ব্যবসার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

Source; www.cintas.com

৯. সৃজনশীলতা

অনেক সময় গ্রাহকদের সমস্যা সমাধানে সৃজনশীল জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হলে সেবা দাতার অবশ্যই বৈচিত্র্যময় দক্ষতা থাকতে হবে।

১০. কর্ম কৌশল

একজন কর্মচারীর অবশ্যই কৌশলগত জ্ঞান থাকতে হবে। কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা থেকে শুরু করে পণ্য বিপণন সকল ক্ষেত্রেই প্রয়োজন মাফিক কৌশল অবলম্বন করতে হবে। কৌশল যে কোন কাজ কে সহজ করে দেয়।

Source; www.businessinsider.com

১১. দৃঢ়তা

সেবাদাতার ক্ষেত্রে দৃঢ়তা হলো গ্রাহকের সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। এতে গ্রাহকের মনেও ইতিবাচক ধারণা জন্মে। কাস্টমার মনে করে, আপনি তাকে সম্মান করতেছেন ও তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এতে গ্রাহক পরবর্তী সময়েও আপনার কাছে থেকে পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী হয়ে উঠবে। ফলে এই দৃঢ়তার গুণ টি অবশ্যই একজন কর্মচারীর থাকা উচিত।

Source; redcarpetlearning.com

১২. ঘনিষ্ঠতা

একজন যোগ্য কর্মচারীর মধ্যে অবশ্যই যে গুণটা থাকে সেটা হলো, সে কাস্টমারের সাথে খুব গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারে। একজন দক্ষ কর্মীর অবশ্যই এই দক্ষতাটি প্রদর্শন করতে হবে, তা নাহলে তাকে একজন আদর্শ সেবা দাতা আখ্যা দেয়া যায় না। আর গ্রাহকের সাথে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি করতে হলে উপরে বর্ণিত বিষয়গুলোর যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। এমনিতেই একজন অপরিচিত কাস্টমার আপনার সাথে আন্তরিকতার বন্ধনে আবদ্ধ হবে হবে না। এজন্য আপনাকেই অগ্রনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। আপনার আচার- আচরণে মুগ্ধ হলে গ্রাহক আপোষেই আপনার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠবে। আর যখন কোনো কাস্টমারের সাথে ঘনিষ্ঠতা নির্মাণ হয় তা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানবের জন্য ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসে।

Source; www.customerserviceskill. com

কমপক্ষে এই ১২ টি দক্ষতা অর্জন করতে পারলে আপনি একজন যোগ্য ও দক্ষ কর্মী হিসেবে বিবেচিত হবেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারেরা আপনাকে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিতে আগ্রহ দেখাবে। কর্মী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে, এই দক্ষতাগুলো কর্মীর মধ্যে থাকতে হবে। যখন কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীরা এই সব দক্ষতায় দীক্ষিত হয়ে তা প্রদর্শন করতে পারে, তখন সেই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য আসা অনিবার্য হয়ে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *