বাংলাদেশে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতি

বাংলাদেশে যেকোনো ধরনের ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স থাকাটা আবশ্যক। এলাকার স্থানীয় সরকার কর্তৃক এই ট্রেড লাইসেন্সটি জারি করা হয়ে থাকে। প্রতিটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম যেখানে পরিচালনা করা হয়ে থাকে সেখানকার স্থানীয় সরকারই এই ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে থাকেন। যদি কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের একের বেশি শাখা থাকে তাহলে তার জন্য প্রতিটি জায়গা থেকে আলাদা করে স্থানীয় সরকার থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। এটি এক বছরের জন্য জারি করা হয় বং প্রতিবছরই পুনরধিকার করতে হয়। ট্রেড লাইসেন্স করাতে কিছু সরকারি পর্যায়ের খরচ করা হয় যা সাধারণত ব্যবসায়ের ধরনের ওপর নির্ভর করে।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পরিচালিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ট্রেড লাইসেন্স জারি করার পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হলো। অন্যান্য স্থানীয় সরকারেরও একই নিয়ম-কানুন। আরও বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য স্থানীয় সরকারের কার্যালয়ে গিয়ে যোগাযোগ করলে ভালো।

বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স

প্রক্রিয়া অনুযায়ী পদক্ষেপ

প্রথম পদক্ষেপ- সঠিক কার্যালয় থেকে যথাযথ ফর্ম সংগ্রহ করা

ব্যবসায়ের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ট্রেড লাইসেন্স জারি করার ক্ষেত্রে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) এর দুটি ফর্ম রয়েছে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অবশ্যই ‘কে (K)’ ফর্মটি ব্যবহার করতে হবে। যদিও ১০টি স্থানীয় কার্যালয়ে ‘কে (K)’ ফর্মটি ব্যবহার করা হয়, তবুও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ নিজ স্থানীয় কার্যালয় থেকে ফর্মটি সংগ্রহ করতে হবে। সিল এবং যে কর্মকর্তা ফর্মটি বিক্রি করছেন তার প্রাথমিক নামই অন্যান্য স্থানীয় কার্যালয়ের ফর্ম থেকে সেই ফর্মটিকে পৃথক করে তোলে। এই ফর্মটির মূল্য ১০ টাকা।

ছবিসূত্র: লেখিকা

দ্বিতীয় পদক্ষেপ- স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে সনদ নেয়া

ফর্মটি পূরণ করা হয়ে গেলে এর বৈধতা যাচাইয়ের জন্য স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের কাছে জমা দিতে হবে।

তৃতীয় পদক্ষেপ- ৫০ টাকা দিয়ে লাইসেন্স বই সংগ্রহ করুন এবং সহযোগী কাগজপত্রের সাথে আবেদনপত্রটি ডিসিসির স্থানীয় কার্যালয়ে জমা দিন।

ছবিসূত্র: Future Startup

‘কে (K)’ ফর্মটির জন্য, ব্যবসায় কোথা থেকে পরিচালনা করা হবে তার ভাড়ার রশিদ বা যদি মালিকানাধীন থাকে তাহলে পৌর  কর পরিশোধের রশিদ সাথে দিতে হবে। সহযোগী কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে-

  • স্বত্বাধিকারীর তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • ভাড়ার রশিদ বা জায়গার মালিকানাধীনের প্রমাণপত্র।
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
  • ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স কর্তৃক লাইসেন্সের ফটোকপি (শিল্প কারখানার ক্ষেত্রে)।
  • হালনাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
  • মূলধন প্রমাণের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি (লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে মেমরেন্ডাম অব আর্টিকেলস্‌)।
  • অনাপত্তি সনদ (নতুন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে)।
  • ব্যাংক সল্ভেন্সি সার্টিফিকেট।
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনআরবি) থেকে নেয়া আয়কর নিবন্ধনের (TIN) সনদপত্র।
  • বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট থেকে কাজের অনুমতি।
  • হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ।
  • সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভা/ ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ম ও আইন-কানুন বাধিত হয়ে চলার নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প পেপারের ঘোষণা।
  • অন্তর্ভুক্তি নিবন্ধন পত্র (প্রযোজ্য সাপেক্ষে)।
  • অংশীদারীত্বের চুক্তিপত্র (প্রযোজ্য সাপেক্ষে)।
  • সংযুক্ত সকল কাগজপত্র সত্যায়িত হতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা বা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কর্তৃক কাগজপত্রগুলো সত্যায়িত করাতে হবে।

চতুর্থ পদক্ষেপ- লাইসেন্সিং সুপারভাইজার কর্তৃক তদন্তের অপেক্ষা

জমাকৃত ফর্মের ওপর ভিত্তি করে লাইসেন্সিং সুপারভাইজার ব্যবসায়িক সত্তাটি পরিদর্শনের জন্য আসবেন এবং সত্যতা যাচাই করবেন।

ছবিসূত্র: Lotus Design & Development Ltd.

পঞ্চম পদক্ষেপ- পূর্ব নির্ধারিত ফি পরিশোধ এবং ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।

লাইসেন্সিং সুপারভাইজারের পরিদর্শন শেষ হয়ে যাওয়ার পর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীকে বলা হয় যেন পূর্ব নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে ডিসিসির কার্যালয় থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয়। আবাদেনপত্রের প্রেক্ষিতে জমাকৃত ব্যবসায়ের ধরনের ভিত্তিতে ফি জমা দেয়ার তারিখ ও সময় নির্ধারণ করা হয়।

ষষ্ঠ পদক্ষেপ- সাইনবোর্ড ফি

ডিসিসির কার্যালয় থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার সময় সাইনবোর্ড ফিও জমা দিতে হবে। সকল ধরনের ব্যবসায়ের জন্য সাইনবোর্ড ফি লাইসেন্স ফি এর শতকরা ৩০ ভাগ ধার্য করা রয়েছে।

ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন

ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতিটি তুলনামূলকভাবে বাঁধা-ধরা এবং কোন ধরনের তদারকির প্রয়োজন হয় না। ট্রেড লাইসেন্স যখন নবায়ন করার সময় আসে তখন ব্যবসায়ের স্বত্বাধিকারীকে লাইসেন্সিং সুপারভাইজারের কাছে যেতে হয়।

প্রক্রিয়ার পদক্ষেপ

প্রথম পদ্ধতি- লাইসেন্স বই থেকে দাবিপত্র বা হুন্ডি জোগাড় করতে হয় (এই বইটির বৈধতার সময়সীমা পাঁচ বছর)

ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ লক্ষ্য করে লাইসেন্স সুপারভাইজার দাবিপত্র বা হুন্ডিতে নির্ধারিত বিষয়গুলো পূরণ করে পুস্তিকাটি ব্যবসায়ের স্বত্বাধিকারীকে দিয়ে দেন। এই দাবিপত্র বা হুন্ডিটি হলো ব্যাংকের আমানত রশিদের মতো চার পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা। সবগুলো পৃষ্ঠাতেই একই তথ্য পূরণ করতে হয়। এর মধ্যে একটি পৃষ্ঠা ব্যাংক এবং বাকিগুলো ব্যবসায়ের স্বত্বাধিকারী পূরণ করে থাকেন।

দ্বিতীয় পদ্ধতি- দাবিপত্র বা হুন্ডির মাধ্যমে মনোনীত ব্যাংকে জমা দিলে সেখান থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই লাইসেন্স নবায়ন হয়ে যায়।

এসব পদ্ধতি অনুসরণ করে একজন স্বত্বাধিকারী নিজেই তাঁর ব্যবসায়ের ট্রেড লাইসেন্সটি করে নিতে পারেন। এছাড়াও বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ট্রেড লাইসেন্স করার বিষয়ে গাইড লাইন দিয়ে সাহযোগিতা করে থাকেন। তারা বাংলাদেশের ট্রেড লাইসেন্স আইন সম্পর্কিত বিষয়াদিতেও সহযোগিতা করে থাকে।

ছবিসূত্র: লেখিকা

লাইসেন্সস জারির ক্ষেত্রে সময়সীমা

লাইসেন্স জারি করার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে আনুমানিক ৩-৪ কার্যদিবস প্রয়োজন হয়। তবে ব্যবসায়ের ধরন ভেদে সময়ের তারতম্য হতে পারে।

নির্ধারিত সরকারি ফি

  • আবেদনপত্র ফি ১০০ টাকা।
  • ব্যবসায়ের ধরনের ওপর ভিত্তি করে লাইসেন্সের ফি একশত থেকে চল্লিশ হাজার পর্যন্ত হতে পারে।
  • লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধনের ওপর ভিত্তি করে লাইসেন্স নির্ধারণ করা হয়।

লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে সময়সীমা

লাইসেন্স নবায়ন করার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে আনুমানিক ১-২ কার্যদিবস প্রয়োজন হয়। তবে ব্যবসায়ের ধরনের ওপর ভিত্তি করে সময়সীমা ব্যতিক্রম হতে পারে।

এক্ষেত্রে নির্ধারিত সরকারি ফি লাইসেন্স জারি করার মতোই।

Feature Image Source: YouTube

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *