চাকরির দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ না হওয়ার কারণসমূহ

চাকরির প্রাথমিক সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ হওয়ার পর সম্ভাব্য প্রার্থী সম্পর্কে আরো অনুসন্ধান করার জন্য নিয়োগকর্তা যেই কৌশল অবলম্বন করে তাই চাকরির দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার নামে পরিচিত। এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নিয়োগকর্তারা প্রার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত দক্ষতা সম্পর্কে আরো গভীরভাবে জানার সুযোগ পায়।

কেননা এক্ষেত্রে সাধারণত ইন্টারভিউয়ের তুলনায় আরো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার সুযোগ দেওয়া। কিন্তু অনেকসময় প্রাথমিক সাক্ষাৎকারে কিছু ভুল করার কারণে দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব হয় না। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই ভুলগুলো সম্পর্কে।

প্রথম এবং দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার কী

দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারে যেতে হলে প্রাথমিক সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ হতে হবে; Source: Cheatsheet.com

চাকরিতে উত্তীর্ণ না হওয়ার কারণগুলো জানার আগে আপনার প্রথম ও দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার সম্পর্কে জানা প্রয়োজন৷ প্রথম সাক্ষাৎকারটি মূলত প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব এবং মৌলিক দক্ষতা পরীক্ষা করার একটি সুনির্দিষ্ট কৌশল। এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নিয়োগকর্তা আপনার সিভি এবং কভার লেটারের সাথে আপনার বাহ্যিক দক্ষতা মেলে কিনা তা নিশ্চিত করবে৷

আর দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে আপনার যেসব দক্ষতা ও ক্ষমতাগুলো আপনাকে অন্যান্য প্রার্থীদের থেকে আলাদা ও যোগ্য করে তোলে, সেগুলোর উপর বেশি জোর দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ না হওয়ার কারণসমূহকে মূলত দুটো ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

অনিয়ন্ত্রণযোগ্য কারণসমূহ

১. নিয়োগকর্তার প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন

বিভিন্ন সংস্থা বা কোম্পানির সংস্কৃতি ও অবস্থান সর্বদা পরিবর্তনশীল। প্রতি বছর প্রতিষ্ঠান তাদের বাজেট নির্ধারণ করে এবং সেই বাজেটের উপর ভিত্তি করেই প্রতিটি পদ পুনরায় বিন্যস্ত করে। কিন্তু মাঝে মাঝে প্রতিষ্ঠানের এই পরিবর্তনগুলো আপনার সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ার মাঝামাঝি সময়ে ঘটে যায়। যার ফলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়।

সাধারণত এক্ষেত্রে নিয়োগ পরিচালকবৃন্দ ক্ষমা প্রার্থনা করে প্রার্থীকে জানিয়ে দেয় যে, তাদের কর্মী প্রয়োজনীয়তায় পরিবর্তন এসেছে। অর্থাৎ পূর্ববর্তী সাক্ষাৎকার বাতিল করা হয়েছে। যদিও এই ধরণের সমস্যা খুব কম হয়ে থাকে এবং এক্ষেত্রে প্রার্থীর কোনো ত্রুটি থাকে না৷ তবে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু সম্ভাব্য প্রার্থীকে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

২. যেকোনো পরিবেশে মানিয়ে চলার ক্ষমতা না থাকা

কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কর্মীর সকল পরিবেশে মানিয়ে চলার ক্ষমতা থাকতে হবে৷ এরকম অনেকেই আছেন যারা নির্দিষ্ট একটি পরিবেশে থাকতে অভ্যস্ত। তারা অন্যান্য পরিবেশে নিজের প্রতিভাকে সহজে প্রকাশ করতে পারে না। অর্থাৎ বিশ্বের সর্বাধিক প্রতিভাবান কর্মীও এমন কোনো পরিবেশে উৎপাদনশীল হতে পারবে না, যেই পরিবেশে সে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না।

কর্মীর যেকোনো পরিবেশে মানিয়ে চলার ক্ষমতা থাকা জরুরি; Source: Monster.com

যেমন আপনি যদি একজন অন্তর্মুখী ব্যক্তি হোন, যিনি একা কাজ করতে পছন্দ করে৷ তাহলে আপনাকে কোলাহলে পরিপূর্ণ একটি সুবিশাল জায়গায় কাজ করতে দিলে আপনার কাজের মান কখনোই ভালো হবে না। সুতরাং এক্ষেত্রে আপনার কোনো ভুল না থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারে যাওয়ার সুযোগটা আপনি নাও পেতে পারেন।

৩. নিয়োগকর্তার পক্ষপাতিত্ব বিষয়ক জটিলতা

অনেক সময় নিয়োগকর্তাকে বাহ্যিক উৎস থেকে কর্মী নিয়োগ করার আদেশ দেওয়া হয়। কিন্ত নিয়োগকর্তা তার পরিচিত অথবা কোনো অভ্যন্তরীণ প্রার্থীকে আগে থেকেই পছন্দ করে রাখেন৷ ফলে আপনি যত ভালোই কর্মক্ষমতা প্রকাশ করেন না কেন নিয়োগকর্তা সেটা পছন্দ হবে না। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে যোগ্য আবেদনকারী হলেও চাকরিটি পাবেন না।

নিয়ন্ত্রণযোগ্য কারণসমূহ

১. প্রথম সাক্ষাৎকারে ভুল

আপনাকে দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারে না ডাকার অন্যতম প্রধান কারণ হলো প্রাথমিক সাক্ষাৎকারে ভুল করা। যেমন আপনি যদি নিয়োগকর্তাকে ভুল নামে সম্বোধন করেন। বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা না নিয়েই যদি সাক্ষাৎকার পর্বে যান। অথবা আপনি কেন চাকরিটি করতে চান সেটা যদি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে না পারেন৷

প্রাথমিক সাক্ষাৎকারে ভুল করা যাবে না; Source: Totaljobs

সেক্ষেত্রে নিয়োগকর্তার আপনার সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হবে। যার ফলে প্রথম সাক্ষাৎকার থেকেই আপনি বাতিল ঘোষিত হতে পারেন। তাই অবশ্যই সাক্ষাৎকারে যাওয়ার পূর্বে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ও সাক্ষাৎকারের সাধারণ নিয়মাবলি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখা প্রয়োজন।

২. সাক্ষাৎকারটি ফুটিয়ে তোলা

একটি সাক্ষাৎকারকে ফুটিয়ে তোলার বিভিন্ন ধরণের উপায় রয়েছে। সেগুলোকে আপনি আপনার সাক্ষাৎকারে প্রয়োগ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি নিয়োগকর্তার নিকট নিজেকে খুব গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে নিয়োগকর্তা সেই সাক্ষাৎকারটি উপভোগ করবে।

আবার আপনার যদি বিশেষ কোনো দক্ষতা থাকে, যা মানুষের কাছে পছন্দনীয়। সেটা আপনি আপনার সাক্ষাৎকারে কাজে লাগাতে পারেন। এতে নিয়োকর্তার আপনার সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা সৃষ্টি হবে। কিন্তু যদি আপনি এই ধরণের ক্ষমতা না রাখেন, তাহলে প্রথম সাক্ষাৎকার থেকে আপনি তা আয়ত্ব করতে পারেন এবং পরবর্তী সাক্ষাৎকারে তা প্রয়োগ করতে পারেন।

৩. ধন্যবাদ নোট প্রেরণ

ধন্যবাদ নোট এর প্রচলন শুরু হয় চাকরি উদ্ভাবনের সময়কাল থেকেই। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই এই নিয়মটিকে পুরনো বলে এড়িয়ে যান। যেটি নিয়োগকর্তার কাছে আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালের TopResume এর একটি সমীক্ষায় অনুযায়ী, নিয়োগকারীদের ৬৮% বলেছেন যে একটি ধন্যবাদ নোট প্রাপ্তি প্রার্থী নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।

নিয়োগকর্তার নিকট ধন্যবাদ নোট প্রেরণ করুন; Source: Career Sidekick

তাই সাক্ষাৎকারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিয়োগকর্তার নিকট চিঠি বা ইমেইলের মাধ্যমে একটি ধন্যবাদ জানান। সেই ইমেইলে আপনার দক্ষতার ও কাজের উপযুক্ততা সম্পর্কে আলোচনা করুন। এবং সাক্ষাৎকারের জন্য তাদের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।

৪. রেফারেন্স

রেফারেন্স দেওয়ার সময় আপনি যার কথা উল্লেখ করছেন তিনি আপনার সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত কিনা সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন। এমন কারো নাম রেফারেন্স হিসেবে দিবেন না যিনি আপনার ব্যাপারে খুব কম জানেন বা আপনাকে খুব ভালোভাবেও চেনেন না। অনেক চাকরীপ্রার্থীকেই নিয়োগকর্তা প্রথম সাক্ষাৎকার থেকে বাতিল করে দেন, শুধুমাত্র তার দেয়া রেফারেন্স সঠিক থাকে না বলে।

Featured Image Source: prospectpersonnel.co.uk

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *