এক সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি যদি সিদ্ধান্ত নেন আজকের পর থেকে আর কোনো নেতিবাচক মানসিকতার মানুষের সাথে মিশবেন না, কোনো যোগাযোগ রাখবেন না। তাহলে দেখবেন আপনার বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই আপনার হারাতে হবে। কর্মক্ষেত্রেও আপনি বন্ধুহীন হয়ে পড়বেন। বলা হয়ে থাকে, আপনার চোখে সব কিছু রঙিন দেখতে চাইলে প্রতিটা বস্তু ধরে ধরে আলাদা আলাদাভাবে রং করার বদলে একটা রঙিন চশমা পরে নিন। তেমনি সব নেতিবাচক মানুষকে ধরে ধরে ইতিবাচক করার চেষ্টা চালানো বা তাদের এড়িয়ে চলার বদলে নিজেকেই তাদের সাথে মানিয়ে নিন।

photo: morganmckinley

আমি ইতিপূর্বে একটি নিবন্ধ নেতিবাচক মানুষের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এই নিবন্ধেও আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যা যেকোনো নেতিবাচক মানসিকতার মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে কাজে লাগবে।

ইতিবাচক কাজের প্রশংসা করুন

নেতিবাচক মানসিকতার মানুষ শুধু যে অন্যের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক হয়, তা নয়, তারা নিজের প্রতিও নেতিবাচক! আপনি যদি সত্যিই এমন বন্ধু বা সহকর্মীর দ্বারা বেষ্টিত থাকেন তাহলে একবার চিন্তা করে দেখুন তারা নিজেরা কতটা খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে! নেতিবাচক মানসিকতার কারণে তাদের মানসিক অবস্থা কি?

photo: dalekurow

এমন বন্ধু বা সহকর্মীর ক্ষেত্রে ভেবে দেখুন তার কোনো ভালো বা ইতিবাচক গুণ আছে কিনা। নিশ্চয়ই আছে! কেননা একজন মানুষ সম্পূর্ণভাবে নেতিবাচক হতে পারে না। কিছু না কিছু ইতিবাচক প্রবণতা তার মধ্যে থাকবেই। আপনি সেসব বিষয় খুঁজে বের করুন। ওই ব্যক্তির কি আপনার ভালো লাগে তা নির্বাচন করুন এবং এইসব বিষয়ে তার প্রশংসা করুন।

আপনার প্রশংসা পেয়ে সে নিজেকে অনেকটা ধন্য মনে করবে এবং তার মধ্যে ইতিবাচক প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। সে নিজেও নিজের এই ইতিবাচক গুণে খুশি হবে। আপনার রোপণ করা এই ছোট্ট ইতিবাচক বীজ এক সময় তার মধ্যে বিশাল বৃক্ষে পরিণত হবে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো তিনি নেতিবাচক মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হবেন।

হালকা বিষয়ে কথা বলুন

কিছু নেতিবাচক মানুষ তার সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে খুব বেশি স্পর্শকাতর হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনার বন্ধুদের মধ্যে নিশ্চয়ই এমন কেউ আছে যার ক্যারিয়ার বা কাজ সম্বন্ধে বন্ধুত্ব সুলভ আলোচনাও তার কাছে নেতিবাচক মনে হয়, এবং তিনি অপমানিত বোধ করেন। আপনি ভাল বা মন্দ কি বলছেন তা মনোযোগ দিয়ে শোনার বদলে সে আপনাকে দোষারোপ করায় ব্যস্ত থাকবে। আপনি তার যত ভালো বন্ধু হন না কেন নেতিবাচক মানসিকতার কারণে সে নিজেকে আপনার দ্বারা নেতিবাচকভাবে সমালোচিত মনে করবে।

photo: babylon radio

এমন অবস্থায় নেতিবাচক মানুষের সাথে অধিকতর ইতিবাচক এবং হালকা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কেননা স্পষ্টভাবেই যে ব্যক্তি নেতিবাচক ধ্যান ধারণার মধ্যে আটকা পড়ে আছে তাকে আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা ইতিবাচক জ্ঞান দিলেও সে তার অবস্থান থেকে সরবে না।

সুতরাং সবচেয়ে সম্মানজনক উপায় হল তার সাথে হালকা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা। নতুন কোনো সিনেমা, বন্ধুদের মধ্যে ঘটে যাওয়া কোনো মজার ঘটনা, সাধারণ বন্ধুত্বের কথোপকথন, আড্ডা; তাকে নিয়ে এসব বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। সাথে সাথে অবশ্যই এমন কোনো নেতিবাচক বন্ধুর সাথে আড্ডার সময় সাথে আরো দুই একজন ইতিবাচক মানসিকতার বন্ধু থাকা আবশ্যক। যেন তিনি এককভাবে  নিজেকে আপনার প্রতিপক্ষ না ভাবতে পারেন।

নিজের প্রতিক্রিয়ার জন্য সবসময় দায়বদ্ধ থাকুন

ব্যাক্তি ইতিবাচক বা নেতিবাচক যাই হোক না কেন, আপনি তাকে নেতিবাচক সাব্যস্ত করছেন এই ধারণাও কখনো কখনো ভুল হতে পারে। কখনো কখনো আপনার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সামনে থাকা মানুষকে আপনি নেতিবাচক জ্ঞান করছেন, এটা আপনার সমস্যা। সুতরাং এক্ষেত্রে আপনার সকল প্রতিক্রিয়া এবং বক্তব্যের জন্য দায়বদ্ধ থাকুন। আপনার প্রতিটি প্রতিক্রিয়া বা বক্তব্য উপস্থাপনের পূর্বে ভেবে নিন তার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক।

photo: boundless

তাছাড়া সামনে থাকা মানুষটির নেতিবাচক দিকে মনোযোগ দেওয়ার বদলে তার ইতিবাচক বিষয়ে বেশি মনোযোগী হোন। যদিও প্রাথমিকভাবে এটা খুব কঠিন, কিন্তু আপনার দক্ষতা দিয়ে ইতিবাচকভাবেই সামনে থাকা মানুষটির সাথে আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখবেন পৃথিবীতে কোনো কিছুই ধ্রুব না, সুতরাং যে কোনো বক্তব্য আলাদা আলাদা ব্যক্তির কাছে আলাদা আলাদা অর্থ এবং তাৎপর্য বহন করে। সুতরাং নেতিবাচক মানুষের কোনো কোনো কথাও মেনে নিন। তাতে পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হবে।

যোগাযোগ কমিয়ে দেওয়া অথবা এড়িয়ে চলা

নেতিবাচক মানুষের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের সব চেষ্টা যদি ব্যর্থ হয় তবে সুকৌশলে তাদের এড়িয়ে চলুন। হতে পারে নেতিবাচক মানসিকতার কেউ আপনার খুব নিকট আত্মীয় অথবা কাছের বন্ধু। কিন্তু কোনোভাবেই আপনি তার সাথে মানিয়ে নিতে পারছেন না। এক্ষেত্রে তাকে আলাদা করে কিছুই বলার প্রয়োজন নেই। আপনি নিজ থেকে সরে আসুন। ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমিয়ে দিন অথবা যেসব বিষয়ে আপনাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয় সেসব বিষয়ে আলোচনা কমিয়ে দিন।

photo: wikihow

সাথে সাথে তার সব আচরণ আপনি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করুন। কেননা আপনি জানেন যে তিনি একজন নেতিবাচক মানসিকতার মানুষ। যোগাযোগ কমিয়ে দিলে অথবা নিজে থেকে সরে এলে একসময় সে তার নিজের ভুল হয়তো অনুধাবন করতে পারবেন এবং ভবিষ্যতে কোনো এক সময় হয়তো তিনি আপনার কাছে ফিরে আসবেন। কিন্তু আপনার পক্ষ থেকে তার সাথে ঘনিষ্ঠতার চেষ্টা করার প্রয়োজন নেই।

পৃথিবীতে নেতিবাচক মানসিকতার মানুষ থাকবেই। এই সব মানুষকে ম্যানেজ করেই আমাদের চলতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনার সামনের মানুষটি নেতিবাচক কিন্তু আপনিতো ইতিবাচক! সুতরাং আপনিও যদি তার মতো আচরণ করেন তবে তা আপনার নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। সুতরাং নেতিবাচক মানুষকে সুকৌশলে খুশি রেখে চলতে পারাই বুদ্ধিমানের কাজ।