চাকুরী প্রার্থীর ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করতে যে বিষয়গুলো জানা উচিৎ

প্রতিটি প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করে চরিত্রবান ও দক্ষ কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দিতে। যাতে একদল দক্ষ কর্মকর্তা কর্মচারীর সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যেতে পারে সফলতার দিকে। এজন্য  প্রতিষ্ঠানগুলো  নিয়োগ দানের সময় চাকুরী প্রার্থীর যাবতীয় তথ্য জানার চেষ্টা করে। যেমন: প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য, মেডিক্যাল রেকর্ড, ক্রেডিট ইনফরমেশন, জাতীয়তা, ড্রাইভিং তথ্য ইত্যাদি। যদিও তথ্য জানতে চাওয়া খুব স্বাভাবিক । তবুও এসব তথ্য জানতে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলা খুবই জরুরী। হোক সরকারি প্রতিষ্ঠান অথবা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান।

source: sapphirecheck.com

কারণ কিছু বিষয় চাকুরী দাতার কাছে স্বাভাবিক হলেও চাকুরী প্রার্থীর জন্য হয়ে ওঠে বিব্রতকর। অনেক সময় সেটা আঘাত হানে প্রার্থীর আত্মসম্মানে। আমেরিকার জন্য  ইকুয়াল এমপ্লয়ি অপারচুনিটি কমিশন (ই ই ও সি) বেঁধে দিয়েছে কিছু নির্দিষ্ট আইন। এই আইন অনুসরণের মাধ্যমে চলে একজন চাকুরী প্রার্থীর জীবন বৃত্তান্ত জানার প্রক্রিয়া। সংস্থাটির আইন গুলো হচ্ছে,

০১. কোনো চাকুরী প্রার্থীর জীবন বৃত্তান্ত জানতে চাইলে অবশ্যই প্রার্থীর অনুমতি নিতে হবে।

০২. প্রার্থীর লিখিত অনুমতি পত্র সংগ্রহ করতে হবে।

০৩. যদি প্রার্থীর ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার হয় তবুও প্রার্থীকে এসব বিষয়ে আগেই অবগত করতে হবে।

এইসকল বিষয় ছাড়াও বেশ কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। যেগুলো জানতে হলে একটি সীমারেখার মধ্যদিয়ে করতে হয়। একজন চাকুরী দাতা হিসেবে চাকুরী প্রার্থীর ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে কী কী প্রশ্ন উচিৎ এবং কতটা করা উচিৎ, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করাই আমার আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয়।

অনলাইন তথ্য: ঠিক

আজকাল ইন্টারনেটের সুবিধায় সহজেই একজন মানুষের অনেক তথ্যই জানা যায়। অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকেন। এসব সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা তাদের ব্যক্তিগত অনেক তথ্যই প্রকাশ করে থাকেন।

source: Busy.org

কোনো চাকুরী দাতা চাইলেই এসব জায়গা থেকে চাকুরী প্রার্থীর প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। আজকাল উন্নত দেশগুলো ইন্টারনেট থেকে চাকুরী প্রার্থীর তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তাই যে তথ্যগুলো সকলের জন্য উন্মুক্ত করেছে সেগুলো থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করুন।

মেডিক্যাল তথ্য: ঠিক, তবে সীমাবদ্ধ

যে সকল কর্মক্ষেত্রে সরাসরি প্রার্থীর মেডিক্যাল তথ্যের প্রয়োজন নেই সেখানে প্রার্থীর মেডিক্যাল রিপোর্ট জানতে চাওয়া ঠিক নয়। আবার কিছু কিছু কর্মক্ষেত্রে এই তথ্যের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেমন: সেনাবাহিনীতে কাজ করতে হলে মেডিক্যাল রিপোর্টের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রার্থীর মেডিক্যাল রিপোর্ট জানার বিষয়ে আমেরিকান ডিসএবিলিটি অ্যাক্ট (এডিএ) সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

source: hiresafe.com

এই সংস্থা কোনো চাকুরী প্রার্থীর মেডিক্যাল রিপোর্ট এর ওপর ভিত্তি করে চাকুরী না দেওয়াকে আইন বিরোধী বলে উল্লেখ করেছে। তাই যেসকল কর্মক্ষেত্রে কাজের জন্য প্রার্থীর সরাসরি শারীরিক তথ্যের প্রয়োজন নয়। সেখানে এই তথ্য জানতে চাওয়া উচিৎ নয়।

ক্রেডিট চেক: ঠিক, কিন্তু আইনের মধ্যদিয়ে

আমাদের দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকর্তা কর্মচারী নির্বাচন করতে প্রার্থীর ক্রেডিট সম্পর্কে জানতে চায়। কারণ প্রার্থী কোনো ব্যাংকের নিকট দায়বদ্ধ থাকতে পারে। আবার ঋণ খেলাপিও থাকতে পারে। যা পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। এমতাবস্থায়ও প্রার্থীর ক্রেডিট চেক করতে হলেও প্রার্থীর অনুমতির প্রয়োজন হয়।

source: czechinvest.org

এক্ষেত্রে ফেয়ার ক্রেডিট রিপোর্ট অ্যাক্ট (এফ সি আর) আমেরিকার জন্য কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। তারা বলছে যদি কোনো প্রার্থীর ক্রেডিট জানার প্রয়োজন হয়, তাহলে প্রার্থীর লিখিত অনুমতির প্রয়োজন হবে। যদি প্রার্থীর ক্রেডিট সম্পর্কিত কোনো সমস্যা চিহ্নিত হয়। এর প্রেক্ষিতে যদি প্রার্থীকে অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তাহলে প্রার্থীকে লিখিত কারণ জানাতে হবে। তাই প্রার্থীর ক্রেডিট চেক করার আগে প্রার্থীর লিখিত অনুমতি গ্রহণ করুন।

বেতন সম্পর্কে জানতে চাওয়া: ঠিক

প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগদানের সাক্ষাৎকারে চাকুরী প্রার্থীর পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানে বেতন সম্পর্কে জানতে চেয়ে থাকেন। এটা প্রার্থীর বেতন-ভাতা নির্ধারণ সহজ হয়। আমাদের দেশে এই বিষয়ে তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই।

source: leadingwithtrust.com

তাই সকল প্রতিষ্ঠান চাইলেই এই প্রশ্নটি করতে পারেন। তবে উন্নত দেশগুলো এই প্রশ্নটি কিছুটা শর্ত জুড়ে দিয়েছে।

দলীয় সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা: ঠিক নয়

অনেক চাকুরী দাতা প্রার্থী দলীয় সংগঠনের সাথে যুক্ত কি না জিজ্ঞেস করে থাকেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। কারণ এতে প্রার্থী বিব্রতবোধ করে। যেহেতু প্রতিটি নাগরিকের ভালো কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত দলীয় সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার অধিকার রয়েছে।

source: kerryregoconsulting.com

যেমন: অনেকেই শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠনের সাথে যুক্ত  থাকেন। অনেক প্রতিষ্ঠান এই বিষয়টি তাদের জন্য হুমকি মনে করেন। কিন্তু এরকম ভাবা ঠিক নয়। আবার প্রার্থী কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত কী না? এই প্রশ্নগুলোও প্রার্থীর নিকট খুবই বিব্রতকর। তাই এ সকল প্রশ্ন না করাই ভালো।

সুরক্ষিত বিষয়: যে বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা একেবারেই ঠিক নয়

কোনো ব্যক্তির সুরক্ষিত তথ্যের মধ্যে রয়েছে, বয়স, জাতীয়তা, লিঙ্গ, ধর্ম, বৈবাহিক অবস্থা, প্রেগন্যান্সি ইত্যাদি। এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রার্থীকে নেগেটিভ প্রশ্ন করা একেবারেই উচিৎ নয়। এক্ষেত্রে সিভিল রাইট অ্যাক্ট বলছে, “ব্যক্তির সুরক্ষিত তথ্য কখনোই চাকুরী পাওয়া না পাওয়ার নিয়ামক হতে পারে না”।

source: eirikgislason.com

একজন চাকুরী দাতার এই প্রশ্নগুলো করা একেবারেই অনুচিত। কারণ এই প্রশ্নগুলো প্রার্থীকে খুবই বিব্রত অবস্থায় ফেলে। তাই চাকুরী প্রার্থীর ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করতে এই প্রশ্নগুলো না করাই ভালো।

ড্রাগ টেস্ট বা ঔষধ পরিক্ষা: ঠিক, তবে আইন মেনে

অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে রাসায়নিক ভাবে জটিল পণ্য উৎপাদন করা হয়ে থাকে। যা কিছু কিছু রোগীর জন্য খুবই হুমকি। যেমন: নিউক্লিয়ার এনার্জি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এছাড়া কিছু সরকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে ড্রাগ টেস্টের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আবার প্রতিটি দেশ অন্য দেশ হতে কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগে ড্রাগ টেস্ট করিয়ে থাকেন।

source: edmtunes.com

এবিষয়ে প্রতিটা দেশেই কিছু নির্ধারিত আইন থাকে। এই আইনগুলো অনুসরণ করেই সে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রার্থীর ড্রাগ টেস্ট করিয়ে থাকে। তাই প্রার্থীর ড্রাগ টেস্ট করতে হলে দেশের নির্ধারিত আইন অনুসরণ করুন।

Feature image source: ssci2000.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *