চাকরি পেতে পিএইচডি দক্ষতাকে যেভাবে কাজে লাগাবেন

অনেকে উচ্চতর শিক্ষার অংশ হিসেবে পিএইচডি নিয়ে থাকেন। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন অত্যন্ত সম্মানের এবং গর্বের। পিএইচডি করার জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট একটি মৌলিক বিষয়ে গবেষণা করতে হয়। গবেষণা চলাকালীন গবেষণা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর পরিমাণ জানতে হয়। ফলে পিএইচডি চলাকালীন বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন হয়। যারা পিএইচ করেছেন বা করছেন, তারা পিএইচডি ডিগ্রি করার সময় যে দক্ষতা অর্জন করেন, সেটি ব্যবহার করে অপ্রাতিষ্ঠানিক চাকরি করতে পারেন। জেনে নিন কিভাবে পিএইচডি দক্ষতা দিয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক চাকরি পেতে পারেন।

যেসব কাজ করতে পছন্দ করেন, সেসবের তালিকা করুন

হ্যাঁ, আপনি আপনার স্কুল জীবনে ফিরে চলুন। আরও একবার তালিকা করুন আপনি কোন কোন কাজ করতে ভালোবাসেন বা পছন্দ করেন। হতে পারে পূর্বে আপনি কোনো বিষয়ে দক্ষ হতে চেয়েছিলেন। কোনো কিছু জানতে বা শেয়ার করতে পছন্দ করতেন। হতে পারে আপনি লিখতে পছন্দ করতেন। যাই হোক, অনুপ্রেরণা হচ্ছে মূল বিষয়।

পছন্দের কাজগুলোর তালিকা করুন; Source: contrapuntonews.com

আপনি বর্তমানে যে কাজগুলো করতে পছন্দ করেন সেগুলোর সব তালিকা করুন। যদি আপনি তালিকা করতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তাহলে দুইটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে শুরু তালিকা তৈরি শুরু করুন।

১. আপনি প্রতিদিন কি কি করতে ভালোবাসেন?

২. বিভিন্ন বাঁধা-বিপত্তি এবং হতাশার মধ্যে কাজ করার জন্য নিজেকে কিভাবে অনুপ্রাণিত এবং হাসি-খুশি রাখেন?

যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি কি ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যালকুলাস শেখাতে পছন্দ করেন? অথবা আপনার কোনো ফলাফল বিশেষজ্ঞ দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করতে পছন্দ করেন? অথবা আপনি আপনার কোনো চিন্তার সাথে অন্যদের একমত করানোর জন্য বোঝাতে ভালোবাসেন? যদি আপনি সেটাই করেন, তাহলে আপনার পছন্দের তালিকা এমন হতে পারে-

  • গণিতের বিভিন্ন বিষয় ছাত্রদের কাছে ব্যাখ্যা করে বোঝানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি বের করতে পছন্দ করি।
  • আমার যে সকল তথ্য মানুষকে আকর্ষণ করছে এবং মানুষ সে সব নিয়ে আলোচনা করছে সেটার একটি প্রামাণ্য তৈরি করতে পছন্দ করি।
  • আমি শ্রোতাদের বুঝতে পারি। এতে খুব সহজে যুক্তি তৈরি করতে পারি যা তাদের কাছে আবেদন সৃষ্টি করবে এবং তারা আরো বেশি স্বতঃফূর্তভাবে আমার সাথে একমত হবেন।

পছন্দের কাজগুলোকে দক্ষতায় পরিণত করুন

আপনি যেসব কাজ করতে ভালোবাসেন, সেসবের তালিকা তৈরি করার পর সেই কাজগুলো আপনার দক্ষতায় পরিণত করুন। যেমন, ক্যালকুলাস শেখানোর জন্য কী কী জানা দরকার? অথবা কোনো জটিল তথ্য উপস্থাপনের জন্য কোন বিষয়ে দক্ষ হওয়া দরকার? ধরুন উপরের একই পছন্দের কাজগুলো দক্ষতায় পরিণত করবেন, সেজন্য যেটা করতে হবে-

  • জটিল ধারণাগুলোকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করতে পারেন।
  • বিভিন্ন সৃজনশীল উপায়ে কোনো তথ্য ব্যাখ্যা করতে পারেন।
পছন্দের কাজগুলোকে দক্ষতায় পরিণত করুন; Source: protectoramorrazo.org
  • প্রচুর দর্শকের সামনে কথা বলতে পারেন।
  • কারো সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন ( প্রত্যক্ষভাবে, পরোক্ষভাবে বা কাগজপত্রের মাধ্যমে)।
  • মানুষের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পাওয়ার জন্য তাদের বোঝাতে পারেন।

এই কাজগুলোর করার পর কি আপনি কোন গাঠনিকরূপ দেখতে পাচ্ছেন? আপনি উপরের তালিকা লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন, সৃজনশীলতা, যোগাযোগ এবং কাউকে কোন কিছু শেখানো এবং বোঝানো বিভিন্ন কাজের অংশ।

যখন আপনি আপনার তালিকা তৈরি করবেন তখন অনেকগুলো মৌলিক দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ বের করতে পারবেন।

আপনার পছন্দের কাজের সাথে যারা জড়িত তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করুন

আপনি একবার তালিকা তৈরি করার পর যে প্রশ্নটি সামনে আসবে যে, আপনি কিভাবে সেই দক্ষতাগুলোকে চাকরিতে পরিণত করবেন?
এরপর আপনাকে কিছু বিষয়ভিত্তিক সাক্ষাতকার নিতে হবে। আপনি যে কাজটা করতে আগ্রহী, সেই কাজের সাথে যারা জড়িত বা যারা সেই কাজের সাথে সম্পৃক্ত কোনো চাকরি করছেন আপনি তাদের কাছে যান এবং তারা তাদের চাকরির জন্য কোন দক্ষতাগুলো ব্যবহার করছেন সেটা ব্যাখ্যা করতে বলুন অথবা কোন দক্ষতাগুলোকে তারা মূল্যবান ভাবছেন সেটা জানার চেষ্টা।

আপনার পছন্দের কাজের সাথে যারা জড়িত তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করুন ; Source: careeraddict.com

এই মানুষগুলো হতে পারে আপনার বন্ধু, আপনার বন্ধুর বন্ধু অথবা কোনো অনুষ্ঠানে পরিচয় হয়েছে অথবা লিঙ্কডইনের একদম অচেনা কেউ। এমনকি যদি তিনি আপনার খুব বেশি ঘনিষ্ঠ নাও হয় অথবা তারা দেখতে ভয়ঙ্করও হন, তবু তাদের ২০মিনিট বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে বিভিন্ন কিছু জানা খুব কঠিন কাজ নয়।

সবকিছু আপনার জীবনবৃত্তান্তের সাথে যুক্ত করুন

আপনি আপনার পছন্দের কাজগুলোর তালিকা তৈরির পর বাস্তবভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে সেগুলোকে দক্ষতায় পরিণত করেছেন। এখন আপনি চাচ্ছেন এটাকে কাজে লাগাতে। তাহলে আপনার সবগুলো দক্ষতাকে আপনার জীবনবৃত্তান্তের সাথে যুক্ত করুন।

সবকিছু সিভিতে যুক্ত করুন; Source: novoresume.com

প্রথমে আপনি আপনার পরিচয় দেওয়ার পর দ্বিতীয় তালিকায় আপনি আপনার অভিজ্ঞতাসহ দক্ষতাগুলো আপনার জীবনবৃত্তান্তের সাথে যুক্ত করে দিবেন। একটি উদাহরণ দিচ্ছি-
Graduate Assistant, University of Dhaka, Dhaka, Bangladesh, 2017–Present
এরপর আপনি আপনার দক্ষতার বিষয়টি যুক্ত করবেন। যেমন-
১. দৈনন্দিন জীবনে ক্যালকুলাসকে গণিতের বাইরের যে কাজগুলোতে ব্যবহার করছি সেগুলো চিহ্নিত করি।
২. প্রত্যক্ষ তথ্যের ভিত্তিতে একটি উপস্থাপনা তৈরি করতে হবে যাতে দর্শকরা গণিতের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারেন।
৩. সহকারি রচয়িতাকে সাথে নিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অনুদানের ভিত্তিতে গণিতের নতুন একটি বিষয় নিয়ে পরিচালিত গবেষণার বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে।

সাক্ষাতকারের জন্য যা অবশ্যই করবেন

আপনি যদি উপরের কাজগুলো করে থাকেন তাহলে আপনি চাকরির জন্য যেকোনো সাক্ষাতকারে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত সুন্দরভাবে দিতে পারবেন। যেমন, আপনাকে কোনো সমস্যা সমাধান বা কোনো বাধা কাটিয়ে ওঠা বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, সে বিষয়ে উত্তর দিতে পারবেন। গণিত শেখার বিষয়ে ছাত্রদের কোনো সন্দেহ থাকার পরও আপনি তাদের কিভাবে শিখতে প্ররোচিত করেন, সে বিষয়ে চাইলে বলতে পারবেন। আবার আপনাকে যদি যোগাযোগ দক্ষতা বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন কেন আপনি আপনি নির্দিষ্টি বিষয়টি বেছে নিয়েছেন সেটি ব্যাখ্যা করতে পারবেন এবং আপনি আপনার আবেদনের যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য কী গবেষণা করেছেন সেটিও বিশ্বাস করাতে পারবেন।

ইন্টারভিউতে আপনার দক্ষতাকে ব্যবহার করুন; Source: medium.com

যদি আপনি আপনার ভালো লাগার কাজগুলোকে দক্ষতায় পরিণত করতে পারেন তাহলে যেকোনো চাকরির সাক্ষাতকারে বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকার কারণে দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন এবং সাক্ষাতকারে ভালো কিছু করতে পারবেন। আপনার পিএইচডির প্রোগ্রামের অভিজ্ঞতা থেকে আপনি আপনার নিজের ভালো লাগা অনেক কাজগুলোকে মৌলিক দক্ষতায় রূপান্তরিত করতে পারবেন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাজের বাইরেও ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি আপনার কাজের সম্পর্কে সবার সমানে আত্মবিশ্বাসের সাথে বিভিন্ন কথা বলতে পারবেন কারণ আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে।

Featured Image: shutterstock.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *