যেসব কারণে আপনার পূর্ণকালীন চাকরি করা উচিত নয়

photo: your money

শিরোনাম দেখে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন? অবাক হওয়ারই কথা। কেননা চারদিকে সবাই যখন একটি পূর্ণকালীন চাকরির জন্য মরিয়া হয়ে ছুটছে, তখন আমি কেন পূর্ণকালীন চাকরি না করার পরামর্শ দিচ্ছি? নিশ্চয়ই তার কিছু যৌক্তিক কারণ আছে। আসলে পূর্ণকালীন চাকরি, বিশেষ করে কোনো প্রতিষ্ঠিত চাকরি করা আমাদের সমাজের চোখে খুবই সম্মানজনক। তাই সামাজিক কারণেই মানুষ রোজগারের কথা চিন্তা না করে একটি পূর্ণকালীন চাকরির কথা চিন্তা করেন। কিন্তু এটি কি আপনার সঠিক সিদ্ধান্ত?

photo: the wish wall

অবশ্য আমাদের চারপাশে থাকা অনেক সফল মানুষের গল্প শোনা যায়, যারা দিনে ১২ ঘন্টার উপরে কাজ করেছে অর্থাৎ সপ্তায় তারা ৮০ ঘন্টার উপরে কাজ করে সফল হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ অতিরিক্ত পরিশ্রমকেই সাফল্যের প্রধান চাবিকাঠি মনে করে। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে এই সূত্র পাল্টে গেছে। হার্ড ওয়ার্ক নয়, এখন বরং স্মার্ট ওয়ার্কের সময়।

photo: charity job

বেশিরভাগ মানুষ পূর্ণকালীন চাকরি ছেড়ে কখনো সম্পূর্ণভাবে খন্ডকালীন স্মার্ট ওয়ার্কের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে না। কিন্তু কেন? কে আপনাকে বাধা দেয়? রোজগার কমে যাওয়ার ভয়? আপনার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়ার ভয়, অথবা ব্যর্থ হওয়ার ভয়? যাই হোক, একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে স্থির হয়ে বসুন, তারপর এই নিবন্ধটি পড়ুন। আমি দুই পর্বে এমন বেশ কয়েকটি কারণ নিয়ে আলোচনা করবো, যা ভালোভাবে জানার পর আপনি নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পারবেন বর্তমান সময়ে কেন পূর্ণকালীন চাকরির চেয়ে আপনার জন্য খণ্ডকালীন চাকরি ভালো।

১. আপনার পূর্ণকালীন কাজ করার প্রয়োজন নেই

বর্তমান সময়ে কোনো মানুষেরই সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার বেশি কাজ করার প্রয়োজন নেই। আপনি যদি কম সময় কাজ করেও আপনার রোজগার ঠিক রাখতে পারেন, তাহলে নিশ্চয়ই আপনি সেই সুযোগটি নিতে চাইবেন? জীবনধারণের জন্য আপনার সপ্তাহে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করা নিশ্চয়ই প্রয়োজন না, প্রয়োজন নির্দিষ্ট পরিমাণ রোজগার।

photo: your money

কম কাজ করে এই লক্ষ্য অর্জনের সুনির্দিষ্ট তিনটি উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. ঘণ্টাপ্রতি পূর্বের চেয়ে উচ্চহারে সম্মানীর বিনিময়ে কাজ করুন।

২. নিজেই নিজের বস হোন এবং নিজের মূল্য নির্ধারণ করুন। তারপর সেই মূল্যে নিজের শ্রম প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করার চেষ্টা করুন।

৩. নিয়মিত রোজগারের পাশাপাশি বিশেষ রোজগারের ব্যবস্থা করুন। যেমন সাধারণত যে মাসে আমাদের আয় বেশি হয় সে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে আমরা একটু বেশি খরচ করি। এখন থেকে তা না করে এই বেশি রোজগারের টাকা কোনো একটি খাতে বিনিয়োগ করার চেষ্টা করুন। হোক সেটা ছোট, কিছু তবুও এমন খাতে বিনিয়োগ করুন যেখান থেকে কিছু বাড়তি রোজগার আসবে।

২. খরচ কমান

পূর্ণকালীন চাকরিতে আপনি যথেষ্ট রোজগার করেন সত্য, কিন্তু রোজগার করা এই অর্থে জীবন উপভোগ করার সময় পান না!

আমি আগেই বলেছি জীবনধারণের জন্য আপনার নির্দিষ্ট পরিমাণ রোজগার দরকার, কাজ নয়। এখন আপনি সিদ্ধান্ত নিন পূর্ণকালীন চাকরি করে নিজের জন্য এক মুহুর্তও সময় রাখবেন না, নাকি খন্ডকালীন চাকরি করে নিজের জন্য কিছু সময় রাখবেন। এটা সত্য যে, পূর্ণকালীন চাকরি ছাড়লে আপনার রোজগার কিছুটা কমার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু তাতে নিজেকে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় আপনি পাবেন।

photo: censis

এখন আপনি সিদ্ধান্ত নিন, পূর্ণকালীন চাকরি করবেন নাকি কিছু বাড়তি খরচ কমিয়ে জীবনটাকে আরো স্বাচ্ছন্দ্যময় করবেন। হিসাব করে দেখুন পূর্ণকালীন চাকরি করার কারণে আপনার এমনকিছু বাড়তি খরচ আছে যা আদতে আপনার জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজন না। এমনকি এসব খরচের সাথে পর্যাপ্ত সময়ও নষ্ট হয়। সুতরাং জীবনকে স্বাচ্ছন্দময় করতে কিছু বাড়তি উদযাপন ও খরচ কমিয়ে ফেলুন। দৈনিক পরিবহন, খাদ্য এবং কিছু অপ্রয়োজনীয় বিশেষ উদযাপনের মাত্রা কমিয়ে আনুন, জীবনটা অনেক বেশি সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে।

৩. আপনি আরো স্বাস্থ্যবান হবেন

পূর্ণকালীন চাকরি করার কারণে আপনি পরিবারকেই সময় দেওয়ার সুযোগ পান না। তার উপর আলাদা করে স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া আপনার জন্য প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া আছে প্রচন্ড কাজের চাপ, এবং সেই কাজের কারণে মানসিক চাপ।

photo: enlighten

জীবনধারণের জন্য কেন এত চাপ সহ্য করার প্রয়োজন? জীবন কী সত্যিই এত কঠিন? আপনার শরীর এবং মনকে যদি এই চাপ থেকে মুক্ত করতে পারেন, দেখবেন জীবনটা কত সহজ হয়ে গেছে। এমনকি অপেক্ষাকৃত উচ্চ বেতনে খন্ডকালীন চাকরি করলে আপনি সময় মতো খাওয়া, ব্যায়াম করা, পরিবারের সাথে সময় কাটানো এবং অবসর যাপনের যথেষ্ট সময় পাবেন, যা আপনার কর্মশক্তি, হজম শক্তি এবং চিন্তা করার ক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়ে দিবে।

স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য আপনি দৈনিক ব্যায়াম করার সুযোগ পাবেন, যা আপনার শরীর ও মনকে আরো সতেজ এবং সুখী করে তুলবে।

৪. খাদ্যাভ্যাসেও আসবে পরিবর্তন

পকেটে টাকা থাকলে দ্রুত একটা প্রস্তুত স্যান্ডউইচ অথবা পিজ্জা হাতে পাওয়া খুব সহজ। কাজের সময় আমরা  সচরাচর এসব খাবার খেয়ে থাকি। ফাস্টফুড শপ বা রেস্টুরেন্ট থেকে প্রস্তুত খাবার কিনে নিয়মিত দুপুরের আহার সারি। তারপর বিকেলেও এসব বাইরের খাবার খায়। সন্দেহ নেই এসব খাবার খুবই সুস্বাদু এবং মুখরোচক। কিন্তু ধীরে ধীরে এসব ফাস্টফুড আমাদের শরীরে মাদকের মতো ক্ষতি করে। একটু বয়স বাড়লেই তার প্রভাব শরীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আমরা কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলি, নানান রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হই, খুব দ্রুতই বুড়িয়ে যায় ইত্যাদি।

photo: huffington post

পক্ষান্তরে একজন খণ্ডকালীন চাকুরে পছন্দমতো খাবার কেনা এবং তা প্রক্রিয়াজাত করার জন্য যথেষ্ট সময় পান। তিনি চাইলেই তাজা সবজি নিজ হাতে প্রস্তুত করে খেতে পারেন। খন্ডকালীন চাকরিতে আপনি কাজের ফাঁকে পরিবারের সাথে বসে খাওয়ার সুযোগ পাবেন, যা আপনার সতেজ এবং স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করবে।

এই নিবন্ধ এখানেই শেষ নয়। খণ্ডকালীন চাকরির এমন আরো অনেক সুবিধাজনক দিক আছে। দ্বিতীয় নিবন্ধে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *