সংগীতশিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে যে ৬টি গুণ আপনার থাকতেই হবে

photo: the odyssey online

সংগীতশিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা অন্য যেকোনো সাধারণ চাকরি করার মতো সবার কাজ নয়। কেননা এক্ষেত্রে অন্যান্য চাকরির মতো মাস শেষে নিশ্চিত সম্মানী পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। তার উপর আছে প্রবল প্রতিযোগিতা, আর সম্পূর্ণ নতুনভাবে নিজের অবস্থান তৈরি করার চাপ।

photo: the odyssey online

সংগীতশিল্পী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে প্রয়োজন নিষ্ঠা, সৃজনশীলতা এবং প্রবল ইচ্ছা। নিজেকে গড়ে তোলার এই মানসিক প্রস্তুতি সবার মধ্যে থাকে না, আর তাই যেকেউ চাইলেই সংগীত জগতে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারেন না। তবে প্রবল প্রতিযোগিতা আর অনিশ্চয়তা শর্তেও আপনি যদি নিজের সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেন তবে এমন সাফল্য অর্জন করা সম্ভব যা অনেকের ক্ষেত্রে অকল্পনীয়!

এই নিবন্ধে আমি এমনই কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব; একজন সংগীতশিল্পী হিসেবে অথবা সংগীত জগতে ক্যারিয়ার গড়তে হলে আপনার মধ্যে প্রাথমিকভাবে কী কী গুণ, ইচ্ছাশক্তি, মানসিক শক্তি ও প্রস্তুতি থাকা দরকার তা বিশদভাবে এই নিবন্ধের আলোচনা করব।

১. সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

সংগীত জগতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা সত্যিই কঠিন। তবে বেশিরভাগ মানুষ ব্যর্থ হওয়ার ভয়ে সহজ এবং নিরাপদ লক্ষ নির্ধারণ করে; এটা ভীত মানুষদের পশ্চাৎপদ একটি সিদ্ধান্ত।

সঙ্গীতজ্ঞ টম হেস এ বিষয়ে বলেন: “সংগীতশিল্পী হিসেবে আপনার লক্ষ্য শুধুমাত্র গান রেকর্ডিং এবং তা মঞ্চে প্রদর্শন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত না। এই একটি পয়েন্টে বেশিরভাগ তরুণ ভুল করে থাকে! আপনি একজন সংগীতশিল্পী হিসেবে যা অর্জন করতে চান বা নিজেকে যেখানে নিয়ে যেতে চান তার চেয়ে কোনো অংশে কম আশা করা বা প্রচেষ্টা চালানো কোনোভাবেই উচিত না।”

photo: sqoop

তিনি আরও বলেন, “ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লক্ষ নির্ধারণ করে সব ক্ষেত্রে অসাধারণ হয়ে জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানো অনেকটাই অসম্ভব। কেননা জীবন খুবই ছোট! সুতরাং নিজের অনুপ্রেরণা নেই এমন ক্ষেত্রে লক্ষ্য নির্ধারণ বা উচ্চাকাঙ্ক্ষার কমতি একটি ব্যাপারকেই ইঙ্গিত করে তা হল: আপনি সঙ্গীত জগতে যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান তা কখনই অর্জন করতে পারবেন না।”

সুতারাং উচ্চাকাঙ্ক্ষী হন এবং এক্ষেত্রে সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।

২. একজন অভিজ্ঞ মেন্টর খুজে বের করুন

যদিও কৌশলগতভাবে সংগীত জগতে নিজেকে পরিচালনা করা এবং সফল হওয়া নিজে নিজেই সম্ভব, তবুও একজন দক্ষ মেন্টর আবশ্যক। একজন অভিজ্ঞ মেন্টর আপনার প্রচেষ্টাকে আরো সহজ, সাবলীল করে দিতে পারবেন, যা আপনার সাফল্যের সম্ভাবনা অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলবে।

photo: roots academy

এক্ষেত্রে আপনার কখন কী প্রয়োজন এবং কখন কী থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন সেটা একজন দক্ষ মেন্টর খুব ভালোভাবেই জানেন। যে কারণে তিনি সার্বক্ষণিকভাবে আপনাকে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারবেন।

সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব সংগীতজগতের একজন দক্ষ মেন্টর খুজে বের করুন, এবং নিজের সকল প্রচেষ্টা ও সম্ভাবনাকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিন।

৩. একা পথ চলবেন না

সবাই একা একা সঙ্গীত সাধনার চেষ্টা করে। এটা দোষের না, কিন্তু একা একা গাইতে গাইতে একটা সময় আসবে যখন আপনার বিশ্রামের প্রয়োজন হবে। এই একলা প্রচেষ্টা হয়তো আর ভাল লাগবে না।

photo: archive

সুতরাং এক্ষেত্রে কোনো মঞ্চে কখনো নিজেকে উপস্থাপন করার সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত না। কেননা আপনি জানেন না মঞ্চের সামনে ভিড়ের মধ্যে সাধারণ দর্শক সারিতে কারা আছেন! হতে পারে সেখানে এমন কেউ আছে যিনি ইতিমধ্যে কোনো একটি সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত এবং হয়তো তিনি বিভিন্ন মঞ্চ থেকে তরুণ কাউকে খুঁজছেন নতুন একটি ব্র্যান্ডের সূচনা করার জন্য। আদম্য ইচ্ছা আর প্রচেষ্টা থাকলে আপনিও পেয়ে যেতে পারেন এমন সুবর্ণ সুযোগ!

সুতরাং আপনি যত বেশি বেশি নিজেকে প্রকাশ করবেন, আপনার জীবন পরিবর্তন করে দেওয়া মানুষকে বা প্রতিষ্ঠানকে খুঁজে পাওয়া আপনার পক্ষে তত সহজ হবে।

৪.অনলাইন এবং অফলাইনে নিজের সরব উপস্থিতি নিশ্চিত করুন

সংগীত জগতে নিজেকে একটি আলাদা ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা কয়েক বছর আগে খুব কঠিন ছিল। কিন্তু নতুন নতুন প্রযুক্তি সংগীত জগতের বিবর্তনে অকল্পনীয় প্রভাব বিস্তার করেছে। বর্তমান সময়ে নিজের সৃজনশীল প্রতিভার প্রকাশ ঘটানোর জন্য হাতের কাছেই অসাধারণ সব প্রযুক্তি রয়েছে, যেখানে খুব সহজেই নিজের সৃজন প্রতিভা মেলে ধরা যায়। যোগ্যতা থাকলে খুব অল্প সময়েই নিজের একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করা যায়।

photo: telugu.local masala

সুতরাং সংগীতশিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে হলে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং হাতের কাছে থাকা সবরকম উপায় ব্যবহার করা শুরু করুন। অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই নিজেকে মেলে ধরুন, কখনো একা, কখনো অন্য শিল্পীদের সাথে। সাথে সাথে স্থানীয় বিভিন্ন মঞ্চ এবং নিজেকে তুলে ধরার যেকোনো মাধ্যম সবকিছুকেই কাজে লাগান।

৫. নিষ্ঠার সাথে কাজ করুন

প্রতিভা, চেহারা এবং সুযোগ-সুবিধা অবশ্যই সাফল্যে কাজে আসে। কিন্তু কখনো কখনো এর কোনো কিছু না থাকলেও সাফল্য আসে শুধুমাত্র কঠিন প্রচেষ্টার বদৌলতে! অন্যভাবে বলা যায়, নিজেকে সফল করতে কঠিন পরিশ্রম করা এমন কোনো শিল্পীকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যে, সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

photo: avid blogs

মানসিক এবং শারীরিকভাবে আরামদায়ক জীবন ত্যাগ করে নিজেকে একজন শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলতে কঠিন পরিশ্রমে নেমে পড়ুন। আপনি যদি নিজের কাজের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল থাকেন আর ক্রমাগত চেষ্টা করে যান তাহলে অবশ্যই আপনি নিজের জায়গা তৈরি করতে সমর্থ হবেন।

৬. ধৈর্য সবচেয়ে বড় সম্বল

সংগীত জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা আর একটু একটু করে এগিয়ে নেওয়া অনেকটা ইঁদুর দৌড়ের মতো। আপনি যতটা সমসাময়িক থাকবেন আর ধৈর্য ধরে ক্রমাগত নিজেকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন ইন্ডাস্ট্রি আপনাকে ততো সামনে তুলে ধরবে।

photo: seafoodnet

সুতরাং এক্ষেত্রে সফল হতে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল ধৈর্য! আপনি কখনই জানেন না আপনার জীবনের মোড় হঠাৎ করে কখন পরিবর্তিত হয়ে যাবে, কখন একটা বিরাট সুযোগ আপনাকে অনেক উঁচুতে তুলে নিয়ে যাবে। তাই অন্ধকারে থাকা নয়, সবসময়ই নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে তবেই সাফল্য আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *