নারী ও পুরুষ সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সমাজ ও জাতির অগ্রগতির জন্য উভয়েরই ভূমিকা সমান। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে, কোনো একটি জাতির সার্বিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা সম্ভব। গত কয়েক দশকে ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে উল্লেযোগ্য উন্নতি হলেও পুরুষদের উন্নয়নের তুলনায় তা খুবই নগণ্য। আবার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো দারিদ্রসীমার নিচে প্রায় ৬০ কোটি নারী বাস করছে।

Source: brit.co

নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ পুরুষদের তুলনায় খুবই সীমিত। তারা কাজ করার সুযোগ পেলেও, তাদের শ্রমের জন্য খুবই সামান্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের অবস্থা আরো নাজুক। এ দেশে নারী শ্রমশক্তির পরিমাণ প্রায় ২৫ মিলিয়ন হলেও, এদের মধ্যে মাত্র প্রায় ১০ হাজার জন প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা পেশার সঙ্গে সংযুক্ত। আমাদের দেশে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোর কারণে নারীরা শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে আছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলতে হলে, সমান অধিকার লাভের বিষয়টি নিশ্চিতকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

Source: achrnews.com

এজন্য নারীর দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয় খেয়াল রাখার পাশাপাশি সঠিক কৌশল অবলম্বন প্রয়োজন। আপনি যদি একজন নারী হিসেবে, পুরুষদের আধিপত্যের কর্মক্ষেত্রে সফল হতে চান, তাহলে আপনাকে বেশ কৌশলী এবং দৃঢ় হতে হবে। এজন্য আপনি নিচের পরামর্শগুলো গ্রহণ করতে পারেন।

১. শুরু করুন

যেকোনো কাজে সফল হওয়ার জন্য তিনটি কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাজটি শুরু করা, যে কাজটি শুরু করেছেন সেটি ধারাবাহিকভাবে করা এবং কাজটি শেষ করা। আপনি যদি কোনো কাজ শুরুই না করেন, তাহলে সে কাজে সফল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তাই কাজটি যত কঠিনই হোক না কেনো, তা শুরু করুন। এজন্য চাই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ানোর জন্য ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করুন।

Source: oshacampus.com

ব্যর্থ হওয়ার ভয় পাবেন না। মনে রাখুন, পৃথিবীতে প্রতিটি সফল গল্পের পেছনে অনেকগুলো ব্যর্থতার গল্প আছে। প্রতিবার ভুলের পরে নিজের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করুন এবং সেটি নিয়ে কাজ করুন।

২. আত্মবিশ্বাসী হোন

আপনি যতই দক্ষতা সম্পন্ন হোন না কেনো, আপনার মধ্যে যদি আত্মবিশ্বাস না থাকে, তাহলে কখনোই সফল হতে পারবেন না। অফিসের মিটিংয়ে আপনি যদি একমাত্র নারী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার অস্বস্তি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে এই অস্বস্তি আপনার কর্মক্ষেত্রে যেন কোনো প্রভাব না ফেলতে পারে, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। একমাত্র আত্মবিশ্বাসই পারে আপনাকে এ রকম পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সাহায্য করতে। তাই নিজের যোগ্যতা এবং দক্ষতার উপর আস্থা রাখুন।

Source: britishgas.co.uk

নিজের সিদ্ধান্তের উপর বিশ্বাস রাখুন। কোনো সমস্যার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছার আগে, আপনাকে সমস্যার উৎস সম্পর্কে জানতে হবে। গতানুগতিক উপায়ে সমস্যা সমাধান করা না গেলে, বিকল্প উপায় খুঁজে সেটির প্রয়োগের ঝুঁকি নিতে হবে। নারী হিসেবে কাজটি তুলনামূলক কঠিন হলেও, পরিকল্পনার সফল প্রয়োগ করার মাধ্যমে আপনি সহজেই সফল হতে পারে।

৩. অন্যদের উৎসাহিত করুন

অন্যদের উৎসাহিত করতে পারা, নেতৃত্ব প্রদানের জন্য অসাধারণ একটি গুণ। অন্যকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে নিজের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় এবং নিজের মধ্যে অনেক কর্মতৎপরতাও অনুভূত হয়। তাই কাজের অবসরে অন্য নারী সহকর্মীদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিন। তাদের কাজে সহায়তা করুন। নিজেকে একজন আস্থার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করুন। এতে অন্যদের যেমন উপকার হবে, তেমনি আপনিও নিজের মধ্যে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন। মনে রাখুন, অন্যকে উৎসাহিত করার জন্য কয়েকটি বিষয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন: তাদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান, অন্যের প্রতি আস্থার কথা প্রকাশ এবং তাদের প্রতি আগ্রহ দেখানো ইত্যাদি।

Source: housingnews.org

কথা বলা বেশ সহজ কিন্তু কথা শোনা যথেষ্ট কঠিন কাজ। অন্যের সঙ্গে কথা বলে আপনি তাদের যতটুকু খুশি করতে পারবেন, তার চেয়ে বেশি সন্তষ্ট করতে পারবেন তাদের কথা শুনে। এভাবে খুব সহজেই অন্যদের সঙ্গে পারস্পরিক আদান-প্রদান বাড়ানো যেতে পারে।

৪. সৃষ্টিশীলতা

নিজের জ্ঞান ও সৃষ্টিশীল দক্ষতার মাধ্যমে নতুন নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারার বিশেষ যোগ্যতা, আপনাকে কর্মক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় বেশ এগিয়ে রাখবে। একজন নারী বেশিরভাগ সময়ই আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে না। তাই সৃজনশীলতার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি সবার নজর কাড়তে পারবেন।

Source: sprinklerage.com

সৃজনশীলতা হলো গভীর চিন্তার ফসল। নিজস্ব কিছু ধ্যান-ধারণা এবং চিন্তাভাবনাকে বাস্তবিক এবং প্রয়োগিক রূপ প্রদানের মাধ্যমে সৃজনশীলতাকে বেশ ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়।

৫. সময়ানুবর্তিতা

সময়ের সদ্ব্যবহার, আত্মবিশ্লেষণ এবং প্রায়োগিক ব্যবহারের মাধ্যমে, নিজেকে খুব অল্প সময়েই যোগ্য কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। তাই অফিসে অবশ্যই সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে হবে। অফিসে ঠিক সময় পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনে, হাতে বাড়তি সময় নিয়ে বের হতে হবে।

Source: achrnews.com

অফিসে দেরি করে এসে কোনো অজুহাত দেওয়া যাবে না। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে হবে। এজন্য আপনি একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করতে পারেন। সময়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে কর্তৃৃৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ সহজ হয়। আর এতে আপনার প্রতি তাদের ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়।

৬. আত্মবিশ্লেষণ

আপনি কোন কাজটি কীভাবে করছেন, কেনো করছেন এ সম্পর্কে স্বচ্ছ ও পরিষ্কার ধারণা রাখুন এবং নিজের কাজের আত্মবিশ্লেষণ করুন। সামনে কোন কাজটি কীভাবে করলে আশানুরুপ সফলতা পাবেন, এই সম্পর্কে চিন্তা করুন। মাথা ঠান্ডা রেখে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করুন। নিজের ভুলগুলো সংশোধনের মাধ্যমে নিজেকে সহজেই অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন।

৭.যোগ্য সহকর্মী নির্বাচন

অনেক সময়ই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সহকর্মীরা মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই সহকর্মী নির্বাচনের ব্যাপারে কৌশলী হোন। আর সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন। এতে খুব সহজেই আপনি সবার মন জয় করে নিতে পারবেন। আর যেকোনো সমস্যায় আপনি সহকর্মীদের সহায়তা পেতে পারবেন।

Source: monster.ca

অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য, নারীর ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার মাধ্যমে নারী পুরুষের বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নও ত্বরান্বিত হবে। তাই পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিরূপ পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করার মাধ্যমে, একজন নারী হিসেবে আপনিও হতে পারেন সফল। ধৈর্য্য, যোগ্যতা এবং দক্ষতার সম্মিলিত বন্ধনে, আপনিও হতে পারেন আগামী প্রজন্মের একজন কান্ডারী।

Featured Image:Growthbusiness.co.uk