প্রাক্তন ধূমপায়ীদের গল্প: যেভাবে আপনিও চাইলে ধূমপান ত্যাগ করতে পারেন

ছবি সূত্রঃ rd.com

এ কথা সবাই জানি যে, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি যারা ধূমপান করেন তারাও জানেন, ধূমপান তাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর। এমনকি প্রতিটি সিগারেটের প্যাকেটেও লেখা থাকে “ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর”। কিন্তু এই কথাটি জানা সত্ত্বেও অনেকেই এই ক্ষতিকর কাজটি করেন। ধূমপান অনেকটা নেশার মতো। যারা এক নাগাড়ে ধূমপানে করতে থাকেন তাদের জন্য এই কাজটি থেকে বিরত থাকা আসলেই অনেকটা কষ্টসাধ্য। আবার এই ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভয়ানক তা অকল্পনীয়। দীর্ঘদিন ধরে ধূমপানের ফলে হতে পারে ক্যান্সার। আর ক্যান্সারের পরিণতি মৃত্যু।

অনেকেই ধূমপান করা ছেড়ে দিতে চান। কিন্তু কথায় আছে – মানুষ অভ্যাসের দাস। তাই অভ্যাস পরিবর্তন করা অনেকটা কষ্টসাধ্যই বটে। যারা আগে ধূমপান করতেন কিন্তু এখন ছেড়ে দিয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতাই আজ তুলে ধরা হবে।

“আমি সবসময়ই অসুস্থ থাকতাম।”

অনেকটা সময় ধরে অসুস্থতায় ভুগি এজমার কারণে; ছবিসূত্রঃ rd.com

আপনি যখন এক নাগাড়ে অসুস্থ থাকবেন তখন স্বাভাবিক ভাবেই আপনার তা ভালো লাগবে না এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজবেন। দেখবেন নিজের মাঝেই তখন ধূমপান ছেড়ে দেয়ার তাগিদ অনুভব করবেন। দারা এভেনিস যিনি কিনা একজন নিয়মিত ধূমপায়ী ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি একটানা অসুস্থ থাকতে থাকতে অনেক বিরক্ত হয়ে পড়েছিলাম। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজছিলাম। এরপরই আমি ধূমপান ছেড়ে দিই। পরবর্তীতে জানতে পারি, আমার এজমার সমস্যা ছিলো এবং এজন্যই আমি এত অসুস্থ থাকতাম।”

“আমি গর্ভবতী হয়ে পড়ি।”

আমি গর্ভবতী হয়ে পড়ি; ছবিসূত্রঃ rd.com

যারা আগে ধূমপান করতেন কিন্তু পরবর্তীতে ছেড়ে দেন তাদের মাঝে অনেকেই একটি কারণে তা করেন। তা হলো- তারা আরেকটি নতুন প্রাণকে এই পৃথিবীতে আনতে যাচ্ছিলেন এবং নতুন প্রাণের জন্য ধূমপান অত্যন্ত ক্ষতিকর। রাজোনি ম্যাককিলান, ৪১ বছর বয়সী এক নারী বলেন, “আমার সন্তান যখন গর্ভে ৮ সপ্তাহ যাবত ছিল ততদিন পর্যন্ত আমি দিনে দুইটি করে সিগারেট খেতাম, কিন্তু যখনই আমি আমার ছেলের সনোগ্রাফি রিপোর্ট দেখি তারপর থেকেই আমি ধূমপান করা ছেড়ে দিই এবং এরপর আর কখনও সেই পথে পা বাড়াই নি। এই বছরেই আমার ছেলের বয়স ৬ বছর হবে।”

“আমি আমার গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি।”

আমি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করছিলাম, ছবিসূত্রঃ rd.com

আপনি যদি নিজে ধূমপান করা ছাড়তে পারেন তাতে আপনার জীবন অনেক সুন্দর হবে। আপনার চিন্তা ধারাও বদলে যাবে, এমনকি আপনাকে নিয়ে আশেপাশের মানুষেরও ধারণাও পাল্টে যাবে। ৪৭ বছর বয়সী এক নারী সুজান কর্নিক বলেন,”আমি তখন আমার গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছিলাম। আমি কখনো চাইনি একজন ধূমপায়ী হিসেবে পুরো দুনিয়াটা দেখতে। তাই আমি পণ করি ধূমপান করা ছেড়ে দিবো আর এই কাজটি আমি ১৯৯৯ সালের ইংরেজি নববর্ষের দিনই করি।”

“নিজেকে সম্মোহনের চেষ্টা করি।”

নিজেকে সম্মোহনের চেষ্টা করি; ছবি সূত্রঃ rd.com

ধূমপান সবাই একবারে ছাড়তে পারেন না। এমন অনেকে আছেন যাদের দিনে দুইবেলা ভাত না খেলেও চলবে কিন্তু তাদের দিনে নিয়মিত ধূমপান করতে হবে। তাই অনেকেই চাওয়া সত্ত্বেও ধূমপান ছাড়তে পারেন না। যারা ঠান্ডা মাথায় বা সহজ পদ্ধতিতে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে পারেন না তখন তারা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেন। তার মাঝে নিজেকে সম্মোহিত করার মতো ঘটনাও রয়েছে। ভাল এলেন নামক এক প্রাক্তন ধূমপায়ী বলেন,”আমি অনেক চেষ্টা করি ধূমপান ছেড়ে দেয়ার কিন্তু কোনোবারই সফল হইনি। কিন্তু আমি সফল হই তখনই, যখন নিজেকে সম্মোহিত করা শিখি। কিন্তু প্রথম নিজেকে বিরত রাখতে পারি, তারপর আবার আগের মতো হয়ে যাই। অতঃপর প্রায় এক বছর পর আমার ব্রঙ্কাইটিস ধরা পড়ে। আর প্রাণ হারানোর ভয় তখন আমাকে সবচেয়ে বেশি সম্মোহিত করে তোলে। এরপর থেকে আর কখনও ধূমপান করিনি।”

“আমি দাঁত ব্রাশ করতাম।”

আমি ব্রাশ করতাম; ছবিসূত্রঃ rd.com

অনেকেই ধূমপান ছাড়ার জন্য চুইংগাম চিবান। অনেক সময় কোনো খারাপ অভ্যাস থেকে নিজেকে বিরত রাখতে গেলে অনেক ভালো অভ্যাসও গড়ে উঠতে পারে। অড্রে ফিক্স নামক এক ব্যক্তি বলেন, “আমি অনেক চেষ্টা করি, তারপর নিজেই একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করি যা আমার জন্য একদম শতভাগ কাজে দিয়েছে। আমার যখনই ধূমপানের ইচ্ছা হতো তখনই আমি দাঁত ব্রাশ করতাম। আর এটি একদম জাদুর মতো কাজ করেছে। আর এভাবেই নিজের অভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে।”

“প্রবল তুষার ঝড় হয়েছিল।”

প্রচন্ড তুষারপাত হচ্ছিল; ছবি সূত্রঃ rd.com

কখনও ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করেছেন? নিজের ক্ষমতা কতটুকু তা পরীক্ষা করবেন ভেবে আগান, দেখুন আপনি আপনার লক্ষ্যে অনেকটা এগিয়ে যাবেন। “নিউ ইয়র্ক শহরে হঠাৎ প্রবল তুষারঝড় শুরু হয়ে যায়। আমি কোনোভাবেই বাসা থেকে ১০ কদম সামনে হেঁটে যেতে পারতাম না। তারপর ভাবতে শুরু করলাম যে, আমি কতদিন সিগারেট ছাড়া থাকতে পারি আর তখনই জাদুটি কাজ করলো। আমি দেখলাম সিগারেট ছাড়া আমি কত টাকা সঞ্চয় করতে পারছি! এর পরপরই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে, আমি আর ধূমপান করবো না। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আর সিগারেটের কাছে যাইনি।”, এই কথাগুলো বলছিলেন, রেইনি হিচ নামক এক প্রাক্তন ধূমপায়ী।

“আমি আমার কর্মক্ষেত্রে ধূমপান করতে পারতাম না।”

কর্মক্ষেত্রে ধূমপান নিষেধ ছিল; ছবি সূত্রঃ rd.com

আপনি যদি একজন নিয়মিত ধূমপায়ী হয়ে থাকেন আর হঠাৎ যদি আপনার এমন কোনো জায়গায় কাজ হয় যেখানে ধূমপান করতে পারবেন না, তবে আপনি ধূমপান করা ছেড়ে দিতে অনেকটা বাধ্য হবেন। এমনটি হয়েছিল ৬২ বছর বয়সী এন্ড্রু উইলসের জীবনে। তিনি বলেন,”আমি দশ বছর ধরে ধূমপান করতাম কিন্তু হঠাৎ আমার এমন জায়গায় চাকুরি হল যেখানে কিনা তাদের কর্মক্ষেত্রে বসে ধূমপান করা যাবে না। এবং সেখানেই আমি ধূমপান করা ছেড়ে দিই।”

“আমি ছুটি কাটাতে চলে যাই।”

ছুটি কাটানো; ছবি সূত্রঃ rd.com

আপনি জানেন যে, আপনি ধূমপানে আসক্ত এবং আপনি মনে প্রাণে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে অবশ্যই কোনো না কোনো উপায় খুঁজে বের করবেন। ৩৫ বছর বয়সী লাতিফা হিনস বলেন, “ঘটনাটি ঘটে যখন আমি আমার ৩০তম জন্মদিনের সময় আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলাম। আমার বয়ফ্রেন্ড ধূমপান করা একদমই পছন্দ করতো না। তাই তার সামনে সেখানে বসে ধূমপান করাটা আমার জন্য অনেকটা অসম্ভব ছিলো। তারপর সেই তিনদিন ধূমপান থেকে বিরত থাকি। এরপর ছুটি শেষে যখন বাসায় ফিরি তখন নিজেই ভাবি যে, আমি যদি তিনদিন ধূমপান ছাড়া থাকতে পারি তবে কেন বাকি জীবন পারবো না? আমি টানা ১২ বছর ধূমপান করেছিলাম। এটা ছেড়ে দেওয়া অনেক কষ্টকর ব্যাপার ছিলো কিন্তু ইচ্ছা ছিলো ধূমপান ত্যাগের এবং আমি সফল হয়েছি।”

তাহলে আজ থেকেই শুরু হোক আপনার ধূমপান ত্যাগের ব্রত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *