একজন উদ্যোক্তা সব সময় চান সফল হতে। তিনি তার নিজের কাজ সময়মত করার চেষ্টা করেন সব সময়। কিন্তু শুধুমাত্র পরিশ্রম করলেই কি সফল হওয়া যায়? উদ্যোক্তার থাকা চাই কিছু অভ্যাস যা তাকে নিয়ে যাবে সফলতার দ্বারপ্রান্তে। চলুন জেনে নিই একজন উদ্যোক্তার কী কী অভ্যাস থাকা উচিত।

ভবিষ্যৎ দেখতে পারার ক্ষমতা

আচ্ছা বলুন তো একজন সফল উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় ক্ষমতা কী? তার পরিশ্রম নাকি ইচ্ছাশক্তি? এই দুইটা তো অবশ্যই জরুরি কিন্তু তার চাইতেও জরুরি বিষয় হচ্ছে ভবিষ্যৎ সামনে দেখতে পাওয়ার ক্ষমতা। আপনি গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে কিছু কাজ করছেন এটাই কিন্তু একজন উদ্যোক্তার কাজ। কিন্তু সেই কাজে আপনি আসলে কতটা সফল হবেন, কীভাবে কাজ করলে আরও দ্রুত এগিয়ে যাবেন এই সম্ভাবনাগুলোর ছক আপনাকে আরও আগে থেকেই করে নিতে হবে।

উদ্যোক্তা হতে হলে সব সময় ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে; image source: David Utts

উদ্যোক্তাদের সব সময়ই নতুন নতুন ভাবনার, নতুন কিছু তৈরির আর সেটির প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব বুঝতে হবে। উদ্ভাবনী ক্ষমতা কিন্তু আসলে আমাদের সবার মাঝেই আছে কিন্তু সেটিকে একটি শৃঙ্খলার মাঝে রেখে এগিয়ে নেওয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। ব্যক্তি যখন স্বপ্ন দেখবেন, সে অনুযায়ী কাজ করবেন, কাজকে বাস্তবে রূপ দান করবেন তখনই কিন্তু তাকে সফল বলা যায়। বড় স্বপ্ন দেখতে আমরা অনেকেই এখনও ভয় পাই। কিন্তু এই ভয়কে কাটিয়েই যখন নতুন কিছু করার সম্ভাবনা তৈরি হয় তখনই সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়।

সকালের শুরুতেই নিজেকে গুছিয়ে নিন

যারা উদ্যোক্তা হন, নিজেরাই অফিস পরিচালনা করেন তাদের জীবনযাপন যদি কখনও খেয়াল করেন দেখবেন তারা প্রায় সকলেই ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন। সকালে হালকা ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি নিয়মিত করার চেষ্টা করেন তারা। এর কারণ হচ্ছে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়, ব্রেন ফ্রেশ থাকে আর কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পায়।

সময়মত ঘুম থেকে উঠে নিজের কাজগুলো গুছিয়ে নিন; image source: WordPress.com

এছাড়াও সকালে ওঠার আরও সুফল আছে। আপনি সবার আগে অফিস চলে যেতে পারবেন। অফিসের অন্য সদস্যরা চলে আসার আগে নিজেকে কিছুটা গুছিয়েও নিতে পারবেন। সারাদিন কী কী কাজ করতে হবে, কোনো মিটিং আছে কিনা, কাজের সূত্রে কোন কোন জায়গায় যেতে হবে সবকিছুরই একটা গোছানো পরিকল্পনা করে ফেলতে পারবেন আপনি, যেন পুরো দিন বেশ ভালোভাবেই কাজ করে ফেলা যায়।

কাজের তালিকা মেনে চলা

নিজেকেই যেখানে কাজ করে নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে হয় সেখানে কি সত্যিই খুব বেশি কাজ ছাড়া ঘোরাফেরা বা আড্ডা দেওয়ার সময় হয়ে ওঠে? সফল উদ্যোক্তা হতে হলে এইসব বিষয় থেকে নিজেকে কিছুটা দূরেই রাখতে হবে। কিন্তু তাই বলে সামাজিক যোগাযোগ থেকে একবারে বিচ্ছিন্ন হওয়া চলবে না কিন্তু! আপনার আশেপাশে যারাই আছেন সবার সাথেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হবে। কাজের পাশাপাশি কিছু সময় আড্ডা, গল্প আপনাকে মানসিক অবসাদ থেকে দূরে রাখবে। তাই আগে কাজের একটা তালিকা গুছিয়ে নিন। এরপর বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ অল্প সময় বের করে আড্ডা দিতে চলে যান কাছের কোনো বন্ধুর সাথে। সারাদিনে হয়ত কাজের চাপে আড্ডা সেভাবে নাও জমতে পারে। তাই দিনে কাজ শেষ করে সন্ধ্যাতেই কিছু সময় গল্পের আসরে কাটিয়ে ফেলুন।

নিয়মিত ঘুম

একজন উদ্যোক্তার জন্য নিয়মিত ঘুমানোও বেশ জরুরি। নিয়মিত ঘুম হলে মানসিক চিন্তা আর আবেগ একসাথে কাজ করে। ঘুম ভালো না হলে দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়, বিরক্তি চলে আসে, শেষ পর্যন্ত তা কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। আর এমনটি নিয়মিত হলেই সৃষ্টি হয় জটিল সমস্যা। যদি সঠিকভাবে ঘুম নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তবে কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন হয় না আর সফলতাও পেছনে পড়ে যায়। তাই নিয়মিত ঘুম খুব জরুরি।

নিয়মিত ঘুম সহজ করে দেয় কাজ নিয়ে ভাবনা; image source: NBC News

সরলতা

একজন সফল উদ্যোক্তার সফলতার পেছনের অন্যতম মূল বিষয় হচ্ছে তার সরলতা। যতটা সম্ভব খুব সাধারণ নিয়ম মেনে চলেন তারা। কারণ স্বাভাবিক রুটিনে কাজের প্রেসার কমে যায় অনেকখানি। তারা ঠিক ততটাই করেন যতটুকু তারা করতে পারবেন। বাড়তি চিন্তা কখনোই তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটায় না। অনেকেই ভাবেন তাদের নিজেদের কাজ, তাই তাদের কোনো ছুটির দরকার নেই। তারা যখন খুশি অফিসে আসেন, যখন খুশি চলে যান। মোটেও কিন্তু এমন নয়! তারা নিয়ম মেনে যেমন অফিস চালান তেমন ছুটিটাও কাটান নিয়ম মতোই। সাপ্তাহিক কাজে বিশ্রাম না নিলে পরেরদিনের কাজের অগ্রগতি কখনোই সম্ভব নয়।

কাজের মাঝে বজায় রাখুন সরলতা; image source: Muzli Design Inspiration

লেখার অভ্যাস

আজ সারাদিন কেমন কাটালেন আপনি? কোন কোন বিষয়গুলো ভালো কাটল আর কোনটি নয়? আজকের দিনের সকল কাজ কি সম্পন্ন হয়েছে নাকি বাকি রয়ে গেছে? এই ধরনের তথ্যগুলো কাজের শুরু থেকেই লিখে রাখার অভ্যাস করুন। লিখে রাখলে পরবর্তীতে আপনার মনে রাখা সহজ হবে। আর সেই অনুযায়ী কাজও গুছিয়ে নেওয়া যাবে।

সকল কাজ খাতায় নিয়মিত লেখার অভ্যাস থাকতে হবে; image source: inkwell press

নিজের চিন্তাভাবনার খোরাক যখন আপনি কাগজে লিখবেন, হিসাব করবেন তখন বুঝতে পারবেন কোন কোন জায়গায় আরও ভালোভাবে কাজ করা উচিত ছিল। আরও কতটা নিজেকে গুছিয়ে নেওয়া যেত। সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে এই সকল গুণাবলী অবশ্যই থাকা চাই।

নমনীয়তা

কাজের ক্ষেত্রে দেখবেন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিবর্তন এসেছে। আপনি যদি ভাবেন আপনি যা করছেন সেটাই ঠিক আর পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেবেন না তবে জানুন অনেক বড় ভুলের মাঝেই আছেন আপনি। নতুনত্ব আসবেই। সেই নতুনত্বকে মানিয়ে চলার ক্ষমতা থাকতে হবে। প্রয়োজনের খাতিরে বিভিন্ন সময় আপনাকে নমনীয় ভাব বজায় রেখেই চলতে হবে। এতে আপনার নতুন নতুন নানা বিষয় জানা হবে। আর সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসার প্রসারতাও লাভ করতে পারবেন আপনি।

যে কোনো কাজ বিষয়েই জানার আগ্রহ থাকতে হবে প্রচুর; image source: Crisis and Trauma Resource Institute

জানার আগ্রহ

একজন উদ্যোক্তার মাঝে সব সময় জানার আগ্রহ থাকতে হবে। নতুন নতুন জিনিস সম্পর্কে যদি আপনি জানতেই না চান তবে কী করে কাজ বাড়াবেন আপনি? আগ্রহ বাড়ান, কাজের পরিসর বাড়বে।

Feature image: Trade Pro markets