চাকরি প্রাপ্তির প্রথম ধাপ হলো নিয়োগকর্তার কাছে প্রার্থীর বায়োডাটা পাঠানো। জমা পড়া অসংখ্য বায়োডাটার মধ্যে থেকে নির্বাচিত হলে প্রার্থীকে পরবর্তী সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। সাক্ষাৎকার শেষে নিয়োগকর্তারা প্রার্থীকে চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু প্রথম পর্বেই যদি আপনার বায়োডাটা অনির্বাচিত হয়, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানে আপনার আর চাকরি পাওয়ার সুযোগ থাকে না। অর্থাৎ স্বপ্নের চাকরি নিশ্চিত করতে প্রথম যোগ্যতার পরিচয় দিতে হয় বায়োডাটা তৈরির সময়।

Source: insights.dice

তাই বলা যায় আপনার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বায়োডাটা। কিন্তু এই বায়োডাটার আদর্শ সাইজ কেমন? বায়োডাটার ধরন কেমন হবে, কী কী থাকা উচিত, কী কী থাকা উচিত নয় এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ভাষায় হাজার হাজার নিবন্ধ লেখা হয়েছে। কিন্তু বায়োডাটার আকার নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বায়োডাটার আকার নিয়ে নিয়োগকর্তা এবং বিশ্লেষকদের ধারনা পাল্টেছে।

বায়োডাটার আকার কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে কিছু গবেষণা এবং জরিপের ভিত্তিতে বিজ্ঞানসম্মতভাবে আজকের নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আশা করা যায়, এই নিবন্ধ পড়ে বায়োডাটার পৃষ্ঠা সংখ্যা নিয়ে আপনাদের সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর হয়ে যাবে।

প্রচলিত ধারণা

বায়োডাটার আকার নিয়ে নানা রকম ধারণা প্রচলিত আছে। সিংহভাগ মানুষ বায়োডাটার আকার নিয়ে চিন্তাভাবনা না করলেও, সাধারণত এক পৃষ্ঠার বায়োডাটাকে আদর্শ বলে ধরা হয়।

Source: The Balance Careers

কিন্তু সম্প্রতি রিজিউম গো নামের একটি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে নিয়োগকর্তারা এক পৃষ্ঠার বায়োডাটার চেয়ে দুই পৃষ্ঠার বায়োডাটাকে ২ দশমিক ৩ গুণ বেশি পছন্দ করে। এমনকি উচ্চপদে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও নিয়োগকারীদের দুই পৃষ্ঠার বায়োডাটা বেশি পছন্দ।

গবেষণালব্ধ পরিসংখ্যান বলছে, নিয়োগকারীরা দুই পৃষ্ঠার বায়োডাটা সূচনাকালীন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ১ দশমিক ৪ গুন, মধ্যম পর্যায়ের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৬ গুন এবং পরিচালক বা ব্যবস্থাপক পর্যায়ের নিয়োগের ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৯ গুন বেশি পছন্দ করে।

Source: Stratford University

রিজিউম গো’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা পিটার ইয়াং বলেন, বেশিরভাগ পেশা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি খোঁজার এবং দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকলে কখনোই দুই পৃষ্ঠার বায়োডাটা ব্যবহার করা উচিত নয়প্পপ্পপ্পপ্প০০প। কিন্তু আমাদের গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রচলিত এই ধারণা এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের সম্পূর্ণ বিপরীত।

এক পৃষ্ঠা এবং দুই পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপ বা বায়োডাটা আসলে একই ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা, একাডেমিক যোগ্যতা এবং তথ্য উপস্থাপনের জন্য ডিজাইন করা হয়ে থাকে। রিজিউম গো’র তথ্য সংগ্রহকারীরা দুই পৃষ্ঠার বায়োডাটায় জানানো যেতে পারে এমন তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য দ্বারা স্পষ্ট ভাবে প্রভাবিত হয়েছেন।

চাকরির ক্ষেত্রে ভালো করে

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা দীর্ঘ কাজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আবেদনকারীদের ০ থেকে ১০ এর মধ্যে নম্বর দেন। আবারও এক পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপের তুলনায় দুই পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপ কাজের সুযোগ পাওয়ার দিক থেকে ২১ শতাংশ এগিয়ে থাকে। এক পৃষ্ঠার আবেদনকারীদের গড় স্কোর হয় ৭ দশমিক ১ এবং দুই পৃষ্ঠার আবেদনকারীদের গড় স্কোর হয় ৮ দশমিক ৬.

Source: News Book

এই ফলাফল ইঙ্গিত করে, দুই পৃষ্ঠার আবেদনকারীদের বায়োডাটায় থাকা অতিরিক্ত তথ্য গবেষকদের বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। যার ফলে আবেদনকারীদের ব্যাপারে অধিক তথ্য জানায় নিয়োগকারীরা তাদের প্রতি ইতিবাচক হয়ে থাকে। এমনকি অপেক্ষাকৃত কম জিপিএ থাকা সত্ত্বেও দুই পৃষ্ঠার আবেদনপত্র হওয়ায় তাদের প্রতি গবেষকরা বেশি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে।

নিয়োগকর্তার মনোযোগ

গবেষণার জন্য ভাড়া করা নিয়োগকারীরা দুই পৃষ্ঠার আবেদনপত্র এক পৃষ্ঠার আবেদনপত্রের চেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে দেখেছে। এমনকি তারা দুইবার করে আবেদনপত্রগুলো পড়েছে।

সাধারনত ধারণা করা হয়, নিয়োগকারীরা আবেদনপত্র মাত্র কয়েক সেকেন্ড দেখে মূল্যায়ন করে। কিন্তু গবেষণালব্দ ফল সম্পূর্ণ তার বিপরীত।

Source: Careers.workopolis

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী নিয়োগকর্তারা এক পৃষ্ঠার আবেদনপত্র গড় ২ মিনিট ২৪ সেকেন্ড সময় ধরে মূল্যায়ন করেছে, এবং দুই পৃষ্ঠার আবেদনপত্র তার প্রায় দ্বিগুণ সময়, ৪ মিনিট ৫ সেকেন্ড সময় ধরে মূল্যায়ন করেছে।

এই ফলাফল থেকে বোঝা যায় নিয়োগকারীরা আবেদনপত্রগুলোতে চোখ বোলানোর পরিবর্তে যথেষ্ট সময় নিয়ে পর্যালোচনা করে থাকে। এখান থেকে বোঝা যায় দুই পৃষ্ঠার আবেদনপত্র এবং তার তথ্য কেন আবেদনকারীরা বেশি পছন্দ করেন।

ইয়ং বলেন, এই গবেষণার মধ্য দিয়ে দুই পৃষ্ঠার আবেদনপত্র অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাতিল হয়ে যাওয়ার ভ্রান্ত ধারনা ভেঙে গেছে।

এই গবেষণা থেকে আরো একটি শিক্ষণীয় বিষয় হলো, প্রচলিত ধারণা আর বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সুতরাং চাকরি ক্ষেত্রে নিয়োগ নিশ্চিত করতে এক পৃষ্ঠার জীবনবৃত্তান্তের চেয়ে দুই পৃষ্ঠার জীবনবৃত্তান্ত বেশি গ্রহণযোগ্য।

Source: Robert Half

সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হলো, নিয়োগকারীরা অবচেতনভাবেই দুই পৃষ্ঠার আবেদনপত্র বেশি সময় এবং মনোযোগ দিয়ে মূল্যায়ন করে। তারা নিজেরাই এ ব্যাপারে সচেতন না, অর্থাৎ নিয়োগকারীর অবচেতন মন দুই পৃষ্ঠার আবেদনকারীদের প্রতি বেশি ইতিবাচক হয়ে থাকে।

সুতরাং এবার থেকে নতুন কোনো চাকরির আবেদনের জন্য নিজের সারসংক্ষেপ সম্পাদনা করার সময় অধিক তথ্য দিয়ে দুই পৃষ্ঠার আবেদনপত্র তৈরি করতে ভয় পাবেন না। দুই পৃষ্ঠার বায়োডাটায় নিজের সকল দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরুন। বায়োডাটার ভাষা এবং শব্দচয়নের ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক হোন। স্পষ্ট, সহজ এবং ঝরঝরে গদ্যে বায়োডাটা লিখুন। মনে রাখবেন, একটি সুন্দর বায়োডাটা নিয়োগকারীর কাছে আপনার প্রথম পরিচয়, যা ওই প্রতিষ্ঠানে আপনার প্রবেশাধিকার এবং অবস্থান নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।

Feature Image: The Balance Careers