সুন্দর ক্যারিয়ার সাজাতে একজন যোগ্য পথপ্রদর্শক কিভাবে খুঁজে বের করবেন

photo: mfaa

মানুষ জন্ম নেয়ার পর থেকেই অন্যের উপর নির্ভরশীল। শিশুকাল থেকে দৈনন্দিন জীবন চর্চা শিখতে এবং নানান জিনিস জানতে আমরা পরিবার, সমাজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করি। পিতা-মাতা শিশুকালে আমাদের দেখাশোনা করেন। তারা আমাদের শেখান, কিভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কিভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। স্কুলে শিক্ষকরা আমাদের নানান জিনিস শিখতে সাহায্য করেন। এমনকি আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণে রাখেন যুগান্তকারী ভূমিকা!

photo: corporateink

কিন্তু এই আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রগুলো থেকে আমরা যখন বের হয়ে যায়, আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি, সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করি, তখন কী ঘটে?

আমরা এতদিন আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ভেতর দিয়ে জীবন অতিবাহিত করেছি। প্রতিমুহূর্তে অভিভাবকদের সহযোগিতা নিয়ে সমস্যার সমাধান করেছি। কিন্তু শিক্ষা জীবন শেষ করার পর কর্মজীবনে প্রবেশ করলে এই নতুন জীবন সম্বন্ধে আমাদের কোনো অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা থাকে না। এই কারণে কর্মজীবনেও সফল হতে আমাদের পথপ্রদর্শক বা পরামর্শদাতার প্রয়োজন হয়।

জীবনে প্রথমবার নিজের মত হন

নতুন ক্যারিয়ার শুরু করা সত্যিই কঠিন! কিন্তু তাই বলে কি সবাই পুরনো হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে? আপনি যখনই ক্যারিয়ার শুরু করবেন, প্রথমবার বলে একটি ব্যাপার তো থাকবেই! তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেকে কখনো একা না ভাবা। জীবনে প্রথমবারের মতো হলেও নিজের মতো হওয়ার চেষ্টা করুন। কারো সরাসরি সহযোগিতা ছাড়া নিজেই নিজেকে স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা করুন। মনে করুন আপনি একা নন।

photo: humanity

সাম্প্রতিক এক গবেষণা মতে, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নতুন কর্মী প্রথম ছয় মাসের মধ্যে চাকরি ছেড়ে দেন! এমনকি শিক্ষকরাও, যাদের কাছ থেকে আমরা সবকিছু শিখে থাকি সেই শিক্ষকদেরও প্রায় ১৭ থেকে ৪৬ শতাংশ প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যেই শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দেন!

কাজ নিয়ে অস্বস্তি এবং যে আত্মবিশ্বাসহীনতার কারণে মানুষ চাকরি ছেড়ে দেন তার প্রধানতম কারণ যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং সঠিক প্রতিক্রিয়া না পাওয়া। বেশিরভাগ মানুষ প্রথমবার ক্যারিয়ার নির্বাচনে কারো পরামর্শ বা সহযোগিতা পান না। এমনকি কারো পক্ষ থেকে কোনো গঠনমূলক দিকনির্দেশনাও থাকে না। কাজ শুরু করার পর কেউ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াও দেন না। অথচ কিছুদিন পর যে প্রতিক্রিয়াগুলো পাওয়া যায় তার সবই থাকে নেতিবাচক! বারবার আমাদের ভুলগুলো স্পষ্ট করে তোলা হয় আর এই কারণেই অধিকাংশ মানুষ প্রথম নির্বাচিত ক্যারিয়ার অল্পদিনেই ত্যাগ করেন।

পরামর্শদাতা বা মেন্টর

ক্যারিয়ার নিয়ে এই বিক্ষিপ্ততা দূর করতে একজন মেন্টর তথা পরামর্শক আবশ্যক। পরামর্শকরা সবসময়ই অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে তরুণরা যেসব সমস্যায় পড়েন সে সম্বন্ধে তারা বিস্তারিত জ্ঞান রাখেন। একজন দক্ষ ও যোগ্য পরামর্শদাতা আপনার ক্যারিয়ারের শুরুতেই এমন ধ্বস ঠেকাতে সক্ষম।

photo: three dot dash

আপনি নিজে চেষ্টা করলে এবং আত্মবিশ্বাস থাকলে হয়তো অনেক দূর যেতে পারবেন। কিন্তু সেই চলার রাস্তা কী আপনি যথাযথভাবে চেনেন? আপনার ক্যারিয়ারের জন্য কোন পথটি মসৃণ হবে সেটা একজন মেন্টরই ভাল জানেন। পৃথিবীর সব সফল মানুষ কোনো না কোনোভাবে পরামর্শদাতার উপর নির্ভরশীল, কেউই একা শুধু নিজের প্রচেষ্টায় সফল হতে পারে না। শিশুকালে আমরা যেমন বাবা-মায়ের সাহায্য ছাড়া হাটতে শিখিনি, তেমনি ক্যারিয়ারের শুরুতে মেন্টরের সাহায্য ছাড়া সাফল্য আসে না। তাই একজন মেন্টর ক্যারিয়ারের শুরুতে আপনার চাই-ই চাই।

কিভাবে মেন্টর খুঁজে পাবেন?

একজন দক্ষ ও যোগ্য মেন্টর খুঁজে পাওয়া আপনার কাছে খুব কঠিন কাজ মনে হতে পারে। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না আপনার যথার্থ মেন্টর বা পরামর্শদাতা আপনার আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে। আপনার মেন্টরকে আবিষ্কার করতে হবে।

যথাযথ পরামর্শের সাথে সময় এবং আত্মশক্তির একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। এ কারণে সত্তিকারের একজন মেন্টর আপনাকে তখনই সময় দিবে যখন সে আপনাকে যোগ্য মনে করবেন, আপনার মধ্যে সম্ভাব্যতা খুঁজে পাবেন।

photo: safety 4 sea

পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে কোনো বিষয়ে পরামর্শ নিতে গিয়ে নিশ্চয়ই এমন কথা শুনেছেন: “আমি তোমাকে পরামর্শ দিতে পারি, যদি তুমি সত্যিই আমার পরামর্শটা গ্রহণ করো।” এই কথার অর্থ হলো তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিজ্ঞতার মূল্য আছে এবং তিনি যে পরামর্শ দিবেন তা সত্যিই কার্যকরী। তাই পেশাদার বা অপেশাদার যেকোনো মেন্টরই চান তার পরামর্শ যেন পরামর্শ গ্রহণকারী কাজে লাগায় এবং সফল হয়।

photo: mfaa

আমরা প্রত্যেকেই কর্মজীবনের একটি সময়ে নতুন থাকি এবং তখনই পরামর্শদাতার সাহায্যের প্রয়োজন হয়। এমন মুহূর্তে যখন পরামর্শদাতার পরামর্শ সত্যি কাজ করে এবং আমরা সফল হই, তখন পরামর্শদাতাও নিজেকে সফল বলে মনে করেন। পরামর্শদাতা আপনাকে আরও বেশি উৎসাহিত করতে এবং নতুন নতুন পরামর্শ দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কিন্তু আপনি যদি শুধু জানার জন্য পরামর্শ নেন এবং তা বাস্তবায়ন না করেন তাহলে পরামর্শদাতাও একসময় আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।

রিচার্ড ব্র্যানসন এবং এলন মাস্কের মতো বিখ্যাত ও সফল মানুষেরাও আজকের জায়গাতে পৌঁছাতে পারতেন না যদি তারা অন্য কারো সহযোগিতা না পেতেন। এমন বড় বিনিয়োগকারীরাও নিজেদের ক্যারিয়ারে একসময় নতুন ছিলেন এবং তখন তারা অনেক কিছুই জানতেন না, অনেক কিছুই বুঝতেন না। কাজ করেছেন আর যোগ্য পরামর্শদাতার পরামর্শ নিয়েছেন, সহযোগিতা নিয়েছেন।

photo: synapse.ucsf

সুতরাং আজই একজন যথার্থ পরামর্শদাতা খুঁজে বের করুন। তবে এক্ষেত্রে কোনো পেশাদার ব্যক্তিই কেবল আপনার পরামর্শদাতা হতে পারে এমন নয়। আপনার ভাই, বন্ধু, প্রিয়জন অথবা কোনো আত্মীয় – যেকেউ আপনার মেন্টর হতে পারে। আবার আপনিও আপনার জানা কাজে সেই আত্মীয় বা বন্ধুর মেন্টর হয়ে উঠতে পারেন। পরস্পরের প্রতি এই পরামর্শ বিনিময় নিজের কাজে আস্থা তৈরি করতে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে অনেক সাহায্য করে, যা  ব্যক্তি এবং কর্ম জীবনে সাফল্য বয়ে আনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *