যেভাবে সময়ের সৃজনশীল ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারেন

আমরা প্রায়ই বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় কাজ করে সময়ের অপচয় করি। কাজের সময় অন্য অপ্রয়োজনীয় কাজ করার ফলে সহজে কোনো কাজ করতে পারি না, দীর্ঘসূত্রিতার স্বীকার হই। এতে আমাদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়, কাজের মানে সবচেয়ে বড় প্রভাবটি ফেলতে পারে এই আত্মবিশ্বাসের অভাব। তাই সময়ের সঠিক ব্যবহার করাটা জরুরি, তেমনি জরুরি আত্মবিশ্বাস ধরে রাখাটা।

দীর্ঘসূত্রিতার স্বীকার হবেন না 

Image Source – Youtube.com

যখন আপনি দীর্ঘসূত্রিতার সম্মুখীন হন, তখন কাজগুলো জমিয়ে রাখেন। সারাদিন শুধু কাজগুলো শুরু করার কথাই ভাবতে থাকেন। এই দীর্ঘসূত্রিতা আমাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করার জন্য দায়ী। কিন্তু জমানো কাজগুলোই যদি রুটিন ধরে করতে থাকেন তাহলে হয়তো এক সপ্তাহও লাগবে না কাজগুলো শেষ করতে। আপনি যদি দীর্ঘসূত্রিতার জন্য তেমন কিছুই করতে না পারেন তাহলে আপনার উচিত হবে শুরুতেই ৪-৫টি কাজ শনাক্ত করা যেগুলোতে আপনি সবচেয়ে বেশি দীর্ঘসূত্রিতার সম্মুখীন হন।

তারপর সেগুলোকে গুরুত্ব অনুযায়ী সাজিয়ে সপ্তাহের শুরুতেই প্রত্যেক দিনের জন্য একটি কাজ ঠিক করে রাখুন যে কাজটি করতে অতীতে দীর্ঘসূত্রিতার সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু এইবার একদম সময়মত কাজটি করতে চান। এভাবে দৈনিক একটি করে জমে থাকা কাজ শেষ করলেও সপ্তাহ শেষে সব কাজ সুন্দরভাবে শেষ হবে।

 নিষ্ফল কাজে সময় নষ্ট করা আজই বন্ধ করুন

Image source -digital Trends

ভালোভাবে সময় কাটানোর সুফল হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। তাই যখন আপনি আপনার পছন্দের কাজটি করছেন কিংবা নিজের স্বপ্নের দিকে, লক্ষ্যের দিকে যাচ্ছেন তখনই আপনি আত্মবিশ্বাসকেও শাণিত করছেন। যেমন –

  • টিভি দেখা
  • ফেসবুকে কাজ ছাড়াই অযথা সময় কাটানো
  • ইন্টারনেটে অযথাই ব্রাউজিং
  • খুব ঘন ঘন ফোনের বা মেসেঞ্জারের মেসেজ চেক করা।
  • পর্ণ নিয়ে পড়ে থাকা
  • নেতিবাচক মানসিকতার মানুষের সাথে চ্যাট করা
  • অনুপ্রেরণামূলক লেখা বা ভিডিও পরে, দেখে সময় কাটানো, কিন্তু কাজে না লাগানো।

এই অপ্রয়োজনীয় কাজগুলো আপনার আত্মবিশ্বাস নষ্ট করবে। তাই আজই এমন ৫টি সময় নষ্টকারী অভ্যাস চিহ্নিত করুন এবং নিয়মিত চেষ্টার মাধ্যমে অভ্যাসে পরিবর্তন আনুন। তাহলে আপনি সময়গুলোকে কাজে লাগাতে পারবেন।  তার মানে টিভি, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসএপ এগুলো বাদ দিতে হবে। আদৌ না পারলে দিনে দুই-তিনবারের বেশি (সর্বোচ্চ দৈনিক দুই ঘন্টা ) সময় দিন। এবং তা আপনার সব গুরুত্বপূর্ণ কাজের ফাঁকে ফাঁকে করবেন। কিন্তু সময়ের দিকে লক্ষ্য রাখবেন।

 সবসময়ই কিছু না কিছু করুন

Image Source -ikeamadi.org

আপনি মিলিয়নিয়ার কিংবা রেস্টুরেন্টের ওয়েটার যাই হন না কেন, আনন্দের ও গঠনমূলক কোন কাজ না থাকলে আপনার অলস সময় কাটবে এবং আত্মবিশ্বাস নষ্ট হবে। এর জন্য সব সময়ই নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন, কিছু বিষয়ে উন্নতির জন্য সাধনা করুন। কিংবা ভালো কিছু, সুন্দর কিছু উপভোগ করুন। এটি হতে পারে কোন ভালো গান শোনা, মুভি দেখা বা বই পড়া।

যদি আপনি অর্জনের জন্য বড় একটি তালিকা সামনে আনবেন তখনই তা অর্জনের জন্য আপনার চেষ্টা, পরিশ্রম বেড়ে যাবে এবং সময়গুলো কাজে লাগবে। সপ্তাহজুড়ে মজার, আনন্দের কিছু কাজকে আপনার কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রাখুন যেমন সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, ঘুরতে যাওয়া, জাদুঘরে যাওয়া, যোগব্যায়াম, কারাতে শেখা, খেলাধুলা করা, পছন্দের বই পড়া, মুভি দেখতে যাওয়া, গান গাওয়া, নৄত্য, চিত্র প্রদর্শনী কিংবা আপনার পছন্দের ইতিবাচক অন্য যেকোনো কিছু।

আসক্তি থেকে মুক্ত হতে হবে

Image Source – achievementcenteredtherapy.com

নিজেকে প্রতিদিন যদি বলেন ,”আমি সঠিক সিন্ধান্ত নেওয়ার যোগ্য নই!” তাহলে আপনার মনে নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা শেকড় গেড়ে বসবে। আপনি বদঅভ্যাসগুলোর ক্ষেত্রেও একই ধরণের কথা বলে থাকেন। এটি ধূমপান, মদ্যপান, পর্ণে আসক্তি, ফেসবুক আসক্তি, গেম আসক্তি এরকম আরও অনেক। এইসব আসক্তি থেকে মুক্ত হতে হবে।

ছোট ছোট লক্ষ্য ধরে কাজ করুন 

Image Source – Udemy

অর্থাৎ বড় কোনো লক্ষ্য থাকলে একে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিয়ে ধাপে ধাপে শেষ করুন। সেটা হতে পারে মদ্যপান বা ধূমপান ছেড়ে দেয়া, পড়াশোনা করা, ভালো অভ্যাস রপ্ত করা, এমন যেকোন কিছুই। ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নিজেকে উৎসাহ দিন। কিছু কাজ একেবারে হঠাৎ করে করতে চাইলেই হবে না। ধীরে ধীরে কাজটি করার জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে হবে, কাজটাকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।

আপনি যদি এরকমভাবে একদিন সুন্দরভাবে কাজ করতে পারেন তাহলে যে আত্মবিশ্বাস জন্মাবে তাতে কাজ করতে আরও আগ্রহ পাবেন। পরে দুই সপ্তাহ নিয়ে পরিকল্পনা করুন। এটি সফল হলে এক মাস মেয়াদী, তারপর কয়েক মাস পর অর্ধ-বার্ষিক পরিকল্পনা করবেন। এভাবে বার্ষিক পরিকল্পনার দিকে এগোতে থাকবেন। ক্রমে আপনার কাজটি আরও উন্নত হতে থাকবে। যারা বিসিএস কিংবা জিআরই প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের জন্যও এই পদ্ধটিটি বেশ কাজে দেবে, সময়কে কাজে লাগাতে পারবেন। আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

 অন্যদের সাহায্য করুন

Image source – examinar.co.uk

অন্যদের সাহায্য করলে, নিজের সামর্থ্য সম্পর্কে যত খারাপ ধারণাই থাকুক না কেন এই কাজ আপনাকে এই কথা মনে করিয়ে দেবে যে, সত্যিকার অর্থে এই সমাজের জন্য আপনিও কিছু করতে পারেন। যে কথাটি আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, “আমরা চাইলেই সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন করতে পারি।” তাই সপ্তাহের মধ্যে এমন কিছু সময় ঠিক করে রাখুন যখন অন্যদের সহযোগিতা করবেন, দান করবেন।

কাউকে কিছু শেখানো, অসচ্ছল পরিবারের সন্তানদের আর্থিক সহায়তা বা নিজেই পড়ানো, লাইব্রেরি করা, মানুষকে ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করা। আপনার পছন্দের কোন এক বা একাধিক ভালো কাজ বা মানুষকে সহযোগিতা করা যায় এমন কাজ করুন নিয়মিত। আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়বে তেমনি অবসর সময়ের সঠিক ব্যবহারটাও হবে।

তাই যখনই আপনি আত্মবিশ্বাসের অভাবের মধ্য দিয়ে যাবেন তখন নিজের উপর জোর করে হলেও এই কাজগুলো করুন। এক দুই সপ্তাহ হয়তো অনভ্যস্ততার জন্য অসুবিধা হবে কিন্তু পরে আপনার আত্মবিশ্বাসের পারদ কত উপরে উঠে গেছে দেখে অবাকই হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *