কর্মক্ষেত্রের রাজনীতির জয় করবেন যেভাবে

photo: architech solutions

অফিস পলিটিক্স বা কর্মক্ষেত্রের রাজনীতি একটি বিস্তৃত ব্যাপার। বহু বছর আগে থেকেই এই বিষয়টি কর্মক্ষেত্রে বর্তমান ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। সহজভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলে অফিস রাজনীতি মূলত পদমর্যাদার ভিন্নতা, মতামতের ভিন্নতা, স্বার্থ নিয়ে পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং পদোন্নতি পাওয়ার দৌড়কে একত্রে বোঝানো হয়।

photo: architech solutions

কারো কারো জন্য এই জটিল রাজনৈতিক অবস্থা উন্নতির চাবিকাঠি, আবার কারো জন্য বিপর্যয়ের কারণ। স্বার্থ যাই হোক এই প্রবণতা কর্মীদের মধ্যে স্বাভাবিক যোগাযোগ এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। এই অবস্থার বৃদ্ধি পেলে কর্মপরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে। তবে কর্মক্ষেত্রের এই রাজনীতিকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রতিযোগিতা সব জায়গাতেই আছে। কর্মক্ষেত্র যেহেতু মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুতরাং এখানে প্রতিযোগিতা থাকবেই। নানামুখী প্রতিযোগিতার প্রভাবেই মূলত এই রাজনৈতিক অবস্থার সৃস্টি হয়। কর্মক্ষেত্রে সফল হয় এবং শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছায় তারাই যারা এই রাজনীতিতে বিজয়ী হওয়ার কৌশল আয়ত্ত করতে পারে।

এই নিবন্ধে আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আচরণ নিয়ে আলোচনা করব যার চর্চা আপনাকে কর্মক্ষেত্রের এই রাজনীতি জয় করতে সহযোগিতা করবে।

নিজের পছন্দের ব্যাপারে সচেতন থাকুন

কর্মক্ষেত্রের রাজনীতিতে সবচেয়ে সাধারণ বিষয় হল পরস্পরের সাথে যুদ্ধ এবং নিজের অবস্থান সৃষ্টি করা। এই প্রবৃত্তি নতুন নয়। লক্ষ বছর আগে প্রাগৈতিহাসিক যুগে যখন আধুনিক শিক্ষার কোনো বালাই ছিল না তখনও মানুষের এই প্রবৃদ্ধি ছিল। জীবনের প্রয়োজনে মানুষ শিকার করতে শিখেছে, নিজের অবস্থান তৈরি করতে শিখেছে, খাদ্য সংগ্রহ করতে শিখেছে।

আমরা প্রাগৈতিহাসিক যুগ পার করে এসেছি। কিন্তু কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য কখনই ভুলে যেতে পারিনি আর তা সম্ভবও না। অফিস হলো আধুনিক যুগের শহুরে জঙ্গল। এখানেও প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয় এবং নিজের কাঙ্ক্ষিত বস্তু অর্জন করতে হয়। তবে প্রাগৈতিহাসিক যুগের মতো এখানে বিজয়ী হতে শুধুমাত্র শিকারি প্রবৃদ্ধি ছাড়াও আরও কিছু বিশেষ কৌশলের প্রয়োজন হয়।

photo: iberaval

সবার মতো আপনিও কর্মক্ষেত্রে নিজের অবস্থান তৈরি করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতিরোধের সম্মুখীন হবেন। আপনার কোনো উন্নতি সহজভাবে আসবে না। এখানে আপনাকে যুদ্ধ করতেই হবে। নিজের ভাল অবস্থা তৈরি করতে এর কোনো বিকল্প পথ নেই।

সুতরাং এখানে বিজয়ী হতে হলে যেকোনো পরিস্থিতিতে সব ধরনের প্রতিক্রিয়া সচেতনভাবে মোকাবেলা করতে হবে। আগে থেকেই ঠিক করে নিন, যেকোনো ধরনের খারাপ পরিস্থিতিতেও কিভাবে আপনি আপনার স্বকীয়তা বজায় রাখবেন এবং নিজের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাবেন। শত রাজনীতি শর্তেও নিজের পথ তৈরি করে নিন।

আপনি কি অর্জন করতে চান সে ব্যাপারে নিশ্চিত হোন

কর্মক্ষেত্র যখন দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হবেন তখন খুব সহজেই পরস্পরের মধ্যে মত পার্থক্য অনুধাবন করতে পারবেন এবং তার ভিত্তিতে আপনার উন্নতির জন্য পরবর্তীতে কোথায় ফোকাস করা দরকার তাও নির্ধারণ করতে পারবেন। এই বিশ্লেষণ নিজের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে আপনাকে সহযোগিতা করবে। অন্য কর্মীদের অবস্থান, মতপার্থক্য এবং মতামতের দিকে মনোযোগী হলে আপনি খুব সহজেই তাদের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার উপায় আবিষ্কার করতে পারবেন।

photo: the pitcher

কর্মক্ষেত্রের যেকোনো দ্বান্দ্বিক অবস্থানে থেকে বিজয়ী হওয়ার মোক্ষম কৌশল হলো প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক লক্ষণসমূহের দিকে মনোযোগ দেওয়া। আপনার ব্যবসার জন্য কী প্রয়োজন, প্রতিটি বিকল্প উপায়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন। কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকেই যদি আলাদা আলাদা ভাবে সফল হতে চাই, কিন্তু সামগ্রিক ব্যবসা যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে কেউই সেখানে সফল হতে পারে না।

সুতরাং ব্যক্তিক সাফল্যের জন্য প্রতিষ্ঠানের সাফল্য বিবেচনা করতে হবে। সবচেয়ে সহজ সাধারণ উপায় হলো প্রতিষ্ঠান স্বার্থে সর্বোত্তম উপায় অবলম্বনে কাজ করে যাওয়া, যা প্রতিষ্ঠানের সাফল্য এনে দিবে। আর প্রতিষ্ঠানের সাফল্য আপনার সাফল্য নিশ্চিত করবে।

photo: livelitigation

এই বোধ ছোটখাটো বিষয়ে অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে আপনার মতামতের তফাৎ আবিষ্কার করতে সহায়তা করবে এবং তাতে আপনি নিজের মতো করে কাজ করার উপায় খুঁজে পাবে। আপনি যদি প্রতিষ্ঠানের জন্য সুকৌশলে নিবেদিত হয়ে কাজ করে যান, এক সময় দেখবেন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতনরা আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে। নিঃসন্দেহে ঊর্ধ্বতনরা অনেক বেশি অভিজ্ঞ, কৌশলী এবং বাস্তববাদী। সুতরাং তাদের সুদৃষ্টি আপনাকে আরও বৃহৎ অবস্থানে নিয়ে যাবে।

আপনার উপর অন্যদের প্রভাবের দিকে মনোযোগ দিন

কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা একটি সাধারণ ব্যাপার। সব কর্মক্ষেত্রেই আপনার উপর কিছু-না-কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকবেই। কর্পোরেট নিয়মনীতি, গ্রাহকদের চাহিদা এবং বসের আদেশ-নিষেধ এই সবগুলো একত্রে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কী প্রভাব ফেলে বা ব্যক্তিগত জীবন কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করে তা খুঁজে বের করা খুব কঠিন কিছু নয়।

এই নিয়ন্ত্রণের কারণে নানা ধরনের অভিযোগ এবং প্রতিক্রিয়া আপনার মধ্যে সৃষ্টি হবে। আপনি চাইলেই এই প্রতিক্রিয়া বন্ধ করতে পারবেন না। কিন্তু এ ব্যাপারে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন, এগুলো শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদি মানসিক চিন্তা। এগুলো কী দীর্ঘমেয়াদে আপনার দুশ্চিন্তার কারণ? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন ছোট ছোট বিচ্যুতি দীর্ঘমেয়াদে জীবনের উপর কোনো প্রভাব ফেলে না।

photo: kalksandstein

এমন নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় নিজেকে নিপীড়িত মনে হতে পারে। সুতরাং এক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত বা হতাশ হয়ে পড়ার বদলে এই অবস্থাকে প্রভাবিত করতে আপনি কী কী করতে পারেন তার উপর মনোযোগ দিন। নিজের অসহায় মানসিক অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এটি খুব চমৎকার উপায়। নিয়ন্ত্রিত অবস্থার উত্তরণে আপনার পর্যবেক্ষণ এবং ভাবনা নিজের অসহায় অবস্থানের পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্য অনেকের ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি উন্মোচিত করে। যারা আপনার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতিতে স্বাচ্ছন্দে কাজ করে যাচ্ছে তাদের কথা ভাবুন।

এই বোধ আপনাকে সকল নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি দিবে, এমন নয়। আপনি হয়তো কোনো অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবেন না, কিন্তু মানসিকভাবে এমন অবস্থায় পৌঁছাবেন যে আপনি আপনার সেরাটা করতে পারবেন এবং নিজের কাছে সন্তুষ্ট থাকবেন। কর্মক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা এবং নিয়ন্ত্রণ থাকবেই। তবে নিজের এই বিশ্লেষণী ক্ষমতা আপনার মধ্যে এমন কর্মদক্ষতা এনে দিবে, যাতে আপনি সহজেই ঊর্ধ্বতনদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবেন এবং সবাই আপনাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *