যেভাবে মাস্টার্সের থিসিস পেপার লিখবেন

সাধারণত মাস্টার্স কোর্সের শেষ পর্যায়ে এসে থিসিস করতে হয়, আবার অনেক শিক্ষার্থীরা অনার্স কোর্সের শেষে থিসিস করে থাকে। এছাড়াও পিএইচডি সময়ও থিসিস করতে হয়, তবে পিএইচডির থিসিসের ক্ষেত্র মাস্টার্সের থিসিসের তুলনায় আরো অনেক বেশি বিস্তৃত।

আজকে আমরা আলোচনা করব কীভাবে মাস্টার্সের থিসিস পেপার লিখতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে থিসিস আপনাকে একজন সুপারভাইজারের অধীনে করতে হবে। সুপারভাইজার আপনাকে টপিক নির্বাচন করে দিতে পারেন আবার অনেক সময় আপনি আপনার নিজের পছন্দের টপিক নিয়ে কাজ করতে পারবেন।

Image Source: printster.in

তবে ভালো থিসিস লেখার প্রধান শর্ত হলো, আপনি যে টপিক নিয়ে কাজ করবেন সে সংক্রান্ত আর্টিকেল, রিপোর্ট, জার্নাল ইত্যাদি বেশি করে পড়া।

তাহলে থিসিস সম্পর্কে আপনি অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারবেন এবং সেইসাথে কোন কোন পয়েন্ট আপনি যুক্ত করতে পারবেন, কোন পয়েন্ট বাদ দিতে হবে, কোন ফরম্যাটে লিখলে ভালো হবে, গবেষণার জন্য কোন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন এসব সম্পর্কে ধারণা হবে।

কীভাবে থিসিস পেপার লেখা শুরু করবেন

আপনার যখন থিসিস সম্পর্কে ভালো ধারণা হয়ে যাবে এবং এ সংক্রান্ত সকল তথ্য যোগাড় করে ফেলবেন তখন আপনি থিসিস লেখা শুরু করতে পারেন।

যেকোনো প্রজেক্ট শুরু করার আগে একটা স্ট্রাকচার করে নেয়া ভালো। তাই থিসিস লেখা শুরু করার আগে সবকিছু ডায়াগ্রাম করে সাজিয়ে নেয়া উচিত, তাহলে কাজ করতে সুবিধা হবে এবং ভুল হবার সম্ভাবনাও কম থাকবে।

একটি থিসিসে মূলত সাতটি অংশ থাকে। অংশগুলো হলো,

১. অ্যাবস্ট্রাক্ট

২. ইন্ট্রোডাকশন

৩. মেথড

৪. লিটারেচার রিভিউ

৫. রেজাল্ট

৬. ডিসকাশন

৭. কনক্লুশন

এবার চলুন এ অংশগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই,

১. অ্যাবস্ট্রাক্ট (Abstract)

অ্যাবস্ট্রাক্ট থিসিসের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সাধারণত একজন পাঠক আপনার থিসিস পেপার পড়বে কিনা তা নির্ভর করে আপনার অ্যাবস্ট্রাক্টের উপর। তাই আপনি যদি চান মানুষ আপনার গবেষণাটি সম্পর্কে জানুক, তাহলে এ অংশটির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিন।

সম্পূর্ণ থিসিসের মূল সারমর্ম তুলে ধরা হয় অ্যাবস্ট্রাক্টে। একজন পাঠক সবার আগে থিসিসের এই অংশে চোখ বোলাবে। তাই এটিকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে করে পাঠকের মনে আপনার প্রজেক্টটি নিয়ে কৌতূহল জাগে।

অ্যাবস্ট্রাক্ট বেশি বড় করে লেখা উচিত নয়। থিসিসের উল্লেখযোগ্য পয়েন্টগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে এখানে তুলে ধরতে হবে। এটা ৩০০-৩৫০ শব্দের মধ্যে হলে ভালো হয়।

২. ইন্ট্রোডাকশন (Introduction)

অ্যাবস্ট্রাক্টের পরে যে অংশটি আসে তা হলো ইন্ট্রোডাকশন, যা অ্যাবস্ট্রাক্টের তুলনায় একটু বড় হয়।

ইন্ট্রোডাকশনে আপনার থিসিসের মূল বিষয়, উদ্দেশ্য, কেন এ গবেষণা করা প্রয়োজন, আপনার এই গবেষণা কীভাবে কাজে লাগবে, টপিকের কতোটা অংশ আপনার পক্ষে কাভার করা সম্ভব হয়েছে, কী ধরনের কাজ এখন পর্যন্ত করা হয়েছে, কোন সমস্যার সমাধান এখনও করা সম্ভব হয়নি, কোন কার্যপদ্ধতি ব্যবহার করে আপনি গবেষণা করেছেন, আপনি কোন সমস্যা নিয়ে কাজ করেছেন তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ইন্ট্রোডাকশন উল্লেখ করতে হবে।

৩. লিটারেচার রিভিউ (Literature Review)

লিটারেচার রিভিউ লেখা সহজ কাজ নয়, তাই সময় নিয়ে মনোযোগ সহকারে কাজটি করতে হবে। মূলত এই অংশে আপনি যে টপিক নিয়ে কাজ করছেন তা নিয়ে আগে যদি রিসার্চ করা হয়ে থাকে হয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা এবং সেসব রিসার্চে কী ধরনের সমস্যার সমাধান করা হয়েছে এবং কোন কোন সমস্যার সমাধান করা এখনও সম্ভব হয়নি, আপনি কোন সমস্যাটি নিয়ে কাজ করবেন- তার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হবে।

Image Source: lakshmigraphics.in

তবে আপনি আপনার থিসিসে যেসব পূর্ববর্তী রিসার্চের কথা উল্লেখ করবেন, সেগুলো কতটুকু মানসম্মত ও আস্থাভাজন তা মাথায় রাখতে হবে। সেইসাথে যেসকল ক্ষেত্র থেকে তথ্য নিয়েছেন তা অবশ্যই রেফারেন্স সহকারে উল্লেখ করতে হবে।

৪. মেথড (Method)

গবেষণা করার বেশ কয়েকটি মেথড বা পদ্ধতি রয়েছে। আপনি কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনার গবেষণার সমস্যাগুলো সমাধান করেছেন এই অংশে তার বর্ণনা দিতে হবে।

প্রাইমারি অথবা সেকেন্ডারি সোর্স নাকি দুটি সোর্সের সমন্বয়ে গবেষণা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছেন তা উল্লেখ করতে হবে।

Image Source: acmilan-shqip.info

কোয়ালিটিভ, কোয়ান্টিটিভ পদ্ধতি নাকি অন্য ব্যবহার করেছেন, একটি নাকি একের অধিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন এবং কেন গবেষণার জন্য এই পদ্ধতি বেছে নিলেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে।

৫. রেজাল্ট (Result)

এই অংশে মূলত আপনি আপনার গবেষণা থেকে কী কী উত্তর খুঁজে পেলেন তা নিয়ে বিশদ বর্ণনা দিতে হবে।

আপনি সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো গ্রাফ আকারে উপস্থাপন করতে। এতে করে আপনার পাঠক সহজেই ফলাফলগুলো বুঝতে পারবেন। গ্রাফ আকারে ডাটা উপস্থাপন করার প্রধান সুবিধা হলো গ্রাফ সহজেই পড়া এবং বোঝা যায়।

৬. ডিসকাশন (Discussion)

এই অংশে মূলত গবেষণা সম্পর্কে আপনার মতামত উল্লেখ করতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে আমরা কী সিদ্ধাতে পৌঁছাতে পারি, গবেষণায় কী ধরণের সীমাবদ্ধতা ছিলো, সীমাবদ্ধতার কারণগুলো কী ছিলো, এই টপিক নিয়ে আর কী ধরণের কাজ করা যেতে পারে, নতুন কী কী পয়েন্ট যুক্ত করা যেতে পারে, কোন কার্যপদ্ধতি অবলম্বন করে গবেষণা করলে অধিক ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে তা নিয়ে আপনার নিজস্ব মতামত দিতে পারেন।

৭. কনক্লুশন (Conclusion)

এই অংশে মূলত আপনি উল্লেখ করবেন, আপনার গবেষণার কাজের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলো কী ছিল এবং আপনি আপনার রিসার্চে কতটুকু সফলতা অর্জন করতে পেরেছেন আর সেই সাথে আপনার টপিকটি কেন এবং কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা আবার  সংক্ষেপে উল্লেখ করে লেখা শেষ করতে পারেন।

কনক্লুশনের পরে সবশেষে থাকবে রেফারেন্স সেকশন, যে সকল সূত্র থেকে আপনি গবেষণার জন্য থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন যেমন বই, অন্যান্য রিসার্চ পেপার, রিপোর্ট, জার্নাল, বিভিন্ন ওয়েবসাইট ক্রমানুসারে বিস্তারিত উল্লেখ করতে  হবে।

Featured Image: bioscienceadvising.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *