বজায় রাখুন কর্মক্ষেত্রের উন্নতির ধারা

ছোটবেলায় যখন স্কুলে পরীক্ষা দিতেন তখন কীভাবে রেজাল্ট দিত আপনার মনে আছে? আগের পরীক্ষার নম্বরকে বর্তমানের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হত। কর্মক্ষেত্র জায়গাটাও এমন। আপনি চান বা না চান, আপনার প্রতিটা কাজ নজরবন্দি রয়েছে। এবং মাসশেষে অথবা বাৎসরিক এনালাইসিসের সময় এই কাজের সবখানিই তুলে ধরা হয়। তাই আপনি কোথায়, কখন, কীভাবে কাজ করছেন সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি এখন যেখানে কর্মরত রয়েছেন অবশ্যই সেখানে আপনার পারফরম্যান্স ভালো রাখতে হবে। এবং সেইসাথে উন্নতিও করে যেতে হবে সমান ধাপে। নইলে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন না। মানিয়ে চলতে পারবেন না পেশার সাথেও।

কীভাবে কর্মরত অবস্থায় আরও উন্নতি করা যায় সেজন্য রইলো কিছু পরামর্শ:

কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করুন

আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় কাজের কোন জায়গাটায় আপনি সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন? অথবা কোন জায়গায় আপনার উন্নতি করতে হবে আপনি কি এক কথায় বা খুব সহজে বলতে পারবেন?

এর উত্তর বেশিরভাগ সময়েই আসে, না।

কর্মক্ষেত্রে নিজের কাজের ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষতা বাড়ানো জরুরি; image source: ADRDaily.com

এর উত্তর জানতে হলে আপনি কথা বলুন আপনার ম্যানেজার, কলিগ অথবা মানব সম্পদ বিভাগের সাথে। কারণ তারাই ভালো বলতে পারবেন আপনি কেমন কাজ করছেন। নিজের কাজ কেমন হলো সেটা সব সময় নিজে নিজে বোঝা যায় না।

যদি আপনাকে কাজের ক্ষেত্রগুলোর উন্নতি করতে হয় তবে আপনাকে পরামর্শ নিতে হবে, প্রচুর পড়তে হবে, কাজ করতে হবে, অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ের উপর সাহায্য নিতে হবে। আপনি সরাসরি ম্যানেজারের সাথে কথা বলে আপনার কাজের ব্যাপারে সকল প্রকার সহায়তা নিতে পারেন। তিনি আপনাকে আপনার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য জানানোসহ সকল নির্দেশনা দেবেন।

নতুন প্রতিষ্ঠানের জন্য নিজেকে প্রস্তুতকরণ

আপনি যখন কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকবেন তখন অন্য চাকরির বিষয়ে খোঁজ নেওয়া বেশ কঠিন। কিন্তু তারপরেও নিয়মিত বিভিন্ন পরামর্শদাতা আর ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। পরবর্তীতে আপনি যখন চাকরি পরিবর্তন করতে চান তখন তাদের সাথে কথা বলতে হবে, যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

নতুন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজ রাখতে হবে নিয়মিত; image source: STL Benchmarking Ordinance

আপনার নিজেকে বুঝতে হবে, তারা যা খুঁজছেন তার পুরোটা কি আপনার মাঝে আছে? অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য যা দরকার তার পুরোটা যদি আপনার মাঝে পাওয়া যায় তবে বুঝবেন আপনি নিজেকে সঠিকভাবে দক্ষ করতে পেরেছেন।

জ্ঞান বাড়ানো

কিছু কর্মক্ষেত্রে মাঝে মাঝে পেশাদারি উন্নয়নের জন্য কাজ করা হয়। তবে সেটা যদি আপনার প্রতিষ্ঠানে নাও করা হয় তবু আপনাকে জানতে হবে নিজের স্বার্থেই। প্রতি মুহূর্তে কোথায় কোন ঘটনা ঘটছে, আপনি নিজে আপনার দক্ষতাকে কতটা প্রসারিত করছেন, জ্ঞান কতখানি বৃদ্ধি করছেন পুরোটাই নির্ভর করে আপনার উপর। যদি সময়ের সাথে সাথে আপডেটেড না থাকেন তবে আপনি প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর সাথে সাথে বিপদেও পড়তে পারেন।

সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আপডেট করতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে; image source: Dotexit

বিভিন্ন প্রফেশনাল জার্নাল, ট্রেড প্রেস পড়ে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ইভেন্টে যোগ দিয়ে, ওয়ার্কশপ করে অথবা বিভিন্ন উপায়ে নিজেই রিসার্চ করে আপনি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারেন।

দক্ষতার প্রসার  

কর্মক্ষেত্রে কখনো কখনো যোগাযোগে সমস্যা, আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা অথবা অন্যের সাথে দ্বন্দ্বও হতে পারে। আপনি যদি এগুলোকে মানিয়ে চলতে পারেন, পরিস্থিতিকে সামলিয়ে নিতে পারেন তবে ক্যারিয়ারে উচ্চ পর্যায়ে একদিন অবশ্যই পৌঁছাবেন। আর এজন্য ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা বেশ জরুরি। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, কোচিং এজন্য বেশ উপকারী হতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাড়াতে হবে ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা; image source: complygdpr.com

কর্মক্ষেত্রে যদি কখনো এই বিষয়ে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে কর্মীকে অবশ্যই তাতে যুক্ত হওয়া উচিত।

আত্মোন্নোয়নে বিভিন্ন পদ্ধতি

কর্মক্ষেত্রে আত্মউন্নয়ন করতে চাইলে বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। সেসব মেনে কাজ করলে নিজের কাজে দক্ষতা বাড়বে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করা। যে কোনো কাজেই আর্থিক দিক শুরুতে না দেখে কিছু কাজ স্বেচ্ছায় করা উচিত। কৌশলগত, প্রয়োগ সংক্রান্ত, টেকনোলজিকাল যে কোনো কাজই দক্ষতার পাল্লাকে ভারী করে।

আত্ন উন্নয়ন করতে হবে কর্মক্ষেত্রে ভালো করতে হলে; image source: seavercareers.blogspot.com

কীভাবে আপনি পেশাদারি দক্ষতা বাড়াতে পারেন:

১. বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল জার্নাল, বই, রিসার্চ পেপার, আর্টিকেল ইত্যাদি।

২. কোচিং, পরামর্শ, ট্রেনিং কোর্স, কনফারেন্স।

৩. স্বেচ্ছাসেবীর কাজ, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ।

৪. অন্যকে ট্রেনিং দেয়া, প্রেজেন্টেশন দেয়া অথবা কনফারেন্সে কথা বলা।

৫. বিভিন্ন বিভাগের মানুষ, গ্রাহক, সাপ্লায়ারদের সাথে সময় কাটানো।

৬. প্রফেশনাল এসোসিয়েশন, বিভিন্ন গ্রুপ অথবা ইন্ড্রাস্ট্রি ফোরামে যুক্ত হওয়া।

৭. ইন্ড্রাস্ট্রি অ্যাওয়ার্ড অথবা স্কলারশিপের জন্য অ্যাপ্লাই করা।

বিভিন্ন বিষয় শিখতে ও জানতে বেশ সময় লাগে এটা সত্যি। তবে একবার শিখে গেলে এটা আপনাকে নিশ্চিন্ত রাখবে কাজে। কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় শেখার অভ্যাসটি যদি আপনি ধরে রাখতে পারেন তবে এটি আপনার ক্যারিয়ারের সাফল্য আনতে, ঝুঁকি কমাতে আর কাজকে আরও উন্নত করতে সহায়তা করবে।

Feature image: LMA Recruitment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *